কার্যকরী জীবাণুনাশক হিসেবে এবং বিভিন্ন শিল্পে ফর্মালিন একটি বহুল ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ। সহজ কথায় ফরমালডিহাইডের ৪০% জলীয় দ্রবণের বাণিজ্যিক নামই হচ্ছে ফর্মালিন। স্বচ্ছ, বর্ণহীন, বিশেষ ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত এই রাসায়নিক পদার্থ মাছ ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হওয়ায় বর্তমানে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। মাছসহ সকল খাদ্যদ্রব্যে এর অপব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব এবং তা থেকে উত্তরণের নানা উপায় নিয়ে এ লেখায় আলোকপাত করা হয়েছে।
ফর্মালিনের ধর্ম তথা বৈশিষ্ট্য:
- ফর্মালিন হল ফরমালডিহাইড বা মিথানল (Methanal) গ্যাসের জলীয় দ্রবণ (H-CHO) যাতে সাধারণত ৩৭- ৪০ শতাংশ ফরমালডিহাইড থাকে।
- সাধারণ তাপমাত্রায় ফরমালডিহাইড একটি গন্ধযুক্ত বর্ণহীন গ্যাস।
- এটি একটি দাহ্য পদার্থ।
- ফরমালডিহাইড (H-CHO) এক ধরনের কার্বনিল যৌগ। কার্বনিল যৌগসমূহকে প্রধানত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথা- অ্যালডিহাইড ও কিটোন। দ্বিযোজী কার্বনিল ((>C=0) মূলকের সাথে ২টি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাই ফরমালডিহাইড।
- প্রায় ৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় উত্তপ্ত সিলভার অথবা কপার প্রভাবকের উপর দিয়ে মিথানলের বাষ্প ও বায়ুর মিশ্রণকে চালনা করলে মিথানল আংশিক জারিত হয়ে মিথান্যাল ও পানি উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন মিথান্যাল গ্যাসকে পানিতে চালনা করলে উৎপন্ন হয় ৩০-৪০% জলীয় দ্রবণ বা ফর্মালিন।
- শিল্প ও বাণিজ্যিক নানাবিধ কাজে বহুল ব্যবহারের জন্য এটি Industrial Chemical হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফর্মালিনের ব্যবহার:
- আমাদের দেশে মূলত গবেষণাগারে প্রিজারভেটিভ (Preservative) হিসেবে ফর্মালিন ব্যবহৃত হয়। প্রাণী যাদুঘরে যে কোন জৈবিক নমুনা সংরক্ষণে ও নমুনা প্রদর্শনের লক্ষ্যে সংরক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় (সাধারণত ১০%) ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়।
- যুক্তরাষ্ট্রের Champion Encyclopedia এর তথ্যানুসারে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে ৮.২ বিলিয়ন পাউন্ডের অধিক ফর্মালিন তৈরি হয় এবং এবং বিশ্বব্যাপী এর বার্ষিক উৎপাদন ১৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি।
- বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত ফরমালডিহাইডের ৬০% কাঠ ও কনস্ট্রাকশন কারখানায় যেমন- ইউরিয়া-ফরমালডিহাইড, ফেনল-ফরমালডিহাইড, মেলামাইন-ফরমালডিহাইড, গ্লু, রেজিন এবং কঠিন কারক বা শক্ত কারক (Stiffness) হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- ত্রিশ শতাংশ ফর্মালিন Chemical Intermediate, যেমন: ফেন্টাইরাইথ্রিটল, হেক্সামিথাইল ইনটিট্রামাইন, বিউটানিডিয়ল ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যার দ্বারা অন্যান্য বাণিজ্যিক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়।
- সাত শতাংশ ফরমালডিহাইড থার্মোপ্লাস্টিক রেজিন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং ২ শতাংশ পোশাক শিল্পে বা আবরণ (Apparel) শিল্পে যেমন: পোশাক বা সার্ট সাদা কারক, ফিনিসার, শক্ত কারক, চামড়ার ভাজ বা রেখা দূর কারক এবং মচমচে ভাব (Crispness of Appearance) তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- মাত্র এক শতাংশ ফরমালডিহাইড প্রিজারভেটিভ এডিটিভ হিসাবে সাবান, লোশন, শ্যাম্পু তৈরির সময় ব্যবহৃত হয়।
