ঘটনা প্রবাহ:
গত বছর (২০১১ সালে) বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন রুহিয়ার বিলে একটি বিল নার্সারি স্থাপন করা হয়। এ জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের রাজস্ব খাত হতে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
মার্চ মাসে স্থানীয় উপজেলা বিল নার্সারি বাস্তবায়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে নেউরগাছা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যগণের সাথে মতবিনিময় সভা করে সমিতিকে ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে প্রায় ৮ শতাংশের একটি নার্সারি পুকুর খনন ও পাড় মেরামত করতে দেয়া হয়। যা সমিতির সদস্যগণ ন্যুনতম পারিশ্রমিকে বাস্তবায়ন করেন।
অতঃপর পুকুর প্রস্তুতির প্রায়োগিক কাজ (যেমন- চুন, সার, কীটনাশক প্রয়োগ) শেষে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ৫০০০ টাকায় ২ কেজি কার্প রেণু (রুই-৭৫০ গ্রাম, মৃগেল-৫০০ গ্রাম, কাতলা-৫০০ গ্রাম, বাটা-২৫০ গ্রাম) ক্রয় করে প্রস্তুতকৃত নার্সারি পুকুরে ৫০০ গ্রাম ও মৎস্যজীবীদের ইজারার মাধ্যমে সংগৃহীত ২টি পুকুরে বাদবাকি রেণু মজুদ করা হয়। এ সময় মৎস্যজীবীরা নিজস্ব অর্থায়নেও ১ কেজি রেণু মজুদ করেন।
খাবার হিসেবে প্রথমে খৈল ও আটা দেয়া হয়, কিন্তু আশানুরূপ বৃদ্ধি না দেখে পরে প্রায় ২ হাজার টাকার মেগাফিডের প্রি-নার্সারি এবং প্রায় ২০ হাজার টাকার নার্সারি ফিড দেয়া হয়। এ সময় খাদ্য প্রয়োগের সুবিধার্থে বড় ও ছোট বালতি, মগ ক্রয় করা হয়, রিজার্ভ রাখা হয় চুন।
বিলের আঁকাবাঁকা পথ চিনতে সহায়ক তীর চিহ্নিত সাইনবোর্ড ও বিল নার্সারির একটি সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়।
এক মাস পর পর নিয়মিত বিরতিতে ২ বার নমুনায়ন করা হয়। জুন মাসে নমুনায়নকালে সব ধরণের পোনার সমহারে বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়।
জুনের শেষে ও জুলাই-এ অতিবর্ষণজনিত কারণে বন্যার ঝুঁকি দেখা দিলে সাথে সাথে ঘেরাও করার জন্য নেট, বাঁশ, ইত্যাদি ক্রয় করে দ্রুত বিল নার্সারি পুকুরটি ঘিরে দেয়া হয়। ঘিরে দেয়ার পরেও প্রয়োজনে কাজে লাগবে মনে করে প্রস্তুত রাখা হয় একটি বড় আকারের হাঁপা।
.
মাত্র ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হওয়ায় ও তা শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ দিকে প্রয়োজন মত খাবার সরবরাহে কিছুটা অসুবিধা হয় এবং কেবল মুরগীর বিষ্ঠা ও অনিয়মিতভাবে খৈল প্রয়োগ করা হয়।
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, যতদূর মনে পড়ে ১৪ তারিখে মাছের চূড়ান্ত নমুনায়ন করা হয়। অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনা ঘটে, মাত্র ৩ মাসেরও কম সময়ে মোট ৩ কেজি রেণু হতে প্রায় ২০ মন পোনা পাওয়া যায়। প্রতি মন ৪০০০ টাকা হারে ধরলেও যার মূল্য দাঁড়ায় ৮০,০০০ টাকা। তবে খাদ্য সরবরাহ নিয়মিত করা গেলে এ পরিমাণ আরও বাড়ানো অনায়াসেই সম্ভব।
.
যা হোক, ২০ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের র্যালি শেষে বিল নার্সারি কার্যক্রমের আওতায় উৎপাদিত পোনা অবমুক্ত করা হয়।
মৎস্যজীবীদের প্রায়শঃ নির্বিচারে মাছ নিধন করার জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু এ ধারণা সব সময় ঠিক নয়। সরকারী একটু সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতির মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের দিয়েই বিলের মাছ রক্ষা করা সম্ভব।
মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপনের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস যেমন দৃঢ় হয়, তেমনি এ অভিনব উদ্যোগ তাদের সমাজ ভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের পথ সুগম করে। দেশের সর্বত্র বিল নার্সারি স্থাপনের মত টেকসই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিলে যেমন মাছের উৎপাদন বাড়বে তেমনি রক্ষা করা যাবে জীববৈচিত্র্য।
.
এ লেখায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিল নার্সারি কার্যক্রমের উপর একটি সচিত্র কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হল। বিল নার্সারি স্থাপনের প্রায়োগিক ও কারিগরি বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে এখানে।
Visited 1,306 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?