শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Cypriniformes (Carps)
পরিবার: Cyprinidae (Minnows or carps)
উপপরিবার: Rasborinae
গণ: Rasbora
প্রজাতি: R. daniconius
নামের শব্দতত্ত্ব (Etymology)
এই মাছের ভারতীয় স্থানীয় নাম Rasbora থেকে Rasbora শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে (Fishbase, 2015)।
সমনাম (Synonyms)
Cyprinus anjana Hamilton, 1822
Cyprinus daniconius Hamilton, 1822
Leuciscus anjana (Hamilton, 1822)
Leuciscus dandia Valenciennes, 1844
Leuciscus daniconius (Hamilton, 1822)
Leuciscus flavus Jerdon, 1849
Leuciscus lateralis McClelland, 1839
Leuciscus malabaricus Jerdon, 1849
Opsarius anjana (Hamilton, 1822)
Opsarius daniconius (Hamilton, 1822)
Parluciosoma daniconius (Hamilton, 1822)
Rasbora daniconius daniconius (Hamilton, 1822)
Rasbora malabarica (Jerdon, 1849)
Rasbora neilgherriensis Day, 1867
Rasbora palustris Smith, 1945
Rasbora woolaree Day, 1867
Rasbora zanzibarensis Günther, 1867
সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: অঞ্জনি, চেলা, পাতি চেলা, দাধিখা, ডালকিনা, ডানকনি, দাড়িয়া এবং দারকিনা।
English: Slender rasbora, Common rasbora, and Blackline rasbora
ভারত: Dohni-konch এবং Darikhana (আসাম); Danikoni, Angjani এবং Dhera (পশ্চিমবঙ্গ); Charl, Raankaalle এবং Chinodolah (পাঞ্জাব), Jilo (উডিষ্যা); Jobidayee এবং Narangi (অন্ধ্র প্রদেশ); Purroovoo, Ovaree-Candee (তামিল নাড়ু); Kokanutchee (কেরালা); Needdean-jabbu (কর্ণাটক); Dandwan এবং Dandai (মহারাষ্ট্র) এবং Jonir Darai (গুজরাটের) (Talwar and Jhingran, 1991)।
ভৌগলিক বিস্তৃতি (Geographical Distribution)
বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাত্তস, মালয়েশিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের স্থানীয় মাছ (Jenkins and Ali, 2013)।
সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে বাংলাদেশে এই মাছের সংরক্ষণ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই (Data deficient) ।
বৈশ্বিক সংরক্ষণ অবস্থা মানদণ্ড ver 3.1 অনুসারে Least Concern (LC) অর্থাৎ প্রকৃতিতে এই মাছ বিস্তৃত পরিসরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় যদিও এদের জনতার ধারা (Population Trend) অজানা (Jenkins and Ali, 2013) ।
বাহ্যিক দৈহিক গঠন (External Morphology)
লম্বা দেহ উভয় পাশে চাপা। পৃষ্ঠ তলের চেয়ে অঙ্কীয় তল অধিক উত্তল। মুখের চির আকারে ছোট এবং উপরের দিকে তির্যকভাবে অবস্থিত। স্পর্শী অনুপস্থিত। চোখের আকারে তুলনামূলক বড় এবং পার্শ্বীয়ভাবে অবস্থিত। উপরের চোয়াল চোখের সম্মুখ কিনারার নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত।
পার্শ্বরেখা প্রায় সম্পূর্ণ, কেবলমাত্র শেষ কয়েকটি আঁইশে পার্শ্বরেখা ছিদ্র দেখতে পাওয়া যায় না (EOL, 2015)। অবতলভাবে অবস্থিত পার্শ্বরেখা বরাবর ২১-৩৪ টি আঁইশ উপস্থিত।
পৃষ্ঠপাখনা পৃষ্ঠদেশে চোখের সম্মুখ প্রান্ত ও পুচ্ছপাখনার গোড়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। অন্যদিকে শ্রোণীপাখনা তুণ্ড ও পুচ্ছপাখনার গোড়ার মধ্যবর্তী স্থান অবস্থিত।
দেহের বর্ণ পৃষ্ঠদেশে জলপাই, উদর ও উদরের সম্মুখে রূপালি। একটি গাঢ় নীল-কালো বর্ণের ডোরা তুণ্ড বা চোখের পর থেকে পুচ্ছপাখনা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ডোরার উভয় পাশে অর্থাৎ উপরে ও নিচে ধাতব সোনালী বর্ণের রেখা উপস্থিত। পুচ্ছপাখনার সম্মুখে (পায়ুপাখনা বরাবর) পার্শ্বীয়ভাবে একটি কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। (Rahman and Chowdhury, 2009; Talwar and Jhingran, 1991; Rahman, 1989 and 2005)।
পাখনা সূত্র (Fin formula)
D. 9 (2/7); P. 15; V. 9; A. 7 (2/5); C. 19 (Bhuiyan, 1964; Shafi and Quddus, 2001)
D. 9 (2/7); P1. 14-15; P2. 9; A. 7 (2/5) (Rahman, 1989 and 2005)