- বিশ্বব্যাপী মৃত দেহ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উপকরণ হচ্ছে ফর্মালিন। ধারণা করা হয় যে, ১৮৯৯ সাল হতে মৃত মানবদেহ সংরক্ষণের জন্য ফর্মালিন ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে মৃত দেহ সংরক্ষণে ফর্মালিনের ব্যবহার ১ শতাংশেরও অনেক কম।
- এছাড়াও ফরমালডিহাইড গাম, প্রাকৃতিক রং, নেলপালিশ, পার্টিক্যাল বোর্ড, প্লাইউড, ফাইবার বোর্ড, কাগজের কোটিং, স্থায়ী প্রেস ফেব্রিক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- ঔষধ, এন্টিসেপটিক, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
- বিভিন্ন ব্রান্ডের বাণিজ্যিক ছত্রাক-নাশক (Fungicide), জীবাণুনাশক (Germicide) এবং ডিজইনফেকট্যান্ট (Disinfectant) হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
- মাছের প্রোটোজোয়া এবং ছত্রাকজনিত রোগের চিকিৎসায়ও ফর্মালিন ব্যবহৃত হয়।
- চিংড়ী ও কার্প হ্যাচারিতে জীবাণুনাশক হিসেবে ফর্মালিন নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার হয়।
- যুক্তরাষ্ট্রের Food and Drug Administration ফর্মালিনের চার ধরণের প্রোডাক্টকে পরজীবীনাশক এবং ছত্রাক-নাশক হিসেবে মাছ ও চিংড়িতে বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যথা-
- Paracide-F® (supplied by Argent Laboratories, Redmond, WA),
- Parasite-S® (supplied by Western Chemical, Inc., Ferndale, WA.),
- Formacide-B® (supplied by B.L. Mitchell, Inc., Leland, MS)
- Formalin-F® (is supplied by Natchez Animal Supply Company, Natchez, MS),
- ফর্মালিন বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যথা-
- রসায়ন শিল্পে ফেনল-মিথানল বা ফেনল-ফরমালডিহাইড প্লাস্টিক বা ব্যাকেলাইট নামক প্লাস্টিক ও ইউরিয়া-ফরমালডিহাইড প্লাস্টিক বা ফরমিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়
- আয়না প্রস্তুতিতে বিজারক হিসেবে, রঞ্জক দ্রব্যের শিল্পোৎপাদনে মিথানল ব্যবহৃত হয়
- বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও গবেষণাগারে পচনশীল নমুনা সংরক্ষণ ও মানুষের মরদেহ দীর্ঘদিন সংরক্ষণে ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়।
- অণুজীব পরীক্ষাগারে বাতাস জীবাণুমুক্ত করণ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়।
মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন খামারে ইনকিউবেটর ফিউমিগেশনের কাজে প্রতি ১০০ ঘনফুট (৯-১০ ঘন মি) আয়তন বিশিষ্ট ইনকিউবেটরের জন্য ৮০ সি.সি. (৪০%) ফর্মালিন ব্যবহৃত হয়।
ফর্মালিনের অপব্যবহার:
- ফর্মালিনের সৃষ্টি তো মানুষের উপকারের জন্য যেমন-ঔষধ, এন্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট তৈরি, গবেষণাগারে পচনশীল নমুনা সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজের জন্য, কোনভাবেই মাছ, ফল, দুধ ইত্যাদি খাদ্যের পচন রোধে ব্যবহারের জন্য নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে অনৈতিকভাবে ফর্মালিন নামক রাসায়নিক যৌগটি মূলত মানুষ ও প্রাণীর খাদ্যদ্রব্য ও শস্যাদি দীর্ঘকাল সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছ। ফলে এসব বিষাক্ত খাদ্যের মাধ্যমে এটি মানবদেহে ঢুকে নানাবিধ ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
- ফর্মালিন অপব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ:
অসাধু ব্যবসায়ীরা যে সমস্ত পচনশীল খাদ্যের বাহ্যিক চেহারাতে টাটকা ভাব ও দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য ফর্মালিন ব্যবহার করে মাছ তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া অপব্যবহারের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আছে-- শুটকি মাছ
- ফল-ফলাদি
- তরকারী
- কাঁচা গোশত
- দুধ ইত্যাদি
মাছে ফর্মালিন মিশানো হয় কোথায় এবং কিভাবে?
- বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে জানা যায়, আমদানিকৃত রুই মাছে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ফর্মালিন ব্যবহার করা হয়। আমদানিকালে মিয়ানমারে কোনরূপ ফর্মালিন ব্যবহার করা হয় না। বিদেশী কোন রুই, কাতলা মাছে ফর্মালিন পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম এলাকা থেকে যে সকল কাচকিসহ ছোট মাছ অন্যত্র বিক্রয় করা হয় সে সব মাছেই মূলত ফর্মালিন পাওয়া গেছে। এতে প্রতীয়মান হয়, দেশে বাজারজাত করার সময়ই বিভিন্ন মাছের ঘাটে, আড়তে, হিমাগারে, অবতরণ কেন্দ্রে ও বাজারে অসাধু ও লোভী ব্যবসায়ীরা মাছে ফর্মালিন ব্যবহার করে থাকে।
- এমনকি বরফের মধ্যেও (তৈরি সময় পানিতে এবং তৈরির পরে সরাসরি) ফর্মালিন মিশানো হয় বলে জানা গেছে।
- সাধারণভাবে মাছকে সতেজ রাখার জন্য ড্রাম কিংবা বালতিতে পানির সাথে ফর্মালিন মিশ্রিত করে মাছকে অল্পক্ষণ চুরিয়ে রাখা হয়।
- আবার অনেক সময় বিশেষত বৃহৎ আকারের মাছে ইনজেকশন সিরিঞ্জ দিয়ে পেটে অর্থাৎ নাড়িভুঁড়িতে ফর্মালিন ঢুকানো হয়।
ব্যাপকভাবে ফর্মালিনের অপব্যবহারের কারণ:
- বর্তমানে অনেকেই মানুষ ও প্রাণির খাদ্যদ্রব্য ও শস্যাদি দীর্ঘকাল সংরক্ষণে ফর্মালিন নামক রাসায়নিক যৌগটি ব্যবহার করছেন।
- জ্যৈষ্ঠের সস্তা আম রমজানে; পৌষ-মাঘ-ফাল্গুন মাসের ইলিশ মাছ পহেলা বৈশাখে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে এবং মাছ যাতে সহজে না পচে ও দীর্ঘসময় ধরে বিক্রয় করা যায় এজন্য ফর্মালিন ব্যবহার করছেন।
- মাছ ও ফল ব্যবসায়ী ছাড়াও অন্যান্য ফাস্টফুডের মধ্যে বিভিন্ন প্রিজারভেটিভের নামে ফর্মালিন জাতীয় যৌগের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং এরকম অনেক আকর্ষণীয় খাবার শিশুরা খেয়ে থাকে।
ফর্মালিন কী কী ক্ষতি করে?
