চলনবিল এলাকায় বাঁশের মাঁচায় মাছ শুঁটকিকরণ

ভূমিকা

প্রাচীন কাল থেকেই বাঙালি মাছের ভক্ত। বাজারে গেলে সবার আগে তাজা এবং বড় মাছের দিকেই সবার চোখ আগে আটকে যায়। তবে বাঙালির পছন্দ বৈচিত্র্যময়। তাই তাজা মাছের পাশাপাশি শুঁটকি মাছ আমাদের খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে বহু বছর আগে থেকেই।   শুঁটকি মাছের নাম শুনলে যেখানে অনেকের জিভে জল এসে যায় সেখানে কারও কারও আবার এর গন্ধে পালানোর উপক্রম অবস্থা সৃষ্টি হয়, বিশেষত শিশুদের। তবে বৈচিত্র্যময় বাঙালির লোভনীয় এক পদের নাম শুটকি মাছ তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। 

শুঁটকি মাছ কি

খাদ্য সংরক্ষণের প্রাচীন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল খাদ্যকে প্রখর সূর্যতাপে বা বাতাসে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা। কোন মাছকে যখন সূর্যের তাপে বা শুষ্ক পরিবেশে বাতাসে শুকিয়ে এর ভিতরের জলীয় অংশ অপসারণ করে পরবর্তীতে খাবার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ  করাকে মাছের শুঁটকিকরণ  বলা হয়। এবং মাছটি শুঁটকি মাছ নামে পরিচিতি পায়। বড় বা ছোট যে কোন ধরণের মাছের শুঁটকি করা সম্ভব।  প্রতি কেজি শুঁটকি মাছ তৈরিতে প্রজাতিভেদে প্রায় ৩ থেকে ৫ কেজি তাজা মাছ প্রয়োজন হয়।  সাধারণত মাছের উচ্ছিষ্ট (ভিতরের পচনশীল নাড়িভুঁড়ি) অংশগুলো ফেলে দিয়ে মাছকে প্রখর রোদে বা বাতাসে শুকানো হয় । প্রাচীনকালে এমনকি বর্তমান সময়েও এই পদ্ধতিতে মাছ এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য প্রাকৃতিক উপায়ে  সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। একে মাছ শুঁটকিকরণের সনাতন পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, মাছের শরীরে জলীয় অংশ তথা আর্দ্রতা প্রায় ১৬ শতাংশের নীচে নেমে আসে। ফলে ক্ষুদ্র অণুজীব (যেমন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক ইত্যাদি), পোকামাকড়ের লার্ভা প্রভৃতি শুঁটকি মাছের ভেতরে জন্ম নিতে বা বৃদ্ধি পেতে পারে না।  এজন্য শুঁটকি মাছের আয়ুষ্কাল তাজা মাছের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।  উপযুক্ত পরিবেশ এবং  সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে শুঁটকি মাছ প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত খাবারের উপযোগী থাকে। 

বাড়ির জন্য অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্য মাছ শুঁটকিকরণ

শুঁটকিকরণ পদ্ধতি

  • প্রথমে কাঁচামাল তথা প্রয়োজনীয় মাছ সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহকৃত মাছ গুণগত মানের হওয়া আবশ্যক।
  • এরপর মাছের আঁইশ এবং ভিতরের পচনশীল অংশ (বিশেষ করে পেটের ভিতরে অংশ; নাড়ি-ভুঁড়ি ইত্যাদি) মাছের শরীর থেকে বাদ দিতে হবে । কিভাবে মাছ কাটা হবে তার উপর শুঁটকির স্বাদ ও গন্ধ অনেকাংশে নির্ভর করে।
  • মাছকে ভালোভাবে ধৌত করে করতে হবে। এক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে মাছকে লবণ পানিতে ১০-১২ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখা হয়। লবণ এখানে জীবাণুনাশকের ভূমিকা পালন করে মাছের গুণগত মানকে অক্ষুণ্ণ রাখে।
  • পুনরায় মাছকে ধৌত করা হয় এবং সাধারণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় কিছুক্ষণের জন্য । পরবর্তীতে মাছকে পুনরায় রোদে শুকিয়ে পানি ঝরিয়ে নেওয়া হয়।
  • মাছকে রোদে শুকানোর সময় নানা ধরনের কীটপতঙ্গ (যেমন- মশা, মাছি, গুবরে পোকা ইত্যাদি) আক্রমণ করতে পারে । একারণে জেলে সম্প্রদায় মাছ রোদে শুকানোর সময় মাছের উপর পর্যাপ্ত পরিমাণে কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে শুঁটকিকরণের সময় মাছ শুকানোর জন্য বিভিন্ন কৃত্রিম ড্রায়ার (ব্যাসিনেট ড্রায়ার, কেবিন ড্রায়ার, টানেল ড্রায়ার ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এতে সময় ও শক্তি উভয়ই সাশ্রয় হয়।
  • মাছ ভালোভাবে শুকানোর সুবিধার্থে একে বাঁশের তৈরি মাচার উপর রাখা হয় বা লেজের সাথে বেঁধে মাথার অংশ নিচে রেখে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয়রা একে “খলা” বা “চাতাল” বলে থাকেন। এভাবে ৩/৫ দিন রেখে দেওয়া হয়।
  • সর্বশেষ ধাপে শুঁটকি তৈরি হয়ে গেলে একে ঠাণ্ডা করে যথাযথ উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় ।

