প্রতিকূল পরিবেশ এবং শিকারি ও ক্ষতিকর প্রাণীর হাত হতে রক্ষার উদ্দেশ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত ডিম ও বাচ্চার প্রতি মাতা-পিতা কর্তৃক যে বিশেষ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয় তাকে মাতৃ-পিতৃ যত্ন (Parental care) বলা হয়। উভচরসহ সকল প্রাণীদের মধ্যেই কমবেশি মাতৃ-পিতৃ যত্ন পরিলক্ষিত হয়। তবে যত্নের মাত্রা প্রজাতির ভিন্নতার উপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণত অণ্ডজ (Oviparous) প্রাণীদের চেয়ে অণ্ড-জরায়ুজ (Ovo-viviparous) ও জরায়ুজ (Viviparous) প্রাণীদের মাতৃ-পিতৃ যত্নের মাত্রা অনেক বেশী বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। আবার অণ্ডজ প্রাণীদের মধ্যে যাদের ডিমের পরিমাণ (Fecundity) বেশি তাদের চেয়ে যাদের ডিমের পরিমাণ কম তাদের মধ্যে মাতৃ-পিতৃ যত্নের মাত্রা অধিক পরিলক্ষিত হয়। অনেক প্রাণী রয়েছে যারা শুধুমাত্র ডিমছাড়ার স্থান নির্বাচনের মাধ্যমে মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে থাকে, অনেকে এর পাশাপাশি পরিস্ফুটনরত ডিমের যত্ন, নবাগত বাচ্চাকে সাথে রাখা, খাবার খাওয়ানোসহ প্রভূত যত্ন নিয়ে থাকে যা একটি নবাগত প্রাণীকে তার পরিবেশে টিকে থাকতে বড় ধরনের সহায়তা করে থাকে।

উভচরেরা নানাভাবে তাদের ডিম ও বাচ্চার প্রতি মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে থাকে।  বিভিন্ন ধরণের উভচরদের মধ্যে বৈচিত্র্যময় মাতৃ-পিতৃ যত্ন দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ উভচর অণ্ডজ হলেও অণ্ড-জরায়ুজ ও জরায়ুজ উভচরও দেখতে পাওয়া যায়। অণ্ডজ উভচরের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকলেই পরিস্ফুটন পরোক্ষ প্রকৃতির অর্থাৎ এদের ক্ষেত্রে ডিম থেকে উৎপন্ন লার্ভা রূপান্তর (Metamorphosis) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিণত হয়।  যাদের মধ্যে পরোক্ষ পরিস্ফুটন দেখতে পাওয়া যায় তারা সাধারণত প্রজনন, ডিম ও বাচ্চার জন্য আশ্রয়স্থল নির্বাচন, বাসা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে, অনেকেই এর পরিবর্তে ডিম ও বাচ্চাকে নিজ দেহে আশ্রয় প্রদান করে থাকে। বিস্তারিত নিচে দেয়া হল-

১. অণ্ডজ উভচর (Oviparous Amphibians)
১.১ পরোক্ষ পরিস্ফুটন (Indirect Development)
১.১.১ ডিম ও বাচ্চার আশ্রয়স্থল নির্বাচন, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
১.১.২ ডিম ও বাচ্চাকে নিজ দেহে আশ্রয় প্রদান
১.২ প্রত্যক্ষ পরিস্ফুটন (Direct Development)
২. অণ্ড-জরায়ুজ উভচর (Ovo-viviparous Amphibians)
৩. জরায়ুজ উভচর (Viviparous Amphibians)

 

১. অণ্ডজ উভচর (Oviparous Amphibians)

এ ধরণের উভচর ডিম পাড়ে, নিষিক্ত ডিম থেকে প্রথমে লার্ভা এবং পরবর্তীতে পরোক্ষ পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পরিণত প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়। কোন কোন উভচরে লার্ভা দশা অনুপস্থিত এবং সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ পরিস্ফুটনের মাধ্যমে তারা পরিণত প্রাণীতে পরিণত হয়।

 

১.১ পরোক্ষ পরিস্ফুটন (Indirect Development)

অণ্ডজ উভচর যাদের লার্ভা দশা উপস্থিত তারা পরোক্ষ পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পরিণত প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়। এরা সাধারণত প্রজনন, ডিম ও বাচ্চার জন্য আশ্রয়স্থল নির্বাচন, বাসা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে।

 

১.১.১ ডিম ও বাচ্চার আশ্রয়স্থল নির্বাচন, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ

উভচরেরা অসংখ্য চমকপ্রদ পদ্ধতিতে তাদের ডিম ও অপত্যকে শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেয়া হল-