- ফর্মালিন মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়
- স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে
- কৌলিতাত্ত্বিক গুনাগুণের বৈকল্য সাধন করে (Genotoxicity)
- পরিপাকে তীব্র অম্লীয় প্রভাব ফেলে
- রক্ত সংবহনতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বিনষ্ট করে দেয়
- তীব্র রেচন জনিত (বৃক্ক তথা কিডনিতে) সমস্যা সৃষ্টি করে
- স্বাভাবিক স্নায়ুবিক সংবেদনশীলতা নষ্ট করে
- ক্যান্সার সৃষ্টিতে উদ্দীপক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে
- পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্সি ফর্মালিনকে কারসিনোজেনিক হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেছে। ১৯৮৭ সালে US Environmental Protection Agency (EPA) ফরমালডিহাইডের উচ্চ মাত্রায় অথবা দীর্ঘস্থায়ী exposure-কে probable human carcinogen হিসাবে শ্রেণীবিন্যাস করেছে। ১৯৯৫ সালে International Agency for Research on Cancer (IARC) জানিয়েছে যে ফরমালডিহাইড একটি ‘Probable Human Carcinogen’।
- এনাটমির ছাত্র যারা ফর্মালিনে সংরক্ষিত মৃত দেহ ডিসেকশনের কাজ করেন (অর্থাৎ ০.৫-১.০ পিপিএম ফরমালডিহাইড নিয়ে সপ্তাহে ১ দিন ৩ ঘণ্টা কাজ করেন) এমন ছাত্রদের ১০ সপ্তাহ কাজ করার পর তাদের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা গিয়েছে তা হল- নাকের প্রদাহ, শ্বাস কষ্ট এবং চর্ম প্রদাহ (skin iritation) ইত্যাদি। দীর্ঘ মেয়াদে ফরমালডিহাইডের সংস্পর্শে কাজ করলে রক্তের লিম্পোসাইট পরিবর্তন, নাসিকা টিস্যুতে মিউটেটিভ প্রভাব ইত্যাদি ঘটতে পারে।
ফর্মালিন কিভাবে ক্ষতি করে?
- সাধারণত ফর্মালিনযুক্ত মাছ বা ফলমূল খেলে-
- মাথা ব্যথাসহ শ্বাসকষ্ট
- ডাইরিয়া, পেটব্যথা, বমি, চর্মরোগ
- অজ্ঞান ও অচেতন করে ফেলা
- কিডনির ক্ষতি ও অকালমৃত্যু এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে
- ফর্মালিন মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের কারণে মানুষের পরিপাকতন্ত্রের নানাবিধ জটিলতা বা গেস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিলতায় ভুগতে পারে বলে ধারণা করা হয়
- শ্বাসকালে ফর্মালিনযুক্ত (ফরমালডিহাইড গ্যাস) বায়ু গ্রহণের ফলে-
- হাঁচি, কাশি, কণ্ঠনালীতে অম্লীয় অনুভূতি
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত কম হওয়া ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া
- পালমোনারী ইডেমা (ফুসফুসে তরল পদার্থ জমে স্ফীত হওয়া, বুকে ব্যথা ও শ্বাস নেয়ার হার কমা) হতে পারে
- সাধারণত যারা ফর্মালিন নিয়ে কাজ করেন তাদের নাকের প্রদাহ, শ্বাস কষ্ট এবং চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়।
- গর্ভবতী মহিলাদের ফর্মালিন নিয়ে কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিতান্তই যদি পেশাজনিত কারণে কাজ করতে হয় তবে Formaldehyde Respirator ব্যবহার করে কাজ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা, গর্ভপাত, গর্ভস্রাব, প্রজননক্ষমতা হ্রাস এবং প্রসবজনিত অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয় বলে কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
- ত্বকের মাধ্যমে এটি শরীরে প্রবেশ করলে-
- ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়
- ক্ষত ও জ্বালা পোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি
- এমনকি ত্বক সাদা হয়ে যাওয়াও সম্ভব
- দীর্ঘকাল ফর্মালিনের সংস্পর্শে থাকায়-
- ত্বক পুড়ে যাওয়া
- ত্বকে অনুভূতিহীনতা
- ত্বক শক্ত হয়ে যাওয়া
- ফোস্কার ন্যায় দাগ হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণিত
- শিল্প শ্রমিকদের উপর পরিচালিত কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, ফরমালডিহাইডের সংস্পর্শে যারা প্রায়শ কাজ করেন তাদের ন্যাজাল ক্যান্সার, ন্যাজোফেরেঞ্জিয়াল ক্যান্সার ও লিউকেমিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশী। National Cancer Institute, USA এর একাধিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে, এনাটমিস্ট এবং অ্যাম্বালমার (যারা মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজ করে) পেশার যারা ফর্মালিন নিয়ে কাজ করেন তারা সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় লিউকেমিয়া এবং ব্রেন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকি মধ্যে রয়েছেন।
- চোখে সামান্য ফর্মালিন গ্যাসের সংস্পর্শে এলেও যা হতে পারে-
- চোখে জ্বালা পোড়া সৃষ্টি
- ঝাপসা দৃষ্টি
- দৃষ্টিহীনতা
- আর সরাসরি চোখে ফর্মালিন লাগলে চোখের স্থায়ী অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
বিভিন্ন মাত্রায় ফর্মালিনের ক্ষতিকর প্রভাব:
জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর যৌগের মধ্যে ফর্মালিন একটি। স্বল্প মেয়াদে উচ্চ মাত্রার অথবা দীর্ঘ মেয়াদে নিম্ন মাত্রার ফর্মালিন মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের কারণেও মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। যেমন-
ফর্মালিনের ঘনত্ব (পিপিএম) | ক্ষতিকর প্রভাব |
০.২৫ | প্রায় ২০% জনগণ তীব্র সংবেদনশীল |
০.০৫-১.৫ | চোখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় |
০.০৫-৩ | নাক ও কন্ঠনালীর মধ্যে মৃদু হতে মাঝারী উত্তেজনা দেখা যায়। নাকে ও কণ্ঠনালীতে অস্বস্থি অনুভূত হয়। |
৫-১০ | ঊর্ধ্বাংশে তীব্র প্রদাহসহ নাক ও কন্ঠনালীর মধ্যে খুব জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। তাছাড়া কাশি, হাঁচি, বমি, মাথাব্যাথাতো আছেই। |
২৫-৫০ | মাংশপেশীর ধ্বংসসাধন, স্বাসযন্ত্রের মারাত্মক ৰতিসাধনসহ পালমোনারী ইডেমা, অচেতনতা, বমি, কাশি, হাঁচি, বমি, মাথাব্যাথা ও দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা যায়। |
ফর্মালিনযুক্ত ও ফর্মালিনমুক্ত মাছ চেনার সহজ উপায় হল-
ফর্মালিনযুক্ত মাছ | ফর্মালিনমুক্ত মাছ |
মাছের চক্ষুগোলক ফ্যাকাশে ও ভিতরের দিকে ঢুকানো | মাছের চক্ষুগোলক স্বাভাবিক ও লালচে বর্ণের |
শরীরে স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা সৃষ্টিকারি মিউকাস থাকে না | শরীরে স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা সৃষ্টিকারি মিউকাস থাকে |
ফুলকা কালচে বর্ণের | ফুলকা লালচে বর্ণের |
দেহ বেশ শুষ্ক হয় | দেহ শুষ্ক হয় না, আর্দ্র থাকে |
মাংসপেশী ও আঁশটে শক্ত এবং রবার সদৃশ | মাংসপেশী ও আঁশটে স্বাভাবিক মাত্রায় নরম |
স্বাভাবিক মেছো গন্ধ থাকে না | স্বাভাবিক মেছো গন্ধ থাকে |
মাছে মাছি পড়ে না | মাছে মাছি পড়ে |
মাছ সহজে পঁচে না | মাছ সময়ের ব্যবধানে পঁচে যায় |
ফর্মালিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:
- জনসচেতনতা সৃষ্টি:
আমাদের স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে হলে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ফরমালডিহাইড বা ফর্মালিনের অপরিণামদর্শী ব্যবহার রোধ করতে হবে এবং এজন্য ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নাই। ফর্মালিন বিষয়ে জনগণের বিদ্যমান অচেতনতা, খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে জনস্বাস্থ্যে এর বিরূপ প্রভাব সম্বন্ধে সবার অজ্ঞতাকে পুঁজি করে আপাতদৃষ্টিতে কেহ কেহ লাভবান হলেও গোটা জাতি এক ভয়াবহ বিপদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সবার মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ধ্বস নামিয়ে দিতে পারে। কেননা সুস্থ জাতি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সুদূরপরাহত।
