![নিজের হাতে মাছ আহরণ করছেন শ্রীমতী আরতি বর্মন](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/arati-barman-netting-own-pond-600x300.jpg)
মাছ চাষ করে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য উদ্যোক্তা শ্রীমতী আরতি বর্মন। অধিক মৎস্য উৎপাদনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন “মীন মিত্র” শিরোনামের রাজ্য পুরস্কার। জলাভূমি দিবস – ২০১৬ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা তাঁর হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। আরতি বর্মনের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকের দ্বারিবেড়িয়া গ্রামে। দশ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রম আর প্রচেষ্টা তাঁকে এ সফলতা অর্জনে সহায়তা করেছে। সাফল্য আর খ্যাতির পাশাপাশি তিনি ফিরে পেয়েছেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া আর্থিক সচ্ছলতা। একই সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন আরও প্রায় ২০০ মানুষের।
![জলাভূমি দিবস - ২০১৬ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা শ্রীমতী আরতি বর্মন এর হাতে “মীন মিত্র” পুরস্কারটি তুলে দেন](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/arati-barman-meen-mitra-award-receiving-program-600x300.jpg)
একজন সাধারণ গৃহবধূ হিসেবে শ্রীমতী আরতি বর্মন অত্যন্ত দরিদ্রতায় কাটিয়েছেন জীবনের বড় একটা সময়। সে সময় গ্রামীণ মেলায় ঘুগনি, মুড়ি ইত্যাদি বিক্রি করেও সংসার চালাতে হয়েছে তাঁকে। তখন থেকেই বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। সে সময় তিনি প্রথম তাঁর শ্বশুর বাড়ির সামনের জমিতে স্বামীর সাথে ধান চাষ শুরু করেন। কিন্তু এতে সাফল্য অর্জন করতে না পেরে দীর্ঘদিন লোকসানের ঘানি টানতে হয় তাঁকে। এরপর পারিবারিক-সূত্রে প্রাপ্ত ছোট্ট একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। এতে তিনি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। লাভ করায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁর মাছ চাষের পরিসর। পরবর্তী সময়ে মৎস্য দফতরের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণ করে তিনি তাঁর মাছ চাষ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে থাকেন। সম্প্রতি “এফ এফ ডি এ”- প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ আর ৯০ হাজার টাকা সরকারী সহায়তা (ভর্তুকি) গ্রহণ করে মাছ চাষের মাত্রা আরও বাড়ানোর সুযোগ পান। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এলাকার জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষের পরিসর আরও বৃদ্ধি করতে থাকেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০০ বিঘা মৎস্য খামার নিজ হাতে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন।
![শ্রীমতী আরতি বর্মন এর মৎস্য খামারের একাংশ (ব্লক ফিশারী প্রশিক্ষণার্থীদের খামার পরিদর্শণকালে তোলা ছবি)](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/field-visit-aarti-batman-farm-600x300.jpg)
ইতিপূর্বে হলদিয়া ব্লক থেকে “মৎস্য চাষি দিবস” উদযাপন অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে শংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিনি রাজ্য পুরস্কার “মীন-মিত্র” পান। কার্প জাতীয় মাছের অধিক উৎপাদন বিভাগে একমাত্র তিনিই এ পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আত্মকর্মসংস্থানই একজন মানুষের স্বপ্ন, আমি নিজেকে নারী হিসেবে আলাদা করে ভাবিনি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যে কোনও কর্মের পাশাপাশি মৎস্য প্রকল্প তৈরি করা উচিত”। কেবলমাত্র মৎস্য খামার পরিচালনার মধ্যেই তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রাখেননি। সামাজিক দায় বদ্ধতার মানবিক গুণাবলীর অংশ হিসেবে তিনি নিজের খামারকে বিভিন্ন সময়ে মাছ চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনের জন্যে ব্যবহার করার সুযোগও করে দিয়েছেন। একই সাথে তিনি স্থানীয় নবাগত মাছ চাষিদের আধুনিক মাছ চাষের নানান প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ যুগিয়ে আসছেন।
