“রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ: মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা” এবং “রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ: মজুদ ব্যবস্থাপনা” শিরোনামের লেখায় রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতকরণ ও পোনা মজুদ এর উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ লেখায় রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
পুকুরের পানিতে উপস্থিত প্রাকৃতিক খাদ্যের (উদ্ভিদকণ বা ফাইটোপ্লাংক্টন ও প্রাণীকণা বা জুপ্লাংক্টন) পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রদান করার উদ্দেশ্যই হল সর্বনিম্ন সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া। এছাড়াও অধিক মজুদ ঘনত্বে মৃত্যুহার কমানো তথা বেঁচে থাকার হার বাড়ানো, পুষ্টির অভাবজনিত রোগ মুক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সুবিধাদি পাওয়া যায়। সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান চাষকৃত মাছের পুষ্টি চাহিদার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে সম্পূরক খাদ্যে কমপক্ষে ২০% প্রোটিন থাকা আবশ্যক। বাজারে প্যাকেটকৃত খাবার পাওয়া যায় আবার মৎস্য চাষি বাড়িতেই বিভিন্ন খাদ্য উপাদান পরিমাণমত মিশিয়ে মাছের খাবার প্রস্তুত করতে পারে।
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাছের খাবারের উপাদান গুলো হচ্ছে- চালে কুড়া, গমের ভুষি, সরিষার খৈল, ফিসমিল ইত্যাদি। এসব উপাদান ব্যবহার করে পাউডার, দানাদার, পিলেট বা বল আকৃতির খাবার তৈরি করা যায়। যে ধরণের খাবারই তৈরি করা হোক না কেন তা নির্ভর করে মজুদকৃত মাছের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি চাহিদা এবং খাদ্য উপাদান সহজলভ্যতা ও প্রাপ্যতা উপর। এসব খাবার ফিডিং ট্রেতে বা ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ফিডিং ট্রে ব্যবহারে খাদ্যে অপচয় কম হয় ও পানির গুণাগুণ রক্ষা করা সহজ হয়। এছাড়া গ্রাস কার্পের জন্য কলাপাতা কুচি/ক্ষুদিপানা/এ্যাজোলা/নরম স্থলজ ঘাস ইত্যাদি ফিডিং রিং (৪ ফুট লম্বা, ৪ ফুট চওড়া) স্থাপন করে তার মধ্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মৎস্য অধিদপ্তর, ২০০৪ অনুসারে গ্রাসকার্প ছাড়া অন্যান্য রুইজাতীয় মাছের জন্য বাড়িতে তৈরি সম্পূরক খাদ্যে উপকরণের নাম ও পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হল:
- নমুনা ০১: সরিষার খৈল ৫০% ও গমের ভুষি ৫০%।
- নমুনা ০২: সরিষার খৈল ২৫% ও চাউলের কুঁড়া/গমের ভুষি ৭৫%।
সাধারণত প্রতিদিন মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৩-৫% হারে সম্পূরক খাদ্য প্রদান করতে হবে। তবে শীতকালে মাছের জৈবিক ক্রিয়া কমে যায় বলে দেহ ওজনের ১-২% হারে খাবার দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্পূরক খাদ্যের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য সাধারণত বিভিন্ন ধরণের সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অজৈব সারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নাইট্রোজেনাস সার (ইউরিয়া, এ্যামোনিয়া, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, লিকুইড এ্যামোনিয়া, সোডিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি), ফসফরাস সার (এসএসপি বা সিঙ্গেল সুপার ফসফেট, ডিএসপি বা ডবল সুপার ফসফেট, টিএসপি বা ট্রিপল সুপার ফসফেট, ডিএপি বা ডাইএ্যামোনিয়াম ফসফেট, এ্যামোনিয়াম ফসফেট), পটাস সার (মিউরেট অব পটাস বা পটাসিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম সালফেট, পটাসিয়াম নাইট্রেট) ইত্যাদি। জৈব সারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, রেশমকীটের চূর্ণ, কম্পোস্ট ইত্যাদি।
সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুকুরের সকল স্থানে সমান মাত্রায় প্রয়োগের বিষয়টি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অজৈব সার পানিতে দ্রবীভূত করে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা ভাল। ছোট ও মাঝারি আকারে পুকুরের ক্ষেত্রে জৈব সার স্বল্পমাত্রায় একাধিক বারে প্রয়োগ করা উচিত। দ্রুত ও সহজে পানিতে দ্রবীভূত হয় এমন সার ব্যবহার করা ভাল। সার প্রয়োগে পূর্ব পর্যন্ত যথাযথভাবে সংরক্ষণের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের প্রভাবকের উপর সার প্রয়োগ অনেকাংশে নির্ভরশীল। যেমন মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ অনুচিত। FAO (1997) অনুসারে কখন সার প্রয়োগ করা যাবে কখন যাবে না তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হল-
পরিবেশের প্রভাবক | সার প্রয়োগ করা যাবে | সার প্রয়োগ করা যাবে না |
দুপুরে পানির তাপমাত্রা | ১৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের বেশী | ১৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের কম |
সেক্কি ডিসকের পাঠ | ৪০ সেমি এর বেশী | ৪০ সেমি এর কম |
পানির পিএইচ | নয় এর কম | নয় এর বেশী |
সূর্যোদয়ের সময় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ | ৩ মিলিগ্রাম/লিটারের বেশী | ৩ মিলিগ্রাম/লিটারের কম |
সারের মাত্রারিক্ত প্রয়োগ একদিকে যেমন মাছের পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট করে অন্যদিকে খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এজাতীয় অপচয় রোধে পুকুরের পানির পুষ্টি উপাদানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন যা (FAO, 1997) কর্তৃক সুপারিশকৃত। যদিও আমাদের দেশের বেশীরভাগ মৎস্যচাষির পক্ষে এই নির্দেশক ব্যবহার করা সম্ভব নয় তবুও জানার জন্য এখানে উল্লেখ করা হল-
পানির পুষ্টি/রাসায়নিক উপাদান | সার প্রয়োগ করতে হবে | যে সার প্রয়োগ করতে হবে |
নাইট্রেট | ২ মিলিগ্রাম/লিটারের কম হলে | নাইট্রোজেনাস সার |
ফসফেট | ০.১ মিলিগ্রাম/লিটারের কম হলে | ফসফেট সার |
পটাশিয়াম | ০.১ মিলিগ্রাম/লিটারের কম হলে | পটাশ সার |
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম/লিটারের কম হলে | ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সার |
পুরানো পুকুরের চেয়ে নতুন পুকুরে আবার কাঁদাময় পুকুরের চেয়ে বালুময় পুকুরে সার প্রয়োগের হার তুলনামূলক বেশী হয়ে থাকে। চাষের পদ্ধতিও এবং মজুদকৃত মাছের প্রকার ও পরিমাণও সার প্রয়োগে হারকে প্রভাবিত করে থাকে।
মৎস্য অধিদপ্তর, ২০০৪ অনুসারে প্রতি শতকে প্রতিদিন নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে-
- গোবর ১৫০-২০০ গ্রাম অথবা মুরগীর বিষ্ঠা ৭০-১০০ গ্রাম
- ইউরিয়া ৩-৫ গ্রাম
- টিএসপি ১-২ গ্রাম।
দিন হিসেব করে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর সপ্তাহ, পক্ষ বা মাস ভিত্তিকও সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- চুন প্রয়োগ
সাধারণত মাছের প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাণ বাড়াতে, ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ক্ষতিকর পেস্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য চাষের পুকুরে চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুরে চুন প্রয়োগ করলে-
- অম্লীয় পুকুরে এর অম্লীয় মান কমে আসে ও পিএইচ এর মান বাড়তে থাকে ফলে পুষ্টি উপাদান মুক্ত হয়
- পুকুরের জৈব উপাদান পচন ক্রিয়া দ্রুত হয় ফলে তলদেশ থেকে ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইড মুক্ত হয়
- চুন পানির কার্বনডাই অক্সাইডের সাথে মিশে ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট তৈরি করে যা পিএইচ এর মানকে স্থির রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে
- ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের ক্ষতিকর প্রক্রিয়াকে বাধাপ্রাপ্ত হয়
- হিউমিক এসিড, সালফিউরিক এসিডের মত ক্ষতিকর এসিড শোষিত হয়
- সারের কার্যকারিতা বাড়ে
- পানির ঘোলাটত্ব দূর হয়।
পুকুর প্রস্তুতের সময় একবার চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মজুদ পরবর্তী সময়েও অনেকসময় চুন প্রয়োগের প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণত পুকুরের সেসব কারণে চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তা হল-
