চিত্র-১: আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) অনুসারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের (স্বাদুপানি ও মোহনা অঞ্চলের) মৎস্য প্রজাতির বর্তমান অবস্থা
চিত্র-১: আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) অনুসারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের (স্বাদুপানি ও মোহনা অঞ্চলের) মৎস্য প্রজাতির বর্তমান অবস্থা

মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর এই দেশে মাছ দেশীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যেরই অংশ। বাংলাদেশের জলাশয়ে পানি আছে আর মাছ নেই এমনটি নিকট অতীতে যেমন কেউ দেখেনি তেমনই বর্তমানেও কেউ ভাবে না। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ নিয়ে মৎস্য জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে শঙ্কিত। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে যে দেশের উন্মুক্ত জলাশয়গুলিতে দেশীয় মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ক্রমেই কমছে অন্যদিকে বিদেশী মাৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। নিচে বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্যের অতীত ও বর্তমান অবস্থার চিত্র তথ্য-উপাত্তসহ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হল।

IUCN Bangladesh (2000) তথ্যানুসারে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের (স্বাদুপানি ও মোহনা অঞ্চলের) জীবিত মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে হুমকিগ্রস্ত (threatened) মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ৫৪টি যা মোট মৎস্য প্রজাতির ২০ শতাংশের কিছু বেশী আর হুমকিগ্রস্ত নয় (not threatened) এমন মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ১৪৬ যা মোট মৎস্য প্রজাতির প্রায় ৫৫ শতাংশ। তথ্য স্বল্পতার (data deficient) কারণে এই উভয় ক্যাটেগরির বাইরে রয়ে গেছে ৬৬ প্রজাতির মাছ যা মোট মৎস্য প্রজাতির প্রায় ২৫ শতাংশ [চিত্র-১]। এই ৬৬ প্রজাতির মাছকে বিবেচনায় নেয়া সম্ভব হলে হুমকির মুখে থাকা মাছের সংখ্যা বাড়ত বই কমতো না।

এবার আমরা জানবো হুমকির মুখে থাকা মাছের অবস্থা সম্পর্কে। হুমকির মুখে থাকা মাছের মধ্যে ১২ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন (critically endangered), ২৮ প্রজাতির মাছ বিপন্ন (endangered) আর ১৪ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন (vulnerable) [চিত্র-২]। আশার কথা এই যে দেশ থেকে ১৩ প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেলেও কোন মাছ বিলুপ্ত হয়ে যায় নি।

চিত্র-২: আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) অনুসারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের (স্বাদুপানি ও মোহনা অঞ্চলের) হুমকিগ্রস্থ (threatened) মৎস্য প্রজাতির বর্তমান অবস্থা
চিত্র-২: আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) অনুসারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের (স্বাদুপানি ও মোহনা অঞ্চলের) হুমকিগ্রস্ত (threatened) মৎস্য প্রজাতির বর্তমান অবস্থা

চরম বিপন্ন প্রজাতির (১২ প্রজাতি) মধ্যে আছে ভাঙন (বগা লেবিও), নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, সরপুঁটি, মহাশোল (টর মহাশীর), রিটা, ঘাউড়া, বাচা, পাঙ্গাশ (দেশী), বাঘাইড়, সিসর/চেনুয়া ও পিপলা শোল/টিলাশোল। বিপন্ন প্রজাতির মাছের (২৮ প্রজাতি) মধ্যে আছে চিতল, জয়া/টিলা, খোকশা, অ্যালং, কাশ খইরা, কালাবাটা, বাটা (বাটা লেবিও), কালিবাউশ, ঘনিয়া/ঘন্ন্যা, ঢেলা, ভোল, দারকিনা, রানি, পুতুল, গুইজ্যা আইড়, বাটাসিও টেংরা, কানি পাবদা, মধুপাবদা, পাবো পাবদা, শিলং, চেকা, একঠোঁট্টা, কটা কুমিরের খিল, বিশতারা, নাপিত কই, নেফতানি, গজার/গজাল ও বাইম/বাম/শালবাইন। সংকটাপন্ন মাছের (১৪ প্রজাতি) মধ্যে আছে ফলি, বামোশ, টাটকিনি/রাইখ, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা টেংরা, কাজুলি/বাঁশপাতা, গাং মাগুর/কান মাগুর, কুচিয়া/কুইচা, নামাচান্দা, লাল চান্দা/রাঙ্গা চান্দা, মেনি/ভেদা, চ্যাং/গাচুয়া ও তারাবাইম।