![শ্রীমতী আরতি বর্মন এর মৎস্য খামারে ব্লক ফিশারী প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে তিনি](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/field-visit-block-fishery-600x300.jpg)
তিনি সাধারণত মাছচাষের যেসকল প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন তা নিচে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হল-
পুকুর প্রস্তুতি:
- প্রতি চাষের পর সম্ভব হলে পুকুর সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলা। পাড় ও তলদেশ মেরামত করা।
- পুকুরের তলদেশে সমান ভাবে চুন প্রয়োগ। চুন প্রয়োগের হার হেক্টর প্রতি ৩০০ কেজি।
- চুন প্রয়োগের পর পুকুরের অর্ধেকটা (প্রায় আধা মিটার থেকে পৌনে এক মিটার) জল প্রবেশ করা।
- জৈব সার প্রয়োগ (হেক্টর প্রতি মোট ১০ হাজার কেজি, পুকুর প্রস্তুতির সময় অর্ধেকটা এবং পুকুর প্রস্তুতির পরে বাকী অর্ধেকটা সমান ভাগে ভাগ করে সমান কিস্তিতে প্রয়োগ।)
- এরপর পুকুরের বাকী অর্ধেকটা জল প্রবেশ করানো যাতে পানির গভীরতা হয় এক থেকে দের মিটার।
পোনা মজুদ:
- পুকুর প্রস্তুতের শেষ ধাপ সম্পন্ন করার সাত দিন পর আঙুলিপোনা মজুদ করা হয়।
- রুই জাতীয় মাছের আঙুলিপোনার মজুদ হার ডেসিমেল প্রতি প্রায় ৬০টি।
- প্রায় সমান বয়স ও আকারের পোনা মাছ মজুদ করা হয়।
- পোনা মজুদের শুরুতেই জল ও মাটির গুণাগুণ (যেমন তাপমাত্রা. পিএইচ. দ্রবীভূত অক্সিজেন ইত্যাদি) পরীক্ষা করা হয়।
মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা:
- পোনা মজুদের পরবর্তী প্রথম দুই মাস বাদাম খোল ও চালের কুঁড়া সমান অনুপাতে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত খাবার মজুদকৃত মাছের দেহের ওজনের ১০% হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
- পরবর্তীতে পূর্বে বর্ণিত খাবার তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে মাছের দেহের ওজনের ৫ শতাংশ হারে এবং পঞ্চম মাস থেকে শেষ পর্যন্ত মাছের দেহের ওজনের দুই শতাংশ হারে প্রয়োগ করা হয়।
- প্রতি দুই মাসে জল ও মাটির গুণাগুণ (যেমন তাপমাত্রা. পিএইচ. দ্রবীভূত অক্সিজেন ইত্যাদি)পরীক্ষা করেন।
- প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মজুদকৃত মাছের ১০ শতাংশ মাছের নমুনার বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।
মাছ চাষের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি বছরে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৬ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন যা অন্যান্য মাছ চাষিদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠছে।
![২০১৭ সালের ৮ই মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড এর উদ্যোগে শ্রীমতী আরতি বর্মনকে একজন অনন্য নারী হিসেবে সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানের একাংশ।](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/international-woman-day-2017-600x300.jpg)
সম্প্রতি ২০১৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শ্রীমতী আরতি বর্মনকে একজন অনন্য নারী হিসেবে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। সাধারণ গৃহবধূ থেকে একজন সফল মৎস্য উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে একদিকে তিনি যেমন মাছের উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন তেমনই তাঁর এ সাফল্য নতুন মাছ চাষিদের জন্য উৎসাহ আর উদ্দীপনার উদাহরণ হয়ে থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
জলাভূমি দিবস – ২০১৬ তে “মীন মিত্র” পুরস্কার গ্রহণের পর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে
![“মীন মিত্র” পুরস্কার হাতে শ্রীমতী আরতি বর্মন](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/arati-barman-presents-meen-mitra-award-300x389.jpg)
![শ্রীমতী আরতি বর্মন এর অর্জিত “মীন মিত্র” পুরস্কার](https://bn.bdfish.org/wp-content/uploads/2017/03/meen-mitra-award-arati-barman-300x389.jpg)
Visited 2,403 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?