জৈয়া, Hamilton's Barila, Barilius bendelisis
জৈয়া, Hamilton’s Barila, Barilius bendelisis

শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Cypriniformes (Carps)
পরিবার: Cyprinidae (Minnows and carps)
উপপরিবার: Rasborinae (Danioninae)
গণ: Barilius
প্রজাতি: B. bendelisis

প্রকরণ (Variety):
Shafi and Quddus (2001), Rahman (1989 and 2005) ও (Rahman and Ruma, 2009) অনুসারে বাংলাদেশে এই প্রজাতির দুটি প্রকরণ পাওয়া যায় যথা-
Barilius bendelisis var. cosca (খোকসা জৈয়া)
Barilius bendelisis var. chedra (চেদ্রা জৈয়া)

সমনাম (Synonyms)
Barilius bendelisis bendelisis (Hamilton, 1807)
Barilius bendelisis chedra (Hamilton, 1822)
Barilius howesi Barman, 1986
Bendelisis bendelisis (Hamilton, 1807)
Cyprinus apiatus Valenciennes, 1840
Cyprinus bendilisis Hamilton, 1807
Cyprinus chedra Hamilton, 1822
Cyprinus tila Hamilton, 1822
Leuciscus branchiatus McClelland, 1839
Leuciscus chedra (Hamilton, 1822)
Leuciscus tila (Hamilton, 1822)
Opsarius bendelisis (Hamilton, 1807)

সাধারণনাম (Common name)
English: Hamilton’s barila
বাংলাদেশ: জৈয়া, হিরালু, তিলা, খোকসা জৈয়া ও চেদ্রা জৈয়া, জায়া
ভারত: কোরাং (আসাম); খোকসা ও জৈয়া (পশ্চিম বাংলা); আঙ্গুরা (বিহার); দারাহ, কান্ড্রি, পাকতাহ ও কুন্নুল (পাঞ্জাব); ভারেলী (হিমাচল প্রদেশ); পাথরিল-চাহল (জম্মু); বাঘরা-বাহরি (উডিষ্যা); জোধিয়া, ঝোর্যুয়া ও ঝোর (মহারাষ্ট্র); আগুস্কিট্টি ও ভেন্নাথি-কেনাদি (তামিল নাড়ু) (Talwar and Jhingran, 1991).

ভৌগলিক বিস্তৃতি (Geographical Distribution)
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতে এ মাছ পাওয়া যায় (Talwar and Jhingran, 1991; IUCN Bangladesh, 2000)। Vishwanath (2010) অনুসারে এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে পাওয়া যায়। এছাড়াও মায়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে পাওয়ার তথ্য রয়েছে। Fishbase (2015) অনুসারে এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মায়ানমারে পাওয়া যায়।
Shafi ও Quddus (2001) এবং Rahman (1989 ও 2005) মতে এদেরকে রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন নদীতে পাওয়া যায়।

সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে বাসস্থান হ্রাসের কারণে বাংলাদেশে এদের সংরক্ষণ অবস্থা বিপদাপন্ন (Endangered) পর্যায়ভুক্ত। বাসস্থান রক্ষা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
Vishwanath (2010) অনুসারে এই মাছের বৈশ্বিক সংরক্ষণ অবস্থা Least Concern (LC) অর্থাৎ প্রকৃতিতে বিস্তৃত পরিসরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।

বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (External Morphology)
দেহ লম্বা ও পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। অঙ্কীয়দেশ পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অধিক উত্তল। মুখের চিড় বা হা মাঝারি আকৃতির। দুই জোড়া ক্ষুদ্রাকার স্পর্শী যার একজোড়া উপরের চোয়ালে এবং অপর জোড়া নিচের চোয়ালে অবস্থিত। গলবিলীয় দাঁত তিন সারিতে বিন্যস্ত। তুণ্ড ও নিচের চোয়াল অনেকগুলো ছিদ্র বিশিষ্ট। এই ছিদ্রের সংখ্যা পরিণত বয়সে বৃদ্ধি পায়। পরিণত মাছে চোখ আকারে ছোট হয়ে থাকে।
পৃষ্ঠপাখনা পায়ুপাখনার সামান্য অগ্রে অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে পুচ্ছপাখনার নিকটে অবস্থিত। পুচ্ছপাখনা দ্বিখণ্ডিত, উভয় খণ্ড সমান বা নিচের খণ্ডটি সামান্য বড় হয়ে থাকে। Rahman (1989 and 2005) অনুসারে আদর্শ দৈর্ঘ্য ও মোট দৈর্ঘ্য মাথার দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ৩.৮-৪.৫ ও ৪.৮-৫.৬ গুণ । আদর্শ দৈর্ঘ্য ও মোট দৈর্ঘ্য দেহ উচ্চতার যথাক্রমে ৩.৮-৪.৩ ও ৪.৮-৫.৩ গুণ। অন্যদিকে মাথার দৈর্ঘ্য চোখের ব্যাসের ৪.২-৬.০ গুণ। পার্শ্বরেখা বরাবর IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে ৩৯-৪৫টি, Rahman (1989 and 2005) ও Shafi ও Quddus (2001) অনুসারে ৩৯-৪২ এবং Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে ৪০-৪৫টি আঁইশ থাকে।
অপরিণত বয়সে এদের দেহের উভয় পাশে ১১-১৬টি উলম্ব দাগ দেখতে পাওয়া যায় যা পরিণত হওয়ার সাথে সাথে বিলীন হয়ে যায়। পরিণত বয়সে প্রতিটি আঁইশের গোঁড়ায় একটি করে কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় যা অপরিণত বয়সে দেখতে পাওয়া যায়না। পৃষ্ঠপাখনা ও পুচ্ছপাখনার প্রান্ত কালো বর্ণের।
পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এদের মধ্যে নানা রকমের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ফলে এই প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন বয়েসের মাছ আলাদা প্রজাতি হিসেবে শনাক্তকরণের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