আর তাই এখনি সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফর্মালিনের ক্ষতিকর প্রভাব জানিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, এ সংক্রান্ত পোষ্টার, লিফলেট তৈরি ও তা ব্যাপকভাবে বিতরণ করা, স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সভা-সেমিনার করা, হাট-বাজার ও স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা, বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি ও গণমাধ্যমে তা প্রচার করা, জনবহুল এলাকা ও মৎস্য বাজারে বিলবোর্ড স্থাপন করা ইত্যাদি।
- খাদ্য দ্রব্যের উপাদানসমূহ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ:
আসলে সাধারণ মানুষ জানে না, জানতেই পারেনা এবং জানতে চায়ও না কি ধরণের উপাদানে তৈরি খাদ্য তারা খাচ্ছে বা তাদের কোমলমতি শিশুদের খাওয়াচ্ছে এবং তাতে কোন অপকারী পদার্থের মিশ্রণ আছে কি না? তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষার মত জাতীয় স্বার্থেই খাদ্য দ্রব্যের উপাদানসমূহ নিয়মিত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে রাখা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই দরকার।
জনগণের ও জনপ্রতিনিধিগণের আন্তরিক সহায়তা নিয়ে আইনের মাধ্যমে ফর্মালিন অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশের প্রচলিত ভেজাল বিরোধী আইনের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফর্মালিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে। তাছাড়াও মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ১৯৯৭ (২০০৮ সালে সংশোধিত) এর বিধি-৫-এর উপবিধি-৯-এ আছে কোন ব্যক্তি খাদ্য উপাদানে ব্যবহার উপযোগী নয় এমন কোন জিনিসপত্র, রাসায়নিক পদার্থ বা সরঞ্জামাদি মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ বা বাজারজাতকরণ কাজে ব্যবহার করিবেন না। আবার বিধি-৫ এর উপ-বিধি-১০-এ আছে যদি কোন ব্যক্তি উপ-বিধি-৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে, তাহা হইলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা পরিদর্শক উক্ত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫০,০০০/- টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত জরিমানা করিতে পারিবেন বা তাহার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল করিতে পারিবেন।
- ফর্মালিন ক্রয়-বিক্রয়ে শর্তারোপ:
ফর্মালিন বা অন্যান্য প্রিজারভেটিভের অপরিণামদর্শী ব্যবহার নানাবিধ ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করছে। মানুষ বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই ক্রান্তিকালে টিকে থাকতে সহজে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাদের পণ্যকে সহজে সংরক্ষণ করে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করতে আগ্রহী। আর এ ক্ষেত্রে নির্বিচারে সস্তায়, সহজলভ্য ফর্মালিন জাতীয় যৌগ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফর্মালিন ক্রয়-বিক্রয়ে শর্তারোপ, উচ্চমূল্য ও দুস্প্রাপ্যতা সৃষ্টি এ সমস্যা রোধে সহায়ক হতে পারে।
- মাছ সংরক্ষণে আরও বরফকল ও হিমঘর নির্মাণ:
মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে অনেকে এ ব্যবসায় এগিয়ে এসেছে। কিন্তু অব্যহতভাবে বাড়তে থাকা উচ্চ খাদ্যমূল্যে উৎপাদিত এ মাছ যেহেতু দ্রুত পচনশীল, একে পর্যাপ্ত বরফে বা হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেহেতু ব্যয়বহুল এবং যেহেতু দেশব্যাপী মাছ সংরক্ষণের মত পর্যাপ্ত হিমঘর নাই, সেহেতু মাছ সংরক্ষণে সহজলভ্য ফর্মালিন জাতীয় যৌগ ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে ফর্মালিনের ভয়াবহতা জানলেও জনস্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে কেবল লাভের জন্য তা ব্যবহার করে সস্তায় মাছ সংরক্ষণ ও বিপণন করছেন, আর কেহ কেহ না জেনে সস্তায় পাওয়া এ মাছ কিনছেন। কাজেই দেশব্যাপী মাছ সংরক্ষণের মত পর্যাপ্ত বরফকল ও হিমঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন। আর তা সম্ভব না হলে বিভিন্ন বন্দর ও বাজার এলাকায় এবং মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা জেলাগুলিতে অন্তত পর্যাপ্ত হিমাগার ও বরফকল থাকা দরকার।
- সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ:
জাতির জন্য সর্বনাশা এ ফর্মালিন ব্যবহার রুখতে দরকার সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। বিশেষকরে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ দ্রুত পরিবর্তন আনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। সরকারী-বেসরকারি প্রতিটি প্রশিক্ষণে ফর্মালিনের অপব্যবহার ও এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে একটি অধিবেশন রাখা যেতে পারে। সর্বোপরি সরকারকে দেখতে হবে জনগণ নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য খাচ্ছেন কি না আর জনগণকেও সজাগ ও সর্তক হয়ে জেনে নিতে হবে তারা কি কিনে খাচ্ছেন?
শেষ কথা:
মাছ বা খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ফর্মালিনের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর ও হুমকির তা প্রকাশ করার চেষ্টা করা হল। আসলে এটি সমাজ, রাষ্ট্র ও নৈতিকতাবিরোধী কাজও বটে। তাই এর অপব্যবহার রোধ করা সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। কোন একটি প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এর অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব নহে। এর জন্য প্রয়োজন সকল প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত মোকাবিলার প্রচেষ্টা। আবার এটি শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মানুষের নৈতিকতাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। নৈতিকতা হল মানুষের মানবিক গুণাবলীর একটি প্রধান বিষয়। আজ আপনার যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে, ও তো নিষ্পাপ, ওর অধিকার রয়েছে একটি নিরাপদ পৃথিবীতে বাস করার, নিরাপদ খাদ্য খাওয়ার। কিন্তু খাদ্যে ফর্মালিন মিশিয়ে আমরা কত বড় জঘন্য অপরাধ করছি সে উপলব্ধি কি আমাদের আছে?
তথ্যসূত্র:
- “Formaldehyde – Compound Summary“. The PubChem Project. USA National Center of Biotechnology Information.
- Weast, Robert C., ed (1981). CRC Handbook of Chemistry and Physics (62nd ed.). Boca Raton, FL: CRC Press. pp. C–301, E-61. ISBN 0-8493-0462-8.
- “Formaldehyde“, Formaldehyde, 2-Butoxyethanol and 1-tert-Butoxypropan-2-ol, IARC Monographs on the Evaluation of Carcinogenic Risks to Humans 88, Lyon, France: International Agency for Research on Cancer, 2006, pp. 39–325, ISBN 92-832-1288-6,
- “Formaldehyde (gas)“, Report on Carcinogens, Eleventh Edition, U.S. Department of Health and Human Services, Public Health Service, National Toxicology Program, 2005
- Harris, Gardiner (10 June 2011). “Government Says 2 Common Materials Pose Risk of Cancer“. Retrieved 2011-06-11.
