এ্যাকুয়ারিয়ামে গোল্ড ফিশের প্রজনন
এ্যাকুয়ারিয়ামে গোল্ড ফিশের প্রজনন

বাড়িতে ঘরোয়াভাবে বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজনন করানোর জন্য নানান রকমের উপকরণ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বাহারি মাছের প্রজনন করার সময় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয় তাহলো মা-বাবা মাছ থেকে ডিম ও পোনাকে যথাসময়ে আলাদা করা। আমাদের দেশে বিদেশি বাহারি মাছ হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে গোল্ড ফিশ, মলি, গাপ্পি, সোর্ড টেইল, প্লাটি, জেব্রা ফিশ, টাইগার বার্ব, এঞ্জেল, ফাইটিং ফিশ ইত্যাদি। এদের অনেকে মাতৃ-পিতৃ যত্ন প্রদর্শন করে না। আবার অনেকে ডিম বা পোনা দেবার পর নিজেরাই (বিশেষত বাবারা) তা খেয়ে ফেলে। এমন প্রজাতির মা-বাবা মাছ থেকে তাদের ডিম ও পোনাকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন হয় নানা ধরণের সাধারণ উপকরণ তথা যন্ত্রপাতি। আর এই সহজ সরল যন্ত্রপাতি তৈরি করা যায় ঘরের ফেলনা জিনিসপত্র ব্যবহার করে। এ্যাকুয়ারিয়ামে গোল্ড ফিশ, মলি, প্লাটিগাপ্পি মাছের প্রজনন বিষয়ে আমার প্রকাশিত ফিচারে আমি যেসব উপকরণ ব্যবহার করেছি তার সবগুলোই ছিল ফেলনা জিনিষপত্র থেকেই তৈরি করা। ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই বাড়তি খরচের হাত থেকে আপনাকে বাঁচাবে। এ লেখায় রইল ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করা ফ্রেম নেট ও বক্স নেট এবং এর ব্যবহার পদ্ধতি। আগামী পর্বে থাকবে গ্যালন নেট, বোতল নেট ও বয়াম নেট তৈরির কলাকৌশল ও ব্যবহার পদ্ধতি।

ফ্রেম নেট

  • যে মাছের জন্য প্রযোজ্য:
    • প্লাটি, মলি, গাপ্পি, জেব্রা ফিশ, সোর্ড টেইল ইত্যাদি
  • তৈরিতে যা যা লাগবে:
    • ফ্রেম নেট তৈরির জন্য প্রয়োজন সরু করে কাটা বাঁশ (বাসার পুরাতন নষ্ট হয়ে যাওয়া ঝুল ঝাড়ুর সরু প্রান্ত এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়)
    • ০.২ ইঞ্চি মেস সাইজের জাল (জালের পরিবর্তে নেটের শপিং ব্যাগ ব্যবহার করা যায় তবে সে ক্ষেত্রে মেস সাইজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট আকারের মাছ দিতে হবে)।
ফ্রেম নেট
ফ্রেম নেট
  • যে ভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন:
    • প্রথমে সরু করে কাটা বাঁশ বা ঝুল ঝাড়ুর সরু প্রান্ত ব্যবহার করে একটি ফ্রেম তৈরি করে নিতে হবে।
    • একটি ২৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ও ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার এ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য ১৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ১২ ইঞ্চি প্রস্থের ফ্রেম তৈরি করতে হবে।
    • এর পর ফ্রেমের চারপাশে জাল সেলাই করে আটকে দিতে হবে (উপরের ছবির মত করে)।
    • ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার এ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য জালের উচ্চতা হবে ১২ ইঞ্চি।
    • ফ্রেমসহ জালটিকে এ্যাকুয়ারিয়ামের প্রস্থ বরাবর ফ্রেমের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী স্থাপন করতে হবে যাতে ফ্রেমের উভয় পাশ এ্যাকুয়ারিয়ামের কাঁচের উপরে আটকে থাকে (উপরের চিত্র অনুযায়ী)।
    • নেট অবশ্যই এ্যাকুয়ারিয়ামের মাঝামাঝি স্থাপন করতে হবে ফলে পোনা সাঁতার কাটার জন্য নেটের উভয় পাশে যথেষ্ট যায়গা পাবে।
    • জালটির পাঁচ ভাগের চার ভাগ পানিতে ডুবানো অবস্থায় রাখতে হবে। এভাবে তৈরি জালে সহজেই মা মাছ বাচ্চা প্রসব করতে পারে এবং একই সাথে বাচ্চাকে রক্ষাও করা যায় সহজে।
  • সুবিধা:
    • সহজেই তৈরি করা যায়।
    • কম ব্যয় সাপেক্ষ।
    • কাজ শেষে সহজেই অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখা যায়।
    • এক সাথে ৮-১২ টি মাছ দেয়া যায়।
    • মাছ চলা ফেরার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা পায়।
  • অসুবিধা:
    • মাছের আকৃতির প্রতি নজর দিয়ে জালের মেস সাইজ না হলে মাছ বাইরে চলে যেতে পারে।
    • অনেক ক্ষেত্রে মাছের কানকো জালে আটকে গিয়ে মাছ মারা যেতে পারে তাই সবসময় সব মাছের জন্য নেটের ব্যাগ উপযুক্ত নয়।
    • এক দিনের বেশি সময় ধরে মাছকে ফ্রেম নেটে রাখার প্রয়োজন হলে খাবার দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার ভেসে জালের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য পানির লেভেল বরাবর এক ইঞ্চি প্রস্থের কাপড় নেটের চারিদিকে সেলাই করে আটকে দিতে হয়।
    • গভীরতা কম বলে মাছ লাফ দিয়ে বাইরে চলে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ্যাকুয়ারিয়ামের উপরে জাল (নেটের শপিং ব্যাগ) দিয়ে আটকে দিতে হবে।

