লবস্টার আর্থোপোডা পর্বের ক্রাস্টাশিয়া শ্রেণীর অন্তর্গত চিংড়ির ন্যায় এক ধরনের প্রাণী (Samad, 2010)। ক্রাস্টাশিয়া শ্রেণীভূক্ত প্রাণীদের মধ্যে লবস্টার সবচেয়ে সুস্বাদু এবং সৌন্দর্য্যে অতুলনীয় (Paul, 2001)। লবস্টারের মাংসল পুচ্ছ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Shafi and Quddus, 2001) যা ‌‌লবস্টার টেইল হিসেবে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের কাছে পরিচিত (Paul, 2001)। দক্ষিণ আটলান্টিক সমুদ্রের লবস্টার বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় (Paul, 2001)।

বাংলাদেশে প্রাপ্ত লবস্টার প্রজাতিসমূহ: বিশ্বে প্রধাণত তিন ধরনের লবস্টার প্রজাতি পাওয়া যায়। এরা হলো-

  • Clawed lobster
  • Spiny lobster
  • Sand lobster

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলাশয়ে মোট কতটি প্রজাতির লবস্টার পাওয়া যায় তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষক ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। Paul (2001) এর মতে বঙ্গোপসাগরে ৪টি প্রজাতির লবস্টার পাওয়া যায়, এগুলো হলো-

  • Panulirus polyphagus (Herbst, 1793)
  • Panulirus versicolor (Latreille, 1804)
  • Panulirus ornatus (Fabricus, 1798)
  • Thenus orientalis (Lund)

Panulirus polyphagus লবস্টারটি ইংরেজীতে mud spiny lobster নামে (স্থানীয় নাম চুয়া ইচা); Panulirus versicolor লবস্টার প্রজাতিটি painted spiny lobster নামে (স্থানীয় নাম চুয়া ইচা); Panulirus ornatus প্রজাতি ornate spiny lobster নামে (স্থানীয় নাম চুয়া ইচা) এবং Thenus orientalis লবস্টার প্রজাতিটি flathead lobster (স্থানীয় নাম বেলচা-নাসা লবস্টার বা বেলচাচুয়া ইচা) নামে পরিচিত।

আবার Shafi and Quddus (2001) অনুসারে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির লবস্টার পাওয়া যায়, এগুলো হলো-

  • Panulirus polyphagus (Herbst, 1793)
  • Panulirus versicolor (Latreille, 1804)
  • Seyllarus nearctus (Holthuis, 1960)

বাংলাদেশে লবস্টারের বিচরণ এলাকা: লবস্টার আটলান্টিক, প্রাশান্ত এবং ভারত মহাসাগরসহ সব উপসাগরের পরিবর্তশীল আবহাওয়া সহ্য করতে সক্ষম (Shafi and Quddus, 2001)। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এলাকায় এদের পাওয়া যায় (Paul, 2001)। বঙ্গোপসাগরের এলিফেন্ট পয়েন্টের পশ্চিম প্রান্ত হতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এলাকায় চিংড়ির সাথে লবস্টার আহরণ করা হয়ে থাকে (Paul, 2001)। এরা সাধারণত ৩০-৫০ মিটার গভীরতায় ৩৩-৩৬ পিপিটি লবনাক্ততার পানিতে অবস্থান করে (Paul, 2001)। Panulirus polyphagus প্রজাতিটি বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফ এলাকায় বেশী পাওয়া যায় (Paul, 2001)। তবে Shafi and Quddus (2001) এর মতে বাংলাদেশে প্রাপ্ত লবস্টার প্রজাতিসমূহ সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ এবং কক্সবাজার এলাকায় পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে লবস্টার: বাংলাদেশে এখনও লবস্টার চাষ হয় না বা চাষের কোন প্রচেষ্টার রেকর্ড নেই। সাধরণত বঙ্গোপসাগরে চিংড়ি ধরার সময় কিছু পরিমাণ লবস্টার আহরণ করা হয়। ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশ লবস্টার রপ্তানী করে ১৭২ মিলিয়ন টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে (Paul, 2001)। সম্ভবত পরবর্তীতে আর এ ধরনের কোন পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয় নি।

বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং টেকনাফের আশেপাশের এলাকা লবস্টারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী (Shafi and Quddus, 2001)। বঙ্গোপসাগরে এদের অবস্থানের এলাকাগুলো সংরক্ষণ এবং সঠিকভাবে সংগ্রহের ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।

 

তথ্যসূত্রসমূহ:

Paul SK. 2001. Shrimp and Lobster: Biology (in Bengali), Natore, Bangladesh, pp. 106-116.

Samad MA. 2010. Dictionary of Fisheries (in Bengali), Kabir Publications, Dhaka, Bangladesh, pp. 179-180.

Shafi M and Quddus MMA. 2001. Bangladesher Matsho Shampad (Fisheries of Bangladesh) (in Bengali), Kabir publication. Dhaka, Bangladesh. pp. 377-388.


Visited 1,528 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের লবস্টার

Visitors' Opinion

শামস মুহাম্মদ গালিব

প্রভাষক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ইমেল: thegalib@gmail.com

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.