ফিশারীজ কোন মৌলিক বিজ্ঞান নয় বরং এটি জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের একটি সমন্বিত বিজ্ঞান যা মাছ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশিষ্ট জলজ প্রাণীদের জীবতত্ত্ব, চাষ, আবাসস্থল ব্যবস্থাপনা, আহরণ, প্রক্রিয়াজনকরণ ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে। তাই ফিশারীজকে বুঝতে হলে অবশ্যই জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সে উদ্দেশ্য পূরণকল্পে শুরু হল বিডিফিশ বাংলার পূর্বপাঠ অধ্যায়। এলেখার বিষয় সাইটোপ্লাজম। সাথে রইল কুইজে অংশ নেয়ার সুযোগ

 

সাইটোপ্লাজম:

  • কোষ আবরণী অন্ত-প্রান্ত এবং নিউক্লিয় আবরণীর বহিঃ প্রান্তের মধ্যবর্তী জেলির মত অংশ সাইটোপ্লাজম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলা যায় নিউক্লিয়াস ছাড়া প্রোটোপ্লাজমের অবশিষ্ট অংশই হচ্ছে সাইটোপ্লাজম।
  • Cytoplasm শব্দটি এসেছে Gr. kytos অর্থাৎ hollow এবং Gr. plasm অর্থাৎ form থেকে।
  • সাইটোপ্লাজমের প্রধান অংশ তিনটি। যথা- কোষ মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স, কোষীয় অঙ্গাণু এবং কোষীয় জড়বস্তু (সঞ্চিত খাদ্য এবং ক্ষরিত পদার্থ)।
  • কোষীয় অঙ্গাণুগুলো হচ্ছে- এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, রাইবোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, লাইসোজোম, সেন্ট্রোজোম, কোষ-গহ্বর, পেরোক্সিজোম, গ্লাইঅক্সিজোম এবং অণুনালিকা বা মাইক্রোটিউবিউলস ইত্যাদি।
  • সাইটোপ্লাজমের বৈশিষ্ট্য: অস্বচ্ছ, অর্ধ-তরল, দানাদার, জেলির ন্যায় পদার্থ।

সাইটোপ্লাজমের ভৌত গঠন:

  • রেটিকুলার মতবাদ (Reticular Theory) অনুসারে এর গঠন জালকের মত।
  • অ্যালভিওলার মতবাদ (Alveolar Theory) অনুসারে এটি অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহ্বর বা অ্যালভিওলাই নিয়ে গঠিত।
  • গ্রানুলার মতবাদ (Granular Theory) অনুসারে এটি অসংখ্য গ্রানিউল বা দানাদার পদার্থ নিয়ে গঠিত।
  • ফাইব্রিলার মতবাদ (Fibrillar Theory) অনুসারে এটি অসংখ্য সূক্ষ্ম তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত।
  • কোলয়ডাল মতবাদ (Colloidal Theory) অনুসারে এর কিছু অংশ দ্রবণ (Solution) কিছু অংশ কোলয়ডীয় (Colloidal)। দ্রবণের দুটি অংশ যথা- দ্রাবক (Solvent) ও দ্রাব (Solute) এবং কোলয়ডালের দুটি দশা যথা- তরল দশা (Liquid phase) ও বিক্ষিপ্ত দশা (Dispersed phase)। বিক্ষিপ্ত দশা প্রোটিন, নিউক্লিক এসিড ও ফ্যাট নিয়ে গঠিত। কোলয়ডালের দুটি অবস্থা পরিলক্ষিত হয়, যথা-জলীয় অবস্থা (Sol state) ও জেল অবস্থা (Gel state)।
  • কোষ আবরণী বা প্লাজমা মেমব্রেন সংলগ্ন সাইটোপ্লাজমের স্বচ্ছ স্তরকে এক্টোপ্লাজম (Ectoplasm), নিউক্লিয়াসের আবরণীর সংলগ্ন সাইটোপ্লাজমের ঘন দানাদার স্তরকে এন্ডোপ্লাজম (Endoplasm) এবং কোষ গহ্বর সংলগ্ন সাইটোপ্লাজমের হালকা স্তরকে টেনোপ্লাজম (Tenoplasm) বলে।

