শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Clupeiformes (Herrings)
পরিবার: Engraulidae (Anchovies)
গণ: Setipinna
প্রজাতি: S. phasa
সমনাম (Synonyms)
- Clupea phasa Hamilton, 1822
- Clupea telara Hamilton, 1822
- Engraulis telara Hamilton, 1822
- Setipinna megalura Swainson, 1839
- Setipinna truncata Swainson, 1839
সাধারণ নাম (Common name)
- বাংলাদেশ: ফ্যাসা, ফেওয়া, ফাইস্যা
- ভারত: ফ্যাসা, বিন্দি, পাতরা, ফাইস্যা, তামপারিয়া (Talwar and Jhingran, 1991)
- English: Gangetic hairfin anchovy
ভৌগোলিক বিস্তৃতি (Geographical Distribution)
Talwar and Jhingran, 1991 অনুসারে গঙ্গা নদীর অববাহিকা এবং উডিষ্যা এদের বিস্তৃতি রয়েছে। অন্যদিকে, Bhuiyan, 1964 অনুসারে এদেরকে বাংলাদেশ, উডিষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, আসামের কাছার জেলা এবং মায়ানমারে পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের লাল তালিকায় হুমকিগ্রস্ত হিসেবে বিবেচিত নয় (IUCN Bangladesh, 2000)।
দৈহিক গঠন (Morphology)
দেহের আকার ফুজিফর্ম (fusiform) প্রকৃতির অর্থাৎ অগ্র ও পশ্চাৎ প্রান্ত সরু ও মধ্যভাগ প্রশস্ত। দেহ পার্শ্বীয়ভাবে অত্যন্ত চাপা। পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় প্রান্ত প্রায় সমানভাবে বাঁকানো। উদর নিচের দিকে নামানো। চোখ ত্বকে আবৃত। মুখ সামান্য তির্যক। ম্যাক্সিলা (Maxilla) নিচের চোয়ালের সংযোগস্থলে বড় আকার ধারণ করে কানকোর সামান্য সম্মুখ বিস্তৃত হয়ে থাকে। ফুলকা দণ্ডগুলো (gill raker) কিছুটা তীক্ষ্ণ হয় এবং গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। ফুলকা দণ্ডের সংখ্যা Rahman, (1989) অনুসারে ১৫-১৭টি; অন্যদিকে Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে ১৮-১৯টি।
দাঁত চোয়ালের উপরে এক সারিতে সজ্জিত থাকে। বক্ষপাখনায় একটি পাখনা-রশ্মি সুতার ন্যায় লম্বা হয়ে থাকে যা পায়ু পাখনার শেষের ১৫-৩৯ তম পাখনা-রশ্মি পর্যন্ত বিস্তৃত। পুচ্ছ পাখনা দ্বিখণ্ডিত এবং উপরের খণ্ডাংশ নিচেরটির থেকে লম্বায় ছোট ও এর অগ্রপ্রান্ত ক্রমশ সরু না হয়ে হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায় (truncated)। অন্যদিকে নিচের খণ্ডাংশটি লম্বায় বড় এবং ক্রমশ সরু হয়ে শেষ হয়ে থাকে। পৃষ্ঠীয় পাখনার অবস্থান পুচ্ছ পাখনার গোঁড়ার চেয়ে তুলনামূলকভাবে তুণ্ডের নিকটে। পৃষ্ঠপাখনার প্রথম পাখনা রশ্মি কাটায় পরিণত হয়েছে। শ্রোণী পাখনাটি বক্ষ পাখনা চেয়ে তুলনামূলকভাবে পায়ু পাখনার নিকটে অবস্থিত। বক্ষ পাখনার শেষের দিকের পাখনা-রশ্মি পায়ু পাখনার অগ্রের অর্ধাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
আদর্শ দৈর্ঘ্য মাথার দৈর্ঘ্যের ৫.৫-৬.৪ গুণ। দেহের মাঝ বরাবর লম্বালম্বিভাবে প্রায় ৫২টি আঁইশ উপস্থিত। বক্ষ পাখনায় অক্সিলারি (axillary) আঁইশ বর্তমান। উদরে স্কিউট (Scute)রয়েছে ২২টি যার মধ্যে শ্রোণী পাখনার অগ্রপ্রান্তে ১৫টি এবং পশ্চাৎ প্রান্তে ৭টি।
পাখনা সূত্র (Fin formula)
- B xiii; D 1/14-15; P. 15; V. 7; A. 70-80; C. 19 (Bhuiyan, 1964)
- D. 1+2-3/11-12; P1.1/11-12; P2.1/6; A.54-57 (Rahman, 1989)
- D i 14-15; A iii 66-78; P i 14; V i 6 (Talwar and Jhingran, 1991)
- B VIII; D. 1/14-15; P. 15; V. 7; A. 70-80; C. 19 (Shafi and Quddus, 2001)
দেহের বর্ণ (Colour)
উপরেরে অংশ সবুজাভ এবং নিচের অংশ রূপালী। পৃষ্ঠ ও পুচ্ছ পাখনার বর্ণ হলুদ। পৃষ্ঠদেশের উপরেরে অংশ কালো বর্ণের। বক্ষ পাখনা সাধারণত স্বচ্ছ হয়ে থাকে তবে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বক্ষ পাখনার বর্ণ সবুজাভাব কালো যার মাঝে বর্ণহীন একটি রেখা দেখতে পাওয়া যায়।