D ii 7; A ii 5; P i 14; V i 8 (Talwar and Jhingran, 1991)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য Bhuiyan (1964) অনুসারে ৭ সেমি, Talwar and Jhingran (1991) এবং Shafi and Quddus (2001) অনুসারে ১০ সেমি । তবে মোট দৈর্ঘ্যে এই মাছের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি (Fishbase, 2015)।
আবাস্থল (Habitat)
স্বাদুপানি ও ঈষৎ লোনা জলের এই মাছ জলাশয়ের তলদেশে যেমন থাকতে পছন্দ করে তেমনই জলাশয়ের উপরের স্তরেও থাকতে পছন্দ করে। এদের অনুকূল তাপমাত্রা ২৪-২৬°C (Fishbase, 2015)। প্রকৃতিতে এই মাছের অনুকূল হার্ডনেস ১২ dH, পিএইচ ৭ এবং গভীরতা ১ মিটার (EOL, 2015)।
বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে এরা বাস করে। যথা- ডোবা, পুকুর, খাল, হাওর, ঝর্ণা, নদী ও প্লাবনভূমি ইত্যাদি। সাধারণত বালুময় তলদেশ ও ধীরে প্রবহমান বিশিষ্ট বড় ঝর্ণাধারা ও নদীতে এদের সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। স্বাদুপানির জলাশয়ের মধ্যে অভিপ্রয়াণ করতে দেখা যায়। (Fishbase, 2015; Jenkins and Ali, 2013; Rahman and Chowdhury, 2009; Talwar and Jhingran, 1991; Rahman, 1989 and 2005)।
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
এরা প্রধানত জলাশয়ের উপরিভাগের খাদক। খাদ্য হিসেবে শেত্তলা, জলজ পোকামাকড়, প্রোটোজোয়া (protozoa) এমন কি কাদামাটি ও বালিও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে (Shafi and Quddus, 2001)।
Fishbase (2015) অনুসারে এরা প্রধানত জলজ পতঙ্গ এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর গলিত বস্তু খেয়ে থাকে। জলাশয়ের উপরিস্থের খাবার খেয়ে থাকে।
বাস্তুতাত্ত্বিক ভূমিকা (Ecological Role)
এরা শিকারি মাছের প্রধান খাদ্য। জলজ পরিবেশের উপরের স্তরে বসবাসকারী পোকামাকড় ও শৈবাল ব্লুম নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে। আবার গলিত ও পচা খাবার খেয়ে পানি পরিস্কারে অংশ নিয়ে থাকে। (Rahman and Chowdhury, 2009)
প্রজনন (Breeding)
প্রকৃতিতে পরিণতরা বর্ষাকালে প্রজনন করে থাকে। মায়েরা নদী ও পুকুরে ডিম পাড়ে Fishbase (2015) ।
এদের স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে স্ফীত, শক্তিশালী ও অধিক দেহ গভীরতার অধিকারী হয়ে থাকে। স্ত্রীদের উদরের বর্ণ সাদাটে। অন্যদিকে পুরুষেরা অধিক সরু ও আকারে ছোট হয়ে থাকে। পুরুষের উদর হলুদাভ বা লালাভ হয়ে থাকে।
এ্যাকুয়ারিয়ামে সহজেই এদের প্রজনন করানো যায়। এরা কোন প্রত্যক্ষ মাতৃপিতৃযত্ন প্রদর্শন করে না। এদের ডিম জলজ উদ্ভিদের পাতার আড়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চারা তুলনামূলক বড় আকারের হয়ে থাকে এবং তিন দিন পরেই সাঁতার কাটা ও খাবার গ্রহণে উপযোগী হয়ে যায়। এসময় এদের ব্রাইন শ্রিম্পের বাচ্চা (baby brine shrimp) খাবার হিসেবে সরবরাহ করা প্রয়োজন। এ্যাকুয়ারিয়ামে মা-বাবা কর্তৃক বাচ্চা খেয়ে ফেলার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায় তাই ডিম দেয়ার পরপরই মা-বাবাকে আলাদা এ্যাকুয়ারিয়ামে স্থানান্তর করা আবশ্যক (Roth et al., 2015) ।
এ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবস্থাপনা (Aquarium Management)
এ্যাকুয়ারিয়ামের ন্যূনতম আকার ২০ গ্যালন বা ৭৬ লিটার। এরা যেহেতু ঝাঁক বেঁধে চলে তাই লম্বা আকারের এ্যাকুয়ারিয়াম সুবিধাজনক। ন্যানো ট্যাঙ্কেও এদের লালন-পালন করা যায়।
এ্যাকুয়ারিয়ামের আদর্শ তাপমাত্রা ৭১-৮০° F বা ২১.৭-২৬.৭° C (প্রজননের জন্য তাপমাত্রা কমপক্ষে ৮০° F বা ২৬.৭° C থাকা দরকার), হার্ডনেস ৮-১৭ dGH এবং পিএইচ ৬-৭.৫।
এরা এ্যাকুয়ারিয়ামে উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় ধরণের খাবারই খেয়ে থাকে। ফ্লেক (Flake), ট্যাবলেট পিলেট (Tablet Pellet), সবজি, জীবন্ত খাবার যেমন ডাফনিয়া (Daphnia), ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp) ব্লাডওয়ার্ম (bloodworm) ইত্যাদি, মাংস জাতীয় খাবার (Meaty Food) যেমন মাছ, চিংড়ি ইত্যাদি খেয়ে থাকে। (Roth et al., 2015)
রোগ (Disease)
এদের দেহের ত্বক এ এবং পেশী-সংযুক্ত অংশে Myxobolus nodularis দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে (Shafi and Quddus, 2001).