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় প্রাপ্ত মাছের প্রজাতির মোট সংখ্যা ৪৪২টি। ১৯৯৬ সালের আইইউসিএন এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এর মধ্যে হুমকির মুখে রয়েছে মাত্র চারটি। হুমকির মুখে থাকা মাছের মধ্যে মাত্র একটি বিপন্ন আর তিনটি সংকটাপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই তথ্যানুসারে আভ্যন্তরীণ মাছের চেয়ে সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির অবস্থা অনেক আশাব্যঞ্জক।

প্রিয় পাঠক উপরে যে চিত্রটি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে তা গত শতাব্দীর আশি ও নব্বই এর দশকে মাঠ থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ২০০০ সালে আইইউসিএন এর প্রকাশ করা প্রতিবেদন থেকে। এর মধ্যে চলে গেছে আরও এক দশক। এসময়ে দেশের মৎস্য বৈচিত্র্যের কি পরিবর্তন দেখা দিয়েছে সেই তথ্য সমসাময়িক সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, বই ও প্রতিবেদনের আলোকে নিচে উপস্থাপন করা হল।

Rahman (2005) অনুসারে দেশে স্বাদুপানির মাছের প্রজাতির সংখ্যা ২৬৫ যদিও এই সংখ্যার মধ্যে মোহনা এলাকার অনেক মাছ রয়েছে। Asiatic Society of Bangladesh (2007) এর এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা এন্ড ফোনা অব বাংলাদেশে (ভলিউম ২৩: স্বাদুপানির মাছ) শিরোনামের পুস্তকে Rahman (2005) কে উদ্ধৃতি করে বলা হয় স্বাদুপানির দেশীয় মাছের প্রজাতির সংখ্যা ২৬৫ এবং বিদেশী মাছের প্রজাতির সংখ্যা ১৬। কিন্তু বইটিতে দেশী ও বিদেশী মিলিয়ে মোট ২৫১ প্রজাতির মাছের বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে। Craig et. all. (2004) অনুসারে বাংলাদেশের প্লাবনভূমির স্বাদুপানির অস্থিবিশিষ্ট মৎস্য (bony fish) প্রজাতির সংখ্যা মোট ২৭৩ যার মধ্যে ১৩ প্রজাতির বিদেশী মাছ রয়েছে।

শরীফুল ইসলাম (২০০৯) অনুসারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা শতাধিক আরও শতাধিক মাছ বিপন্ন হওয়ার পথে। আইইউসিএন এর ৫৪টা ছাড়াও নতুন যে মাছগুলো বিপন্ন হওয়ার পথে সেগুলো হল: করিকা, বাঁশপাতা, দিবাড়ি, এক ধরনের চেলা, দুই ধরনের পাথর চাটা, দাঁড়ি, ভোল, গোয়ালপাড়া লোচ, রাঙা রুই, ঘরপুইয়া, নান্দিল, এক ধরনের কুটাকান্তি, গাং টেংরা, ঢাল মাগুর, নোনা বাইলা, কাচকি বাটা, নেফতানি, দুই ধরনের পোয়া, চার ধরনের বেলে, এক ধরনের চান্দা, পিপলা শোল, কানপোনা, দুই ধরনের একঠোঁট্টা ও এক ধরনের কুমিরের খিল অন্যতম। অন্যদিকে বিএফআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে মোট ৫৪ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন কিন্তু এই ৫৪ প্রজাতির সঙ্গে আইইউসিএনের রেকর্ডকৃত ৫৪ প্রজাতির মাছের অনেকগুলোরই মিল নেই। এছাড়া ১২০ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন আর চার প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যার মধ্যে পিলা শোল, পান রুই ও নান্দিনা অন্যতম। (এই গবেষণায় নান্দিনা মাছের নাম অন্তর্ভুক্তি অবাক করা বিষয় কারণ এবছরের এপ্রিলে রাবি ফিশারীজ বিভাগের ছাত্র রোকনুজ্জামান নয়ন আত্রাই নদী থেকে আহরনকৃত চারটি নান্দিনা মাছের ছবি তুলে এনেছে যা নান্দিনা মাছের বিলুপ্তি না হওয়ারই প্রমাণ।)