ডিম ও বাচ্চার আশ্রয়স্থল নির্বাচন ও নির্মাণ

  • অনেক উভচর জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থলে অবস্থিত ক্ষুদ্রাকৃতির আর্দ্র বাসায় ডিম পাড়ে, অনেকে আবার জলাশয়ের উপরে ঝুলে থাকা গাছের শাখা বা পাতায় বাসা নির্মাণ করে সেখানে ডিম পাড়ে।
  • অনেক গেছো ব্যাঙ গাছে শীর্ষস্থ পাতার গোঁড়ায় জমাকৃত পানিতে তাদের ডিম সংরক্ষণ করে। যেমন- ভারতীয় ব্যাঙ (Rhacophorus malabaricus) এবং আফ্রিকার ব্যাঙ (Chiromantis sp.) এর শাবকদের (spawn) আশ্রয়স্থল হচ্ছে গাছ।
  • PhyllomedusaRhachophorus, Hylodesইত্যাদি জেনাসের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতির ব্যাঙেরা জলাশয়ের উপরে ঝুলে থাকা গাছের শাখার পাতায় আঠালো পদার্থ দিয়ে ডিম আটকে রাখে যাতে ডিম থেকে উৎপন্ন লার্ভা ডিম থেকে বেড় হয়ে সরাসরি পানিতে পড়ে।

 

ডিম ও আশ্রয়স্থল রক্ষা

  • সবুজ ব্যাঙের (Rana clamitans) বাবারা ডিমের আশ্রয়স্থল রক্ষণাবেক্ষণ করার পাশাপাশি আশ্রয়স্থলে আগত ক্ষতিকর বা শিকারি প্রাণীকে আক্রমণ করে তাড়িয়ে দেয়।
  • Mantophryne robusta ব্যাঙের বাবারা জিলেটিনে আবৃত ডিম সম্মুখের পা দিয়ে ধরে রেখে সেখানেই অবস্থান করে।
  • কিছু গেছো ব্যাঙের মায়েরা অগভীর পানির উপরে ডিম পাড়ে তার পাশে অথবা উপরে বসে বিশ্রাম নেয়ায় ছলে ডিম পাহারা দেয়।

 

বিভিন্ন ধরণের বাসা নির্মাণ

  • ফেনাময় বাসা (Foamy nest)
    • অনেক উভচরেরা নিজেদের নিঃসৃত মিউকাসকে বাতাস সহযোগে ফোনাময় বাসায় পরিণত করে। যেমন- জাপানী গেছোব্যাঙ (Rhacophorus schlegeli) এবং দক্ষিণ আমেরিকার গেছোব্যাঙ (Leptodacylus mystacinus) এর মা-বাবা প্রথমে একটি গর্ত তৈরি করে তার মধ্যে পর্যাপ্ত ফেনাযুক্ত করে শুষ্কতার হাত থেকে ডিমগুলোকে রক্ষা করে।

 

  • কর্দমাক্ত বাসা (Mud nest)
    • ব্রাজিলের গেছো ব্যাঙের বাবারা Hyla fabre অগভীর জলাশয়ের কাঁদায় আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো আকৃতির ৫-৮ সেমি গভীর ও ৩০ সেমি ব্যাসের বাসা তৈরি করে যেখানে মায়েরা ডিম পাড়ে। তুলনামূলক নিরাপদ এ বাসায় ডিম ফুটে ব্যাঙাচি বের হয় এবং ব্যাঙাচিরা স্বনির্ভর হবার পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে।

 

  • গেছো বাসা (Tree nest)
    • দক্ষিণ আমেরিকার গেছো ব্যাঙের Phyllomedusa hypochondrales মায়েদের ক্লোয়েকা নিঃসৃত আঠালো পদার্থের সাহায্যে গাছের পাতার প্রান্ত জুড়ে বাসা তৈরি করে এবং নির্মিত বাসায় ডিম পাড়ে।
    • Hyla resinfictrix নামের ব্যাঙেরা মৌচাক থেকে মোম সংগ্রহ করে গাছে গহ্বর (Cavity) তৈরি করে। বৃষ্টির পানিতে গহ্বরটি পূর্ণ হলে মায়েরা সেখানে ডিম পাড়ে এবং তুলনামূলক নিরাপদে শিকারি প্রাণীদের উপদ্রুপ হীন অবস্থায় ডিম ফুটে ব্যাঙাচি জন্মায় এবং রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে পরিণত হয়।

 

  • জিলেটিন নির্মিত থলে আকৃতির বাসা (Gelatinous bags)
    • Salamandrella keyserlingi নামের জলজ স্যালাম্যান্ডার জিলেটিন নির্মিত থলেতে ৫০-৬০ টি ডিম পাড়ে এবং থলিটি একটি জলজ উদ্ভিদের সাথে আটকে দেয়।
    • Phrynixalus biroiনামের উভচরের মায়েরা দেহ নিঃসৃত জিলেটিন দিয়ে সিলিন্ডার আকৃতির স্বচ্ছ থলেতে ডিম পাড়ে এবং পাহাড়ি ঝরনায় রেখে আসে। সেখানে তুলনামূলক নিরাপদে ডিমের পরিস্ফুটন হয়।

