শ্রেণীতাত্ত্বিক অবস্থান (Systematic position)
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Actinopterygii (Ray-finned fishes)
বর্গ: Cypriniformes (Carps)
পরিবার:Cyprinidae (Minnows or carps)
উপপরিবার: Rasborinae (= Danioninae)
গণ: Esomus
প্রজাতি: E. danricus
নামের শব্দতত্ত্ব (Etymology)
ল্যাটিন শব্দ e অর্থ বাহিরে (out of) এবং প্রাচীন গ্রিক শব্দ soma অর্থাৎ দেহ (body) থেকে Esomus শব্দটি এসেছে। সম্ভবত উপরের চোয়ালে উপস্থিত দীর্ঘ স্পর্শী থেকে এমন নামকরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে danricus শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে মাছটির স্থানীয় নাম “দারকিনা” থেকে (Seriouslyfish, 2015)।
সমনাম (Synonyms)
Cyprinus jogia Hamilton, 1822
Cyprinus sutiha Hamilton, 1822
Esomus danrica grahami (Chaudhuri, 1912)
Esomus danricus jabalpurensis Rao & Sharma, 1972
Esomus jogia (Hamilton, 1822)
Esomus lineatus Ahl, 1923
Esomus sutiha (Hamilton, 1822)
Esomus vittatus Swainson, 1839
Leuciscus vittatus Swainson, 1839
Nuria danrica (Hamilton, 1822)
Nuria danrica grahami (Chaudhuri, 1912)
Nuria thermophilos (McClelland, 1839)
Perilampus macrouru McClelland, 1839
Perilampus macrourus McClelland, 1839
Perilampus recurvirostris McClelland, 1839
Perilampus thermophilus McClelland, 1839
সাধারণনাম (Common name)
বাংলা: দারকিনা, দারকি, দারক্যা, দাড়কিনা, ডানকিনা, দারকা ।
English: Flying barb
India: Darikana (আসাম); Dadhikha, Danrika and Jongia (পশ্চিমবঙ্গ); Kurriahdehwiee, Soomarah and Dendu (বিহার এবং উত্তর প্রদেশ); Chiddullu and Chilwa (পাঞ্জাব); Jhai (উডিষ্যা); Astapakke (অন্ধ্র প্রদেশ); Messaparavai, Ovari-kendai and Purrovoo (তামিলনাড়ু) and Meesa-parava (কেরালা) (Talwar and Jhingran, 1991)।
ভৌগলিক বিস্তৃতি (Geographical Distribution)
বাংলাদেশ, পাকিস্তান (পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশ ),ভারত, নেপাল এবং সম্ভবত শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে (Talwar and Jhingran, 1991)। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মাছ (Devi and Boguskaya, 2009)। উল্লেখিত দেশগুলো ছাড়াও আফগানিস্তানে এই মাছ প্রাপ্তির তথ্য রয়েছে (Fishbase, 2015)।
সারা বাংলাদেশেই এই মাছ পাওয়া যায় তবে যশোরের বুকভরা বাঁওড় (Mohsin et al., 2009), চলন বিল (Galib et al., 2009 and 2010) ও রাজশাহীর পদ্মা নদী (Samad et al., 2010) থেকে এই মাছ প্রাপ্তির নথিভুক্ত তথ্য রয়েছে।
সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation status)
IUCN Bangladesh (2000) অনুসারে বাংলাদেশে এই মাছের সংরক্ষণ বিষয়ক তথ্য অপর্যাপ্ত (Data deficient) ।
এই মাছের বৈশ্বিক সংরক্ষণ অবস্থা মানদণ্ড 3.1 অনুসারে Least Concern (LC) অর্থাৎ প্রকৃতিতে বিস্তৃত পরিসরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এবং জনতার ধারা (Population Trend) স্থিতিশীল (Stable) (Devi and Boguskaya, 2009) ।
বাহ্যিক দৈহিক গঠন (External Morphology)