New York Times. - National Toxicology Program (10 June 2011). “12th Report on Carcinogens“. National Toxicology Program. Retrieved 2011-06-11.
- National Toxicology Program (10 June 2011). “Report On Carcinogens – Twelfth Edition – 2011” (PDF). National Toxicology Program. Retrieved 2011-06-11.
- Formaldehyde in Clothing and Other Textiles, Existing Chemicals Information Sheet, Australian National Industrial Chemicals Notification and Assessment Scheme, October 2007,Retrieved 2009-09-01.
- Economic Importance, Formaldehyde Council. 2009. Accessed on April 14, 2010. No More Toxic Tub: Getting Contaminants Out Of Children’s Bath & Personal Care Products, Campaign for Safe Cosmetics, March 2009.
- Francis-Floyd, Ruth (April 1996), Use of Formalin to Control Fish Parasites, Institute of Food and Agricultural Sciences, University of Florida,
- “Medical Management Guidelines for Formaldehyde“. www.astsdr.cdc.gov.
- Indoor Air Pollution in California, Air Resources Board, California Environmental Protection Agency, July 2005, pp. 65–70.
- Formaldehyde, Occupational Safety and Health Administration, August 2008, retrieved 2009-09-01.
- Formaldehyde Reference Exposure Levels, California Office Of Health Hazard Assessment, December 2008.
- Broder, I; Corey, P; Brasher, P; Lipa, M; Cole, P (1991), “Formaldehyde exposure and health status in households“, Environmental health perspectives 95: 101–4, PMC 1568408, PMID 1821362.
- McGwin, G; Lienert, J; Kennedy, JI (November 2009), “Formaldehyde Exposure and Asthma in Children: A Systematic Review“, Environmental health perspectives (Environmental Health Perspectives) 118 (3) (3): 313–7, doi:10.1289/ehp.0901143, PMC 2854756, PMID 20064771.
- Formaldehyde in China: Production, Consumption, Exposure Levels, and Health Effects, 35 (8), Environmental International, November 2009, pp. 1210–1224,
- Formaldehyde and Cancer Risk, www.cancer.gov.
- Formaldehyde exposure and Leukemia: A New Meta-Analysis and Potential Mechanisms, 681 (2-3), Mutation Research/Reviews in Mutation Research, March–June 2009, pp. 150–168.
- Formaldehyde and Leukemia: Epidemiology, Potential Mechanisms, and Implications for Risk Assessment, 51, Environmental and Molecular Mutagenesis, 2010, pp. 181–191.
- Formaldehyde allergy, DermNet NZ, New Zealand Dermatological Society, June 2009, retrieved 2009-09-01.
- De Groot, Anton C; Flyvholm, Mari-Ann; Lensen, Gerda; Menné, Torkil; Coenraads, Pieter-Jan (2009), “Formaldehyde-releasers: relationship to formaldehyde contact allergy. Contact allergy to formaldehyde and inventory of formaldehyde-releasers“, Contact Dermatitis 61 (2): 63–85, doi:10.1111/j.1600-0536.2009.01582.x, PMID 19706047.
- Formaldehyde and Facts About Health Effects (PDF). Formaldehyde Epidemiology, Toxicology and Environmental Group. August 2002. Accessed on April 25, 2010.
- Addendum to the 12th Report on Carcinogens National Toxicology Program, U.S. Department of Health and Human Services, retrieved 06-13-2011
- European Union Bans formaldehyde/formalin within Europe, European Commission’s Environment Directorate-General, September 2007, pp. 1–3.
- National Cancer Institute,Formaldehyde and Cancer Risk, www.cancer.gov.
- Fish and Fishery Products Hazards and Controls Guidance, www.fda.gov.
- Fish and Fishery Products Hazards and Controls Guidance, www.fda.gov.
- Aquaculture Drugs, chapter-11, Page No. 184.
Visited 1,932 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?