শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Cypriniformes (Carps)
পরিবার: Cobitidae (Loaches)
গণ: Lepidocephalichthys
প্রজাতি: L. guntea
নামের শব্দতত্ত্ব (Etymology)
গ্রিক শব্দ lepas অর্থ নাছোড়বান্দা (limpet) এবং গ্রিক শব্দ ichtys অর্থ মাছ (fish) থেকে Lepidocephalichthys শব্দটি এসেছে (Fishbase, 2015)।
সমনাম (Synonyms)
Canthophrys olivaceus Swainson, 1839
Canthophrys vittatus Swainson, 1839
Canthophrys vittatus Swainson, 1839
Cobitis balgara Hamilton, 1822
Cobitis guntea Hamilton, 1822
Cobitis maya Sykes, 1839
Cobitis phoxocheila McClelland, 1839
Lepidocephalichthys balgara (Hamilton, 1822)
Lepidocephalichthys guntea (Hamilton, 1822)
Lepidocephalichthys guntea balgara (Hamilton, 1822)
Lepidocephalichthys nepalensis Shrestha, 1980
Lepidocephalus dibruensis Sen, 1979
Lepidocephalus guntea balgara (Hamilton, 1822)
Lepidocephalus nepalensis (Shrestha, 1980)
Misgurnus lateralis Günther, 1868
Schistura aculeata McClelland, 1939
Schistura balgara (Hamilton, 1822).
সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: গুতুম, গুটিয়া, গোরকুন, পোয়া, পুইয়া, পুঁইয়া
English: Guntea loach
ভৌগলিক বিস্তৃতি (Geographical Distribution)
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের স্থানীয় মাছ (Allen, 2012)। উল্লেখিত দেশগুলো ছাড়াও থাইল্যান্ডে এদের দেখা মেলে (Talwar and Jhingran, 1991)। Fishbase (2015) অনুসারে মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যবর্তী সলউইন (Salween) নদীর অববাহিকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের চলন বিল (Galib et al., 2009); ছোট যমুনা নদী (Galib et al., 2013); হালতি বিলে (Imteazzaman and Galib, 2013) এদের প্রাপ্তির তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট দিনাজপুর এবং রংপুরের ছোট ছোট নদী থেকেও এদের সংগ্রহ করার তথ্য রয়েছে (Rahman, 1989)।
সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
এই মাছটি তালিকায় হুমকিগ্রস্ত (Not threatened) হিসেবে বিবেচিত নয় (IUCN Bangladesh, 2000) ।
বৈশ্বিক সংরক্ষণ অবস্থা মানদণ্ড 3.1 অনুসারে Least Concern (LC) অর্থাৎ প্রকৃতিতে বিস্তৃত পরিসরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এবং জনতার ধারা (Population Trend) স্থির (Stable) (Allen, 2012) ।
বাহ্যিক দৈহিক গঠন (External Morphology)
লম্বা দেহ পার্শ্বীয়ভাবে সামান্য চাপা। পৃষ্ঠ-প্রান্ত এবং উদরীয় প্রান্ত প্রায় সোজা ও সমান্তরাল। মোট তিন জোড়া স্পর্শী উপস্থিত। এর মধ্যে দুই জোড়া চঞ্চুতে (rostral) এবং অবশিষ্ট এক জোড়া উপরের চোয়ালে (maxillary) অবস্থিত। পার্শ্বরেখা অনুপস্থিত। আঁইশ ছোট ও সুস্পষ্ট এবং পুরু মিউকাসে আবৃত (Kibria, 2009)।
পুচ্ছপাখনা গোলাকার। পরিণত পুরুষদের বক্ষপাখনায় অস্থিসদৃশ একটি কাঁটা দেখতে পাওয়া যায় (Rahman, 1989)। কাঁটাটি উক্ত পাখনার ৭তম ও ৮ম পাখনারশ্মি একীভূত হয়ে গঠিত হয় যা ল্যামিনা সার্কুলারিস (lamina circularis) নামে পরিচিত। পুচ্ছপাখনার উপরের অর্ধাংশে একটি কালো দাগ উপস্থিত। পুচ্ছপাখনা ও পৃষ্ঠপাখনায় রেখার ন্যায় দাগ দেখতে পাওয়া যায় (Kibria, 2009)।
দেহ সাধারণত গাঢ় হলুদ বর্ণের। তুণ্ড থেকে পুচ্ছপাখনার গোড়া পর্যন্ত একটি হালকা বর্ণের আনুভূমিক দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এই হালকা দাগের উভয় পাশে (উপরে ও নিচ পাশে) কালো বর্ণের দাগ উপস্থিত।
মাথার দৈর্ঘ্য আদর্শ ও মোট দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ১৮.৬ ও ১৫.৪ শতাংশ। দেহ উচ্চতা আদর্শ ও মোট দৈর্ঘ্যের যথাক্রমে ১৮.৬% ও ১৫.৪%। চোখের ব্যাস মাথার দৈর্ঘ্যের ১২.৫ শতাংশ।