সাইটোপ্লাজমের রাসায়নিক গঠন:

  • প্রধান বা মেজর বা মাইক্রো উপাদান- অক্সিজেন (৬২%), কার্বন (২০%), হাইড্রোজেন (১০%), নাইট্রোজেন (৩%), ক্যালসিয়াম (২.৫%), ফসফরাস (১.১৪%), ক্লোরিন (০.১৬%), সালফার (০.১৪%), পটাশিয়াম (০.১১%) সোডিয়াম (০.১০%), ম্যাগনেসিয়াম (০.০৭%), আয়োডিন (০.০১৪%) ও লোহা (০.১০%)।
  • এছাড়াও কপার, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, মলিবডেনাম, বোরন, সিলিকন ইত্যাদি উপাদান স্বল্প পরিমাণে থাকে বলে এদেরকে মাইক্রো বা ট্রেস বা স্বল্প উপাদান হিসেবে পরিচিত।

 

ধাত্র বা মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স:

  • কোষীয় অঙ্গাণু ছাড়া সাইটোপ্লাজমের অবশিষ্ট অংশই হচ্ছে ধাত্র বা মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স। একে হায়ালোপ্লাজম (Hyaloplasm) বলা হয়।
  • এর মধ্যে বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গাণু ভাসমান অবস্থায় থাকে।
  • এর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের জৈব ও অজৈব পদার্থ ভাসমান অথবা দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
  • ধাত্রের বৈশিষ্ট্য: অস্বচ্ছ, সমসত্ব (Homogenous), কোলয়েড জাতীয় ও অর্ধ-তরল।
  • ধাত্রের কাজ: কোষ অঙ্গাণু ও কোষীয় বস্তুসমূহকে ধারণ করা। নিজেই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে কোষের আয়তনগত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে এবং কোষ বিভাজনের সময় বিভাজিত হয়ে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোষীয় অঙ্গাণু, খাদ্যের গৃহীত অংশ, এনজাইম, হরমোন ইত্যাদিকে আবর্তন গতির (Cyclosis) সাহায্যে কোষের একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর করা। বিপাক ক্রিয়ার প্রধান স্থল হিসেবে কাজ করা। ভৌত ও রাসায়নিক প্রভাবকের প্রতি সাড়া প্রদান করা।

 

কোষীয় অঙ্গাণু (Cell Organelles):
কোষীয় অঙ্গাণুগুলো হচ্ছে- এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, রাইবোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, লাইসোজোম, সেন্ট্রোজোম, কোষ-গহ্বর, পেরোক্সিজোম, গ্লাইঅক্সিজোম এবং অণুনালিকা বা মাইক্রোটিউবিউলস ইত্যাদি।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা জালিকা (Endoplasmic Reticulum):

  • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন থেকে শুরু করে কোষ আবরণী পর্যন্ত শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট বিস্তৃত থলি বা নালী সদৃশ কোষ অঙ্গাণু।
  • ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞানী পোর্টার ও তাঁর সহযোগীরা এটি আবিষ্কার করেন।
  • তিন ধরণের গঠন দেখতে পাওয়া যায় তবে আকৃতি অপরিবর্তনশীল। যথা- নলাকার (টিবিউল বা Tubule), শাখা-প্রশাখা যুক্ত, জালকের ন্যায় বিস্তৃত, ব্যাস ৫০-১৯০ মিলিমাইক্রন (mµ)। গোলাকার বা ডিম্বাকার থলির (ভেসিকল বা Vesicle) মত, ব্যাস ৩০-৫০ মিলিমাইক্রন (mµ) । লম্বা, শাখা-বিহীন, চ্যাপ্টা থলির (সিস্টারনি বা Cisternae) মত এবং সমান্তরালে বিস্তৃত, ব্যাস ৪০-৫০ মাইক্রন (µ)।
  • এর গায়ে রাইবোজোম উপস্থিত থাকলে তাকে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে। অন্যদিকে রাইবোজোম অনুপস্থিত থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।
  • কাজ: সাইটোপ্লাজমের কাঠামো তৈরি, যান্ত্রিক কাজে সহায়তা প্রদান, এনজাইম সমবন্টনের সহায়তা প্রদান, শারীরবৃত্তীয় কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি, কোষ গহ্বর ও অঙ্গাণু গঠনে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন অঙ্গাণুর মধ্যে সংযোগ রক্ষা ইত্যাদি।