পাখনা সূত্র (Fin formula)
D. 9 (2/7); P1. 13-14; P2. 9; A. 10 (2/8) (Rahman, 1989 and 2005; IUCN Bangladesh, 2000)
D ii 7; A ii-iii 7-8; P I 14; V i 8 (Talwar and Jhingran, 1991)
D. 9(2/7); P. 13-15; V. 9; A. 9-10(2-3/8); C. 18 (Shafi and Quddus, 2001)

এ প্রজাতির যে দুটি প্রকরণ (Variety) পাওয়া যায় Rahman (1989 and 2005) অনুসারে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ –

  1. Barilius bendelisis var. cosca (খোকসা জয়া)
    পাখনাগুলো ছোট আকৃতির, ছড়ানো নয়; পাতলা ও দুর্বল প্রকৃতির। বক্ষপাখনা শ্রোণী পাখনা পর্যন্ত প্রসারিত নয় Rahman (1989 and 2005) ।
  2. Barilius bendelisis var. chedra (চেদ্রা জয়া)
    পাখনাগুলো অধিক উন্নত, বৃহৎ ও প্রসারিত; তুণ্ডে অসংখ্য ছিদ্র উপস্থিত। পার্শ্বীয় আঁইশগুলো উজ্জ্বল লাল বর্ণের। পৃষ্ঠদেশ বাদামী আর অঙ্কীয়দেশ নীল ও রূপালী Rahman (1989 and 2005) ।

সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
নথিভুক্ত সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য Talwar ও Jhingran (1991) ও IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে ১৫.৫ সেমি ; Shafi ও Quddus (2001) ও Rahman (1989 and 2005) অনুসারে ২২.৭ সেমি।

আবাস্থল (Habitat)
IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে পাহাড়ি ঝর্ণা ও ও পাহাড়ের পাদদেশীয় নদীতে এদের পাওয়া যায়। অন্যদিকে Rahman (2005) অনুসারে এই মাছ পাহাড়ি ঝর্ণা ও পাথুরে তলদেশ বিশিষ্ট নদীতে দেখা যায়।
এরা জলাশয়ের উপরের স্তর ও তলদেশ উভয় স্থানেই বাস করে এবং অভিপ্রয়াণ স্বাদুপানির মধ্যেই ঘটে থাকে। শিলা ও নুড়িময় তলদেশ এদের অধিক পছন্দ।

খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
এরা জলজ ক্ষুদ্র জীব, পোকা মাকড়. উদ্ভিদ ইত্যাদি খেয়ে থাকে (Rahman and Ruma, 2009)।
Seriouslyfish (2015) অনুসারে প্রকৃতিতে এরা ক্লাডোফোরা (Cladophora), শৈবাল (Spirogyra), ভলভক্স (Volvox), স্ফেরোসিটিস এর বিভিন্ন প্রজাতি (Sphaerocytis spp), কৃমির শূক (larval worms), পতঙ্গের শূক (insect larvae), পতঙ্গের দেহাংশ (parts of insects), ডাফনিডস (daphniids), কপিপোডস (copepods) ও বালুকণা (sand particles) খেয়ে থাকে। .

