বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকার মাটি লাল। এই এলাকাগুলো বরেন্দ্র অঞ্চল নামে পরিচিত। চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া ও অন্যান্য কিছু জেলার এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এসকল অঞ্চলের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম এবং জলাশয়ের পানি অতিরিক্ত ঘোলা হয়ে থাকে। বরেন্দ্র অঞ্চলে মাছ চাষের প্রধান সমস্যাসমূহ হলো-

  • পানি অতিরিক্ত ঘোলা হবার কারনে সূর্যালোক প্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পানিতে প্রাথমিক উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  • পানির ক্ষারত্ব কম হওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জলজ জীবের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়।
  • অতিরিক্ত ঘোলাত্ব মাছের শ্বসনসহ অন্যান্য জৈবিক কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্থ করে।

উপরোক্ত সমস্যাসমূহ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বরেন্দ্র এলাকায় রুইজাতীয় মাছের মিশ্রচাষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নিম্নে ধারাবাহিকভাবে দেয়া হল।

মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা:
বাৎসরিক বা মৌসুমী পুকুর নির্বাচন করতে হবে যেখানে ৫-৬ ফুট পানি থাকবে। পুকুরের আয়তন ২০-৩৫ শতাংশ হলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। পূর্ব হতেই পোনা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করতে হবে যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ে পোনা মজুদ যায়। অন্যান্য উপকরণ যেমন, সার, চুন, সম্পূরক খাবার, ছাই ইত্যাদির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। লালমাটি এলাকায় পুকুরের পাড় এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে বৃষ্টি বা অন্য কোন উৎস্য হতে পানি পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে।

জলজ আগাছা অপসারণ, অবাঞ্ছিত প্রাণী ও রাক্ষুসে মাছ জাল টেনে অপসারণ করতে হবে। এছাড়া মহুয়ার খৈল ২০০-২৫০ পি.পি.এম. হারে অর্থাৎ প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার পানির জন্য ২.৫-৩.৫ কেজি হারে খৈল ব্যবহার করতে হবে।

ঘোলাত্ব দূরীকরণে প্রতি শতাংশে ১০-৩০ কেজি ছাই, ৩ কেজি জিপসাম এবং ৩ কেজি চুন একত্রে পানিতে মিশিয়ে সমভাবে পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।

৫-৭ দিন পর প্রতি শতাংশে ১০ কেজি পচা গোবর, ইউরিয়া ২০০-৫০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০-২৫০ গ্রাম, খৈল ৫০০ গ্রাম হারে একত্রে পানিতে মিশিয়ে ২৪ ঘন্টা পর পুকুরের পানির উপর সমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।

মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা:
সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর ৫-৭ ইঞ্চি আকারের অথবা ২০-৩০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছের পোনা শতাংশে ৪০-৫০টি মজুদ করতে হবে। মজুদের ক্ষেত্রে উপরের স্তরের ৪০%, মধ্য স্তরের ২৫%; নিচের স্তরের ২৫% এবং সকল স্তরের ১০% মাছ মজুদ করা যেতে পারে।

মজুদপরবর্তী ব্যবস্থাপনা:
মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৩-৫% হারে দৈনিক সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে মিহি চালের কুড়া ও সরিষার খৈল ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে বল বা পিলেট আকারে ফিডিং ট্রে-তে সরবরাহ করা উচিত। এছাড়া তৃণভোজী মাছের জন্য খুদিপানা, কলাপাতা বা কচি ঘাস বাঁশের ভাসমান ফ্রেমে সরবরাহ করা যেতে পারে।

প্রতিদিন ২০০ গ্রাম গোবর ও ১০ গ্রাম টিএসপি একত্রে পানিতে গুলিয়ে ২৪ ঘন্টা পর প্রয়োগ করা উচিত।

যখন ঘোলাত্ব খুব বেশী হবে তখন ছাই ও চুন মিশিয়ে (শতাংশে ৬-৮ কেজি ছাই ও ১.৫-২.০ কেজি চুন) প্রয়োগ করতে হবে।

মাসে কমপক্ষে ১ বার জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে হবে।

যদি আংশিক আহরণ করা হয় তাহলে আহরণকৃত মাছের মোট সংখ্যার চেয়ে ৫-১০% বেশী মাছ পুনরায় মজুদ করতে হবে।


Visited 1,137 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বরেন্দ্র অঞ্চলে লাল মাটির পুকুরে রুইজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ

Visitors' Opinion

Tagged on:                         

মোঃ তানজিমুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.