সাধারণভাবে স্টিকার বলতে মুদ্রিত বা চিত্রিত একটুকরো কাগজকে বোঝায় যার একপাশটা আঠালো। আর স্টিকারে মৎস্য বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যাদি মুদ্রিত থাকলে তা মৎস্য স্টিকার নামে পরিচিতি লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মৎস্য বিভাগ এই মৎস্য স্টিকারকে নতুন আঙ্গিকে ব্যবহার করে এতে যোগ করেছেন নতুন এক মাত্রা। তারা মৎস্য স্টিকার তৈরি করেছেন শিক্ষার্থীদের বই-খাতায় ব্যবহার উপযোগী করে। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা মৎস্য স্টিকার তারা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন যা মৎস্য বিশেষত ইলিশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে তারা মনে করেন। নিচে বিস্তারিত দেয়া হল-
উদ্যোগ এর নাম:
শিক্ষার্থীদের বই-খাতায় ব্যবহার উপযোগী সচেতনতামূলক মৎস্য স্টিকার
কী রয়েছে এই মৎস্য-স্টিকারে?
প্রথমত স্টিকারগুলি বই ও খাতায় লাগানোর উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। স্টিকারে মুদ্রিত রয়েছে ইলিশ মাছ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান। এর পাশাপাশি প্রতিটি স্টিকারে শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণী ও রোল নম্বর এবং স্কুলের নাম লেখার জন্য শূন্যস্থান রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবহার উপযোগী ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই স্টিকারগুলো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে সমাদৃত হয়েছে।
কেন এই উদ্যোগ?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক ও খাতায় এই মৎস্য বিষয়ক সচেতনতা মূলক স্টিকার লাগিয়ে নতুন প্রজন্ম সহ সকল মানুষের মধ্যে ইলিশ রক্ষার বার্তা ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে সব ধরণের অভিভাবকদেরও সচেতন করা সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও অভিভাবকরাও বাঙালীর গর্বের ইলিশ মাছকে রক্ষা করার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগের মাধ্যমে আপামর জনগোষ্ঠীকে সচেতনতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
মৎস্য-স্টিকারে ব্যবহৃত স্লোগানসমূহ:
মৎস্য-স্টিকারগুলো মূলত ছিল স্লোগান-ধর্মী। যেসব স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো হল-
স্লোগান | কাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠী |
বাঁচলে ছোট ইলিশ, মিলবে তবেই বড় ইলিশ | সকল জনগোষ্ঠী |
খোকা ইলিশ বিক্রি নাই, বড় ইলিশ কাটছি তাই | মৎস্য বিক্রেতা |
২৩ সেন্টিমিটারের কম (৯ ইঞ্চির ছোট) মাপের ইলিশ কিনবেন না | মৎস্য ক্রেতা |
খোকা ইলিশ রাঁধতে মানা, ইলিশ পুলিশ দেবে হান | রাঁধুনি, পাচক |
স্বাদে গন্ধে নেই কোন তুলনা, ইলিশে ভরপুর বাঙালীর রসনা | সকল জনগোষ্ঠী |
বিশেষত্ব:
অন্যান্য স্টিকার বিষয়ক উদ্যোগের সাথে এর প্রধান পার্থক্য গড়ে দিয়েছে এর স্থায়িত্ব। অন্যান্য সচেতনতামূলক স্টিকার যেখানে কর্মসূচী পালনের পরপরই নষ্ট হয়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় সেখানে বই ও খাতায় ব্যবহারের উপযোগী এই সচেতনতা মূলক স্টিকারগুলো প্রায় এক বছরব্যপী স্থায়ী হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে এর মাধ্যমে সারা বছর ধরেই ইলিশ রক্ষা বিষয়ে সচেতনতা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে। ইলিশ রক্ষা বিষয়ক এই মৎস্য সম্প্রসারণ উদ্যোগ একদিকে যেমন অভিনবত্বের তকমা পেয়েছে অন্যদিকে তেমনই দারুণ ফলপ্রসূ হয়েছে।
কেস-স্টাডি:
পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় ২০১৭ সালের ২১-২৩শে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত “মাটি, কৃষি, উদ্যান পালন, মৎস্য, কৃষি বিপণন, সমবায়, প্রাণী সম্পদ মেলা ২০১৭” শিরোনামের মেলায় অংশগ্রহণ করে রাজ্যের মৎস্য বিভাগ। এই মেলায় মৎস্য দপ্তরের মৎস্য বিষয়ক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ বিষয়ক স্টল ছিল । এই স্টল থেকেই শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ইলিশ মাছ রক্ষায় সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্লোগান-সমৃদ্ধ স্টিকার বিতরণ করা হয়। প্রথম দিনই বাড়সুন্দরা বিদ্যাসাগর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের প্রায় ষাট জন ছাত্র-ছাত্রী নতুন বই খাতা নিয়ে উপস্থিত হয় স্টলে এবং লাইন দিয়ে অতি উৎসাহের সাথে ছাত্র ছাত্রীরা নিজের বই-খাতা বাড়িয়ে দেয় স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্র ছাত্রীরাও বিনামূল্যে সচেতনতামূলক স্টিকার পেয়ে খুবই আনন্দ লাভ করে।
সবশেষে বলা যায়, অভিনব এই সম্প্রসারণ প্রযুক্তিটি বছরের শুরুতেই প্রতিটি স্কুলে চালু করা সম্ভব হলে মৎস্য সচেতনতা বিষয়ক তথ্য আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ফলশ্রুতিতে আমরও পেতে পারি মৎস্য সচেতন একটি জনগোষ্ঠী।
Visited 1,861 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?