 

বক্স নেট

  • যে মাছের জন্য প্রযোজ্য:
    • গোল্ড ফিশ, টাইগার বার্ব, জেব্রা ফিশ
  • তৈরিতে যা যা লাগবে:
    • মোটা জিআই তার
    • কয়েকটি নেটের ব্যাগ
বক্স নেট
বক্স নেট
  • যে ভাবে তৈরি ও ব্যবহার করবেন:
    • প্রথমে এ্যাকুয়ারিয়ামের মাপের একটি বক্স আকৃতির ফ্রেম জিআই তার দিয়ে তৈরি করতে হবে।
    • এর চারপাশে নেটের ব্যাগ সেলাই করে দিতে হবে।
    • বক্সটি এ্যাকুয়ারিয়ামের মেঝে থেকে যেন ৩-৪ ইঞ্চি উপরে স্থাপিত হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে (যেন কোন অবস্থাতেই মাছ এ্যাকুয়ারিয়ামের মেঝের নাগাল না পায় এবং ডিম নষ্ট করে না দেয়)।
    • প্রজনন বাক্সের উপরের চার কোনায় এমনভাবে তারের তৈরি হুক রাখতে হবে যাতে করে সহজেই বাক্সটিকে এ্যাকুয়ারিয়ামে ঝুলিয়ে দেয়া যায়।
  • সুবিধা:
    • সহজেই তৈরি করা যায়।
    • কম ব্যয় সাপেক্ষ।
    • মাছ চলা ফেরার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা পায়।
    • মাছের চলাফেরা ও কাজ কর্মের প্রতি নজর রাখা যায়।
  • অসুবিধা:
    • মাছের (বিশেষ করে টাইগার বার্ব ও জেব্রা ফিশ) আকারের চেয়ে জালের মেস সাইজ বড় হলে মাছ বাইরে চলে যেতে পারে। সেদিকটা লক্ষ রেখে জালের মেস সাইজের চেয়ে বড় আকারের মাছ দিতে হবে।
    • অনেক সময় মাছের কানকো জালে আটকে গিয়ে মাছ মারা যেতে পারে। তাই সব সময় সব মাছের জন্য নেটের ব্যাগ উপযুক্ত নয়।
    • এক দিনের বেশি সময় ধরে মাছকে বক্স নেটে রাখার প্রয়োজন হলে খাবার দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার ভেসে জালের বাইরে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পানির লেভেল অনুযায়ী এক ইঞ্চি প্রস্থ বিশিষ্ট একখণ্ড কাপড় নেটের চারিদিকে সেলাই করে আটকে দিতে হয়।
    • নেটের ব্যাগ অনেক দিন পানিতে থেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই জালে রং বা আলকাতরা দেবার প্রয়োজন হতে পারে বা নেট পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

 

পুনশ্চ: আগামী পর্বে থাকবে গ্যালন নেট, বোতল নেট ও বয়াম নেট তৈরির কলাকৌশল ও ব্যবহার পদ্ধতি।


Visited 4,883 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
ফেলনা জিনিষপত্র থেকে তৈরি করুন বাহারি মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

Visitors' Opinion

আয়েশা আবেদীন আফরা

প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বি.এস-সি. ফিশারিজ (অনার্স) ৬ষ্ঠ ব্যাচ (সেশনঃ২০০৪-২০০৫), শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ফিশারীজ কলেজ মেলান্দহ, জামালপুর। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.