বাস্তুতাত্ত্বিক ভূমিকা (Ecological Role)
Rahman and Ruma (2009) অনুসারে এরা বাস্তুতন্ত্রের ছোট ছোট জলজ জীব খেয়ে আবাসস্থল পরিষ্কার রাখতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রজনন (Breeding)
একই বয়সের পরিণত স্ত্রী মাছ পুরুষদের তুলনায় কম উজ্জ্বল ও কম বর্ণিল হয়ে থাকে তবে লম্বা ও চওড়ায় তুলনামূলকভাবে সামান্য বড় হয়ে থাকে বিশেষত যখন তারা ডিম ধারণ করে। অন্যদিকে প্রজননকালীন সময়ে পরিণত পুরুষ মাছের মস্তকের উপরিভাগে দৃশ্যমান গুটিকা (tubercules) এবং সারা দেহে লালচে বর্ণ দেখতে পাওয়া যায় (Seriouslyfish, 2015) ।

এ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবস্থাপনা (Aquarium management )
Seriouslyfish (2015) অনুসারে এদের জন্য আদর্শ এ্যাকুয়ারিয়ামের আকার ১৮০ x ৬০ সেমি। পানির তাপমাত্রা ১৬-২৬ ডি.সে., হার্ডনেস ৩৬-২৬৮ পিপিএম, পিএইচ ৬-৮ হওয়া প্রয়োজন।
এরা বাহারি মাছের জন্য ব্যবহৃত সকল ধরণের প্যাকেট খাবারই খেয়ে থাকে। এমনকি হিমায়িত ও জীবন্ত খাবারও খেয়ে থাকে। যেমন- ব্লাডওয়ার্ম (bloodworm), ড্রসোফিলা (Drosophila), আর্টেমিয়া (Artemia), টুকরা করা কেঁচো (earthworm) ইত্যাদি। এছাড়াও এরা ড্রসোফিলা (Drosophila), ছোট আকারের ঝিঁঝিঁ পোকা (crickets) ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

মৎস্য গুরুত্ব (Fishery information)
বাংলাদেশে এই মাছের একক উৎপাদন তথ্য পাওয়া যায়না। খাবারের মাছ হিসেবেও এর গুরুত্ব জানা যায়না। দিনাজপুর, রংপুর ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি স্রোতবিশিষ্ট জলাশয় থেকে এনে চাষ করা হয় Rahman and Ruma (2009)।
Talwar ও Jhingran (1991) অনুসারে এই মাছ ভারতের জম্মুর পাহাড়ি ঝর্ণা ও সম্ভবত হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য এলাকার প্রধান অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন মাছ।
বাহারি মাছ হিসেবে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্তমান।

অন্যান্য তথ্য:
ভারতে চালানো এক গবেষণায় এই মাছের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা পাওয়া গেছে পঞ্চাশ Rahman and Ruma (2009) ।

তথ্য সূত্র (References)

  • Barman RP. 1986. A new freshwater fish of the genus Barilius Hamilton (Pisces: Cyprinidae) from West Bengal, India. Journal of the Bombay Natural History Society v. 83 (pt 1): 171-173.
  • Fishbase (2015) Species summary: Barilius bendelisis (Hamilton, 1807). Retrieved on 08 January 2015 and from http://www.fishbase.org/summary/13225
  • Hamilton F. 1807. A journey from Madras through the countries of Mysore, Canara, and Malabar, … London. A journey from Madras through the countries of Mysore, Canara, and Malabar, … v. 3: i-iv + 1-479 + i-xiii + index.
  • IUCN Bangladesh. 2000. Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
  • McClelland J. 1839. Indian Cyprinidae. Asiatic Researches v. 19 (pt 2): 217-471, Pls. 37-61.
  • Rahman AKA. 1989. Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 97-98.
  • Rahman AKA. 2005. Freshwater Fishes of Bangladesh, 2nd edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 114-115.
  • Rahman AKA and Ruma F (2009) Barilius barna (Hamilton, 1822). In: Ahmed ZU, Ahmed ATA, Kabir SMH, Ahmed M, Begum ZNT, Hasan MA and Khondker M (eds.). Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol. 23. Freshwater Fishes (In Bangla). Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka. p.51.
  • Seriouslyfish (2015) Species profile: Barilius bendelisis (HAMILTON, 1822). Retrieved on 08 January 2015 and From http://www.seriouslyfish.com/species/barilius-bendelisis/
  • Shafi M and Quddus MMA. 2001. Bangladesher Matsho Shampad (Fisheries of Bangladesh) (in Bengali), Kabir publication. Dhaka, Bangladesh. pp. 140-142.
  • Talwar PK and Jhingran AG. 1991. Inland Fishes of India and Adjacent Countries, Vol. I, Oxford & IBH Publishing Co. Pvt. Ltd. New Delhi-Calcutta, pp. 346-347.
  • Vishwanath, W. 2010. Barilius bendelisis. The IUCN Red List of Threatened Species. Version 2014.3. <www.iucnredlist.org>. Downloaded on 08 January 2015 and from http://www.iucnredlist.org/details/166594/0.

 

English Feature:

 

 


Visited 529 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের মাছ: জৈয়া, Hamilton’s Barila, Barilius bendelisis

Visitors' Opinion

এম শাহানুল ইসলাম

গবেষক শিক্ষার্থী, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল: shahanul65@gmail.com, মোবাইল: +88 01749-166661

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.