লম্বা দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা। মুখের হা ছোট এবং তির্যকভাবে উর্ধ্বাভিমুখী। নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে লম্বা ও মাংসল। কোন কোন সদস্যের গ্রীবার সন্ধির উপরের অংশ সুস্পষ্টভাবে অবতল (Rahman and Chowdhury, 2009)। স্পর্শী দুই জোড়া যার মধ্যে এক জোড়া উপরের চোয়ালে অবস্থিত। উপরের চোয়ালে অবস্থিতি স্পর্শী দৈর্ঘ্যে এত বড় যে দেহের মাঝ বরাবর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বক্ষপাখনা লম্বা ও শ্রোণীপাখনার উপর পর্যন্ত বিস্তৃত যা ক্রমশ সরু হয়ে শেষ প্রান্ত তীক্ষ্ন রূপ ধারণ করে। পায়ুপাখনা পৃষ্ঠপাখনার পশ্চাৎ বরাবর অংঙ্কীয় প্রান্তে উৎপত্তি লাভ করে। শ্রোণীপাখনা পুচ্ছপাখনার গোড়া ও তুণ্ডের শীর্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং এ পাখনার বাইরের দিকের পাখনারশ্মি লম্বা।
পার্শ্বরেখা অসম্পূর্ণ (৪-৫টি আঁইশ পর্যন্ত বিস্তৃত) বা অনুপস্থিত (Rahman and Chowdhury, 2009)। অনুদৈর্ঘ্য বরাবর Rahman (1989 and 2005) অনুসারে ২৯-৩২টি, Talwar and Jhingran (1991) অনুসারে ২৭-৩০টি আঁইশ উপস্থিত। আদর্শ দৈর্ঘ্য শরীরের গভীরতার ৩.৩-৪.৮ গুণ এবং মাথার ৩.৫-৫.০ গুণ (Talwar and Jhingran, 1991) ।
দেহের বর্ণ জলপাই-সবুজ থেকে ধূসর-সবুজ হয় । একটি প্রশস্ত কালো ডোরা দেহের উভয় পাশে চোখ পরবর্তী স্থান থেকে পুচ্ছপাখনার গোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত । তরুণ বয়সের সদস্যদের এই ডোরাটির উপর ও নিচ পাশে সোনালী বর্ণের সরু ডোরা দেখতে পাওয়া যায় (Talwar and Jhingran, 1991)। এদের শ্রোণী পাখনা লাল বর্ণের এবং অন্যান্য পাখনাগুলো বাদামী থেকে কমলা বর্ণের হয়ে থাকে।
ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই প্রজাতির ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৫০ পাওয়া গেছে (Rahman and Chowdhury, 2009)।
পাখনা সূত্র (Fin formula)
D. 8 (2/6); P1. 11-13 (1/10-12); P2. 7 (1/6); A. 7-8 (2-3/5) (Rahman, 1989 and 2005)
D ii 6; A iii 5; P i 14-15; V i 6-7 (Talwar and Jhingran, 1991)
সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (Maximum length)
Rahman, (1989 and 2005) অনুসারে ৬ সেমি এবং Talwar and Jhingran,( 1991) অনুসারে ১২.৫ সেমি হয়ে থাকে । মোট দৈর্ঘ্যে ১৩ সেমি (EOL, 2015)। বাংলাদেশে এই প্রজাতির মাছের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬ সেমি পাওয়া গেলেও এদের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১০ সেমির উপরে হয় বলে জানা যায় (Rahman and Chowdhury, 2009)।
আবাস্থল (Habitat)
পুকুর ও আগাছাময় নর্দমায় এরা বাস করে (Talwar and Jhingran, 1991) । প্রবহমান স্রোতে , পুকুর, নর্দমা, বিল এবং প্লাবিত ক্ষেত্রে এদের খুঁজে পাওয়া যায় ;বর্ষার সময় এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । (Rahman, 1989 and 2005) ।
জলাশয়ের তলদেশের নিকটবর্তী স্তরে বাস করে। সাধারণত পুকুর, দিঘী, ডোবা ও খালে পাওয়া যায়। এছাড়া ঈষৎ লোনা জলের (brackish waters) জলাশয়েও এদের দেখা মেলে (Devi and Boguskaya, 2009) ।
স্বাদু ও ঈষৎ লোনাজলের এই মাছের অনুকূল পিএইচ ৮, তাপমাত্রা ২২°C যাদেরকে পুকুর, ডোবা ও সেচের জন্য নির্মিত খালে দেখতে পাওয়া যায় (Fishbase, 2015)।