পাখনা সূত্র (Fin formula)
D. 8 (2/6); P1. 8-9; P2. 7-8; A. 7 (2/5)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে ১৫ সেমি, Shafi and Quddus (1982) এবং Hussain (1999) অনুসারে ৯.২ সেমি, Rahman (1989 and 2005) অনুসারে ৯.৬ সেমি। তবে বাংলাদেশের চলন বিল থেকে ২০০৭ সালে ১০.৪ সেমি দৈর্ঘ্যের মাছ সংগ্রহ করা হয় যা উপরে বর্ণিত দৈর্ঘ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খাদ্য ও খাদ্য অভ্যাস (Food and Feeding Habit )
এরা তলদেশবাসী মাছ। পোকামাকড়ের শূককীট, গলিত ও পচা খাবার খেয়ে থাকে (Kibria, 2009)।
স্বভাব ও আবাস্থল (Habit and Habitat)
প্রবহমান ও স্থির উভয় প্রকৃতির স্বচ্ছ জলে এরা বাস করে (Fishbase,2015)। জলজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ স্বাদুপানি ও ঈষৎ লোনা জলের অগভীর নদী, হ্রদ ও জলাভূমিতে এদের দেখতে পাওয়া যায় (EOL, 2015) । এদের অভিপ্রয়াণ মূলত স্বাদুপানির মধ্যে সীমাবদ্ধ (Potamodromous) যা চক্রাকারে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে (EOL, 2015) ।
বাংলাদেশের খাল-বিল, হাওর-বাওর এবং নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় (Shafi and Quddus, 1982)। জলাশয়ের নিচের স্তরে যেখানে কাদা রয়েছে সেখানে থাকতে পছন্দ করে তবে স্রোতযুক্ত বা স্বচ্ছ স্থির পানিতেও এদের দেখা মেলে (Talwar and Jhingran, 1991)।
প্রজনন (Breeding)
পরিণত পুরুষদের দীর্ঘ বক্ষপাখনার ৭তম ও ৮ম পাখনারশ্মি একীভূত হয়ে ল্যামিনা সার্কুলারিস (lamina circularis) নামক গঠন দেখতে পাওয়া যায় যা স্ত্রী মাছে অনুপস্থিত (Seriouslyfish, 2015)। বক্ষপাখনা স্ত্রীদের চেয়ে পুরুষদের অধিক দীর্ঘ হয়ে থাকে (Kibria, 2009)।
একই বয়সের পরিণত স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে স্ফীত, সামান্য লম্বা হয়ে থাকে যাদের উদরের সম্মুখে দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এরা প্রকৃতিতে সম্ভবত একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে প্রজনন করে থাকে তবে এ্যাকুয়ারিয়ামে এদের প্রজনন সম্পর্কে তথ্য জানা যায় না (Seriouslyfish, 2015)।
বাংলাদেশে এই মাছের প্রজননকাল জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
বস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা (Ecological importance)
গলিত ও পচা খাবার খেয়ে জলজ বাস্তুতন্ত্রে পানি পরিষ্কার রাখতে ভূমিকা পালন করে (Kibria, 2009)।
এ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবস্থাপনা
এদের জন্য ন্যূনতম এ্যাকুয়ারিয়ামের আকার ৮০x৩০ সেমি। পছন্দনীয় তাপমাত্রা ২০-২৫°C, পিএইচ ৬-৮ এবং হার্ডনেস ৩৬-২১৫ পিপিএম (Seriouslyfish, 2015)। অন্যদিকে Vancouver (2015) অনুসারে এদের অনুকূল তাপমাত্রা ৭৫-৮০ ºF (২৪-২৭°C), পিএইচ ৬.৫-৭.৫ এবং হার্ডনেস ৬ dh।
এরা প্রধানত ক্ষুদ্রাকার প্রাণী (পতঙ্গের শূককীট( insect larvae), ক্রাশটেশিয়ানস (crustaceans) ইত্যাদি) শিকার করে খায়। তবে এ্যাকুয়ারিয়ামে এরা সকল ধরণের প্যাকেটজাত খাবারই খেয়ে থাকে। এছাড়াও জীবন্ত ও হিমায়িত ডাফনিয়া (Daphnia), আর্টেমিয়া (Artemia), ব্লাডওয়ার্ম (bloodworm), ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp), কেঁচো (earthworms) ইত্যাদি খেয়ে থাকে (Seriouslyfish, 2015 and Vancouver, 2015) ।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
একক প্রজাতি হিসেবে এই মাছের উৎপাদন তথ্য পাওয়া যায় না। অন্যান্য মাছের সাথে ধরা পড়ে। বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ যেমন খোলসান এবং বিভিন্ন ধরণের জাল যেমন খেপলা জাল, হোচা জাল, টানা জাল, ভেসাল জাল ইত্যাদি দ্বারা এদের আহরণ করা হয় (Shafi and Quddus, 1982) । তাজা ও শুঁটকি দুই অবস্থাতেই এই মাছ বাজারজাত করা হয় (Samad et al., 2009 )।