- তলদেশের মাটির পিএইচ এর মান ৬.৫ এর কম হলে
- তলদেশ খুব বেশী কর্দমাক্ত হলে
- তলদেশে জৈব উপাদানের পরিমাণ বেশী হলে
- টোটাল এলকালিনিটির পরিমাণ ২৫ মিলিগ্রাম/লিটার (ক্যালসিয়াম কার্বনেট) কম হলে
- রোগ প্রতিরোধ ও ক্ষতিকর পেস্ট নিয়ন্ত্রণে
মাটি ও পানির গুণাগুণ ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে চুন প্রয়োগের হার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সাধারণ লালমাটি এলাকায় শতাংশ প্রতি ২ কেজি, অন্যান্য এলাকায় শতাংশ প্রতি ১ কেজি পোড়া বা পাথুরে চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আবার রোগ প্রতিরোধ বা পেস্ট নিয়ন্ত্রণে শতাংশ প্রতি ১ কেজি, ঘোলাটত্ব দূরীকরণে শতাংশ প্রতি ১/২ থেকে ১ কেজি পোড়া বা পাথুরে চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মাছ থাকা অবস্থায় শতাংশ প্রতি ১ কেজির বেশি চুন ব্যবহার উচিত নয়। বেশী ব্যবহার করতে হলে একাধিক বারে ব্যবহার করতে হবে।
আমাদের দেশে সাধারণত পোড়াচুন বা পাথুরে চুন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে চুনাপাথর ও কস্টিক লাইমও ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কেজি চুনাপাথরের বিপরীতে ৭০ কেজি কস্টিকলাইম বা ৫৫ কেজি পোড়াচুন বা পাথুরে চুন ব্যবহার করতে হয়।
চুন পানিতে গুলিয়ে প্রয়োগ করা আবশ্যক। অনেক চাষি পুকুরে চুনের বস্তা ভাসিয়ে রেখে চুন গুলিয়ে থাকে যা বড় পুকুরের জন্য কম ক্ষতিকর হলেও ছোট ও মাঝারি পুকুরের জন্য বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই চুন প্রয়োগের পূর্বেই তা পানিতে গুলিয়ে নিয়ে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। একটি বড় মাটির পাত্র বা ড্রামে চুন রেখে পাত্রের মুখে চট বা মোটা কাপড় বেঁধে ধীরে ধীরে পানি ঢেলে নিরাপদে চুন গুলানো যেতে পারে।
পুকুরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ
একজন আদর্শ মৎস্যচাষির অন্যতম দায়িত্ব সার্বক্ষণিক পুকুরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা। পানিতে কোন মাছ খাবি খাচ্ছে কি না বা মরে ভেসে উঠেছে কিনা? কোথায় কোন কিছু পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করছে কি না? বর্ষার সময় পাড়ের সার্বিক অবস্থা কেমন? ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য করতে হবে। এছাড়াও হররা টেনে তলদেশের ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়।
রুই জাতীয় মাছের সর্বাধিক বৃদ্ধি ঘটে ২৪-৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। তাপমাত্রা কমলে বা বাড়লে খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয় যা বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে। আবার তাপমাত্রা বাড়লে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে। তাপমাত্রা বেশী হলে জলজ ভাসমান উদ্ভিদ ব্যবহার করে ছায়ার ব্যবস্থা করা অন্যদিক কমে গেলে দক্ষিণ পাশের গাছপালার ডাল কেটে রোদের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ঘোলাটত্বের কারণে সূর্যের আলো প্রবেশের হার কমে যেতে পারে। ফলে ফাইটোপ্লাঙ্কটনের পরিমাণ কমে যায়। সার প্রয়োগে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। ফলে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে যায়। এমনকি দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। মাছ সহজে খাবার খুঁজে পায় না। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। অস্থায়ী ঘোলাটত্ব এমনিতেই ঠিক হয়ে যায় কিন্তু স্থায়ী ঘোলাটত্ব দূর করার জন্য শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি বা এগ্রিকালচারাল জিপসাম শতাংশ প্রতি ৪০০ গ্রাম বা এলাম (এলুমিনিয়াম সালফেট) শতাংশ প্রতি ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পানিতে ৭-১৫ মিলিগ্রাম/লিটার দ্রবীভূত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে রুই জাতীয় মাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। কম অক্সিজেন (দ্রবীভূত) যেমন