রাইবোজোম (Ribosome):

  • প্রায় গোলাকার বা ডিম্বাকার, ব্যাস ৯০-১৬০ অ্যাংস্ট্রম (Å), দুটি অসম অংশ নিয়ে গঠিত, পর্দা বিহীন এবং তরলে পূর্ণ নয়। উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষে পাওয়া যায়।
  • ১৯৫৬ সালে বিজ্ঞানী প্যালেড (Palade) রাইবোজোম আবিষ্কার করেন।
  • এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা জালিকার গায়ে, নিউক্লীয় পর্দার গায়ে, মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে অথবা সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে।
  • এতে ৫০% আরএনএ এবং ৫০% হিসটোন জাতীয় প্রোটিন থাকে।
  • এটি সৃষ্টিতে নিউক্লিয়াস প্রধান ভূমিকা পালন করে।
  • একাধিক রাইবোজোম একটি সূক্ষ্ম আরএনএ সূত্রের মাধ্যমে যুক্ত থাকলে তখন তাকে পলিসোম (Polysome) বা পলিরাইবোজোম (Polyrrrriririribosome) বলে।
  • কাজ: প্রোটিন সংশ্লেষ করা। স্নেহ জাতীয় পদার্থের বিপাকে সাহায্য কর।

মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria):

  • কোষের যাবতীয় জৈবনিক কাজের শক্তি যোগায় বিধায় একে কোষের শক্তিঘর বা পাওয়ার হাউজ বলে।
  • ১৮৯৫ সালে বিজ্ঞানী আল্টম্যান (Altman) সর্বপ্রথম এর উপস্থিতি জানতে পারলেও ১৮৯৭ সালে বিজ্ঞানী বেন্ডা (Benda) সর্বপ্রথম এর নামকরণ করেন মাইটোকন্ড্রিয়া।
  • সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে তবে কোষ বিভাজনের সময় স্পিন্ডিল এর কাছাকাছি থাকে।
  • দণ্ডাকার (দৈর্ঘ্য ৯ মাইক্রন, প্রস্থ ০.৫ মাইক্রন), গোলাকার (ব্যাস ০.২-২ মাইক্রন বা সামান্য বেশী), সূত্রাকার (৪০ মাইক্রন) বা আংটির মত হয়ে থাকে। কোষের শারীরবৃত্তীয় কাজের উপর এর আকৃতি নির্ভর করে।
  • প্রতিটি কোষে এর সংখ্যা ২০০-৩০০টি তবে কোষের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে এর সংখ্যা।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার কেন্দ্রস্থলে দানাদার মাতৃকা বা ধাত্র থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়া প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত দুটি আবরণীতে আবৃত। বাইরেরটি মসৃণ, ভেতরেরটি অনিয়মিতভাবে ভাঁজ হয়ে ক্রিস্টি (Cristae) নামক অভিক্ষেপ সৃষ্টি করে থাকে। অন্তঃআবরনীর বাইরের গাত্রে অক্সিজোম নামক অসংখ্য দানা থাকে যার ব্যাস ৮০-১০০ অ্যাংস্ট্রম (Å) এবং পদ, বৃন্ত এ মস্তকে বিভক্ত।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ায় ৬০-৭০% প্রোটিন, ২৫-৩৫% লিপিড, ০.৫% আরএনএ এবং সামান্য পরিমাণ ডিএনএ থাকে।
  • কাজ: এর মাধ্যমে খাদ্য মধ্যস্থ শক্তি নির্গত হয়। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে ভূমিকা রাখে। স্নেহ বিপাকে অংশ নেয়। সামান্য আরএনএ ও ডিএনএ উৎপন্ন করে।

