থাইল্যান্ডের মাছ সায়ামিস ফাইটার (Siamese Fighter, Betta splendens) এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে প্রথম আমাদের দেশের নিয়ে আসা হয়।
শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata (chordates)
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Perciformes (perch-like fishes)
পরিবার: Osphronemidae (Gouramies)
উপপরিবার: Macropodusinae
গণ: Betta
প্রজাতি: Betta splendens Regan, 1910
সমনাম (Synonym):
Betta splendens subspecies abbreviata Blanc 1963
Micracanthus marchei Sauvage 1879
সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: সায়ামিস ফাইটার, সায়ামিস ফাইটিং ফিশ, বেট্টা
English: Siamese Fighter, Siamese Fighting Fish, Betta
নামতত্ত্ব (Etymology)
Siamese অর্থ শ্যামদেশীয় অর্থাৎ থাইল্যান্ডের স্থানীয়। এদের পুরুষেরা সর্বদাই পরস্পরের সাথে মারামারিতে লিপ্ত থাকে বিধায় এদের Fighter বা Fighting Fish নামে ডাকা হয়। থাইল্যান্ডে এদেরকে আইকান বেট্টাহ (ikan bettah) নামে ডাকা হয় যেখান থেকে Betta নামটি এসেছে।
বিস্তৃতি (Distribution)
এরা থাইল্যান্ডের স্থানীয় মাছ (Thomas et al., 2003)। এছাড়াও কম্বোডিয়া (Cambodia), লাওস (Laos) ও ভিয়েতনামে (Viet Nam) এই মাছের দেখা মেলে।
Fishbase (2014) অনুসারে প্রকৃতিতে এদের বিস্তৃতি 22°N – 8°N, 99°E – 107°E এবং বাহারি মাছ হিসেবে দক্ষিণ পূর্বএশিয়ার ইন্দোনেশিয়া (Indonesia), মালয়েশিয়া (Malaysia), সিঙ্গাপুর (Singapore) এবং দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল (Brazil), কলম্বিয়া (Colombia),ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র (Dominican republic) সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করেছে যেমনটা করেছে বাংলাদেশ।
সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
Vidthayanon ( 2011) অনুসারে আইইউসিএন এর হুমকিগ্রস্ত প্রজাতির লাল তালিকায় (The IUCN Red List of Threatened Species) এদের অবস্থান Vulnerable অর্থাৎ এই মাছ হুমকিগ্রস্ত (Threatened) তালিকার অন্তর্ভুক্ত এবং বিলুপ্ত (Extinct) হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
দৈহিক গঠন (Morphology)
তুলনামূলক ছোট দেহে লম্বা ও ছড়ানো পৃষ্ঠপাখনা, পায়ুপাখনা ও পুচ্ছ পাখনা এদেরকে অন্যান্য সকল বাহারি মাছ থেকে আলাদা করেছে। পুরুষদের দেহ ও পাখনার বর্ণ স্ত্রীদের তুলনায় অনেক বেশী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মারামারি বা অন্য কোন কারণে উত্তেজিত হলে এ অবস্থায় এরা এই পাখনাগুলো সম্মুখের দিকে ছড়িয়ে দেয় যা একে আরও বেশি উজ্জ্বলতা প্রদান করে (Saxena, 2003)।
দেহের বর্ণ প্রধানত নীল ও লালচে তবে ভ্যারাইটি অনুসারে এদের দেহের বর্ণ এ্যলবিনো (albino) বা বর্ণহীন, গাঢ় নীল, সবুজ ও ধাতব-লাল হয়ে থাকে।
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
Fishbase (2014) অনুসারে এদের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬.৫ সেমি। নথিবদ্ধ সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৭.৫ সেমি (Galib and Mohsin, 2011)। Seriouslyfish (2014) অনুসারে সর্বোচ্চ আদর্শ দৈর্ঘ্য ৬-৭ সেমি।