ক্ষতিকর তেমনই বেশী অক্সিজেনও (দ্রবীভূত) মাছের জন্য ক্ষতিকর। অক্সিজেন কমে গেলে মাছ উপরিস্তরে এসে খাবি খায়, ক্লান্তভাবে ঘোরাফেরা করে, মৃত মাছের মুখ ও কানকো ফাঁকা হয়ে থাকে, পুকুরের উপরে বুদবুদ হয়ে সরের মত পরে আবার অক্সিজেন বেশি হলে মাছের পেট ফুলে যায়, গায়ে বুদবুদ দেখা যায়, মরে ভেসে ওঠে। অক্সিজেন কমে গেলে হররা টেনে ক্ষতিকারক গ্যাস অপসারণ করতে হবে। এ্যারেয়েটর ব্যবহার করে পানি সঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২-৬ মিলিগ্রাম/লিটার হারে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের অনুকূল মাত্রা ৪-৫ পিপিএম। এই মাত্রা বেড়ে গেলে মাছ পানির উপরের স্তরে এসে ক্লান্তভাবে ঘোরাফেরা করে এমন কি মারা যায়, পানির বর্ণ কালচে হয়ে যায়, পানিতে ঢেলা ফেললে বুদবুদ ওঠতে থাকে। হররা টেনে ক্ষতিকারক গ্যাস অপসারণ করতে হবে। শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ ভাল ফল দেয়।
মাছ চাষের জন্য অনুকূল পিএইচ হচ্ছে ৬.৫ থেকে ৮.৫। এই মান কমে গেলে মাছের ফুলকা ও ত্বকে মিউকাস নিঃসৃত হয় আর বেশি হলে খাবার গ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তেঁতুল গলা বা প্রাকৃতিক পানি সরবরাহ করে পিএইচ এর সামান্য হলেও কমান কমানো যায় আবার শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করে পিএইচ এর মান বাড়ানো যায়।
ব্লু ম, জলজ আগাছা, ক্ষতিকারক জলজ প্রাণী (ইনসেক্ট, জোঁক, সাপ, উদবিড়াল), ইঁদুর (পাড়ের গর্ত করার ফলে পাড় দুর্বল হয়ে যায় বা বর্ষার সময় সেই গর্ত ব্যবহার করে মাছ বাইরে চলে যেতে পারে) ইত্যাদি বিষয়াদির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। আশেপাশে শিল্পকারখানা থাকলে তার দূষক পদার্থ যাতে পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। বিষ প্রয়োগ বা মাছ চুরি করার মাধ্যমে মানুষ যেন ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় তাও বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। প্রয়োজনে পাহারাদারের ব্যবস্থা করতে হবে।
আংশিক আহরণ, নমুনায়ন ও সম্পূর্ণ আহরণ
মাছ মজুদের কয়েক মাস পর হতে বড় আকারের মাছসমূহ তুলে ফেলতে হবে যা আংশিক আহরণ নামে পরিচিত। এর ফলে ছোট আকারের মাছসমূহ সহজে বড় হওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়াও যে পরিমাণ মাছ ধরা হল সেই পরিমাণ মাছ পুনঃ মজুদ করাও যায়।
আংশিক আহরণের সময় বা মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে হবে।
আংশিক বা সম্পূর্ণ আহরণ এর জন্য পুকুরে বেড় জাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জাল নিজের হতে পারে অথবা মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত দল অর্থাৎ জেলেদেরও হতে পারে। মাছ ধরার জন্য সাধারণত চুক্তি ভিত্তিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও মাছ তাদেরকে দিতে হয়।
মাছ বাজারজাতকরণ:
মাছ বাজারজাত করণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভ করার বিষয়টি অনেকাংশে এর উপর নির্ভরশীল। তাই মাছ ধরার পূর্বেই মাছের বাজারদর সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়া আবশ্যক। এছাড়াও ফ্রেস মাছের চেয়ে জীবন্ত মাছের বাজার মূল্য বেশী বিধায় মাছ জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা সম্ভব হলে অধিক দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
কৃতজ্ঞতা:
লেখার ছবিগুলো দিয়ে সহায়তা করেছেন ড.এবিএম মহসিন।
তথ্যসূত্র:
বাংলা-
- মৎস্য অধিদপ্তর. ২০০৪. কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ, সমন্বিত মৎস্য কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প (২য় পর্যায়), মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা, পৃ. ১-২৪।
ইংরেজি-
- FAO (Food and Agricultural Organization). 1997. Simple methods for aquaculture: management for freshwater fish culture ponds and water practives. Oxford and IBH publishing Co. Pvt. Ltd. 233pp.
Visited 6,159 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?