তাত্ত্বিক কথা বা গুরুত্বের ব্যাপকতা দিয়ে পানির প্রয়োজনীয়তা মাপা সম্ভব নয়। সম্ভবত এ জন্যই পানির অপর নাম জীবন। আমি বলি জীবনের থেকেও বেশি কিছু। কেন? আমাদের শরীরের দিকে তাকালে দেখা যায়- শতকরা ৭০ ভাগের বেশি পানি (উৎস: ১)। সারা পৃথিবীর দিকে তাকান, পরিমণ্ডলের চার ভাগের তিন ভাগই পানি (উৎস:২)। শরীরের গঠন বা পরিচালনেই নয় বেঁচে থাকতে যে অক্সিজেন দরকার তার উৎস দেখুন না, উৎপাদিত অক্সিজেনের শতকরা ৭০ ভাগের বেশি আসে ঐ পানির নিচের গাছপালা থেকে (উৎস: ৩)। এহেন উপকারী পানি ও জলরাশি সমৃদ্ধময় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। নদী নালা এ দেশের প্রাণ।
অতি পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের প্রাণ বায়ু নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মাথা ব্যাথা নেই কারও। সাধারন মানুষ তো প্রকৃতির উপর আস্থাশীল। ক্রম বিপর্যয়কে মানুষের পাপের শাস্তি ভেবে থাকে। যত চিৎকার আর অরণ্যে রোদন করে কতিপয় গবেষক ও পরিবেশ বাদী চক্রের কর্মীরা। কিন্তু হায়, রোগি যে অন্তিম শয্যায় চলে গেলো প্রায়, এখনও ডাক্তারের কোন খবর নাই। নিঃসাড় নীতি নির্ধারক শাসক গোষ্ঠি।
আসুন বর্তমান বছরের এ পর্যন্ত অতিবাহিত মাসগুলোতে এদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার পাতা থেকে এ দেশের নদ নদী গুলোর কি অবস্থা তা একটু রিভিউ করে নেই,
উল্লেখযোগ্য শিরোনাম:
- বৃহত্তর দিনাজপুরে নদীগুলো ভারত থেকে পানি নামার খাল
- মরে গেছে পঞ্চগড় দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও এর ৩৬ নদী
- মরে গেছে সীমান্ত পাগলা
- নদী আছে পানি নাই খরস্রোতা নদী বড়াল এখন গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র
- মাথাভাংগা নদী এখন মরা খাল
- দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ৩০ নদী পানি শুন্য: দরিদ্র হচ্ছে জেলেরা
- মেঘনা ও গোমতির মোহনায় গড়ে উঠছে গ্রাম
- যমুনার শাখা নদী এখন সংকীর্ণ খাল
- নিঃস্বপ্রাণ শংখ নদী
- উৎস মুখে ভারতের বাঁধ মরে গেছে ভৈরব নদ। … ইত্যাদি।
আমাদের নদী নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর রেকর্ড:
- ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে ১৭ নদী, বিলীন হচ্ছে আরও ৮ টি।
বাপার তথ্য অনুযায়ী:
- হুমকি মুখে থাকা বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে আছে,
- উত্তরাঞ্চলে ৬৭ টি
- দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে ১২ টি এবং
- উত্তর পূর্বাঞ্চলে ৩২ টি, যেগুলো খুব দ্রুত বিলীন হচ্ছে।
বি.আই.ডব্লুউ.টি. এর মতে:
- ১৯৭১ সালে এদেশে নদী ছিলো, ২৪০০০ কিমি দীর্ঘ যা ১৯৮৪ সালে কমে গিয়ে দাঁড়ায়, ৮৪০০ কিমি। আর বর্তমানে আমরা হারিয়েছি মোট ১৮০০০ কিমি দীর্ঘ নদী পথ এবং অবশিষ্ট আছে মাত্র ৬০০০ কিমি। (উৎস: ৪)
- গবেষকগণেরা মত প্রকাশ করেছেন এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ নদীমাতৃক বাংলদেশ বলতে যা আমরা বুঝি তা শুধুই ইতিহাস হয়ে যাবে।
সেকেন্ডারী ডাটা রিভিউ থেকে আমাদের নদীগুলোর এই বিলুপ্তির প্রধান যেসব কারন পাওয়া যায় তা হল-
- পানি প্রত্যাহার: উজানে বাঁধা দিয়ে প্রতিবেশি দেশের পানি প্রত্যাহার করায় আমাদের নদী গুলো নাব্যতা হারাচ্ছে।
- ওভার ফ্লো: বর্ষা কালে পানির চাপ সইতে না পেরে যখন উজানের পানি হঠাৎ ছেড়ে দেয়া হয় তখন নদী ভাঙ্গন, পলি পতন এর দ্বারা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়।
- পলি পতন: নানা বিধ মানুষ ঘটিত বা প্রাকৃতিক কারনে পলি পতন ঘটে যা নদী ভরাট করে ফেলে
- সেচ প্রকল্প: অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্প, ব্রিজ, সেতু ও অবকাঠামো নদী প্রবাহ নষ্ট করে।
- নদী দখল: আমাদের নদীগুলো প্রতিনিয়ত অবৈধ দখলের শিকার হচ্ছে
- শিল্প দুষণ: অপরিকল্পিত কারখানা নির্মান ও বর্জ্য নিঃসরণ, নদী গুলো ব্যাবহার হচ্ছে ডাম্প সাইট হিসেবে ইত্যাদি
- অপ্রতুল নীতিমালা: আমাদের নদী রক্ষায় কোন সুষ্ঠু নীতিমালা নাই
- দুর্নীতি: এটা সবচেয়ে বড় কারন। রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনের লংঘন করে নদীর দখলে ও দুষণে বাংলাদেশ সম্ভবত বিশ্বের অন্যতম।
আমাদের নদী ও জলজ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় আমার কি এতই অসহায়? আমাদের কি কিছুই করার নেই?
তথ্যসূত্রঃ
- উৎস: ১ – Composition_of_the_human_body, wikipedia.org
- উৎস: ২ – CIA- The world fact book. Central Intelligence Agency. Retrieved 2008-12-20.
- উৎস: ৩ – Fenical, William (September 1983). “Marine Plants: A Unique and Unexplored Resource“. Plants: the potentials for extracting protein, medicines, and other useful chemicals (workshop proceedings). DIANE Publishing. p. 147.
- উৎস : ৪ – Save Our Rivers, Save Riverine Bangladesh, Facebook group.
Visited 378 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?