পদ্মা বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী (Hossain et al., 2005)। হিমালয় পর্বতমালার গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ হতে গঙ্গা নামে উৎপত্তি হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ হতে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় (মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন) নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এবং এখান থেকেই নদীটি পদ্মা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে এর দৈর্ঘ্য ৩৬৬ কিলোমিটার (Hossain et al., 2005)। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নামেই চাঁদপুরের কাছে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে পদ্মা ও মেঘনার মিলিত প্রবাহটি মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। তবে Chowdhury (2003) এর মতে সুনির্দিষ্টভাবে গোয়ালন্দ ঘাটে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গমস্থালের পরবর্তী মিলিত প্রবাহই পদ্মা এবং এর দৈর্ঘ্য ১২০ কিমি ও প্রস্থ ৪-৮ কিমি; অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রবেশের পর হতে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত যে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে সেটির নাম পদ্মা নয় বরং গঙ্গা।
রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয় বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা (Hossain et al., 2005)। পদ্মার প্রধান উপনদী মহানন্দা ও পুনর্ভবা। মহানন্দা উপনদীটি চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় এবং পুনর্ভবা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার বিভিন্ন শাখানদীর মধ্যে গড়াই, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব ইত্যাদি অন্যতম। আবার পদ্মার বিভিন্ন প্রশাখা নদীসমূহ হলো- মধুমতী, পশুর, কপোতাক্ষ ইত্যাদি। এই নদীগুলো কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালি ইত্যাদি জেলার উপর দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
মাৎস্য উৎপাদন:
২০০৭-২০০৮ সালে পদ্মা নদী হতে মোট ৯৩৯২ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয় যা বাংলাদেশের সমস্ত নদীসমূহ হতে ধৃত মাছের ৬.৮৭% (FRSS, 2009)। আহরিত এসকল মাছসমূহ হলো- মেজর কার্প (১১৩ মেট্রিক টন), অন্যান্য কার্প (১৮ মেট্রিক টন), ক্যাটফিশ (৯৬৯ মেট্রিক টন), ইলিশ (৩৪৩২ মেট্রিক টন), বড় চিংড়ী (১০০ মেট্রিক টন), ছোট চিংড়ী (৩৭৫ মেট্রিক টন) ও অন্যান্য (৪৩৮৫ মেট্রিক টন) (FRSS, 2009)। পদ্মার ইলিশ বোয়াল ও পাঙ্গাসের স্বাদ অতুলনীয় (Hossain et al., 2005)।
পদ্মার মাৎস্যসম্পদ:
Islam and Hossain (1983) রাজশাহী এলাকার পদ্মার উপর গবেষণায় ১১০ প্রজাতির মাছের (৫৯ গণ, ২৮ গোত্র, ১২ বর্গ ও ২ শ্রেণীর অন্তর্গত) তালিকা প্রদান করেন। Bhuiyan et al. (2008) রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার পদ্মার উপর এক গবেষনায় (ডিসেম্বর ২০০৬-নভেম্বর ২০০৭) ৭৩ প্রজাতির মাছ (৪৪ গণ, ২২ গোত্র, ১০ বর্গ, ২ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত) ও ১১ প্রজাতির মাছব্যাতীত অন্যান্য জলজ প্রাণী (৪ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত) রেকর্ড করেন। Samad et al. (2010) একই এলাকায় গবেষণা করে ৫৭ প্রজাতির (২৩ গোত্র, ১১ বর্গের অন্তর্ভুক্ত) দেশীয় ছোট মাছ লিপিবদ্ধ করেন।
Jewel (2006) পদ্মা নদীতে মাছ ধরায় ব্যবহৃত ৬ ধরনের জাল, ৪ ধরনের ফাঁদ ও ১ ধরনের আঘাতকারী মাছ ধরার যন্ত্র রেকর্ড করেন, এসকল মাছ ধরার সরঞ্জামে মোট ৩৮ প্রজাতির মাছ ধৃত হয় বলে তার গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।
অপর একটি গবেষণায় মাছব্যাতীত ৪৭ প্রজাতির মৎস্যভোজী মেরুদণ্ডী প্রাণী রেকর্ড করা হয় যার মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ৩ প্রজাতির সরিসৃপ, ৪০ প্রজাতির পাখি ও ২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী অন্তর্ভুক্ত (Haque et al., 1983)।
