চিত্র- “চিংড়িঃ রোগ ব্যবস্থাপনা” বইটির প্রচ্ছদ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভাইরাস রোগের কারণে চিংড়ি শিল্প যখন হুমকির সম্মুখীন ঠিক সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিংড়ি বিজ্ঞান লেখক ড. সুশান্ত কুমার পালের বাংলাভাষায় রচিত “চিংড়িঃ রোগ ব্যবস্থাপনা” শিরোনামের বইটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয় সময় উপযোগীও বটে। চিংড়ির রোগতত্ত্ব ও রোগের নিরাময়ের বিজ্ঞান ভিত্তিক কারিগরি তথ্যের উপর বাংলা ভাষায় রচিত এমন তথ্যবহুল বই এটাই সম্ভবত প্রথম যা বইটির মুখবন্ধে মৎস্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী উল্লেখ করেছেন।

বইটির মোট নয়টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম পাঁচটিতে চিংড়িঃ বিশ্ব প্রেক্ষাপট (প্রথম অধ্যায়), রোগ ব্যবস্থাপনার বিবেচ্য বিষয় (দ্বিতীয় অধ্যায়), চিংড়ি রোগ ও প্রতিকার (তৃতীয় অধ্যায়), চিংড়ির রোগের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি (চতুর্থ অধ্যায়), চিংড়ির রোগ/প্রতিকার/চিকিৎসা-সংক্ষিপ্ত তথ্য (পঞ্চম অধ্যায়) প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট চারটি অধ্যায়ে রোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সুপারিশমালা (ষষ্ঠ অধ্যায়), রোগ ব্যবস্থাপনাঃ পর্যালোচনা (সপ্তম অধ্যায়), আনুষঙ্গিক বিষয়াদি (অষ্টম অধ্যায়) এবং গ্রন্থপঞ্জি ও পারিভাষিক শব্দাবলী (নবম অধ্যায়) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা বইটিকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। বিশেষত চিংড়ি খামারের রোগ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর অংশটি চিংড়ি চাষীদের বিশেষভাবে উপকৃত করবে। চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনার খুটিনাটি বিষয়াদি প্রয়োজনীয় রঙ্গিন চিত্রসহ উপস্থাপন ফিশারীজ সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, গবেষক ও চিংড়ি চাষীদের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বইটির মুখবন্ধে লিয়াকত আলী (তৎকালীন মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর) লিখেছেন- “বইটিতে চিংড়ির রোগ নিরাময়ের সম্ভাব্য বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বর্ণনার পাশাপাশি রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা হয়েছে এবং রোগাক্রান্ত চিংড়িকে ওষধ প্রয়োগ করে রোগের নিরাময় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করা, কিভাবে পরিবশে উন্নয়ন করে চিংড়ি ঘেরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তাও সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে”।

বইটির উপক্রমণিকায় লেখক নিজে আমাদের জানিয়েছেন-চিংড়িতে ভাইরাস জনিত রোগ আজ বিশ্বে বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। চিংড়ি চাষে রোগের প্রাদুর্ভাব ও রোগ ব্যবস্থাপনার সঠিক দিক নির্দেশনা ও চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যে বইটির বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রোগের তথ্য, কারণ, সনাক্তকরণ পদ্ধতি, চিকিৎসা এবং চিংড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক।

বইটির লেখক পরিচিতি থেকে জানা যায় সিলেটে জন্ম নেয়া ড. সুশান্ত কুমার পাল কেবলমাত্র উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিংড়ি বিজ্ঞান লেখকই নন একাধারে তিনি ছড়াকার, ক্রীড়ামোদি, অনুরাগিণী, সাহিত্যপ্রেমী ও ভ্রমণবিলাসী। তাঁর পেশাগত সংযুক্তি রয়েছে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পরীক্ষক হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে প্রকল্প মূল্যায়ক হিসেবে এবং বিভিন্ন জার্নালের (SAARC/SAIC সহ) সম্পাদনা সদস্য হিসেবে। তিনি ভারতের অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে মৎস্য বিজ্ঞানে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য-পরিচালক (মৎস্য)।

বইটির প্রথম প্রকাশ নভেম্বর-১৯৯৭ এবং দুই শত এগার পাতার এবং তিনশত পঞ্চাশ টাকা মূল্যের এই বইটির প্রকাশিকা মনিকা পাল।


Visited 666 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বই পরিচিতি: চিংড়িঃ রোগ ব্যবস্থাপনা

Visitors' Opinion

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.