কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপন্ন শঙ্কর মাছ (crossbreed fish) প্যারোট (Parrot, Cichlasoma citrinellum x Cichlasoma synspilum) এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে প্রথম আমাদের দেশের নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশে বিদেশী দামী বাহারি মাছের মধ্যে এই মাছ অন্যতম যা কেবলমাত্র ঢাকা ও খুলনার বাহারি মাছের দোকানে পাওয়া যায় (Galib and Mohsin, 2011)। দেশের বাহারি মাছের দোকানগুলোতে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে এই মাছ তেমন একটা দেখা না গেলেও একুশ শতকের প্রথম দশকে এদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। তবে অনেক সময় স্বাদুপানির প্যারোট সিক্লিড (Freshwater Parrot Cichlids, Hoplarchus Psittacus) ও সামুদ্রিক প্যারোট মাছ (saltwater Parrot Fish, Callyodon fasciatus) থেকে এদেরকে আলাদা করা কঠিন হয়ে দেখা দেয় (Sharpe, 2014)।
সাধারণত প্যারোট মাছ মাইডাস সিক্লিড (Midas Cichlid, Cichlasoma citrinellum) এবং লালমাথা সিক্লিড (Redhead Cichlid, Cichlasoma synspilum) এর মধ্যে ক্রসব্রিডিং (Crossbreeding) এর মাধ্যমে জন্মানো হয়। তবে কখনো কখনো সবুজ বা সোনালী সেভেরাম (Green or Gold Severum, Heros severus or Cichlasoma severum) এর সাথে লাল ডেভিল (Red Devil, Cichlasoma erythraeum) এর মধ্যে ক্রসব্রিডিং (Crossbreeding) এর মাধ্যমে জন্মানো হয়ে থাকে (Sharpe, 2014)।
শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata (chordates)
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Perciformes (perch-like fishes)
পরিবার: Cichlidae
গণ: Cichlasoma
প্রজাতি: Cichlasoma citrinellum x Cichlasoma synspilum, Cichlasoma severum x Cichlasoma erythraeum
ভ্যারাইটি (Variety): Red or Blood Parrot and White Parrot
সাধারণ নাম (Common name)
বাংলা: লাল প্যারোট, সাদা প্যারোট (ভ্যারাইটি অনুসারে)
English: Red or Blood Parrot and White Parrot (according to variety)
বিস্তৃতি (Distribution)
ক্রসব্রিডিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত এই মাছ কেবলমাত্র এ্যাকুয়ারিয়ামের দোকান ও ব্রিডিং ফার্মেই পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে এই মাছ প্রাপ্তির কোন তথ্য নেই। থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশের বাহারি মাছের ফার্ম ও দোকানে এদের দেখা
দৈহিক গঠন (Morphology)
লম্বা দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। ভ্যারাইটি অনুসারে এদের দেহের বর্ণ রূপালী বা হালকা হলুদ (সাদা প্যারোট) এবং গাঢ় কমলা বা লালচে (লাল প্যারোট) হয়ে থাকে। পৃষ্ঠ ও পায়ু পাখনা অনেক লম্বা। চোখ বড় ও আকর্ষণীয়।
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
বাংলাদেশে নথিবদ্ধ সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ২০ সেমি (Galib and Mohsin, 2011)।
স্বভাব ও আবাস্থল (Habit and Habitat)
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপন্ন শঙ্কর মাছ তাই প্রকৃতিতে এদের দেখতে পাওয়া যায় না।
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
লাল প্যারোট বিভিন্ন ধরণের খাবার খেয়ে থাকে যেমন- ফ্লেকস (flakes), হিমায়িত, জীবন্ত, শুকনা খাবার ইত্যাদি। তবে এরা জীবন্ত ব্লাড ওয়ার্ম (bloodworms) এবং ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp) বেশি পছন্দ করে থাকে। এরা ভাসমান (floating) খাবারের চেয়ে ডুবন্ত (Sinking) খাবার সহজে গ্রহণ করতে পারে। বি-ক্যারোটিন (b-carotene) এবং ক্যানথ্যোজেথিন (canthaxanthin) রঞ্জক সমৃদ্ধ খাবার এদের দেহের বর্ণকে জীবন্ত করে তোলে (Sharpe, 2014)।
জীবনকাল ও প্রজনন (Lifecycle and Breeding)