পদ্মার ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্টসমূহ:
Ahmed (2004) মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে পদ্মার উপর এক গবেষণায় (ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০০২) যে ফলাফলসমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন তাহলো- পিএইচ (৬.২-৭.৫), ক্লোরাইড (৬৫.০-৮৫.৬ মিলিগ্রাম/লিটার), ক্ষারত্ব (৫৭.৭-১১০ মিলিগ্রাম/লিটার), মুক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড (২.৩-১৩.৪ মিলিগ্রাম/লিটার), দ্রবীভূত অক্সিজেন (৫.১-১০.৩ মিলিগ্রাম/লিটার), বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমাণ্ড (৩.৪-৭.২ মিলিগ্রাম/লিটার), টোটাল হার্ডনেস (২.৯-৬.৫ মিলিগ্রাম/লিটার), স্থায়ী হার্ডনেস (২.৩-৪.২ মিলিগ্রাম/লিটার), টোটাল সলিডস (১৭৫.৫-৪৭২.১ মিলিগ্রাম/লিটার) এবং দ্রবীভূত সলিডস (৩৫.৫-১৭৯.৯ মিলিগ্রাম/লিটার)।
পদ্মার পানিতে (টি-বাধ, রাজশাহী) বিভিন্ন অজৈব আয়নের পরিমাণসমূহ হলো- ক্যালসিয়াম (১৭.১১-৪৮.৩৭ পিপিএম), সোডিয়াম (১৭.৫১-২০.০৯ পিপিএম), পটাশিয়াম (১.০-৩.৬ পিপিএম), ক্রোমিয়াম (২.৮-৭.০ পিপিএম) ও সালফেট (৪.১৭-৫.৪৮ পিপিএম) এছাড়া তলদেশীয় কাদায়-ক্রোমিয়াম (৩৫-১০৫০ পিপিএম) ও লেড (১২-৪৮ পিপিএম) (Zereen et al., 1999).
সমস্যাসমূহ:
বর্তমানে পদ্মার সেই প্রবাহ আর নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে পলি জমে নদীর বিভিন্ন স্থানে (বিশেষ করে রাজশাহীতে) অনেক (প্রায়) স্থায়ী চরের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে পানির প্রবাহ ও মাছের বৈচিত্র্যতা ও প্রাচুর্যতাও কমে যাচ্ছে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ মাছ ধরার জাল (কারেন্ট জাল) ব্যবহার করে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ আহরণের ফলেও মাছের উৎপাদনের উপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে।
__________________________________________________________
তথ্যসূত্র:
Ahmed A (2004) Ecological studies of the Padma river at Mawa Ghat, Munshiganj I. Physico-chemical properties, Pakistan Journal of Biological Sciences 7(11): 1865-1869.
Bhuiyan SS, Joadder MAR and Bhuiyan AS (2008) Occurrence of fishes and non-fin fishes of the river Padma near Rajshahi, Bangladesh, Univ. J. Zool. Rajshahi Univ. 27: 99-100.
Chowdhury MH (2003) Padma River. In: Banglapedia the National Encyclopedia of Bangladesh Vol. 5, Bangladesh Asiatic Society, Dhaka, Bangladesh. pp. 217-218 (in Bengali).
FRSS (Fisheries Resources Survey System) (2009) Fisheries Statistical Yearbook of Bangladesh 2007-2008, Department of Fisheries, Ministry of Fisheries and Livestock, Dhaka, Bangladesh, 25(1): 1-42.
Islam MS and Hossain MA (1983) An account of the fishes of the Padma near Rajshahi, Raj. Fish. Bull. 1(2): 1-31.
Haque MS, Hossain MA and Kasem MA (1983) A checklist of the piscivorous vertebrates of the river Padma of Rajshahi district, Raj. Fish. Bull. 1(2): 44-50.
Hossain ML, Mahmud J, Islam J, Khokon ZH and Islam S (eds.) (2005) Padma, Tatthyakosh Vol. 1 and 2, Dhaka, Bangladesh, p. 182 (in Bengali).
Jewel MAS (2006) Study on fishing gears and socio-economic conditions of fishermen of the Padma river, Abstracts 2nd fisheries conference and research fair 2006, Bangladesh Fisheries Research Forum (BFRF), Dhaka, Bangladesh, p. 61.
Samad MA, Asaduzzaman M, Galib SM, Kamal MM and Haque MR (2010) Availability and consumer preference of small indigenous species (SIS) of the river Padma at Rajshahi, Bangladesh, Int. J. BioRes. 1(5): 27-31.
Zereen F, Islam F, Habib MA, Begum DA and Zaman MS (1999) Inorganic pollutants in the Padma River, Bangladesh, Environmental Geology 39(9): 1059-1062.
Visited 6,211 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?