গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergii)
গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergii)

গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergii)’র সম্পূর্ণ দেহকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা- শিরোবক্ষ (cephalothorax) ও উদর (abdomen)। গলদা চিংড়ির মাথা ও বুক একসঙ্গে নিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে শিরোবক্ষ। শিরোবক্ষের পশ্চাতে রয়েছে উদর। উদর ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে লেজে (telson) শেষ হয়েছে। লেজের দু’পাশে রয়েছে পুচ্ছ পাখনা বা ইউরোপড (uropod)।

চিংড়ির প্রতি দেহখণ্ডকে একজোড়া করে মোট উনিশ জোড়া উপাঙ্গ থাকে। অবস্থানের উপর ভিত্তিকরে এদেরকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- শির-উপাঙ্গ, বক্ষ-উপাঙ্গ ও উদর-উপাঙ্গ। চিংড়ির শির-উপাঙ্গ পাঁচ জোড়া (1-5), বক্ষ-উপাঙ্গ আট জোড়া (6-13) এবং উদর-উপাঙ্গ ছয় জোড়া (14-19)। শির-উপাঙ্গ ও বক্ষ-উপাঙ্গগুলো সেফালোথোরাক্সে (Cephalothorax) এবং উদর-উপাঙ্গ উদরে (Abdomen) অবস্থান করে।

 

শির-উপাঙ্গ (Cephalic appendage)
শির-উপাঙ্গ মোট পাঁচ জোড়া। এগুলো চিংড়ির দেহের ২য় থেকে ৬ষ্ঠ দেহখণ্ডাংশে অবস্থান করে।

  • 1. অ্যান্টিনিউল (Antennule)
    চিংড়ির দেহের প্রথম জোড়া উপাঙ্গ হচ্ছে অ্যান্টিনিউল যা পুঞ্জাক্ষি বৃন্তের নিকটে অবস্থিত।
  • 2. অ্যান্টিনা (Antenna)
    মৌখিক ও তৃতীয় দেহখণ্ডকের একজোড়া উপাঙ্গের নাম হচ্ছে অ্যান্টিনা।
  • 3. ম্যান্ডিবল (Mandible)
    চিংড়ির ৪র্থ দেহখণ্ডক ও অগ্রমৌখিক উপাঙ্গ হচ্ছে ম্যান্ডিবল যা মোটা, শক্ত, সংখ্যায় একজোড়া ও মুখের উভয় পাশে অবস্থিত।
  • 4. ম্যাক্সিলুলা (Maxilula)
    চিংড়ির ৫ম দেহখণ্ডকের উপাঙ্গের নাম ম্যাক্সিলুলা যা চিংড়ির সবচেয়ে ছোট উপাঙ্গ এবং সংখ্যায় একজোড়া।
  • 5. ম্যাক্সিলা (Maxilla)
    চিংড়ির ষষ্ঠ দেহ খণ্ডকের উপাঙ্গ জোড়া হচ্ছে ম্যাক্সিলা যা পাতলা পাতার মত এবং ম্যাক্সিলুলা অপেক্ষা বড়।

 

 

বক্ষ-উপাঙ্গ (Thoracic appendage)
বক্ষ-উপাঙ্গ মোট আট জোড়া। এগুলো চিংড়ির দেহের ৭তম থেকে ১৪তম দেহখণ্ডাংশে অবস্থা করে।

  • 6. ১ম ম্যাক্সিলিপেড (First maxillipede)
    চিংড়ির ৭ম দেহখণ্ডকের উপাঙ্গ জোড়া হচ্ছে ১ম ম্যাক্সিলিপেড যা ম্যাক্সিলার পেছনে অবস্থিত।
  • 7. দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড (Second maxillipede)
    চিংড়ির ৮ম দেহখণ্ডকের উপাঙ্গ হচ্ছে দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড যা প্রথম ম্যাক্সিলিপেড এর পেছনে অবস্থিত।
  • 8. তৃতীয় ম্যাক্সিলেপেড (Third maxillipede)
    চিংড়ির নবম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত একজোড়া উপাঙ্গই হচ্ছে তৃতীয় ম্যাক্সিলেপেড।
  • 9-13. হাঁটার উপাঙ্গ (Walking leg)
    ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম এই পাঁচ জোড়া বক্ষ উপাঙ্গ হাঁটার উপাঙ্গ বা পেরিওপোড (Pereopod) নামে পরিচিত। এগুলো যথাক্রমে চিংড়ির ১০ম থেকে ১৪তম দেহখণ্ডাংশে অবস্থান করে।

    • প্রথম হাঁটার উপাঙ্গ (First walking leg [Chelate])
      চিংড়ির দশম দেহখণ্ডাংশ থেকে উদ্ভূত।
    • দ্বিতীয় হাঁটার উপাঙ্গ (Second walking leg [Chelate])
      চিংড়ির ১১তম দেহখণ্ডাংশ থেকে উদ্ভূত।
    • তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হাঁটার উপাঙ্গ (Third, Fourth, Fifth walking [Non-chelate])
      এই উপাঙ্গগুলো প্রায় একই রকম এবং যথাক্রমে ১২, ১৩ ও ১৪তম দেহখণ্ডাংশ থেকে উদ্ভূত।

উদরীয় উপাঙ্গ (Abdominal appendage)
চিংড়ির ছয় জোড়া উদরীয় উপাঙ্গকে প্লিওপোড (Pleopod) বা সন্তরণী উপাঙ্গ বলে। উপাঙ্গগুলো চিংড়ির ১৫তম থেকে ২০ তম দেহখণ্ডে অবস্থান করে।

  • 14. প্রথম উদরীয় উপাঙ্গ (First abdominal appendages)
    প্রথম উদরীয় উপাঙ্গ জোড়া চিংড়ির ১৫তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত।
  • 15. দ্বিতীয় উদরীয় উপাঙ্গ (Second abdominal appendages)
    দ্বিতীয় উদরীয় উপাঙ্গ জোড়া চিংড়ির ১৬তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত।
  • 16-18. তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম উদরীয় উপাঙ্গ (Third, fourth and fifth abdominal appendages)
    তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম উদরীয় উপাঙ্গ জোড়া যথাক্রমে চিংড়ির ১৭, ১৮ ও ১৯তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত এবং গঠনগত দিক থেকে প্রায় একই রকম।
  • 19. ৬ষ্ঠ উদরীয় উপাঙ্গ: পুচ্ছপদ (Uropod)
    চিংড়ির ২০তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত সর্বশেষ জোড়া।

 

পুনশ্চ:
বড় আকারে দেখতে প্রতিটি উপাঙ্গের উপর আলাদা আলাদা ভাবে ক্লিক করুন (Please click on each appendage separately to view large)

 


Visited 2,025 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
ফটোফিচার: গলদা চিংড়ির উপাঙ্গ

Visitors' Opinion

বলরাম মহলদার

টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট, ওয়ার্ল্ডফিস সেন্টার, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া। তার আগ্রহের বিষয় ছবি তোলা। ইমেইল: balaramssoq@gmail.com। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.