যদিও প্যারোট নিজেদের মধ্যে প্রজনন করে থাকে এমনকি ডিমও দিয়ে থাকে তবে এভাবে উৎপন্ন ডিমগুলি অনিষিক্ত (infertile) হয়ে থাকে। সফল প্রজনন করানোর জন্য প্যারোটকে অবশ্যই ক্রসব্রিড (crossbreed) নয় এমন সিক্লিড (cichlid) মাছের (যেমন-Cichlasoma citrinellum, Cichlasoma synspilum ইত্যাদি) সাথে ক্রসব্রিড (crossbreed) করানোর প্রয়োজন হয়। ক্রসব্রিডের মাধ্যমে উৎপন্ন ডিমের মধ্যে অনেক অনিষিক্ত ডিম দেখতে পাওয়া যায়। অনিষিক্ত ডিমের বর্ণ সাদাটা এবং দ্রুতই ছত্রাক (fungus) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। ছত্রাকের সংক্রামণ একবার দেখা দিলে তা নিষিক্ত ডিমকেও আক্রান্ত করে থাকে। তাই এদের মধ্যে অনিষিক্ত ডিমগুলো খেয়ে ফেলার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায় (Sharpe, 2014)।
এদের প্রজননের জন্য বড় পরিসরের এ্যাকুয়ারিয়াম প্রয়োজন হয় এবং পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার কয়েকদিন পর (ডিমপোনার কুসুমথলির কুসুম শেষ হয়ে এলে) থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এদেরকে খাবার হিসেবে আর্টেমিয়ার লার্ভা নিওপ্লি (Artemia nauplii) সরবরাহ করতে হয়। তবে মুরগীর ডিমের কুসুম সিদ্ধ করে পানিতে গুলে ও কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে এদের খাবার হিসেবে সরবরাহ করা যায়। বাজারে প্রাপ্ত হিমায়িত ব্রাইন শ্রিম্পের বাচ্চা (baby brine shrimp) খাওয়ানো যায়। পোনা বড় হওয়ার পর এদেরকে পোনার মাছের উপযোগী অন্যান্য মিহি খাবার (fine fry food) খাওয়ানো যায় (Sharpe, 2014)।
উপযোগী পরিবেশ (Suitable Environment)
Badmanstropicalfish (2014) অনুসারে এদের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামের পানি ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন ৭৫ গ্যালন (প্রায় ২৮৪ লিটার), তাপমাত্রা ৭২-৮২ ডিগ্রি ফা. বা ২২-২৮ ডিগ্রি সে., হার্ডনেস (Hardness): ৪-১৫ dH, পিএইচ ৬.৫-৮ ।
Brough and Roche (2014) অনুসারে এদের জন্য এ্যাকুয়ারিয়ামের পানি ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন ৩০ গ্যালন (প্রায় ১১৪ লিটার), তাপমাত্রা ৭০-৮২ ডিগ্রি ফা. বা ২১.১-২৭.৮ ডিগ্রি সে., হার্ডনেস (Hardness): ২-২৫ dGH, পিএইচ ৬.৫-৮ ।
রোগ (Diseases)
বাংলাদেশে এই মাছের রোগ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
এ্যাকুয়ারিয়ামে বাহারি মাছ হিসেবে এর গুরুত্ব রয়েছে। বাহারি মাছ প্রেমীদের চাহিদা মেটাতে এই মাছের গুরুত্ব রয়েছে।
বাংলাদেশে এই মাছের প্রজনন করানো সম্ভব হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পোনা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
বাজার মূল্য:
বাংলাদেশে ১,০০০-৩,৫০০ টাকায় এক জোড়া প্যারোট পাওয়া যায় (Galib and Mohsin, 2011)।
তথ্য সূত্র (References)
- Badmanstropicalfish. 2014. Fish Stats: Cichlasoma citrinellum x Cichlasoma synspilum?. Rretrieved on August 20, 2014, http://badmanstropicalfish.com/stats/cichlid_stats/stats_cichlids_blood_parrot.html
- Brough C CFS and Roche J. 2014. Blood Parrot: Bloody Parrot Fish, Jellybean Parrot Cichlid, Blood Parrotfish. Retrieved on August 20, 2014, http://animal-world.com/encyclo/fresh/cichlid/blparrot.php
- Galib SM and Mohsin ABM. 2011. Cultured and Ornamental Exotic Fishes of Bangladesh: Past and Present. LAP LAMBERT Academic Publishing. 176pp.
- Sharpe, S. 2014. Blood Parrot. About.com, retrieved on August 20, 2014, http://freshaquarium.about.com/cs/cichlids1/a/bloodparrot.htm
Visited 2,742 times, 2 visits today | Have any fisheries relevant question?