 

১.১.২ ডিম ও বাচ্চাকে নিজ দেহে আশ্রয় প্রদান

উভচরেরা  যেমন প্রজনন ও আশ্রয়স্থল নির্বাচন ও বাসা নির্মাণের মাধ্যমে  তাদের মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে তেমনই অনেক উভচরেরা সরাসরি ডিম ও বাচ্চাকে নিজ দেহে বহন করে তাদের মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে থাকে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেয়া হল-

 

  • ডিমকে পেঁচিয়ে অবস্থান গ্রহণ
    • Amphuima, Ichthyophis, Hypogeophisইত্যাদি উভচরের মায়েরা স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে গর্ত তৈরি করে প্রথমে সেখানে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলোকে নিজের শরীরের সাথে পেঁচিয়ে সেই গর্তে অবস্থান করে যতক্ষণ না ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
    • অন্যদিকে Megalobatrachus maxiaএর বাবারা নিজের শরীরের সাথে নিষিক্ত ডিমগুলো পেঁচিয়ে রাখে যতক্ষণ না ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

 

  • পানিতে ব্যাঙাচির (tadpole) স্থানান্তর
    • আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার ছোট ব্যাঙ (Phyllobates, Arthroleptis, Pelobates ইত্যাদি) ভূমিতে ডিম পাড়ে ও জমা করে রাখে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হরার পর ব্যাঙাচিগুলোকে (Tadpoles) পিঠে করে বহন করে জলাশয়ে স্থানান্তর করে।

 

  • দেহের সাথে ডিমকে আটকে রাখা
    • Desmognathus fuscusনামক গাঢ়-বর্ণে স্যালাম্যান্ডারের (Salamander) মায়েরা ডিমকে নিজেদের ঘাড়ে পেঁচিয়ে রাখে যতক্ষণ না ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বের হয়।
    • শ্রীলংকার Rhacophorus reticulatus নামের ব্যাঙের মায়েরা আঠালো পদার্থের সাহায্যে ডিমগুলো নিজেদের পেটের সাথে আটকে রাখে।
    • Alytes obstetricansনামের ইউরোপের ধাত্রী-ব্যাঙের মায়েদের পাড়া ডিম বাবারা নিজেদের পেছনের পায়ের সাথে আটকে রাখে। এরা ডিম ফুটে বাচ্চা বের হরার পর ব্যাঙাচিগুলোকে জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থানে ছেড়ে দেয় যাতে তারা সহজেই জলাশয়ে পৌঁছতে পারে।

 

  • থলিতে ডিমকে আশ্রয় প্রদান
    • প্রজনন ঋতুতে Pipa নামের সুরিনাম (Surinum) ব্যাঙের মায়েদের  পিঠের ত্বক পুরু, নরম, রক্তজালিকা সমৃদ্ধ ও জেলির ন্যায় হয়ে থাকে। উক্ত ত্বকের মাঝে বাবারা একটা একটা করে নিষিক্ত ডিম আলাদা আলাদা ভাবে স্থাপন করে। ফলে ডিমগুলো মূলত একটি স্বতন্ত্র গর্তে (Pit) অবস্থান করে। প্রতিটি গর্তের মুখ একটি করে ঢাকনা দ্বারা আবদ্ধ থাকে ফলে গর্তগুলো একটি করে ক্ষুদ্রাকার ক্যাপসুলে পরিণত হয়। উক্ত ক্যাপসুলেই ডিমের পরিস্ফুটন ঘটে এবং ফুটে বাচ্চা বের না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে।
    • মারসুপিয়াল ব্যাঙ নামে পরিচিত এক ধরণের গেছো ব্যাঙের মায়েরা তাদের পিঠে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত খাদে (depression) অথবা বদ্ধ থলেতে (pouch or pocket) ডিম বহন করে।
    • Hyla goeldii নামের  ব্রাজিলের গেছো ব্যাঙের মায়েদের পিঠের শেষ প্রান্তে  অবস্থিত শাবক থলিতে (brood pouch) ডিম বহন করে।
    • Nototrema-দের ডিম একটি বড় আকারের একক শাবকথলিতে অবস্থান করে যা ক্লোয়েকা-মুখের (Cloacal aperture) সম্মুখে উন্মুক্ত।

 