বাংলাদেশে এই মাছটিকে মূলত খাবারের মাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাহারি মাছ হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে। তাই এই মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হলে দেশে ও বিদেশে বাহারি মাছ হিসেবে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব।
তথ্য সূত্র (References)
- Allen D (2012) Lepidocephalus guntea. The IUCN Red List of Threatened Species. Version 2014.3. Downloaded on 03 April 2015 and from http://www.iucnredlist.org/details/172436/0
- EOL (2015) Lepidocephalichthys guntea; Guntea Loach. Downloaded on 03 April 2015 and from http://eol.org/pages/218175/details
- Fishbase (2015) Species summary: Lepidocephalichthys guntea (Hamilton, 1822), Guntea loach. Downloaded on 03 April 2015 and from http://www.fishbase.org/summary/5336
- Galib SM, Samad MA, Mohsin ABM, Flowra FA and Alam MT (2009) Present Status of Fishes in the Chalan Beel- the Largest Beel (Wetland) of Bangladesh. International Journal of Animal and Fisheries Science 2(3): 214-218.
- Galib SM, Naser SMA, Mohsin ABM, Chaki N and Fahad MFH (2013) Fish diversity of the River Choto Jamuna, Bangladesh: Present status and conservation needs. International Journal of Biodiversity and Conservation 5(6): 389-395. DOI: 10.5897/IJBC2013.0552
- Hamilton F (1822) An account of the fishes found in the river Ganges and its branches, Edinburgh & London, Fishes Ganges, 405 p.
- Hussain MM (1999) Fishes and Fisheries of the River Atrai in Rajshahi with Reference to its Limnology, unpublished Ph.D. thesis, Department of Zoology, University of Rajshahi, Bangladesh, pp. 5-200.
- Imteazzaman AM and Galib SM (2013) Fish Fauna of Halti Beel, Bangladesh. International Journal of Current Research 5(1): 187-190.
- IUCN Bangladesh (2000) Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
- Kibria MM (2009) Lepidocephalichthys guntea (Hamilton, 1822) In: Ahmed ZU, Ahmed ATA, Kabir SMH, Ahmed M, Begum ZNT, Hasan MA and Khondker M (eds.) Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol. 23. Freshwater Fishes (In Bengali). Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka. pp. 128-129.
- Vancouver MI (2015) Lepidocephalichthys guntea. Downloaded on 04 April 2015 and from http://www.loaches.com/species-index/lepidocephalichthys-guntea
- Rahman AKA (1989) Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 123.
- Samad MA, Galib SM, Flowra FA (2009) Fish Drying in Chalan Beel Areas. Bangladesh Journal of Scientific and Industrial Research 44(4): 461-466. DOI: 10.3329/bjsir.v44i4.4599
- Seriouslyfish (2015) Species profile: Lepidocephalichthys guntea (HAMILTON, 1822). Downloaded on 03 April 2015 and from http://www.seriouslyfish.com/species/lepidocephalichthys-guntea/
- Shafi M and Quddus MAA (1982) Bangladesher Matshya Sampad (in Bengeli), Bangla Academy, Dhaka, pp. 1-444.
- Talwar PK and Jhingran AG (1991) Inland Fishes of India and Adjacent Countries, Vol. I, Oxford & IBH Publishing Co. Pvt. Ltd. New Delhi-Calcutta, pp. 172-173.
English Feature:
Visited 4,027 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?