বাম্বলবি গোবি, Bumblebee Goby, Brachygobius xanthozonus
বাম্বলবি গোবি, Bumblebee Goby, Brachygobius xanthozonus

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মাছ বাম্বলবি গোবি থাইল্যান্ড থেকে ২০০৯ সালে এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছের ব্যবসায়ীরা সর্বপ্রথম আমাদের দেশের নিয়ে আসে। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও দেশের বড় বড় শহরের বাহারি মাছের দোকানে এই মাছ বিক্রি হতে দেখা যায়।

শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata (chordates)
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Perciformes (perch-like fishes)
পরিবার: Gobiidae (Gobies)
গণ: Brachygobius
প্রজাতি: Brachygobius xanthozonus (Bleeker, 1849)

সমনাম (Synonyms)
Brachygobius xanthozona (Bleeker, 1849)
Gobius xanthozona Bleeker, 1849
Hypogymnogobius xanthozona (Bleeker, 1849)
Hypogymnogobius xanthozonus (Bleeker, 1849)

সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: বাম্বলবি গোবি
English: Bumblebee Goby, Banded Goby

বিস্তৃতি (Distribution)
এদের মূল আবাসভূমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। বাহারি মাছ হিসেবে এই মাছ পৃথিবীর দেশে দেশে বিস্তার লাভ করেছে যেমনটা করেছে বাংলাদেশ।

সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
IUCN Red List of Threatened Species 2013.2 তে এই মাছের অবস্থান: Data Deficient অর্থাৎ তথ্য অপ্রতুল (Huckstorf, 2012)

দৈহিক গঠন (Morphology)
লম্বা দেহ অগ্রভাগ সিলিন্ডার আকৃতির এবং লেজের দিকটা পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। দেহে হলুদ বর্ণের মাঝে কালো বর্ণের ফিতা আকৃতির দাগ (band) আড়াআড়ি ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাখনার বর্ণ হলুদ সাদাটে অথবা স্বচ্ছ। এদের আদর্শ দৈর্ঘ্য, মাথার দৈর্ঘ্য, পুচ্ছদণ্ড (Caudal peduncle) ও দেহ উচ্চতা মোট দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ৯১.৩০, ৩০.৪৩, ২৬.০৯ ও ২১.৭৪ শতাংশ অন্যদিকে চোখের ব্যাস মাথার দৈর্ঘ্যের ২৮.৫৭ শতাংশ (Galib and Mohsin, 2011)।

বাম্বলবি গোবি, Bumblebee Goby, Brachygobius xanthozonus
বাম্বলবি গোবি, Bumblebee Goby, Brachygobius xanthozonus

সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
এরা সর্বোচ্চ ৪.৫ সেমি পর্যন্ত হতে পারে তবে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ ২.৬ সেমি দৈর্ঘ্যের মাছ দেখা গেছে (Galib and Mohsin, 2011)।
Seriouslyfish (2014) অনুসারে এই মাছের সর্বোচ্চ আদর্শ দৈর্ঘ্য ৩-৩.৮ সেমি।

আবাস্থল (Habitat)
স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক উভয় জলেই এদের দেখা মেলে। নদীর মোহনা, উপকূলীয় এলাকা, ম্যানগ্রোভ (mangrove) বন ইত্যাদি জলাশয়ের যেখানে পর্যাপ্ত জলজ উদ্ভিদের উপস্থিতি রয়েছে এমন স্থানে এদের দেখা মেলে (Huckstorf, 2012)।

খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
প্রকৃতিতে এরা মাংসাশী এবং মূলত এরা জলাশয়ের নীচের স্তরতলদেশস্থ প্রাণী খেয়ে থাকে। তবে এ্যাকুয়ারিয়ামে এরা ছোট আকারের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত ও হিমায়িত খাবার এমনকি জীবন্ত খাবারও খেয়ে থাকে। জীবন্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রাকার শামুক, রক্ত-কীট (bloodworm) যেমন- টিউবিফেক্স (Tubifex), ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp), ডাফনিয়া (daphnia), সাইক্লোপস (Cyclops), মশার লার্ভা (Mosquito larvae) ইত্যাদি।

