এ্যাকুয়ারিয়ামে প্লাটির প্রজনন
এ্যাকুয়ারিয়ামে প্লাটির প্রজনন

বাড়ির ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা যায় বোতল নেট ও বয়াম নেট যা বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজনন করানোর জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। অ্যাকুয়ারিয়ামে গোল্ড ফিশ, মলি, প্লাটিগাপ্পি মাছের প্রজনন বিষয়ে আমার প্রকাশিত ফিচারে আমি যেসব উপকরণ ব্যবহার করেছি তার সবগুলোই ছিল ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা। এর আগে ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করুন বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি শিরোনামের প্রথম পর্বের লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা ফ্রেম নেট ও বক্স নেট তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে আর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছিলাম দুই ধরণের গ্যালন নেট তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে। আজ রইল বোতল নেট ও বয়াম নেট তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহারের বিস্তারিত চিত্রসহ বর্ণনা।

বোতল নেট (Bottle Net)

  • যে মাছের জন্য প্রযোজ্য:
    • প্লাটি, মলি, গাপ্পি, সোর্ড টেইল ইত্যাদি
  • তৈরিতে যা যা লাগবে:
    • একটি ২ লিটারের কোকের বোতল (এজাতীয় অন্য বোতল হলেও চলবে)
    • স্ক্রু ড্রাইভার (স্টার হলে ভাল হয়)
    • জিআই তার
    • বাঁশের কঞ্চি বা লাঠি (ঝুল ঝাড়ুর লাঠিও ব্যবহার করা যায়)
বোতলের একপাশটি এভাবেই কেটে নিতে হবে
বোতলের একপাশটি এভাবেই কেটে নিতে হবে
  • যে ভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন:
    • একটি ২ লিটারের কোকের বোতলের একপাশটা চিত্র অনুযায়ী কেটে নিন।
    • স্ক্রু ড্রাইভার (স্টার হলে ভাল হয়) বা মোটা জিআই তারের প্রান্ত আগুনে গরম করে চিত্র অনুযায়ী ছিদ্র করে নিতে হবে (ছিদ্র গুলো ভেতর থেকে বাইরের দিকে করুন। এতে ভিতরের প্রান্ত কম ধারালো হবে)।
    • বোতলের কাটা মুখের দুই পাশে চারটি ছিদ্র করে তাতে জিআই তার বা মোটা সুতা বা সরু রশি ঢুকিয়ে ঝুলানোর জন্য হাতল তৈরি করে নিতে হবে।
    • অ্যাকুয়ারিয়ামে লম্বালম্বিভাবে রাখা একটি বাঁশের কঞ্চি বা লাঠির (ঝুল ঝাড়ুর লাঠি হলেও চলবে) সাথে জিআই তার বা মোটা সুতা বা সরু রশির তৈরি হাতলের সাহায্যে ঝুলিয়ে দিন (চিত্র অনুযায়ী)।
কাটা প্রান্তের পাশে ও নীচে এভাবে অসংখ্য ছিদ্র করে নিতে হবে (বামে)  ।  কাটা প্রান্তের উপরে ও নীচে ছিদ্র করে রশি বেঁধে নিতে হবে যার মাধ্যমে বাঁশের লাঠি থেকে বোতলটি অ্যাকুয়ারিয়ামের পানিতে ঝুলে থাকবে (ডানে)
কাটা প্রান্তের পাশে ও নীচে এভাবে অসংখ্য ছিদ্র করে নিতে হবে (বামে) । কাটা প্রান্তের উপরে ও নীচে ছিদ্র করে রশি বেঁধে নিতে হবে যার মাধ্যমে বাঁশের লাঠি থেকে বোতলটি অ্যাকুয়ারিয়ামের পানিতে ঝুলে থাকবে (ডানে)
অ্যাকুয়ারিয়ামে স্থাপনকৃত একটি বোতল নেট
অ্যাকুয়ারিয়ামে স্থাপনকৃত একটি বোতল নেট
  • সুবিধা:
    • সহজেই তৈরি করা যায়।
    • কম ব্যয় সাপেক্ষ।
    • একটি ২৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ও ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার একুরিয়ামে কয়েকটি বোতল নেট স্থাপন করা যায়।
    • কাজ শেষে সহজেই অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখা যায়।
  • অসুবিধা:
    • মাছ চলাফেরার জন্য খুব একটা জায়গা পায় না।
    • ছিদ্র করা প্রান্ত গুলো ধারালো হয় বলে মাছ শারীরিক ভাবে আহত হতে পারে ।
    • একটি বোতলে এক সঙ্গে একটির অধিক মাছ দেয়া যাবে না।
    • গভীরতা কম বলে মাছ লাফ দিয়ে বাইরে চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে খোলা প্রান্ত নেটের শপিং ব্যাগ দিয়ে আটকে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

 

বয়াম নেট (Jar Net)