স্বভাব ও আবাস্থল (Habit and Habitat)
এদের পুরুষেরা পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শন করে থাকে। পরীক্ষণের এ্যাকুয়ারিয়ামে দেশীয় মাঝের প্রতি এদের আক্রমণাত্মক আচরণ দেখতে পাওয়া যায় না (Galib and Mohsin, 2011)।
এরা প্লাবনভূমি, খাল, পুকুর, ডোবা, জলা (swamps) ঝর্ণা, ধানক্ষেত, মাঝারি ও বড় নদীতে বাস করে Fishbase (2014)। এরা স্থির জল ও জলজ উদ্ভিদের উপস্থিতি পছন্দ করে। বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার সক্ষমতার (Bailey and Stanford, 1999) জন্য কম অক্সিজেন বিশিষ্ট জলাশয়েও এরা দিব্যি বেঁচে থাকে।
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
প্রধানত মাংসাশী (carnivorous)। প্রকৃতিতে এরা জুপ্লাঙ্কটন (zooplankton) মশা ও পতঙ্গের শূককীট (larvae) ইত্যাদি খেয়ে থাকে Rainboth (1996)।
এ্যাকুয়ারিয়ামে এরা উপরের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করে। পিঁপড়া ডিম (ant’s eggs), পতঙ্গ, ডাফনিয়া (Daphnia), আর্টেমিয়া (Artemia), টিউবিফেক্স (Tubifex) এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত শুকনো খাবার এদের প্রথম পছন্দ (Akhter, 1995)।
জীবনকাল ও প্রজনন (Lifecycle and Breeding)
এদের জীবনকাল সর্বোচ্চ ২ বছর (Rainboth, 1996 and Fishbase, 2014)। অন্যদিকে Sharpe (2014) অনুসারে এদের জীবনকাল ২-৩ বছর এবং তিন ইঞ্চি (৭ সেমি) আকারেই এরা প্রজননের উপযোগী হয়। এক বছরের কম বয়সী পরিণত মাছ প্রজননের জন্য ভাল।
এদের পুরুষ ও স্ত্রী মাছ আলাদা এবং সহজেই এদের পরস্পর থেকে পৃথক করা যায়। একই বয়সের পুরুষদের দেহের বর্ণ স্ত্রীদের দেহের বর্ণের চেয়ে বর্ণিল ও উজ্জ্বল হয়ে থাকে। অন্যদিকে পুরুষদের পৃষ্ঠ, পায়ু ও পুচ্ছ পাখনা স্ত্রীদের পৃষ্ঠ, পায়ু ও পুচ্ছ পাখনা থেকে অনেকটা লম্বা, বর্ণিল ও তীক্ষ্ণ প্রান্ত বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
এ্যাকুয়ারিয়ামে ডিমের আশ্রয়ের জন্য পুরুষেরা প্রশস্ত ও ভাসমান জলজ উদ্ভিদের পাতার নীচে অথবা কোন পিভিসি পাইপ (PVC pipe), ফুলদানী ইত্যাদির মধ্যে বুদবুদের বাসা (bubble nests) তৈরি করে। বাসা তৈরির সময় এরা স্ত্রী মাছের উপস্থিতি একদমই পছন্দ করে না। বাসা তৈরি শেষ হলে পুরুষেরা বাসার নীচে বা নিকটে স্ত্রীদের ডিম দিতে উদ্বুদ্ধ করে। স্ত্রীরা এক দফায় ৪০০-৫০০টি ডিম দিয়ে থাকে (Akhter, 1995)। স্ত্রীরা ডিম দেয়ার পর পুরুষেরা ডিমগুলিকে নিষিক্ত করে ও বুদবুদের বাসায় স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে বাবারা সেই বাসা পাহারা দেয়। নিষিক্ত ডিম ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফুটে বাচ্চা তথা ডিমপোনা বের হয়। তিন থেকে চার দিন পর ডিমপোনার কুসুমথলির কুসুম শেষ হয়ে এলে এরা প্রকৃতি থেকে খাবার গ্রহণ করতে শুরু করে। এসময় এদেরকে খাবার হিসেবে আর্টেমিয়ার লার্ভা নিওপ্লি (Artemia nauplii) সরবরাহ করতে হয়। তবে মুরগীর ডিমের কুসুম সিদ্ধ করে পানিতে গুলে ও কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে এদের খাবার হিসেবে সরবরাহ করা যায়।