গলগি বস্তু (Golgi Body):

  • নিউক্লিয়াসের নিকটবর্তী মসৃণ গাত্র বিশিষ্ট জালিকা বিশেষ যা স্তরীভূত থাকে, স্তরগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট এবং এর প্রাচীর প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে গঠিত।
  • এর অপর নাম লাইপোকন্ড্রিয়া (Lipochondria)
  • ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী ক্যামিলো গলগি (Camillo Golgi) সর্বপ্রথম পেঁচা ও বিড়ালের স্নায়ুকোষে গলগি বস্তু দেখতে পান।
  • অসমিয়াম টেট্রা-অক্সাইড দিয়ে রঞ্জিত করা যায়।
  • এর গঠন কোষের শারীরবৃত্তীয় কাজের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ আকৃতি পরিবর্তনশীল। যেমন- চ্যাপ্টা থলি (সিস্টারনি বা Cisternae): সমান্তরালভাবে অবস্থিত, লম্বা, চাপা, অসমান দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নালিকা, বড় গহ্বর (ভ্যাকুওল বা Vacuole): অপেক্ষাকৃত বড় গোলাকার থলি যা সিস্টারনির প্রাচীর চওড়া হয়ে সৃষ্টি হয়, ক্ষুদ্র গহ্বর (ভেসিকল বা Vesicle): অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও গোলাকার এবং সিস্টারনির নিচে অবস্থিত।
  • কাজ: খাদ্যদ্রব্যের সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে, বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়, কোষপ্রাচীরের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ ক্ষরণ করে, লাইসোজোম গঠনে সাহায্য করে, মাইটোকন্ড্রিয়াকে এটিপি তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে, কিছু যৌগ এনজাইম সৃষ্টিতে অংশ নেয়, প্রোটিনের অংশসমূহকে সন্নিবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে।

লাইসোজোম (Lysosome):

  • মসৃণ বা অমসৃণ গাত্রের এই অঙ্গাণু সাধারণত গোলাকার (ব্যাস ০.২৫-০.৮০ মিলিমাইক্রন [mµ]) এবং প্রোটিন নির্মিত আবরণী বেষ্টিত গহ্বর বিশেষ। প্রধানত প্রাণী কোষেই দেখা যায়। এর মধ্যে নানা ধরণের পাচনকারী এনজাইম পূর্ণ তরল থাকে।
  • প্লাজমাপর্দা অথবা গলগি বস্তু থেকে এর উৎপত্তি।
  • ১৯৫৫ সালে বিজ্ঞানী দ্য দুভে (de Duve) এর নামকরণ করেন।
  • ক্ষরণকারী কোষ ও শ্বেত-কণিকায় বেশী পাওয়া যায়।
  • কাজ: কোষীয় পরিপাক অর্থাৎ কোষে প্রবিষ্ট খাদ্যকণা এনজাইম দিয়ে পাচিত করা, অকেজো কোষ ধ্বংস করা, কোষ বিভাজনে প্রেরণা যোগানো।

সেন্ট্রোজোম (Centrosome):