বাঁশের মাঁচায় বোয়াল মাছ শুঁটকিকরণ

বর্তমান বাজার   

দেশের মানুষের বার্ষিক জনপ্রতি মাছের চাহিদা ২০.৪৪ কেজি। চাহিদার বিপরীতে বার্ষিক জনপ্রতি খাদ্য হিসাবে মাছ গ্রহণ ১৮.৯৪ কেজি অর্থাৎ ১.৫০ কেজি ঘাটতি থাকে। এই গ্রহণকৃত মাছের প্রায় ৫% আসে শুঁটকি থেকে। বছরে প্রায় ৫.৪৬ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য আহরিত হয় সমুদ্র থেকে যার ২০% শুঁটকি হিসাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে শুঁটকি মাছ উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে বেশি শুটকি উৎপাদিত হয় সুন্দরবনের দুবলার চড়, সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড, সোনাদিয়ার চড়, মহেশখালী, কক্সবাজারের নাজিরাটেক, সুনামগঞ্জের ইব্রাহীমপুর, জামালগঞ্জের জশমন্তপুর সহ আর অন্যান্য জায়গায় । এছাড়াও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও  শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে নাটোরের সিংড়া (বিশেষ করে চলনবিল এলাকার আশেপাশে), সিরাজগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর অন্যতম।

শুঁটকির মধ্যে সবচাইতে দামি হচ্ছে লাক্ষা ও রূপচাঁদা মাছের শুঁটকি। বর্তমানে এক কেজি রূপচাঁদা শুঁটকি ২০০০-৩০০০ টাকা ও  লাক্ষা ৪০০০-৫০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অত্যন্ত মজাদার এবং উৎপাদন খরচের কারণে এগুলোর দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ছুরি শুঁটকি ৫০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয় চট্টগ্রাম বাজারে। শুঁটকির মধ্যে কম দামের শুঁটকি হচ্ছে মিশালী শুঁটকি। তবে লইট্ট্যা শুঁটকি চাহিদা বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি লইট্ট্যা শুঁটকি বিক্রি হয় সাড়ে তিনশ’ থেকে ছয়শ’ টাকার মধ্যে।

বাংলাদেশের উৎপাদিত সামুদ্রিক শুঁটকির সবচেয়ে বড় অংশ তৈরি হয় কক্সবাজারে। কক্সবাজারের নাজিরাটেক এলাকাকে দেশের শুঁটকি উৎপাদনের  বৃহত্তম কেন্দ্রস্থল তথা শুঁটকির গ্রাম বলে বিবেচনা করা হয়। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেঁসে প্রায় একশ একর বালুচর জুড়ে গড়ে উঠেছে নাজিরাটেকের শুঁটকি মহাল। বাংলাদেশে উৎপাদিত শুঁটকির প্রায় আশি শতাংশ এই নাজিরাটেকেই পাওয়া যায়।

 এখানকার শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কথামতে, প্রতি মৌসুমে ,বিশেষ করে শীতের শুরুতে শুধুমাত্র নাজিরাটেক শুঁটকি মহলে মাছের গুড়া সহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হয় যার বাজারমূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা।

শুঁটকি মাছ বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি

স্বাদু ও লবণাক্ত উভয় প্রকার মাছের শুঁটকি সমান ভাবে জনপ্রিয়।  যেসব প্রজাতির মাছের শুঁটকি বেশী পাওয়া যায় তার তালিকা নিচে দেয়া হল-

স্বাদুপানির মাছ:

স্থানীয় নাম (Local Name)বৈজ্ঞানিক নাম (Scientific Name)ইংলিশ নাম (English Name)
রুই (Rui)Labeo rohitaIndian Carp
কাতলা (Katol)Catla catlaIndian carp
পুঁটি (Puti)Puntius sp.Small barb
টাকি (Taki)Channa punctatusSpotted snakehead
শোল (Shol)Channa striatusFreshwater eel
মলা (Mola)Amblypharyngodon molaMola carplet
টেংরা (Tengra)Mystus sp.Catfish
দারকিনা (Darkina)Esomus darricusFlying barb
গুচি (Guchi)Mastacembelus pancalusSpiny eels
চিংড়ি (Chingri)Mascembelus sp.Small prawn

সামুদ্রিক বা লোনাপানির মাছ:

স্থানীয় নাম (Local Name) বৈজ্ঞানিক নাম (Scientific Name) ইংলিশ নাম (English Name)
রূপচাঁন্দা (Rupchanda)Stromateus chinensisChinese pomfret
কালিচাঁন্দা (Kalichanda)Parastromateus nigerBrown pomfret
ফলিচাঁন্দা (Folichanda)Stromateus cinereusSilver pomfret
লালপোয়া (Lal Poa, Pufa)Jihnius argenteusSilver jewfish
লইট্টা (Loitta)Harpodon nehereusBombay duck
ছুড়ি (Churi)Trichiurus haumelaRibbon fish
লাক্ষা (Lakkha)Plynemus indicusIndian salmon
জাটকা (Jhatka)Tenualosa kanagurataShad
চৌক্কা (Choukya)Hilsha filigeraJeweled shad
গুইজ্জা, কাটা (Guizza, Kata)Tachysurus thalassinusSea catfish
শুঁটকি মাছের একটি সনাতন বাজার

চাহিদা

আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে শুঁটকি মাছের চাহিদা বলে শেষ করা সম্ভব নয় । আত্মকর্মসংস্থান থেকে শুরু করে আমাদের দেশীয় অর্থনীতিতে শুঁটকি মাছের প্রভাব অপরিসীম ।  বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের শুটকিকরণ করা হয় প্রচুর পরিমাণে । শুঁটকি উৎপাদনের বৃহত্তম স্থান নাজিরাটেকে এই কাজের সাথে জড়িত লোকের সংখ্যা প্রায় নয় হাজারের কাছাকাছি। উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের অধিকাংশই সরাসরি মাছের শুঁটকিকরণের সাথে জড়িত সেই প্রাচীনকাল থেকে। বাংলাদেশে মূলত শীতকালে শুঁটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয় । সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুঁটকি মাছ তৈরির কাজ পুরোদমে চলতে থাকে। এইসময় বাজারে এবং আমাদের খাবারের টেবিলে শুটকির উপস্থিতি প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়।  এই সময় মানুষের মুখে মুখে  “চেপা শুঁটকির ভুনা”,  “লইট্টা শুঁটকির ঝোল” ইত্যাদি বিভিন্ন পদের শুঁটকির নাম বার বার শোনা যায়।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের দেশের শুঁটকি মাছ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও । দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, মালেশিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, হংকং, ব্রিটেন, আমেরিকা, চিন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশীয় শুঁটকি রপ্তানির হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছরের তুলনায় এবার শুঁটকির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হলে শুধুমাত্র শুঁটকি মাছ বিদেশে  রপ্তানি করেই আমাদের দেশ বার্ষিক ৪০০ কোটি টাকার মতো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

শুঁটকি মাছের একটি আধুনিক দোকান (কক্সবাজার)

শুঁটকির পুষ্টিগুণ

  • প্রতি ১০০ গ্রাম শুঁটকি থেকে প্রায় ৩৭১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায় , যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী । শুঁটকি থেকে প্রাপ্ত খাদ্যপুষ্টির আশি শতাংশই প্রোটিন ।
  • শুঁটকি মাছ উচ্চমাত্রার প্রোটিনের একটি ভাল খাদ্য উৎস। শুঁটকি মাছের প্রোটিনে যে পরিমাণ এমাইনো এসিড আছে তা প্রায় ডিমের মধ্যে থাকা এমাইনো এসিডের সমপরিমাণ ।
  • এছাড়াও শুঁটকিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে। শুঁটকিতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য মৌল যেমন – সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি আছে।
  • শুঁটকি মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়, যেমন- ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন-ডি । ভিটামিন বি-১২ আমাদের শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন- ডি শরীরের ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে এবং হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে।
  • শুঁটকি মাছে নায়াসিন নামে এক ধরণের ভিটামিন তৈরি হয় আমাদের ত্বক ও পরিপাকতন্ত্রের জন্য অতি উপকারী একটি পুষ্টি উপাদান। নায়াসিন দেহের খাবার থেকে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
  • শুঁটকিতে কোলেস্টেরল ও সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড কম থাকে । যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ-রক্তচাপ বা অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যা আছে তারা সাধারণত চর্বি জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন না । এক্ষেত্রে বিকল্প খাদ্য হিসেবে তারা শুঁটকি মাছ খেতে পারেন ।

