লক্ষ লক্ষ প্রাণীর মাঝে বসত করি ভাই
কটা প্রাণী তেমন ভাবে চিনতে বল পাই।
ছোট্ট জীবন-স্বল্প সময় তবুও সাধ মনে
হতো যদি জানা শোনা সকল প্রাণীর মনে।
তাইতো এলেন যুগে যুগে প্রাণীবিদ কত
পথ দেখালেন চিনে নেবার প্রাণী আছে যত।
উদ্ভব হল শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতির ধারা-
শ্রদ্ধা ভরে স্মরি তাঁদের পথ দেখালেন যাঁরা।
এবার চল প্রবেশ করি সকল প্রাণীর ঘরে,
জেনে নেই সবার কথা পর্ব ধরে ধরে।

একটি কোষের দেহ আমার, এককোষেতেই জীবন
ক্ষণপদ, ফ্লাজেলা বা সিলিয়া দ্বারা চলন।
স্বাধীন জীবী, মিথোজীবি, পরজীবি হয়ে
ব্যাপনক্রিয়ায় শ্বসন চালাই সারাজীবন ভরে।
বংশ বৃদ্ধির পদ্ধতির শোন এবার লিস্ট
অযৌন বা যৌনজনন, ভোবোনা সিস্ট।
দেহ আমার ক্ষুদ্র হলেও, ভেবোনা দুর্বল
রোগবাধিয়ে সকল জীবে, দেখাই আমার বল।
তাইতো বলি ছোট্ট হলেও, আমল দিও ভায়া
প্রাণীরাজ্যের প্রথম পর্ব, আমি প্রোটোজোয়া।

সারা দেহ ছিদ্র আমার, গুনলে হয় না শেষ
সাগর কিংবা পুকুর জলে, জীবন চলে বেশ।
নালীতন্ত্র আছে দেহে, রেচনতন্ত্র নাই
অযৌন বা যৌনজনন, জীবনচক্রে পাই।
চলতে আমি পারিনা তাই, বসেই জীবন সারা
প্রাণী রাজ্যের দ্বিতীয় পর্ব আমি পরিফেরা।

এক্টোডার্ম ও এণ্ডোডার্ম দুইটি স্তর দিয়া
দেহখানি গড়া আমার, মাঝে মেসোগ্লিয়া।
দেহের ভেতর সিলেন্টরন, বাইরে নিডোব্লাস্ট
অন্তঃ বা বহিঃকোষীয় পরিপাকে অভ্যাস।
পলিপ আমার অচল দশা, মেডুসা সচল
একক ভাবেও বসত করি, কিংবা বাধি দল।
প্রবাল প্রাচীর তৈরী করে আমার কলোনীটা
তিন নম্বর পর্ব জেনো আমি সিলেন্টেরেটা।

পাতার মত দেহ আমার, চ্যাপ্টা অতিশয়
অধিকাংশই পরজীবি অবাক কিছু নয়।
হুক-সাকারে আটকে থাকি, পোষক প্রাণীর গায়ে
তৈরী খাবার শোষণ করি, রোগ উপহার দিয়ে।
সিলোম আমার নেইতো কোন, আছে রেচনতন্ত্র
পৌষ্টিক নালী ছাড়াই বাঁচি, এ যে আজব মন্ত্র।
উভলিঙ্গ প্রাণী আমি সবার চোখে বিষ
চার নম্বর পর্ব আমি প্লাটিহেলমিনথিস।

সূতার মত দেহ আমার, কিউটিকলে ঘেরা
পৌষ্টিকনালি আছে কিন্তু’, পরিপাক গ্রন্থি’ ছাড়া।
ডাইওসিয়াস প্রাণী আমি রেচনতন্ত্র আছে
সংবহন ও শ্বসনতন্ত্র নেই যে আমার কাছে।
সিলোমের উৎপত্তি আমার থেকেই শুরু
সিউডোসিয়াস প্রাণী আমি, সিলোমেটের গুরু।
অন্য প্রাণীর অপকারে সুনাম আছে বেশ
পাঁচ নম্বর পর্ব আমি নিমাথেল্‌মিনথিস।

অসংখ্য খণ্ডক দিয়ে দেহ আমার গড়া
প্রতি খণ্ডক রেচনতন্ত্রের নেফিওডিয়ায় ভরা।
ইউসিলোমেট গ্রুপের শুরু আমার থেকে ভাই
শ্বসন চলে ত্বক বা ফুলকায় অসুবিধা নাই।
রক্তসংবহন বদ্ধ আমার ডাইওসিয়াস দেহ
উভলিঙ্গও হতে পারি ভুল করোনা কেহ।
চলনের প্রধান অঙ্গ, প্যারাপোডিয়াম, সিটা
ছয় নম্বর পর্ব জেনো, আমি এনিলিডা।

সন্ধিপদী প্রাণী আমি, কাইটিনাস দেহ
সিলোমে থাকে সর্বদাই রক্তের প্রবাহ।
শ্বসন কাজে ফুলকা অথবা বায়ূনল, বুক লাং
রেচনে সবুজগ্রন্থি’ আর নালিকা মালপিজিয়ান।
মুখোপাঙ্গ অনেক রকম, স্ত্রী পুরুষ ভিন্ন
জল স্থল অন্তরীক্ষে আমারই প্রাধান্য।
পুঞ্জাক্ষি দিয়ে আমি দেখি পৃথিবীটা
সর্ববৃহৎ পর্ব আমি, নামটা আর্থ্রোপোডা।

নরম মাংসল দেহ আমার, ম্যান্টলেতে ঘেরা
করো আবার খোলক আছে, দেহ রসে গড়া।
জোড় সংখ্যক বৃক্ক নিয়ে তৈরী রেচনতন্ত্র
এক নিলয়, দুই অলিন্দে গড়া হৃদ্‌যন্ত্র।
পৌষ্টিক নালী ‘ইউ’ আকৃতির, শ্বসন চালায় ফুল্‌কা
আট নম্বর পর্ব আমি, নামটা যে মোলাস্কা।

কাঁটাযুক্ত ত্বক দিয়ে ঢাকা সারা দেহ
সাইজোসিলাস সিলোম আমার ভুল করো না কেহ।
সেকেণ্ডারী পেন্টামেরাস সিমেট্রি আমার
টিউব ফিটের দ্বার আমি, কাটি যে সাঁতার।
নির্দিষ্ট রেচন কিংবা শ্বসনঅঙ্গ নাই
উন্নততর পানিসংবহনতন্ত্র আছে আমার গায়।
সমুদ্রতেই আবাস আমার একটু ভেবে দেখ
একাইনোডার্মাটা নামটি আমার মনে করে রেখো।

নটোকর্ড বহন করি, কিংবা মেরুদণ্ড
স্নায়ুরজ্জুর রূপান্তর, মস্তিষ্ক সুষুষ্মাকাণ্ড।
দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম দেহের গঠনখানি
অন্তঃকংকাল ধারণ করে আমরা সবাই জানি।
অধিকাংশের লেজ বিদ্যমান যৌনজনন হয়
ফুলকা বা ফুসফুস শ্বসনঅঙ্গ হিসাবে রয়।
রক্তসংবহন বদ্ধ, হিমোগ্লোবিনে ভরা
কর্ডাটা পর্ব আমি প্রাণী রাজ্যের সেরা।


Visited 1,139 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
প্রাণী বর্ণমালা

Visitors' Opinion

ড. এম. মনজুরুল আলম

সহযোগী অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল: mamillat@yahoo.com বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.