পাঠকে এতো গেল সারা দেশের সার্বিক চিত্র, এবার আসুন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিশারীজ হটস্পটে মৎস্য প্রজাতির সার্বিক অবস্থা কি তা জানার চেষ্টা করি।

হাওরাঞ্চল:
দৈনিক জনকণ্ঠ (২০১১) এর তথ্যানুসারে বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সুনামগঞ্জ কমিউনিটি ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ‘ফিশারিজ রিসার্চ সাপোর্ট প্রজেক্ট’ মাধ্যমে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টার কর্তৃক সুনামগঞ্জ জেলার ৭টি হাওর উপজেলার ৩০ বিলে দুই বছরব্যাপী করা গবেষণার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এখানকার হাওরগুলোতে ১২২ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের রিপোর্টে ঘোড়ামুখ, দেশী সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাউরা, শিলন, দেশী পাঙ্গাস, বাচা, বাঘা আইড়কে মহা বিপন্ন বলে উল্লেখ করা হলেও আগুন চোখা, বেতাঙ্গী, পাঙ্গা, গুতুম, কানোচ, দল মাগুর, হাঁড় কাটা, কোটা কুমিরের খিল নামক বিরল মাছের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদ:
ফজলে এলাহী (২০১১) অনুসারে কাপ্তাই হ্রদে ১৯৬৫-৬৬ সালে যেখানে হ্রদে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, মহাশোলের মত বড় মাছ ছিল মোট মাছের ৮১.৩৫ শতাংশ আর চাপিলা, কাচকি, মলার মতো ছোট মাছ ছিল ৩ শতাংশ সেখানে এখন বড় মাছ কমতে কমতে ৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে আর ছোট মাছ বাড়তে বাড়তে হয়েছে নব্বই শতাংশে। বর্তমানে এই হ্রদে মোট ৭২ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ পাওয়া গেছে এবং আহরিত মাছের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩৬। অথচ মাত্র ২ বছর আগেও মোট প্রজাতির সংখ্যা ছিল ৭৬ এবং আহরিত মাছের প্রজাতির সংখ্যা ছিল ৪২।

চলন বিল:
Hossain et. all. (2009) অনুসারে ২০০৫-০৬ সালে মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় চলন বিলে ১১৪ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় যার মধ্যে ১৯ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে আর সে বছর চলন বিলে মোট মাছের উৎপাদন ছিল ১২,২১৭ টন যা ১৯৮২ সালে মৎস্য উৎপাদনের অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে Galib and Samad (2009) অনুসারে চলন বিলে রেকর্ডকৃত মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৮১ যার মধ্যে ৯ প্রজাতির বিদেশী মাছও রয়েছে।

পদ্মা নদী:
Hossain and Haque (2005) অনুসারে পদ্মা নদীতে (রাজশাহীর গোদাগারী থেকে চারঘাট পর্যন্ত) ১৩৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে যার মধ্যে ৫০ প্রজাতির মাছ দুর্লভ প্রকৃতির। অন্যদিকে Islam and Hossain (1983) অনুসারে এ নদীতে (রাজশাহী শহর সংলগ্ন এলাকায়) মাছের প্রজাতির সংখ্যা ১১০। তবে Bhuiyan et. all. (2008) অনুসারে পদ্মা নদীতে (রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা সংলগ্ন এলাকায়) মোট মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ৭২ যার মধ্যে ১ প্রজাতির কন্ডিকথিস রয়েছে অবশিষ্ট মাছ অস্থিবিশিষ্ট বা অস্টিকথিস গ্রুপের।

সুন্দরবন:
কৃষক কমিউনিটি (১৪১৮ বঙ্গাব্ধ) অনুসারে সুন্দরবনের নদীনালা আর খালে পাওয়া যায় প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। এদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন স্তরে বসবাসকারী মাছ রয়েছে তেমনই নিজেদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে সুন্দরবনকে ব্যবহার করে এমন মাছও রয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের তালিকায় রয়েছে ২০ প্রজাতির চিংড়ি, ৮ প্রজাতির লবস্টার, ৭ প্রজাতির কাকরা, কয়েক প্রজাতির ঝিনুক ও শামুক। চিংড়ির মধ্যে বাগদা ও হরিণা চিংড়ি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু Gopal and Chauhan (2006) অনুসারে সুন্দরবনে বর্তমানে মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ২৫০। সাম্প্রতিক সময়ে বিষ দিয়ে চিংড়ি শিকারের ঘটনা বাড়ায় তা মাছের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এছাড়াও স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন সুন্দরবনের নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অবশ্য Rahman and Akhter (2009) অনুসারে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন নদী ও মোহনা অঞ্চলের স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মোট মৎস্য প্রজাতির সংখ্যা ২৮১টি যার মধ্যে একসময় হুমকির মুখে থাকা ৩৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে যাদের এখন আর দেখা যায় না এবং ৮৭ প্রজাতির মাছ বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।