উপযোগী পরিবেশ (Suitable Environment)
স্বাদুপানির এই মাছ জলাশয়ের তলদেশের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।
প্রকৃতিতে এই মাছের অনুকূল পরিবেশ হচ্ছে- পিএইচ (pH): ৬-৮, হার্ডনেস (Hardness): ৫-১৯ dH, এবং তাপমাত্রা: ২৪-৩০ ডি.সে. (Fishbase, 2014)।
Sharpe (2014) অনুসারে অনুসারে এদের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামের পানি ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন ২ গ্যালন (প্রায় ৯ লিটার), তাপমাত্রা ২৪.২-৩০ ডিগ্রি সে., হার্ডনেস (Hardness): সর্বোচ্চ ২০ dGH, পিএইচ ।
Seriouslyfish (2014) অনুসারে এক জোড়া মাছের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামের আকার ৪৫x৩০ সেমি। পিএইচ (pH): ৬-৮, হার্ডনেস (Hardness): ০-৩৫৭ পিপিএম (ppm) এবং তাপমাত্রা: ২২-৩০ ডি.সে.।
রোগ (Diseases)
এ্যাকুয়ারিয়ামে এই মাছ এ্যাবডোমিনাল ড্রপসিতে (abdominal dropsy) আক্রান্ত হতে পারে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
এ্যাকুয়ারিয়ামে বাহারি মাছ হিসেবে এর গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার দিক থেকে গোল্ড ফিশের পরেই ফাইটারের অবস্থান।
বাংলাদেশে এই মাছের প্রজনন করানো সম্ভব হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পোনা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
বাজার মূল্য:
বাংলাদেশে ১০০-২০০ টাকায় এক জোড়া ফাইটার পাওয়া যায় (Galib and Mohsin, 2011)।
তথ্য সূত্র (References)
- Akhter, M.S., 1995. Aquarium Guide (in Bengali), published by Echo Aqua Fisheries Project, 1/6 Pallabi, Mirpur, Dhaka, Bangladesh, pp. 51-71.
Fishbase. 2014. Specie Summery: Betta splendens Regan, 1910, Siamese fighting fish.Retrieved on May 30, 2014.
Galib SM and Mohsin ABM. 2011. Cultured and Ornamental Exotic Fishes of Bangladesh: Past and Present. LAP LAMBERT Academic Publishing. 176pp.
Rainboth, W.J., 1996. Fishes of the Cambodian Mekong. FAO Species Identification Field Guide for Fishery Purposes. FAO, Rome, 265 p.
Saxena, A. 2003. Aquarium Management. Daya Publishing House, Delhi 110035, India, 230 p.
Seriouslyfish. 2014. Species profile: Betta splendens Regan, 1910, Siamese Fighting Fish. Retrieved on May 31, 2014.
Sharpe S. 2014. Siamese Fighting Fish – Bettas. Freshwater Aquariums. About dot com. Downloaded on 01 June 2014.
Thomas, P.C., Rath, S.C. and Mohapatra, K.D. 2003. Breeding and Seed Production of Fin Fish & Shell Fish (Foreword by Dr. T.V.R. Pillay), Daya Publishing House, Delhi 110035, India, 377 p.
Vidthayanon, C. 2011. Betta splendens. In: IUCN 2013. IUCN Red List of Threatened Species. Version 2013.2. Downloaded on 30 May 2014.
Visited 6,229 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?