বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: সিলভার সার্ক, Silver Shark, Balantiocheilos melanopterus
বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: সিলভার সার্ক, Silver Shark, Balantiocheilos melanopterus

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষত ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার স্থানীয় মাছ সিলভার সার্ক থাইল্যান্ড থেকে সর্বপ্রথম আমাদের দেশে নিয়ে আসা হয়। হাঙ্গরের পৃষ্ঠপাখনার গঠনের সাথে এদের পৃষ্ঠপাখনার গঠনের মিল থাকায় এদের সার্ক নামে ডাকা হয় (Fishlore, 2009b)।

শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata (chordates)
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Cypriniformes (Carps)
পরিবার: Cyprinidae (Minnows or carps)
গণ: Balantiocheilos
প্রজাতি: Balantiocheilos melanopterus

নামতত্ত্ব (Etymology)
গ্রিক শব্দ balantion অর্থ থলে (bag) এবং গ্রিক শব্দ cheilos অর্থ ঠোট (lip) থেকে Balantiocheilos শব্দটি এসেছে (Fishbase, 2015)।

সমনাম (Synonyms)
Barbus melanopterus Bleeker, 1851
Puntius melanopterus (Bleeker, 1851)

সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: সিলভার সার্ক
English: Silver Shark, Bala Shark, Tri Color Shark Minnow, Hangus, Bala, Silver Bala, Hangus, Malaysian Shark, Tricolor Shark

সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation Status)
এই মাছের বৈশ্বিক সংরক্ষণ অবস্থা Endangered অর্থাৎ এই প্রজাতি বৈশ্বিক হুমকিগ্রস্ত মাছের তালিকার অন্তর্ভুক্ত (Kottelat, 1996)।

বিস্তৃতি (Distribution)
এই প্রজাতির ভৌগলিক বিস্তৃতি: 20°N – 6°S (Fishbase, 2015)। এই মাছের আদিবাস ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড (Kottelat, 1996)।

দৈহিক গঠন (Morphology)
লম্বা দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। রূপালী বর্ণের দেহের পৃষ্ঠদেশ কালচে। পৃষ্ঠপাখনা, শ্রোণীপাখনা ও পুচ্ছপাখনার প্রান্তসীমা কালো বর্ণের।
পার্শ্বরেখা বরাবর ৩৫টি আঁইশ বর্তমান। আদর্শ দৈর্ঘ্য, ফর্ক দৈর্ঘ্য, দেহ উচ্চতা, মাথার দৈর্ঘ্য, পুচ্ছদণ্ড (Caudal peduncle) মোট দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ৭৪.৬৭, ৮০.৬৭, ২২.৬৭, ২২.৬৭ ও ৮.০০ শতাংশ। চক্ষুর ব্যাস মাথার দৈর্ঘ্যের ৩৫.২৯ শতাংশ।

পাখনা সূত্র (Fin formula): D 9 P1 11 P2 10 A 6 C 20 (Galib and Mohsin, 2011)

বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: সিলভার সার্ক, Silver Shark, Balantiocheilos melanopterus
বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: সিলভার সার্ক, Silver Shark, Balantiocheilos melanopterus

সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
Fishbase (2014) অনুসারে এদের সর্বোচ্চ আদর্শ দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি।

স্বভাব ও আবাস্থল (Habit and Habitat)
স্বাদুপানির এই মাছ জলাশয়ে বিশেষত নদী ও হ্রদের প্রধানত উপরের স্তরে দেখতে পাওয়া যায়।

খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
রুই জাতীয় অন্যান্য মাছের মত এরাও প্রকৃতিতে সর্বভুক প্রকৃতির হলেও ফাইটোপ্লাঙ্কটনই বেশি খেয়ে থাকে। এছাড়াও ছোট ছোট ক্রাশটেশিয়ানস (crustaceans), রোটিফারস (rotifers), পতঙ্গ (insects) ও এর শূককীট (larvae), শেওলা (algae), অন্যান্য উদ্ভিদের অংশবিশেষ ইত্যাদি খেয়ে থাকে (Rainboth, 1996; Seriouslyfish, 2015)।
এ্যাকুয়ারিয়ামে এরা সকল প্রকারের প্যাকেটজাত খাবারই খেয়ে থাকে যেমন- ফ্লেক (flake), পিলেট (pellet), হিমায়িত ও জীবন্ত খাবারও খেয়ে থাকে FishLore (2015)। জীবন্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ব্লাডওয়ার্ম (bloodworm), ডাফনিয়া (Daphnia), আর্টেমিয়া (Artemia) ইত্যাদি । এছাড়াও এদেরকে কেঁচো (earthworm), চিংড়ি (prawn), ঝিনুক (mussel) ইত্যাদি টুকরা টুকরা করে কাটা দেহাংশ খাবার হিসেবে দেয়া যায় (Seriouslyfish, 2015)।

জীবনকাল ও প্রজনন (Lifecycle and Breeding)
এদের জীবনকাল ৮-১০ বছর। অপরিণত অবস্থায় এদের স্ত্রী ও পুরুষ আলাদা করা খুবই কঠিন। তবে পরিণতদের মধ্যে একই বয়সের স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে আকারে ছোট ও স্থূল হয়ে থাকে (FishLore, 2015)। পরিণত মাছের বৃহৎ আকারের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামে এদের প্রজনন না করানোই ভাল।

প্রকৃতির উপযোগী পরিবেশ (Suitable environment in nature)
প্রকৃতিতে এদের অনুকূল পিএইচ ৬-৮, হার্ডনেস ৫-১২ dH এবং তাপমাত্রা ২২-১৮ ডি.সে. (Fishbase, 2015)।

এ্যাকুয়ারিয়ামের উপযোগী পরিবেশ (Suitable environment in aquarium)
বড় আকারের এ্যাকুয়ারিয়াম নির্বাচন করাই ভাল। এরা শান্ত মাছ। সম আকারের দেশী বা বিদেশী মাছের প্রতি আক্রমণাত্মক নয়। তবে ছোট আকারের মাছকে কখনও কখনও আক্রমণ করে থাকে। তাই খুব ছোট আকারের না হলে যে কোন মাছই এর সাথে রাখা যায়। অনুকূল তাপমাত্রা ৭২-৮২ ডি.ফা. বা ২২-২৮ ডি.সে., হার্ডনেস ৫-১২ dH এবং পিএইচ ৬-৮ FishLore (2015)।
Seriouslyfish (2015) অনুসারে এদের জন্য আদর্শ এ্যাকুয়ারিয়ামের আকার ২৪০x৬০ সেমি। পানির তাপমাত্রা ২০-২৮ ডি.সে., হার্ডনেস ৩৬-২৬৮ পিপিএম এবং পিএইচ ৬-৮।
এই মাছের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামের অনুকূল তাপমাত্রা ৭২-৮৪ ডি.ফা. বা ২২-১৯ ডি.সে, হার্ডনেস ৫-১৫ dH, পিএইচ ৫.৮-৭.৮ (Aquaticcommunity, 2015)।

রোগ (Diseases)
বাংলাদেশে এই মাছের রোগ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
বাহারি মাছ হিসেবে এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। তাই বাহারি মৎস্য প্রেমীদের চাহিদা মেটাতে এই মাছের গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে এই মাছের প্রজনন করানো সম্ভব হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পোনা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।

বাজার মূল্য
বাংলাদেশে ১৫০-২০০ টাকায় এক জোড়া সিলভার সার্ক পাওয়া যায় (Galib and Mohsin, 2011)।

 

তথ্য সূত্র (References)

 


Visited 1,670 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের বিদেশী মাছ: সিলভার সার্ক, Silver Shark, Balantiocheilos melanopterus

Visitors' Opinion

এ বি এম মহসিন

প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ...

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.