  • শাকবথলি হিসেবে বিভিন্ন অঙ্গের ব্যবহার
    • Rhinoderma darwinii নামের দক্ষিণ আমেরিকার ব্যাঙের বাবারা নিষিক্ত ডিমকে তার স্বরথলিতে (Vacal sacs) আশ্রয় দেয়।
    • Hylambates breviceps নামক পশ্চিম আফ্রিকার গেছো ব্যাঙের মায়েরা নিজেদের মুখ-গহ্বরের মধ্যে ডিম বহন করে যতক্ষণ না তা ফুটে বাচ্চা বের হয়।
    • Arthroleptis এর বাবার মুখে করে নিজেদের লার্ভা বহন করে।
    • Rheobatrachus silus নামের অস্ট্রেলিয়ার ব্যাঙের মায়েরা তাদের পাকস্থলীতে নিষিক্ত ডিম বহন করে যত দিন না তা ফুটে লার্ভা বের হয়। এ ধরণের আচরণ আর কোন মেরুদণ্ডী প্রাণীতে দেখতে পাওয়া যায়নি।

 

১.২ প্রত্যক্ষ পরিস্ফুটন (Direct Development)

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল উভচরেই পরোক্ষ পরিস্ফুটন (Indirect Development ) দেখতে পাওয়া যায়। পরোক্ষ পরিস্ফুটনে ডিম থেকে উৎপন্ন লার্ভা রূপান্তর (Metamorphosis) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিণত হয়।  কিছু স্থল ও গেছোব্যাঙে  (Eleutherodactylus, Arthroleptis, Hylodes, Hyla nebulosa etc.) লার্ভা দশা অনুপস্থিত বিধায় রূপান্তর প্রক্রিয়াও অনুপস্থিত। এদের ক্ষেত্রে ডিম ফুটে সরাসরি বাচ্চা ব্যাঙ বের হয় যা পরিণত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বহন করে। যেহেতু ডিম ফুটে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ উভচর বের হয় তাই পরোক্ষ পরিস্ফুটনের চেয়ে যাদের পরোক্ষ পরিস্ফুটন দেখতে পাওয়া যায় তাদের মাতৃ-পিতৃ যত্নের মাত্রা অধিক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।

 

২. অণ্ড-জরায়ুজ উভচর:

এ ধরণের উভচরের ডিমের নিষেক ও পরিস্ফুটন দেহের অভ্যন্তরে ঘটে থাকে এবং পরিস্ফুটনরত প্রাণীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ডিমের কুসুম থেকে পেয়ে থাকে। দেহাভ্যন্তরে ডিমের নিষেক ও পরিস্ফুটন হওয়ায় এরা অণ্ডজ উভচরের শাবকের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অধিক নিরাপদে বড় হয় বিধায় এদের মাতৃ-পিতৃ যত্নের মাত্রা তুলানমূলক বেশি বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে বাবাদের ভূমিকা ডিম নিষিক্তকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

Nectophrynoids এবং Pseudophryne নামের আফ্রিকার ব্যাঙের মায়েরা নিষিক্ত ডিম ডিম্বনালীতে (oviduct) বহন করে যত দিন না তা ডিম ফুটে লার্ভার রূপান্তর (metamorphosis) সম্পন্ন হয় এবং এরা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।

Salamandra salamandra নামের ইউরোপের স্যালাম্যান্ডারের মায়েরা একইভাবে বিশেরও অধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে।

 

৩. জরায়ুজ উভচর:

এ ধরণের উভচরের ডিমের নিষেক দেহাভ্যন্তরে ঘটে থাকে এবং নিষিক্ত ডিম তথা প্রাণীর পরিস্ফুটন মায়ের দেহাভ্যন্তরের প্লাসেন্টায় সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং পরিস্ফুটনরত প্রাণীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্লাসেন্টার মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। দেহাভ্যন্তরে ডিমের নিষেক ও পরিস্ফুটন হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি মায়ের কাছ থেকে পাওয়ায় এরা অণ্ডজ উভচর তো বটেই এমন কি অণ্ড-জরায়ুজ উভচরের শাবকের চেয়েও তুলনামূলকভাবে অধিক নিরাপদে বড় হয় বিধায় এদের মাতৃ-পিতৃ যত্নের মাত্রা সবচেয়ে সর্বোচ্চ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে অণ্ড-জরায়ুজ উভচরের মত এদের ক্ষেত্রেও বাবাদের ভূমিকা ডিম নিষিক্তকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

Typhlonectes, Geotrypetes, Dermophis ইত্যাদি উভচরদের জরায়ুজ পরিস্ফুটন দেখতে পাওয়া যায়। এ জাতীয় পরিস্ফুটনে মায়েদের দেহাভ্যন্তরের জরায়ু থলিতে নিষিক্ত ডিমের পরিস্ফুটন ঘটে এবং মায়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে।

 

চিত্র ও আরও তথ্য জন্য-

গ্রন্থ

 

ওয়েবপেজ/সাইট

 


Visited 1,301 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
উভচরের মাতৃ-পিতৃ যত্ন

Visitors' Opinion

এ বি এম মহসিন

প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ...

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.