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য Bhuiyan (1964) অনুসারে ১৭.৫ সেমি, Rahman (1989) অনুসারে ২৯.২ সেমি। অন্যদিকে আদর্শ দৈর্ঘ্য Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে ২৮ সেমি এবং Shafi and Quddus (2001) অনুসারে ৪০ সেমি।
স্বভাব ও আবাস্থল (Habit and Habitat)
বাংলাদেশ ও ভারতের অধিকাংশ নদী ও মোহনাঞ্চলে এদের পাওয়া যায় (Rahman, 1989 এবং Talwar and Jhingran, 1991)। বর্ষাকালে এদের প্রধানত মোহনাতে পাওয়া যায় তবে বিল এবং বাওরে (oxbow lake) এদের আধিক্য সবচেয়ে বেশী। এরা মূলত পানির উপরিভাগে অবস্থান করে তবে অগভীর জলাশয়ে এদের সচরাচর পাওয়া যায় না (Shafi and Quddus, 2001)। Bhuiyan (1964) অনুসারে এরা মূলত মোহনা অঞ্চলের মাছ তবে বর্ষার সময় নদী, ছোট খাল এমনকি বিলে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। চলন বিলেও এই প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় (Hossain et al., 2009)।
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
এককোষী ও বহুকোষী শৈবাল, প্রোটোজোয়া পর্বের প্রাণী (protozoans) এবং ক্রাশটেশিয়া শ্রেণীর প্রাণীদের (crustaceans) এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে (Bhuiyan, 1964)।
প্রজনন (Breeding)
Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে সম্ভবত এরা সারা বছর প্রজননে অংশগ্রহণ করে থাকে তবে হুগলীর মোহনাতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এবং এলাহাবাদের গঙ্গা নদীতে মার্চ-মে মাসে এরা প্রজনন করে থাকে। অন্যদিকে Nair (1940) অনুসারে এরা ফেব্রুয়ারি-মার্চ এর মাঝামাঝি যে কোন সময় প্রজনন করে থাকে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Important)
বাংলাদেশে এই মাছটি জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে হুগলী মোহনাতে এই মাছটি অন্য মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তথ্য সূত্র (References)
- Bhuiyan AL (1964) Fishes of Dacca, Asiat. Soc. Pakistan, Pub. 1, No. 13, Dacca, pp. 13-15.
- Hossain MAR, Nahiduzzaman M, Sayeed MA, Azim ME, Wahab MA and Olin PG (2009) The Chalan beel in Bangladesh: Habitat and biodiversity degradation, and implications for future management, Lakes & Reservoirs: Research and Management, 14:3-19.
- IUCN Bangladesh (2000) Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
- Nair KK (1940) On some early stages in the development of the Gangetic Anchovy, Engraulis telara (Ham.), Rec. Indian Mus. Calcutta, 42 (Pt. II), 277.
- Rahman AKA (1989) Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 242-243.
- Swainson W (1839) The natural history and classification of fishes, amphibians, & reptiles, or monocardian animals. Spottiswoode & Co., London. The natural history and classification of fishes, amphibians, & reptiles, or monocardian animals. v. 2: i-vi + 1-448.
- Shafi M and Quddus MMA (2001) Bangladesher Matsho Shampad (Fisheries of Bangladesh) (in Bengali), Kabir publication. Dhaka, Bangladesh. pp. 48-49.
- Talwar PK and Jhingran AG (1991) Inland Fishes of India and Adjacent Countries,Vol. I, Oxford & IBH Publishing Co. Pvt. Ltd. New Delhi-Calcutta, pp. 136-137.
Visited 2,978 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?