নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর মাছ শুকানোর একটি রেলিং
নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর মাছ শুকানোর একটি রেলিং

অসংখ্য নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিশালায়তন জলরাশির দ্বারা বিধাতার আশীর্বাদপুষ্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। যেখানে ফিশারীজ একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানী আয়ের ৪.০৪% আসে মাছ ও মৎস্যজাত বিভিন্ন পণ্য হতে। রপ্তানীকৃত মৎস্যজাত পণ্যের মধ্যে শুঁটকি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে যার দেশে ও দেশের বাইরে রয়েছে যথেষ্ট চাহিদা। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ সংকলন ২০০৯ অনুযায়ী ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ হতে সর্বমোট ২১০ টন শুঁটকি বিদেশে রপ্তানী হয় যার মূল্য ছিল ২.৬৭ কোটি টাকা (সূত্র: জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ সংকলক, ২০০৯)।

দেশের বিভিন্ন স্থানের বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ এই শুঁটকি তৈরিতে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি নিজেদের ও সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজার এর অন্তর্গত এরকম একটি শুটকী পল্লী হল ‘নাজিরার টেক’ বা ‘নাজিরার টেক শুঁটকি পল্লী’। এখানে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস এবং কম-বেশী সব পরিবারই এই শুঁটকি তৈরীর সাথে জড়িত। এই শুঁটকি ব্যবসার শুরু ১৯৮৭ সালে এবং স্থানীয়ভাবে এটি ‘চ্যাং’ নামে পরিচিত।

নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর মাছ শুকানোর একটি মাচা
নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর মাছ শুকানোর একটি মাচা

নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর অধিকাংশ মানুষ জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিম্নবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারও দেখা যায়। শুঁটকি তৈরী বা সাগর থেকে মাছ আহরণ করে বিক্রির মাধ্যমে উপার্জনই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়।

এই পল্লীর মৎস্যজীবী পরিবারগুলো মিলে ২০০১ সালে গড়ে তুলেছে ‘‍নাজিরারটেক শুঁটকি সমবায় সমিতি’। সমবায় সমিতির সভাপতি জনাব মোঃ শাহাদাত উল্লাহ বলেন-
“বর্তমানে এই পল্লীতে ৫০০ পরিবার এই চ্যাং ব্যবসার (শুঁটকিকরণ) সাথে জড়িত থাকায় তাদের পরিবারগুলো আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছল।” তিনি আরও জানান যে, এই সমবায় সমিতি থেকে গরীব পরিবারগুলোকে ২০০০-৫০০০ পর্যন্ত বার্ষিক ঋণ দেয়া হয়। আবার কিছু পরিবার সাপ্তাহিকভাবে আয়ের কিছু টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমাও রাখে।

মোটকথা ছোট কলেবর এর সমিতি হলেও তা এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীতে চলছে মাছ বাছাইকরণ
নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীতে চলছে মাছ বাছাইকরণ

পরিশেষে বলা যায়, সরকারী এ বেসরকারী সংস্থা যদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই পল্লীর মানুষগুলোকে সহায়তা করে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে এই শুঁটকি তৈরীর মাধ্যমে তারা যেমন নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারবে তেমনি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।


Visited 1,183 times, 3 visits today | Have any fisheries relevant question?
নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনমান

Visitors' Opinion

এস এম আবু নাছের

শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.