বিক্রির জন্য ঝুড়িতেঁ রাখা কুইচা
বিক্রির জন্য ঝুড়িতেঁ রাখা কুইচা

কুইচা মাছটি Synbranchiformes বর্গের Synbranchidae গোত্রের একটি ঈলজাতীয় মাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia । স্থানীয়ভাবে এটি কুচ্চা নামেও পরিচিত।

দেহবর্ণনা: দেহ লম্বাটে এবং গোলাকৃতির। এর ঠোঁট মাংসল এবং উপরের চোয়াল নিচের চোয়াল অপেক্ষা অধিক লম্বাটে। খুবই ছোট বিলুপ্তপ্রায় একটি পৃষ্ঠপাখনা বিদ্যমান। দেহের পেছনের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ লক্ষ্য করা যায়। শ্রোণী, পায়ু ও পুচ্ছ অনুপস্থিত। দেহের রং গাঢ় খয়রী বা বাদামী। কোন পার্শ্বরেখা নেই। মাথা সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ১১%, উচ্চতা সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ৬.১% এবং চোখ মাথার দৈর্ঘ্যের ৩.৩%।

কুইচা মাছ (পৃষ্ঠ দৃশ্য)
কুইচা মাছ (পৃষ্ঠ দৃশ্য)

সর্বোচ্চ আকার: নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর বাজারে স্থানীয় একটি বিল হতে ধৃত একটি কুইচা মাছের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয় ৮৩ সেন্টিমিটার (সেমি)। বেশ কিছু বইপত্রে প্রাপ্ত এই মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি (বাংলাদেশের চাঁদপুরের ফিশারীজ ক্যাম্পাস হতে রেকর্ডকৃত; Rahman, 1989) ও ৬৬ সেমি (Shafi and Quddus, 2001)।

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা: সংকটাপন্ন (ভার্নারেবল) (IUCN Bangladesh, 2000)।

আবাসস্থল: বাংলাদেশের প্রায় সকল স্বাদুপানির জলাশয়েই (বিশেষ করে বিল, পুকুর, ডোবা, নালা ইত্যাদি) এই মাছটি দেখা যায়। পানির অগভীর ও তীরবর্তী অংশ ও পাড়ে মাটির গর্তে এই মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় এরা মাটির উপরে এসে রোদে অবস্থানও করে। অকের সময় পুকুরে খনন করার সময় মাটির অনেক গভীরেও এদের দেখা মেলে। বিভিন্ন গবেষণা কর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে এই মাছের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে যার মধ্যে চলন বিল (Galib et al., 2009), শাকলা বিল (বি.বাড়িয়া) (Ahmed et al., 2004) অন্যতম। প্লাবিত বোরো ধানক্ষেতেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়; অল্পবয়স্ক কুইচা ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে বেশ দেখা যায় (Shafi and Quddus, 2001)।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: মূলত খাদ্য হিসেবে। তবে বাংলাদেশে অনেক জনগণই এই মাছটিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন না এবং এটিকে মাছ হিসেবে না দেখে সাপ হিসেবে দেখেন (বিশেষকরে মুসলমান ধর্মাবলম্বী গ্রামীণ জনগণ)। তবে এই মাছটি কবিরাজি কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বড় আকারের ও জীবিত মাছ বাজারজাত করা হয়।

কুইচা ফিশিং: কুইচা মাছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো বরশির ব্যবহার। এক্ষেত্রে শক্ত সূতার সাহায্যে তৈরী বরশিতে আধার হিসেবে ব্যাঙ ব্যবহৃত হয়। ছোট আকারে ব্যাঙ বরশিতে গেথে জলাশয়ে বা জলাশয়ের পাড়ে কুইচার সম্ভব্য গর্তে বরশিটি প্রবেশ করানো হয় এবং বরশিটি সামান্য উপর-নিচ করে উঠানো-নামানো হয়। যদি ঐ গর্তে কুইচা থাকে তবে প্রায় সাথে সাথেই সে বরশির ব্যাঙ খায় এবং ধরা পড়ে। একটি গর্তে সাধারণত দুটি করে কুইচা থাকে। আবার  জলাশয়ের পানি সেঁচের মাধ্যমে শুকিয়ে বা শুকনো জলাশয়ের তলদেশে গর্ত করেও কুইচা ধরা হয়ে থাকে।

এক কিশোরের বরশিতে ধৃত কুইচা মাছ
এক কিশোরের বরশিতে ধৃত কুইচা মাছ

_______________________________________________________________

তথ্যসূত্র

শাফি, এম. এবং কুদ্দুস, মি.মু.আ. ২০০১. বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ, কবির  পাবলিকেশন্স, ঢাকা, বাংলাদেশ, পৃ. ২৬১-২৬২।

Ahmed KKU, Hasan RR, Ahamed SU, Ahmed T and Mustafa G. 2004. Ecology of Shakla beel (Brahmanbaria), Bangladesh, Bangladesh J. Fish. Res., 8(2): 101-111.

Galib SM, Samad MA, Mohsin ABM, Flowra FA and Alam MT. 2009. Present Status of Fishes in the Chalan Beel- the Largest Beel (Wetland) of Bangladesh, Int. J. Ani. Fish. Sci. 2(3): 214-218.

IUCN Bangladesh. 2000. Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.

Rahman AKA. 1989. Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 50-51.

 


Visited 6,841 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের মাছ: কুইচা

Visitors' Opinion

শামস মুহাম্মদ গালিব

প্রভাষক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ইমেল: thegalib@gmail.com

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.