  • কোষে একটি সেন্ট্রোজোম থাকে। প্রতিটি সেন্ট্রোজোমে দুটি সেন্ট্রিওল দেখতে পাওয়া যায়। দুটি সেন্ট্রিওলকে একত্রে ডিপ্লোজোম (Diplosome) বলে।
  • সেন্ট্রিওলের চারপাশের গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার (Centrosphere) বলে। সেন্ট্রিওল ও সেন্ট্রোস্ফিয়ারকে একত্রে সেন্ট্রোজোম বলে।
  • নিউক্লিয়াসের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত সেন্ট্রিওল দুটি ফাঁপা, বেলনাকার বা দণ্ডাকার, আবরণ-বিহীন এবং অণুনালিকাযুক্ত।
  • প্রতিটি সেন্ট্রিওল প্রাচীর (সিলিন্ডার ওয়াল বা Cylinder wall), নয়টি ত্রয়ী অণুনালিকা (ট্রিপলেটস বা Triplets) ও যোজক (লিংকার বা Linkers) নিয়ে গঠিত।
  • আদি সেন্ট্রিওল থেকেই নতুন সেন্ট্রিওল উৎপন্ন হয়। সেন্ট্রিওল প্রোটিন, লিপিড ও এটিপি নিয়ে গঠিত।
  • সেন্ট্রিওল স্নায়ুকোষে নিষ্ক্রিয় থাকে।
  • কাজ: কোষ বিভাজনের সময় স্পিন্ডল (Spindle) গঠন করে, অনেক কোষে সিলিয়া ও ফ্লাজেলা তৈরি করে, শুক্রাণুর লেজ তৈরি করে।

কোষ-গহ্বর (Vacuole):

  • সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত তরল পদার্থে পূর্ণ আবরণ বেষ্টিত অতি ক্ষুদ্রাকার গহ্বর।
  • কাজ: কোষীয় ক্ষরণ ধারণ করে, এককোষী প্রাণীদের খাদ্য বহন ও পরিপাক করে এবং রেচন অঙ্গের কাজ করে।

পেরোক্সিজোম (Peroxisome):

  • কোষ আবরণীর অনুরূপ আবরণে বেষ্টিত।
  • জারণগুণ বিশিষ্ট এনজাইমে পূর্ণ অতি ক্ষুদ্রাকার অঙ্গাণু
  • কাজ: জারণ ক্রিয়ায় অংশ নেয়, H2O2 কে পানি ও অক্সিজেনে বিভক্ত করে।

গ্লাইঅক্সিজোম (Glyoxysome):

  • কোষ আবরণীর অনুরূপ আবরণে বেষ্টিত।
  • স্নেহপদার্থে পূর্ণ অতি ক্ষুদ্রাকার অঙ্গাণু।
  • কাজ: স্নেহ পদার্থের সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে, স্নেহ বিপাকে অংশ নেয়, ফ্যাটি এসিড জারণ নিয়ন্ত্রণ করে।

অণুনালিকা বা মাইক্রোটিউবিউলস (Microtubules):

  • সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত প্রোটিন নির্মিত, সূত্রাকার, শাখা বিহীন, ফাঁপা নলের মত দণ্ড বিশেষ যার ব্যাস ২১০-২৫০ অ্যাংস্ট্রম (Å)।
  • ১৯৫৩ সালে বিজ্ঞানী রবার্ট (Robert) এবং বিজ্ঞানী ফ্রানচি (Franchi) মায়েলিন আবরণীযুক্ত কোষের অ্যাক্সপ্লাজমে মাইক্রোটিউবিউলস প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন।
  • কাজ: সিলিয়া ও ফ্লাজেলার আন্দোলনে সহায়তা করে। স্পিন্ডল গঠন ও ক্রোমোজোমের বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা প্রদান, পানি ও খনিজ অণুর অন্তঃকোষীয় পরিবহণে ভূমিকা রাখে।

কোষীয় জড়বস্তু:

  • সঞ্চিত খাদ্য এবং ক্ষরিত পদার্থ কোন আবরণ ছাড়াই সাইটোপ্লাজমের মাতৃকায় ভাসমান অবস্থায় থাকে।
  • কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও লিপিড বিভিন্নভাবে সঞ্চিত থাকে।
  • রডপসিন, মেলানিন প্রভৃতি রঞ্জক পদার্থও সাইটোপ্লাজমের মাতৃকায় দেখা যায়।
  • কাজ: এগুলো বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়, অভিস্রবনিক চাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে, দেহাংশের বর্ণ প্রকাশে ভূমিকা রাখে।

তথ্যসূত্র:

 

কুইজে অংশ নিতে লিঙ্কটি অনুসরণ করুন


Visited 12,527 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
সাইটোপ্লাজম

Visitors' Opinion

Tagged on:                                                     

রাহাত পারভীন রীপা

প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.