অনেকটা কই মাছের মত দেখতে স্থানীয়ভাবে মেনি বা ভেদা বা রয়না নামে পরিচিত এই মাছটি এসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ভেদা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus। মুখ বড় এ মাছটির দেহের রং কালচে সবুজ। দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা ও দেহের দু’পাশে তিনটি করে হলুদ-সবুজাভাব ডোরা বিদ্যমান। এর লেজ বা পুচ্ছ পাখনা গোলাকার। আকারে সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে।
খাল-বিল, হাওর-বাওড় এবং নদীতে এদের বসবাস। ভেদা জলাশয়ে পানির তলদেশে কর্দমাক্ত পরিবেশে বাস করতে পছন্দ করে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত ধানেক্ষেত বা পাটেক্ষেতেও এদের দেখা যায়। শীতের সময় এদের জলাশয়ের আগাছাপূর্ণ তলদেশে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এ মাছের খাদ্যাভ্যাস মাংশাসী ধরনের এবং খাদ্য হিসেবে এরা সাধারণত জলজ পোকামাকড়, অন্য ছোট আকারের মাছ গ্রহণ করে থাকে। মাছটির বাহ্যিক রূপ অনেকের কাছে খুব একটা পছন্দ না হলেও খেতে বেশ সুস্বাদু বিশেষ করে যদি করা হয় ভুনা বা দোপেঁয়াজা।
একসময় আমাদের দেশের মানুষ জলাশয়ে নেমে হাত দিয়েই কর্দমাক্ত তলদেশ হতে প্রচুর পরিমাণে এ মাছটি ধরে থাকতো কিন্তু বর্তমানে নির্বিচারে অবৈধ মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার করে ছোট-বড় সব আকারের মাছ ধরা, আবাসস্থল নষ্ট হওয়া ইত্যাদি কারণে অন্যান্য অনেক দেশী মাছের মত এ মাছটিও হারিয়ে যাচ্ছে এবং এ মাছটি বাংলাদেশের বিপন্ন মৎস্য প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। চলন বিলে বর্তমানে এ মাছটি শুধুমাত্র বিলের দক্ষিনাংশের (নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম ও পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা) কিছু কিছু স্থানে অতি অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্রঃ
শফি, মো. এবং কুদ্দুস, মি. মু. আ.; ১৯৮২। বাংলাদেশের মাৎস্য সম্পদ। ১ম সংস্করণ। বাংলা একাডেমী, ঢাকা, বাংলাদেশ। মো. পৃ. xii+৪৪৪।
Rahman, A K M; 2005. Freshwater Fishes of Bangladesh, 2nd Edition. Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka, Bangladesh, XVIII+394 pp.
Talwar, P.K. and A.G. Jhingran; 1991. Inland Fishes of India and Adjacent Countries. Oxford and IBH Publishing Co. Pvt. Ltd., New Delhi, India. LIV + 1158 pp.
Visited 4,090 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?