  • যে মাছের জন্য প্রযোজ্য:
    • প্লাটি, মলি, গাপ্পি, সোর্ড টেইল ইত্যাদি
  • তৈরিতে যা যা লাগবে:
    • একটি মাঝারি আকারের ব্যবহৃত পুরাতন বয়াম (jar)
    • স্ক্রু ড্রাইভার (স্টার হলে ভাল হয়)
    • জিআই তার
    • বাঁশের কঞ্চি বা লাঠি (ঝুল ঝাড়ুর লাঠিও ব্যবহার করা যায়)
বয়ামের চারপাশে ছিদ্র করে তৈরি করা একটি বয়াম নেট (বামে)  ।  অ্যাকুয়ারিয়ামে স্থাপিত একটি বয়াম নেট (ডানে)
বয়ামের চারপাশে ছিদ্র করে তৈরি করা একটি বয়াম নেট (বামে) । অ্যাকুয়ারিয়ামে স্থাপিত একটি বয়াম নেট (ডানে)
  • যে ভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন:
    • একটি মাঝারি আকারের পুরাতন অর্থাৎ ব্যবহৃত বয়াম প্রথমেই ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
    • এবার বয়ামের চারিদিক স্ক্রু ড্রাইভার (স্টার হলে ভাল হয়) বা মোটা জিআই তারের প্রান্ত আগুনে গরম করে চিত্র অনুযায়ী ছিদ্র করে নিতে হবে (ছিদ্র গুলো ভেতর থেকে বাইরের দিকে করুন। এতে ভিতরের প্রান্ত কম ধারালো হবে)।
    • একই পদ্ধতিতে বয়ামের মুখের ঢাকনায় তিনটি ছিদ্র করুন যার একটি (অপেক্ষাকৃত বড়টি) মাছকে খাবার দেবার জন্য।
    • অন্য দুইটি ছিদ্রে মোটা জিআই তার ঢুকিয়ে ঝুলানোর জন্য হাতল তৈরি করে নিতে হবে।
    • ছবির মত করে বয়ামটি বাঁশের লাঠির (ঝুল ঝাড়ুর লাঠি হলেও চলবে) মাধ্যমে অ্যাকুয়ারিয়ামের মধ্যে ঝুলানোর ব্যবস্থা করুন যাতে বয়ামটি বেশিরভাগ অংশ পানিতে ডুবে থাকে।
  • সুবিধা:
    • সহজেই তৈরি করা যায়।
    • কম ব্যয় সাপেক্ষ।
    • মুখ বন্ধ থাকে বলে মাছ লাফ দিয়ে বাইরে যেতে পারে না।
    • একটি ২৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ও ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার একুরিয়ামে কয়েকটি বয়াম নেট স্থাপন করা যায়।
    • কাজ শেষে সহজেই অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখা যায়।
  • অসুবিধা:
    • মাছ চলাফেরার জন্য খুব একটা জায়গা পায় না।
    • ছিদ্র করা প্রান্ত গুলো ধারালো হয় বলে মাছ শারীরিক ভাবে আহত হতে পারে ।
    • একটি বয়ামে এক সঙ্গে একটির অধিক মাছ দেয়া যাবে না।

 

পুনশ্চ:

  • বিভিন্ন বাহারি মাছের প্রজনন করার সময় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয় তাহলো মা-বাবা মাছ থেকে ডিম ও পোনাকে যথাসময়ে আলাদা করা। আমাদের দেশে বিদেশি বাহারি মাছ হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে গোল্ড ফিশ, মলি, গাপ্পি, সোর্ড টেইল, প্লাটি, জেব্রা ফিশ, টাইগার বার্ব, এঞ্জেল, ফাইটিং ফিশ ইত্যাদি। এদের অনেকে মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে না। আবার অনেকে ডিম বা পোনা দেবার পর নিজেরাই (বিশেষত বাবারা) তা খেয়ে ফেলে। এমন প্রজাতির মা-বাবা মাছ থেকে তাদের ডিম ও পোনাকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন হয় নানা ধরণের সাধারণ উপকরণ তথা যন্ত্রপাতি। যেমন এখানে বর্ণনা করা হয়েছে বোতল নেট ও বয়াম নেট তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতির নানা দিক যা তৈরি করা হয়েছে ঘরের ফেলনা জিনিসপত্র ব্যবহার করে।
  • এর আগে ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করুন বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি শিরোনামের প্রথম পর্বের লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা ফ্রেম নেট ও বক্স নেট তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে আর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছিলাম দুই ধরণের গ্যালন নেট তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে।

Visited 2,396 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করুন বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি: পর্ব-৩

Visitors' Opinion

আয়েশা আবেদীন আফরা

প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বি.এস-সি. ফিশারিজ (অনার্স) ৬ষ্ঠ ব্যাচ (সেশনঃ২০০৪-২০০৫), শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ফিশারীজ কলেজ মেলান্দহ, জামালপুর। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.