উষ্ণ এলাকার মহাসাগর থেকে শুরু করে আটলান্টিক পর্যন্ত সকল মহাসাগরে আ্যঙলার ফিশের দেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি পাওয়া যায় কোরিয়ার গভীর সমুদ্রে যার প্রজাতির নাম Ceratias holboelli। এদের স্ত্রীরা দৈর্ঘ্যে ১.২ মিটার হয়ে থাকে কিন্তু পুরুষেরা দৈর্ঘ্যে হয় মাত্র ১৪ সেমি। স্ত্রীর শরীরে সংযুক্ত হবার আগে পুরুষেরা মুক্তজীবী হিসেবে বসবাস করে কিন্তু এসময় দৈর্ঘ্যে মাত্র ১.৩ সেমি হয়ে থাকে এবং এদের দাঁত বিহীন পাখির ঠোঁটের মত তীক্ষ্ণ চোয়াল থাকে ।
সাগর দৈত্য (sea devil) নামে পরিচিত গভীর সমুদ্রের আ্যঙলার ফিশ এর মধ্যে humpback anglerfish বা common black devil (Melanocetus johnsonii) সাধারণত উষ্ণ সমুদ্রের দুই হাজার মিটার নীচে বসবাস করে। এদের স্ত্রীরা দৈর্ঘ্যে ২০ সেমি হয়ে থাকলেও পুরুষেরা মাত্র ৩ সেমি হয়ে থাকে। অন্যদিকে উষ্ণ সমুদ্রের বড় আকারের আ্যঙলার ফিশ এর (triplewart sea devil: Cryptopasaras couesi) স্ত্রীরা ওজনে প্রায় ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে কিন্তু পুরুষেরা মাত্র ১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। আবার Gigantactis জেনাসের স্ত্রীরা ৪০ সেমি হয়ে থাকলেও এদের পুরুষেরা মাত্র ২ সেমি হয়ে থাকে।
গভীর সমুদ্রের স্ত্রী আ্যঙলার মাছের প্রাপ্তবয়স্ক হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হলেও পুরুষেরা লার্ভা অবস্থা থেকে অল্প দিনেই মেটামরফোসিসের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবার একাকী কাটায়। স্ত্রীদের বায়োলুমিনিসেন্স অঙ্গ থাকলেও পুরুষদের কোন বায়োলুমিনিসেন্স অঙ্গ থাকে না। গভীর সমুদ্রে পুরুষদের খাদ্য খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। বলা যায় বেঁচে থাকার জন্য বামন আকৃতির প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষেরা প্রথমেই দৈত্যাকার একটি স্ত্রীকে খুঁজে নেয়। পুরুষেরা উন্নত অলফেক্টরী অঙ্গ নিয়ে জন্মায় যা পানির গন্ধ সনাক্ত করতে পারে। এই অঙ্গ দক্ষতার সাথে স্ত্রীদের নিঃসৃত ফেরোমন সনাক্ত করতে পারে যা স্ত্রীদের খুঁজে পেতে সহায়তা করে। অন্যদিকে স্ত্রীরা ডিম ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হলে তার দ্রুতই পুরুষ সদস্যকে খুঁজে পেতে চায়। এ কাজে তাদের নিঃসৃত ফেরোমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি স্ত্রীর উপর একই সময়ে একাধিক পুরুষ পরজীবী হয়ে সংযুক্ত হয়ে খাকে।
স্ত্রী সদস্যকে খুঁজে পাওয়ার পর পুরুষেরা তাদের উদর অঞ্চলে কামরে ধরে। এসময় নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে পুরুষের ঠোঁট এবং স্ত্রীর উদরের ত্বক একীভূত হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুরুষের চোয়ালের বিলুপ্তি ঘটে এবং উভয়রে রক্ততন্ত্র পর্যন্ত একীভূত হয়ে যায়। একসময় পুরুষেরা পরিপাকনালী হারিয়ে সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীর উপর পরজীবী হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে পুরুষেরা একজোড়া শুক্রাশয় ছাড়া অন্যান্য সকল অঙ্গ যথা মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, চোখ ইত্যাদি হারিয়ে ফেলে। পুরুষদের বাকী জীবনটা নিয়ন্ত্রণ করে স্ত্রীরা। এমনকি ধারণা করা হয় স্ত্রীরা তাদের নিঃসৃত হরমোন দ্বারা শুক্রাশয় হতে শুক্রাণু নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
পানির উপরিতলে জিলেটিন নির্মিত প্রায় ১ মিটার প্রশস্ত ও ৯ মিটার লম্বা পাতলা সিটে এরা ডিম পেরে থাকে। ডিমগুলো না ফোটা পর্যন্ত ডিমের এই সিট মুক্তভাবে সমুদ্রে ভেসে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর পেরা প্লাঙ্কটন খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এরা আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যায়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
- ফিচারের ছবি গুলো নেয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া (http://en.wikipedia.org) থেকে।
তথ্যসূত্র:
- http://www.seasky.org/deep-sea/anglerfish.html
- http://en.wikipedia.org/wiki/Ceratiidae
- http://en.wikipedia.org/wiki/Humpback_anglerfish
- http://en.wikipedia.org/wiki/Anglerfish
- http://www.frogfish.ch/deepsea-anglerfish.html
Visited 1,478 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?