বাংলাদেশে আন্ডার-গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ফিশারীজ শিক্ষা গ্রহণের যেসব ডিগ্রী প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে বি.এস-সি. ফিশারীজ (অনার্স) অন্যতম। এছাড়াও ফিশারীজ বা ফিশারীজ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাশ ডিগ্রী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমও চালু রয়েছে। এখানে আমরা মূলত জানবো চার বছর মেয়াদী বি.এস-সি. ফিশারীজ (অনার্স) ডিগ্রী অর্জনের গুরুত্ব। এছাড়াও দেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে এই কোর্স করার সুযোগ রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও রইল কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ফিশারীজ শিক্ষা: কেন?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রক্রিয়াধীন ব-দ্বীপ আমাদের নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ। মৎস্য-সম্পদে ভরপুর অসংখ্য ছোট-বড় নদী-নালা জালের মত ছড়িয়ে আছে এদেশ জুড়ে। প্রায় ষাট শতাংশ প্রাণীজ আমিষ পাওয়া যায় মৎস্য ও মৎস্য-জাত দ্রব্য থেকে যা অন্যান্য প্রাণীজ আমিষের চেয়ে তুলনামূলক দামে সস্তা ও সহজ-প্রাপ্য। দরিদ্রতা আর জনসংখ্যার আধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেবলমাত্র মৎস্য বিজ্ঞানই পারে মৎস্য ও মৎস্য-জাত দ্রব্যের মত প্রাণীজ আমিষের এই সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টিকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে।

বাংলাদেশ মৎস্য-সম্পদে ভরপুর দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু জনসংখ্যার আধিক্যজনিত কারণে বার্ষিক চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ মৎস্য সম্পদ আহরণ ও উৎপাদন করা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই এই চাহিদার সাথে উৎপাদনের সম্পর্ক মেলাতে অবশ্যই মৎস্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন প্রয়োজন।

বাংলাদেশে মৎস্য-জাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে মৎস্য খাত হতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে থাকে। উৎপাদনের উৎস বিবেচনায় নিলে মৎস্য-খাতই হচ্ছে দেশের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বৃহৎ খাত তৈরি পোশাক শিল্পের সমস্ত কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যার মাধ্যমে অনেক দেশীয় মুদ্রা খরচের খাতায় চলে যায়। অপরদিকে মৎস্য সম্পদ উৎপাদন করা হয় প্রায় সম্পূর্ণভাবে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে। অন্যদিকে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিসমূহে বর্তমানে মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণ চিংড়ি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারার কারণে। তাই চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিসমূহের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব মৎস্য বিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে। এছাড়াও অন্যান্য মৎস্য সম্পদ রপ্তানির কলাকৌশল আয়ত্তের মাধ্যমে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির করণীয় নির্ধারণে মৎস্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন নিশ্চিতভাবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

প্রায় ১.২৫ কোট মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের সাথে সম্পৃক্ত যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদের প্রতি পাঁচজনের চারজনই জলজ সম্পদের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এদেশে আর কোন খাত পাওয়া যাবে না যার উপর এত বেশি মানুষ নির্ভরশীল। মৎস্য বিজ্ঞান শিক্ষা মৎস্য সম্পদ তথা মানব সম্পদের যথাযথভাবে ব্যবহারের পথ বাতলে দেয়।

নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য সময় উপযোগী আর প্রয়োজনীয় গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ মৎস্য বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবলের। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতা বা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ব্যাংক বা অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহেও রয়েছে ফিশারীজ সংশ্লিষ্ট কাজের সুযোগ। এছাড়াও মৎস্য সম্পদ আহরণ ও উৎপাদন ক্ষেত্র, বিভিন্ন মৎস্য ও মৎস্য-জাত দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠান, মৎস্য চাষ ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত নানাবিধ উপকরণ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানার বিস্তৃতির ফলে মৎস্য খাতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মৎস্য বিজ্ঞানে অধ্যয়নের পর একজন শিক্ষার্থীর সামনে রয়েছে অনেক ধরণের কাজের সুযোগ যা তার পছন্দমত কাজ পেতে সহায়ক। আরও জানতে পড়ুন “ফিশারীজ গ্রাজুয়েটের যত কর্মক্ষেত্র”।

ফিশারীজ শিক্ষা: কোথায়?

বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ/ ইনস্টিটিউট/বিভাগ/ ডিসিপ্লিন আসন সংখ্যা পদ্ধতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

 

ফিশারীজ বিভাগ, কৃষি অনুষদ ৩৫ এ্যানুয়াল
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ৮৮ সেমিস্টার
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর ফিসারিজ অনুষদ ৬০ সেমিস্টার
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ৬০ সেমিস্টার
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দুমকি, পটুয়াখালী মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ৩৫ সেমিস্টার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সালনা, গাজীপুর ফিশারিজ অনুষদ ৩০ সেমিস্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  ফিসারিজ বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়  ফিসারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন, লাইভ সায়েন্স স্কুল সেমিস্টার
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ ৬০ সেমিস্টার
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

 

এ্যাকুয়াকালচার এন্ড ফিশারিজ, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এ্যানুয়াল

এছাড়াও বাকৃবি অধিভুক্ত শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ফিশারীজ কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর থেকেও বি.এস-সি. ফিশারীজ (অনার্স) ডিগ্রী করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারীজ একাডেমি, চট্টগ্রাম থেকে বি.এস-সি ফিশারীজ (পাশ) কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।


Visited 3,149 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
ফিশারীজে উচ্চশিক্ষা: কেন এবং কোথায়?

Visitors' Opinion

আবদুল্লা আল মাসুদ

শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.