এই মাছ বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে বাস করে তবে অগভীরর, স্থির ও ধীর স্রোত বিশিষ্ট জলাভূমি যেমন বর্ষা বা বন্যায় প্লাবিত ধানক্ষেত ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সমৃদ্ধ অস্থায়ী জলাশয়ে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও কর্দমাক্ত ডোবা, নালা, ছোট ঝর্ণাধারা ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া গেলেও বড় বড় নদীতে এদের দেখা মেলে না (Seriouslyfish, 2015)।
খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস (Food and feeding habit)
এরা জলাশয়ের তলদেশের নিকটবর্তী স্থানে বসবাসকারী মাছ হলেও জলাশয়ের উপরের স্তরে বসবাসকারী পতঙ্গ (insects) খেতে পছন্দ করে (Devi and Boguskaya, 2009)। এই মাছ জলাশয়ের তলদেশের কাছাকাছি থাকতে যেমন পছন্দ করে তেমনই উপরিতলেও বাস করে। এরা জলাশয়ের উপরের স্তরে সাঁতার কাটে ও পতঙ্গ শিকার করে খেয়ে থাকে (EOL, 2015)।
বাস্তুতাত্ত্বিক ভূমিকা (Ecological Role)
অন্যান্য শিকারি মাছ যেমন বোয়াল, সর্প-মাথা ইত্যাদি মাছ শিকারের জন্য এই প্রজাতির মাছের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও এরা জলজ পরিবেশের ব্লুম ও পতঙ্গের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে জলাশয়ের গলিত ও পচা দ্রব্যাদি খেয়ে পানি বিশোধনে ভূমিকা রাখে (Rahman and Chowdhury, 2009)।
প্রজনন (Breeding)
এদের প্রজনন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। এ্যাকুয়ারিয়ামে এদের প্রজনন সম্পর্কিত কোন তথ্য নেই। স্ত্রী ও পুরুষের মধ্য বাহ্যিক পার্থক্য নেই বললেই চলে তবে একই বয়সের স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে সামান্য বড় হয়ে থাকে (Seriouslyfish, 2015)।
এ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবস্থাপনা (Aquarium Management)
এই মাছের জন্য আদর্শ এ্যাকুয়ারিয়ামের আকার কমপক্ষে ১২০x30 সেমি। তাপমাত্রা ২০-২৬°C, পিএইচ ৬-৮ এবং হার্ডনেস ১৮-২১৫ পিপিএম (Seriouslyfish, 2015)।
প্রকৃতিতে এরা স্থলজ ও জলজ অমেরুদণ্ডী বিশেষত পতঙ্গ ও এর শূককীট খেয়ে থাকে। তবে এ্যাকুয়ারিয়ামে সকল প্রকাশের প্যাকেট খবারই খায়। এছাড়াও জীবন্ত ডাফনিয়া (Daphnia), আর্টেমিয়া (Artemia), ব্লাডওয়ার্ম (bloodworm) ইত্যাদি খেয়ে থাকে (Seriouslyfish, 2015)।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic importance)
একক প্রজাতি হিসেবে এই মাছের উৎপাদন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এই মাছ বাংলাদেশের ছোট দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে একটি জনপ্রিয় খাবারের মাছ। সাধারণত নিম্ন শ্রেণির ক্রেতারা এদের খেয়ে থাকে (Samad et al., 2010)।
বাংলাদেশে খাবারের মাছ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই প্রজাতির মাছ বাহারি মাছ হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই দেশে বাহারি মাছ হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও বিদেশে বাহারি মাছ হিসেবে রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র (References)
- Ahl E (1923) Eine Revision der Cypriniden-Gattung Esomus. In: Ichthyologische Mitteilungen, IV. Mitteilungen aus dem Zoologischen Museum in Berlin 11 (1): 38-43.