অপকারিতা

  • কোন কিছুই নেতিবাচকতা মুক্ত নয়। শুঁটকি মাছের ক্ষেত্রেও এমন কিছু নেতিবাচকতা দেখা যায়।
  • শুঁটকিকরণের সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এর গুণগত মান ব্যহত হতে পারে । প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় পোকা-মাকড়ের লার্ভার আক্রমণ ঘটতে পারে, যা স্বাদের উপর প্রভাব ফেলে, এমনকি গুনগত মান নষ্ট হতে পারে ।
  • যারা শুঁটকিকরণের কাজে নিয়জিত থাকেন তাদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতন নন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাছ শুকানোর সময় প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য সেবন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
  • শুঁটকি তৈরি থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এর পুষ্টিমান কমে যেতে থাকে। অসাবধানতা, অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া, প্রতিকূল পরিবেশ ইত্যাদির কারণে পুষ্টিমান ধরে রাখা সম্ভব হয়না অনেকাংশেই।
  • অনেকসময় কাঁচামাল হিসেবে পচা, দুর্গন্ধযুক্ত ও বাসি মাছ ব্যবহার করা হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টিসম্মত পণ্য পাওয়া যায় না ।
  • তবে প্রয়োজনীয় সাবধানতা, সতর্কতা এবং শুঁটকি চাষিদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে উপরোক্ত সমস্যা গুলো থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব।
আধুনিক দোকানে (কক্সবাজার) বিক্রির জন্য উপস্থাপিত দুটি সামুদ্রিক মাছ

শেষকথা  

আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যের একটি অন্যতম অংশ হল এই শুঁটকি মাছ। একে সংরক্ষণ ও এর মান উন্নয়নের দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার। আশা করা যায়, প্রয়োজনীয় সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে  আমাদের দেশীয় শুঁটকি একদিন স্থান পাবে বিশ্ব-দরবারে।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি রেসিপি: লইট্টা শুঁটকি ভর্তা

তথ্যসূত্র

In English:

Galib SM (2011) Fish Drying and Dehydration. BDFISH Feature. https://en.bdfish.org/2011/01/fish-drying-dehydration/. Retrieved on 23 August 2021.  

Balachandran KK (2001) Post-harvest Technology of Fish and Fish Products. Daya Publishing House, India. 440 pp.

Jason AC (1965) Drying and Dehydration. In Fish as Food Volume: 3. Borgstrom G (ed.). Academic Press INC, New York. 489 pp.

বাংলায়ঃ

জাবেদ আবেদীন শাহীন (২০২০) কক্সবাজারের শুটকির সুনাম ও চাহিদা আছে বহির্বিশ্বেও।  যায়যায়দিন। https://www.jaijaidinbd.com/todays-paper/first-page/117915/কক্সবাজারের-শুঁটকির-সুনাম-ও-চাহিদা-আছে-বহির্বিশ্বেও/print। প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০২০। সংগ্র: ২৩ আগস্ট ২০২১।

সুনীল বড়ুয়া (২০২০) দেশের অন্যতম শুটকির গ্রাম কক্সবাজারের নাজিরাটেক। বাংলানিউজ। https://www.banglanews24.com/economics-business/news/bd/762926.details । প্রকাশ: ২ জানুয়ারি, ২০২০)।  সংগ্রহঃ ২৩ আগস্ট ২০২১।

সোনিয়া সাবরিন (২০২১) কেন খাবেন শুটকি মাছ। প্রথম আলো। https://Prothomalo.com/life/nutrition/কেন-খাবেন-শুঁটকি-মাছ/। প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি, ২০২১। সংগ্রহঃ ২৩ আগস্ট ২০২১।


Visited 4,025 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশে শুঁটকি মাছের ইতিবৃত্ত: বর্তমান বাজার, চাহিদা ও পুষ্টিগুণ

Visitors' Opinion

তাহসিন ফারজানা

স্নাতক শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.