জলবাযু, পরিবেশ ও সামাজিক দ্বায়িত্ববোধের মতো বিষয়াবলি নিয়ে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী যথন তোলপাড় ঠিক সে সময়ে ড. সুশান্ত কুমার পালের “চিংড়িঃ পরিবেশবান্ধব চাষ প্রযুক্তি, আর্থ-সামাজিক ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা” বইটি ফিশারীজ সেক্টর তো বটেই দেশের অর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইটিতে মোট নয়টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম সাতটিতে চিংড়ির পরিচিতি ও সংক্ষিপ্ত তথ্যাদি (প্রথম অধ্যায়), উপকূলীয় পরিবেশ (দ্বিতীয় অধ্যায়), গলদা চিংড়িঃ পরিবেশবান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনা (তৃতীয় অধ্যায়), বাগদা চিংড়িঃ পরিবেশবান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনা (চতুর্থ অধ্যায়), আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও চিংড়ি চাষে পরিবেশের উপর প্রভাব (পঞ্চম অধ্যায়), মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা (ষষ্ঠ অধ্যায়) এবং চিংড়ি চাষ ও পরিবেশঃ পর্যালোচনা/সুপারিশমালা (সপ্তম অধ্যায়) প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত ও বৈজ্ঞানিকব্যাখ্যাসহ অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি অধ্যায়ে আনুষঙ্গিক বিষয়াদি (অষ্টম অধ্যায়) ও গ্রন্থপঞ্জি/আদ্যক্ষরা শব্দাবলী (নবম অধ্যায়) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা বইটিকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।
বইটির মুখবন্ধে মোঃ রফিকুল ইসলাম (মহাপরিচালক, ম্ৎস্য অধিদপ্তর) লিখেছেন- “বইটিতে লেখক পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষের বিভীন্ন দিক, আর্খ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ও সুষ্ঠু হ্যাসাপ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধাপ অর্থৎ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এর প্রযুক্তিগত চাষ থেকে শুরু করে আগরণ, চিংড়ি পরিবহণ, প্রক্রিয়াজাতকারণ, গোদামজাত ও রপ্তানীর বিভিন্ন পর্যায় অতি সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন”। বইটির “উপাচার্যের কিছু কথা” শিরোনামের পাতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলতাফ হোসেন লিখেছেন- “বাংলাদেশসহ ভারতের বাংলা ভাষাভাষি কিছু রাজ্যে চিংড়ি চাষ বিস্তার লাভ করেছে। কিন্তু এতদঅঞ্চলের চাষীদের কাছে বাংলা ভাষায় সাম্প্রতিক প্রযুক্তি নির্ভর পুস্তক নেই বললেই চলে। বর্তমান বইটির লেখক ড. সুশান্ত কুমার পাল অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বইটি উপস্থাপন করে এর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস”। বইটির অবতরণিকায় লেখক আমাদের জানিয়েছেন- “আগে খাদ্যের মান সংক্রান্ত নিশ্চয়তা কেবল হ্যাজার্ড এনালাইসিস ক্রিটিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্টের বিশ্লেষণের উপর সীমাবদ্ধ ছিল, সম্প্রতি মান সংক্রান্ত নিশ্চয়তার গণ্ডি অনেক প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা প্রাধান্য পেয়েছে, অনুসন্ধানযোগ্যতা, পরিবেশগত সহনশীলতা, শ্রম অধিকার, সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ বিষয়ক বিভিন্ন দিক। আজ আমাদের যেটা প্রয়োজন তাহলো সংঘাত, সামাজিক অস্থিরতা আর পরিবেশ অবক্ষয় এড়িয়ে আমাদের এই বিস্তৃত উপকূলীয় জলাশয়ে সুষ্ঠ চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের পরিচিতি এনে দেয়া”।
বইটির লেখক পরিচিতি থেকে জানা যায় সিলেটে জন্ম নেয়া ড. সুশান্ত কুমার পাল কেবলমাত্র উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিংড়ি বিজ্ঞান লেখকই নন একাধারে তিনি ছড়াকার, ক্রীড়ামোদি, অংকনারাগি, সাহিত্যপ্রেমিক ও ভ্রমণবিলাসী। তাঁর পেশাগত সংযুক্তি রয়েছে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পরীক্ষক হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে প্রকল্প মূল্যায়ক হিসেবে এবং বিভিন্ন জার্নালের (SAARC/SAIC সহ) সম্পাদনা সদস্য হিসেবে। তিঁনি ভারতের অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে মৎস্য বিজ্ঞানে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রক্তন সদস্য-পরিচালক (মৎস্য)।
বইটি সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর গুলশান আরা লতিফা, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রথম প্রকাশঃ জুলাই-২০০৮। প্রকাশিকাঃ মনিকা, গুরুদাসপুর, নাটোর। তিনশত নব্বই টাকা মূল্যের এই বইটি পাওয়া যাবে- ৫৬/এলিফেন্ট রোড, ঢাকা এই ঠিকানায় (ফোনঃ ৮৬১১৪২১)।
Visited 832 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?