সময়ের বহমানতায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগ দশ দশটি বছর অতিক্রম করে এসেছে। ২০০০ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ফিশারীজ নামক যে চারা গাছটি রোপিত হয়েছিল আজ তা নব পত্র পল্লবে সজ্জিত হয়ে তার শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করেছে এবং জানিয়ে দিচ্ছে তার উপস্থিতি। এরই সূত্র ধরে গত ২৩ শে অক্টোবর, শনিবার বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালিত হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের দশ বছর পূর্তি উৎসব। উক্ত উৎসব উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল উদ্বোধন ও শোভাযাত্রা, সেমিনার, স্মৃতিচারণ এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, প্রফেসর ড. এম. আব্দুস সোবহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালযের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দীন শাহ্, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ নূরুল্লাহ এবং কৃষি অনুষদের সম্মানিত অধিকর্তা প্রফেসর মো. সোহরাব আলী, দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরণিকায় পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করে একে সমৃদ্ধ করেছেন। মাননীয় উপাচার্য মহোদয় তাঁর বাণীতে বলেন, “কৃষি প্রধান বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে মৎস্যখাত। আর এই ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের জনগনের স্থায়িত্বশীল জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।”
সকাল ৯.৩০ টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী কার্যক্রমের সূচনা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালযের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দীন শাহ্, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপউপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ নূরুল্লাহ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মানিত অধিকর্তা প্রফেসর মো. সোহরাব আলী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন মৎস্যবিজ্ঞানী ও প্রচার মাধ্যমের অনেক সাংবাদিকবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফিশারীজ বিভাগের সভাপতি ড. মোহা. আখতার হোসেন। পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং প্রথমে অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি সকলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগ শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মৎস্যখাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।” এছাড়াও প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ তাঁদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে মিলনায়তনের বাইরে জাতীয় পতাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এরপরে দশ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে মিলনায়তনের সামনে এসে পুনরায় শেষ হয়।
দিনব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে বেলা ১২.০০ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে “Fisheries activities in northern Bangladesh: Sustainable livelihood and climate change aspects” শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারের টেকনিক্যাল সেশনের সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দীন শাহ্। এর পূর্বে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ফিশারীজ বিভাগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও কৃতি স্মারক প্রদান করা হয়। শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয় রাবির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দীন শাহ্, রাবির উপউপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ নূরুল্লাহ এবং কৃষি অনুষদের সম্মানিত অধিকর্তা প্রফেসর মো. সোহরাব আলীকে। শ্রদ্ধা স্মারক যাদের প্রদান করা হয় তাঁরা হলেন- ফিশারীজ বিভাগের তিনজন প্রাক্তন সভাপতি যথাক্রমে ড. সেলিনা পারভীন (প্রফেসর, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), ড. এন. আই. এম. আবদুস সালাম ভূঁইয়া (প্রফেসর, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ) এবং ড. সালেহা জেসমিন (সহযোগী অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ)। কৃতি স্মারক প্রদান করা হয় প্রফেসর ড. এ.কে.এম আমিনুল হক, জাতীয় অধ্যাপক, বাকৃবি; প্রফেসর ড. এম. আলতাফ হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাবি এবং প্রফেসর ড. এম. আমিনুল ইসলাম, ফিশারীজ বায়োলজী এন্ড জেনেটিক্স বিভাগ, বাকৃবি।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বায়োলজী এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোস্তফা আলী রেজা হোসেন। এছাড়াও প্রফেসর ড. এম. নিয়ামুল নাছের (ঢাবি), মো. আরিফুল ইসলাম [Community Management Specialist, RFLDC (GoB-DANIDA)], খুলনা বিভগের মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব গোলাম রব্বানী গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
বিকেল ৪.০০ টায় ফিশারীজ বিভাগের গ্যালারী কক্ষে “এসো মিলি প্রাণের মেলায়-উৎসবের দোলায়” শীর্ষক এক স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে ফিশারীজ বিভাগের প্রাক্তন সভাপতিমণ্ডলী, সাবেক ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তাদের স্মৃতির পাতা থেকে বিভন্ন কথা তুলে ধরেন এবং সবাইকে ভাবাবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যান । অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বিভাগীয় সহযোগী অধ্যাপক ড. ফৌজিয়া এদিব ফ্লোরা।
পড়ন্ত বিকেলের পড়ে নামে সন্ধ্যা। আর এই সন্ধ্যায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফিশারীজ বিভাগের পক্ষ থেকে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশ মাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমেই সমবেত দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করা হয় এবং শেষে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষিত হয়।
Visited 541 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?