বঙ্গোপসাগর:
বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত ফিশারীজ হটস্পট হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। আগেই বলা হয়েছে IUCN Bangladesh (2000) এর তথ্যানুসারে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় প্রাপ্ত মাছের প্রজাতির মোট সংখ্যা ৪৪২টি। অন্যদিকে Hussain (1969) পাঁচ বছর মাঠ পর্যায়ে গবেষণার পর বলেন যে বঙ্গোপসাগরে মেট ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে যদিও পরবর্তীতে দেখা যায় তার তালিকাকৃত মাছে সিনোনেম হিসেবে একই প্রজাতির নাম একাধিক বার এসেছে। Asiatic Society of Bangladesh (2009) এর এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা এন্ড ফোনা অব বাংলাদেশে (ভলিউম ২৪: সামুদ্রিক মাছ) ৪৫০ প্রজাতির বেশি মাছ ও ৩৬ প্রজাতির চিংড়ির উল্লেখ করা হলেও বইটিতে মোট ৪০২ প্রজাতির মাছ তালিকাভুক্ত ও বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিদেশী মাছ:
Asiatic Society of Bangladesh (2007) এর এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা এন্ড ফোনা অব বাংলাদেশ (ভলিউম ২৩: স্বাদুপানির মাছ) শীর্ষক পুস্তকে দেশের মধ্যে অনুপ্রবেশ করা বিদেশি মাছের প্রজাতির সংখ্যা ১৬ টি বলা হলেও (শরীফুল ইসলাম, ২০০৯) অনুসারে এই সংখ্যা ২৪। তবে এটি আসলে কেবলমাত্র চাষকৃত বিদেশী মাছের একটি চিত্র। বাংলাদেশে আগত এ্যাকুয়ারিমের বাহারি মাছের সংখ্যা একেবারে কম নয়। Galib and Mohsin (2011) তথ্যানুসারে বাংলাদেশে বিদেশী এ্যাকুয়ারিমের বাহারি মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৭১টি। গেল বছর এই তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এই সংখ্যা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারণে প্রতি বছরই বাড়তে থাকে।

বিদেশী মাছ (পুকুরে চাষকৃত এবং এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ) নিয়ে আমাদের সুখকর অভিজ্ঞতার যেমন অভাব নেই তেমনই কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও কম নয়। সুখকর অভিজ্ঞতা হচ্ছে চাষকৃত মৎস্য উৎপাদনে বিদেশী মাছের অবদান দিনদিন বাড়ছে, চাষিরা লাভবান হচ্ছে। কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের জলজ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন অনেক মাছ (আফ্রিকান মাগুর, পিরানহা, থাই পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, কার্ফু, থাই সরপুঁটি, সাকার মাউথ ক্যাটফিশ) এর মধ্যেই দেশের বেশিরভাগ এলাকার উন্মুক্ত জলাশয়ে চলে এসেছে। পিরানহা এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে দেশে আসলেও উৎসাহী হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ও চাষির হাত ধরে প্রথমে পুকুরে এবং পরে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সাকার মাউথ ক্যাটফিশ কোথাও চাষ করা না হলেও এ্যকুয়ারিয়াম থেকে সেগুলো প্রথমে ঢাকার গুলশান লেক ও পরবর্তীতে চলে এসেছে প্রায় সারা দেশে ডোবা ও পুকুরের মতো বদ্ধ এবং বিল ও নদীর মতো উন্মুক্ত জলাশয়ে। তাই দেশে নিয়ে আসা মাছগুলো তা এ্যাকুয়ারিয়ামের হোক আর চাষের পুকুরের জন্যই হোক বন্যা প্রবন এই দেশে তা যে সহজেই উন্মুক্ত জলাশয়ে চলে আসতে পারে তা সহজেই অনুমান করা গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি ফলে যা হবার তাই হয়েছে। কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন নদী, চলন বিলসহ অন্যান্য বিল, হাওড় এলাকা, কাপ্তাই হ্রদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফিশারীজ জলাভূমি থেকে আফ্রিকান মাগুর, পিরানহা, থাই পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, কার্ফু, থাই সরপুঁটি, সাকার মাউথ ক্যাটফিশ ধরা পড়ার খবর পত্রপত্রিকার পাতায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