- Chaudhuri BL (1912) XXXV. Descriptions of some new species of freshwater fishes from north India. Records of the Indian Museum (Calcutta) v. 7 (pt 5): 437-444, Pls. 38-41.
- Devi R and Boguskaya N (2009) Esomus danrica. The IUCN Red List of Threatened Species. Version 2014.3. Downloaded on 29 March 2015 and form http://www.iucnredlist.org/details/188105/0
- EOL (2015) Esomus danricus, Flying Barb. Downloaded on 29 March 2015 and from http://eol.org/pages/216775/overview
- Fishbase (2015) Species summary : Esomus danricus (Hamilton, 1822), Flying barb. Downloaded on 29 March 2015 and from http://www.fishbase.org/summary/5150
- Galib SM, Samad MA, Hossain MA, Mohsin ABM and Haque SMM (2010) Small Indigenous Species of Fishes (SISF) in Chalan Beel with Reference to their Harvesting and Marketing, Bangladesh Journal of Progressive Science and Technology, 8(2): 251-254.
- Galib SM, Samad MA, Mohsin ABM, Flowra FA and Alam MT (2009) Present Status of Fishes in the Chalan Beel- the Largest Beel (Wetland) of Bangladesh, Int. J. Ani. Fish. Sci. 2(3):214-218.
- Hamilton F (1822) An account of the fishes found in the river Ganges and its branches. Edinburgh & London. An account of the fishes found in the river Ganges and its branches.: i-vii + 1-405, Pls. 1-39.
- IUCN Bangladesh (2000) Red book of threatened fishes of Bangladesh, IUCN- The world conservation union. xii+116 pp.
- McClelland J (1839) Indian Cyprinidae. Asiatic Researches 19(2): 217-471, Pls. 37-61.
- Mohsin ABM, Hasan MM and Galib SM (2009) Fish Diversity of Community Based Fisheries Managed Oxbow Lake (Bookbhara Baor) in Jessore, Bangladesh, J. Sci. Foundation 7(1): 121-125.
- Rahman AKA (1989) Freshwater Fishes of Bangladesh, 1st edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 82-83.
- Rahman AKA (2005) Freshwater Fishes of Bangladesh, 2nd edition, Zoological Society of Bangladesh, Department of Zoology, University of Dhaka, Dhaka-1000, pp. 99-100.
- Rahman AKA and Chowdhury GW (2009) Esomus danricus. In: Ahmed, Z.U., Ahmed, A.T.A., Kabir, S.M.H., Ahmed, M., Begum, Z.N.T., Hasan, M.A., and Khondker, M. (eds.) Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh, Vol. 23. Freshwater Fishes (In Bengali). Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka. pp. 72-73.
- Rao VV and Sharma HS (1972) Esomus danricus jabalpurensis subsp. nov. from Pariat River near Jabalpur. Journal of the Bombay Natural History Society 69(2): 434-436.
- Samad MA, Asaduzzaman M, Galib SM, Kamal MM and Haque MR (2010) Availability and Consumer Preference of Small Indigenous Species (SIS) of the River Padma at Rajshahi, Bangladesh, International Journal of BioResearch 1(5): 27-31.
- Seriouslyfish (2015) Species Profile: Esomus danrica (HAMILTON, 1822), Flying Barb. Downloaded on 29 March 2015 and from http://www.seriouslyfish.com/species/esomus-danrica/
- Swainson W (1839) The natural history and classification of fishes, amphibians, & reptiles, or monocardian animals. Spottiswoode & Co., London. Nat. Hist. & Class. i-vi + 1-448.
Talwar PK and Jhingran AG (1991) Inland Fishes of India and Adjacent Countries, Vol. 1, Oxford & IBH Publishing Co. Pvt. Ltd. New Delhi-Calcutta, pp. 377-378.
English Feature:
Visited 3,490 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?