জীবনকাল ও প্রজনন (Lifecycle and Breeding)
এদের জীবনকাল তিন বছর।
এদের স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা করা বেশ কঠিন কারণ এদের স্ত্রী ও পুরুষ প্রায় একই রকম গঠনের হয়ে থাকে। তবে প্রজনন ঋতুতে স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে কিছুটা স্ফীত হয়ে থাকে। এ সময় পুরুষের কালো ফিতা আকৃতির দাগ ম্লান হয়ে যায় এবং সোনালী-হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এ্যাকুয়ারিয়ামের কৃত্রিম পরিবেশে এদের প্রজনন করানো অত্যন্ত কঠিন। তবে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে প্রজনন করানো অসম্ভব নয়।
প্রকৃতিতে বর্ষাকালে পুরুষেরা পাথরের আড়ালে অথবা গুহা সদৃশ স্থানে স্ত্রীদের ডিম পাড়তে আমন্ত্রণ জানায় এবং ডিম পাড়তে উদ্বুদ্ধ করে। এ্যাকুয়ারিয়ামে একাধিক পাথরের আড়াল, ফুলদানী, মাটির পাত্র, শামুকের খোলস ইত্যাদিকে ডিম পাড়ার স্থান বা বাসা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পুরুষের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পর প্রথমে স্ত্রীরা প্রায় ২০০টি (এক দফায়) ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর স্ত্রীরা সরে এলে পুরুষেরা ডিমগুলোকে নিষিক্ত করে। পরবর্তী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় এবং সে পর্যন্ত বাবারা ডিমগুলোকে পাহারা দেয় ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।
এ্যাকুয়ারিয়ামে প্রজনন করানোর ক্ষেত্রে ডিম পাড়ার পর মায়েদের এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার আগেই বাবাদের এ্যাকুয়ারিয়াম থেকে সরিয়ে নিতে হয় নতুবা এরা সদ্যজাত বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে।
সদ্যজাত বাচ্চাদের খাদ্য হিসেবে ডিমের কুসুম সিদ্ধ করে কাপড়ে চেলে মিহি আকারে পানিতে প্রদান করতে হয়। এর কয়েকদিন পরেই ব্রাইন শ্রিম্পের (brine shrimp) বাচ্চা খাবার হিসেবে প্রয়োগ করা যায়।

উপযোগী পরিবেশ (Suitable Environment)
প্রকৃতিতে এই মাছের অনুকূল তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রী সে (Fishbase, 2014)।
Aquariumfishparadise (2014) অনুসারে এ্যাকুয়ারিয়ামে এদের অনুকূল তাপমাত্রা ৭৩-৮২° ফা. বা ২৩-২৮° সে., হার্ডনেস (hardness (dGH)) ১২ থেকে ১৮ °N এবং পিএইচ ৭-৮.৫।
Aqua-fish (2014) অনুসারে এ্যাকুয়ারিয়ামে এদের অনুকূল তাপমাত্রা ৭৫.২-৮৬° ফা. বা ২৪-৩০° সে., এবং পিএইচ ৭.৫-৮.৫।

স্বভাবে সামান্য আক্রমণাত্মক। তাই একই এ্যাকুয়ারিয়ামে অন্যান্য বাহারি মাছের সাথে পালন না করাই ভাল। এছাড়াও ক্ষুদ্র আকৃতির বিবেচনায় বড় আকারের শিকারি মাছের সাথেও এদের রাখা উচিৎ নয়। তবে একক প্রজাতি হিসেবে পাঁচ বা ততোধিক সংখ্যক সদস্যদের এক সাথে একটি এ্যাকুয়ারিয়ামে লালন পালন করা যায়।

রোগ (Diseases)
বাংলাদেশে এই মাছের রোগের উপস্থিতি বিষয়ক কোন তথ্য জানা যায় না।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে এর ব্যবহারের সম্ভাব্যতা রয়েছে।

বাজার মূল্য:
বাংলাদেশে প্রতি জোড়া বাম্বলবি গোবি পাওয়া যায় ১০০ টাকায় (Galib and Mohsin, 2011)।

 

তথ্য সূত্র (References)

 


Visited 1,079 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: বাম্বলবি গোবি, Bumblebee Goby, Brachygobius xanthozonus

Visitors' Opinion

এ বি এম মহসিন

প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ...

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.