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
একক প্রজাতি হিসেবে এই মাছের উৎপাদন তথ্য পাওয়া যায় না। খাবারের মাছ হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে এই মাছ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই মাছের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হলে বাহারি মাছ হিসেবে দেশ বিদেশে এই মাছ বাণিজ্যিক মাছ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
তথ্য সূত্র (References)
- Bhuiyan AL (1964) Fishes of Dacca, Asiatic Society of Pakistan, Publication 1, No. 13, Dacca, pp. 42-43.
- Cuvier G and Valenciennes A (1844) Histoire naturelle des poissons. Tome dix-septième. Suite du livre dix-huitième. Cyprinoïdes. Histoire naturelle des poissons. 17: i-xxiii + 1-497 + 2 pp., Pls. 487-519.
- Day F (1867) On the fishes of the Neilgherry Hills and rivers around their bases. Proceedings of the General Meetings for Scientific Business of the Zoological Society of London 1867 (2): 281-302.
- EOL (2015) Rasbora daniconius, Slender Rasbora Downloaded on 10 April 2015 and from http://eol.org/pages/206646/details
- Fishbase (2015) Species Summary: Rasbora daniconius (Hamilton, 1822), Slender rasbora. Downloaded on 10 April 2015 and from http://www.fishbase.org/summary/5493
- Hamilton F (1822) An account of the fishes found in the river Ganges and its branches. Edinburgh & London. An account of the fishes found in the river Ganges and its branches.: i-vii + 1-405, Pls. 1-39.
- IUCN Bangladesh (2000) Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
- Jenkins A and Ali A (2013) Rasbora daniconius. The IUCN Red List of Threatened Species. Version 2014.3. Downloaded on 09 April 2015 and from http://www.iucnredlist.org/details/166467/0.
- Jerdon TC (1849) On the fresh-water fishes of southern India. (Continued from p. 149.). Madras Journal of Literature and Science 15(2):302-346.
- Playfair RL and Günther A (1867) The fishes of Zanzibar, with a list of the fishes of the whole east coast of Africa. London. [Reprinted in 1971, with a new introduction by G. S. Myers and a new forward by A. E. Gunther; Newton K. Gregg, publisher, Kentfield, California.]. The fishes of Zanzibar, with a list of the fishes of the whole east coast of Africa.: i-xix + 1-153, Pls. 1-21.
- Rahman AKA (1989) Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 89-90.
- Rahman AKA (2005) Freshwater Fishes of Bangladesh, 2nd edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 106-107.
- Rahman AKA and Chowdhury GW (2009) Rasbora rasbora. In: Ahmed ZU, Ahmed ATA, Kabir SMH, Ahmed M, Begum ZNT, Hasan MA and Khondker M (eds.) Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol. 23. Freshwater Fishes (In Bengali). Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka. p. 105.
- Roth B, Brough C and Roche J (2015) Slender Rasbora, Striped Rasbora, Black Line Rasbora, Gold Line Rasbora. Downloaded on 10 April 2015 and from http://animal-world.com/encyclo/fresh/cyprinids/SlenderRasbora.php
- Shafi M and Quddus MMA (2001) Bangladesher Matsho Shampad (Fisheries of Bangladesh) (in Bengali), Kabir publication. Dhaka, Bangladesh. pp. 159-160.
- Smith HM (1945) The fresh-water fishes of Siam, or Thailand. Bulletin of the United States National Museum No. 188: i-xi + 1-622, Pls. 1-9.
- Talwar PK and Jhingran AG (1991) Inland Fishes of India and Adjacent Countries, Vol. 1, Oxford & IBH Publishing Co. Pvt. Ltd. New Delhi-Calcutta, pp. 382-383.
English Feature:
Visited 1,042 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?