আজ বিল, হ্রদ, হাওড়, প্লবনভূমি ও নদীর মত উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশী মাছের প্রজাতির সংখ্যা কমতে থাকলেও বিদেশী প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছে বিপদজনক ভাবে যা দেশের মৎস্য বৈচিত্র্যের জন্য মোটেও কোন আশাপ্রদ খবর নয়। সময় নষ্ট না করে এখনই প্রয়োজন বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্য হ্রাসের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্য হ্রাসের প্রেক্ষিতে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং আরও যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

পুনশ্চ:
তিন পর্বের এ লেখায় আগামী পর্বে থাকবে- বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ
এবং তার পরে পর্বে থাকবে- বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্য রক্ষার উপায়

তথ্যসূত্র:
বাংলা:

 

ইংরেজি:

  • Asiatic Society of Bangladesh, 2007. Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol 23: Freshwater Fishes, Asiatic Society of Bangladesh. xxxi+300 pp.
  • Asiatic Society of Bangladesh, 2009. Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol 24: Marine Fishes, Asiatic Society of Bangladesh. xxxx+485 pp.
  • Bhuiyan, S. S.; Joadder, M. A. R and Bhuiyan, A.S.; 2008. Occurrence of fishes and non-fin fishes of the river Padma near Rajshahi, Bangladesh. Univ. j. zool. Rajshahi Univ. Vol.27, pages.99-100
  • Craig, J. F.; Halls, A. S.; Barr J. J. F. and Bean, C. W.; 2004. The Bangladesh floodplain fisheries, Fisheries Research, Vol. 66, Issues 2-3, pages 271-286.
  • Galib, S. M. and Samad, M. A.; 2009. Harvesting, traditional preservation and marketing pf fishes of Chalan beel, Bangladesh. Aquaculture Asia, XIV(1).
  • Galib, SM and Mohsin, ABM.; 2011. Cultured and Ornamental Exotic Fishes of Bangladesh: Past and Present. LAP LAMBERT Academic Publishing. 176 pp.
  • Gopal, B. and Chauhan, M.; 2006, Biodiversity and its conservation in the Sundarban Mangrove Ecosystem, Aquat. Sci. Vol. 68, pages 338–354
  • Hossain, M. A. and Haque, M. A.; 2005. Fish Species Composition in the River Padma Near Rajshahi. J. Life Earth Science, Vol. 1(1): pages 35-42
  • Hossain, Mostafa A. R.; Nahiduzzaman, M.; Sayeed, M. Abu Azim,; M. Ekram; Wahab, M. Abdul; Olin, Paul G.; 2009. The Chalan beel in Bangladesh: Habitat and biodiversity degradation, and implications for future management. Journal of Lakes & Reservoirs: Research & Management. Volume 14, Issue 1, pages 3–19
  • Hussain, M.M.; 1969. Marain and estuarine fishes of the north-east part of Bay of Bengal. Sci. Res. Vol. 7 (1), pages 26-55
  • Islam, M.S. and Hossain, M.A.; 1983. An account of the fishes of the Padma river near Rajshahi. Raj. Fish. Bull, 1(2):1-31.
  • IUCN Bangladesh, 2000. Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
  • Rahman, A. K. A.;, 2005. Freshwater Fishes of Bangladesh. 2nd Edition. Zoological Society of Bangladesh,. Dhaka. xviii + 394p.
  • Rahman, MK and Akhter, JN; 2009. Ichthyodiversity in the Rivers And Estuaries of Khulna Division, Bangladesh. J. Taxon. Biodiv. Res. Vol. 3, pages 19 – 27.

Visited 2,396 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাংলাদেশের মৎস্য বৈচিত্র্য: অতীত ও বর্তমান

Visitors' Opinion

এ বি এম মহসিন

প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত ...

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.