বাংলাদেশের স্বাদু পানির মাছ এক থুইট্টা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কাপ্তাই অঞ্চলের কর্ণফুলী নদীসহ এ মাছটি এক সময় দেশের বিভিন্ন নদী-নালা, হাওর-বাওর, খাল-বিলে পাওয়া গেলেও এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।
হেমিরামফিডি (Hemiramphidae) [পূর্ব নাম বেলোনিডি (Belonidae)] গোত্রের এ মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Hyporhamphus limbatus এবং ইংরেজি নাম Congaturi halfbeak ।
এ মাছের নিচের চোয়াল খুবই লম্বা কিন্তু উপরের চোয়াল ছোট ও ত্রিকোণাকার, অনেকটা ভাঙ্গা বলে মনে হয়। এ কারণে একে এক থুইট্টা বলা হয়।
দাঁত অতি ক্ষুদ্রাকার। দেহ গোলাকার এবং পৃষ্ঠদেশ প্রায় সোজা। মাছটির মোট দৈর্ঘ্য মাথার দৈর্ঘ্যের ৩.২-৩.৩ গুণ। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৮.৫ সেমি। এ মাছটির চোখ গোলাকার এবং বেশ স্পষ্ট। দেহ চকচকে রূপালী বা ঈষৎ কালচে রং এর হয়ে থাকে এবং দেহ পার্শ্বে একটি পরিষ্কার সাদা বা লালচে ডোরা দাগ বক্ষ পাখনা থেকে পুচ্ছ পাখনা পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে থাকে। পায়ু পাখনা পৃষ্ঠ পাখনা অপেক্ষা ছোট এবং পুচ্ছ পাখনা সামান্য দ্বিধাবিভক্ত।
জলজ আগাছা সমৃদ্ধ কর্দমাক্ত আবাসস্থল এদের পছন্দ।
প্রবাহমান পানির উপরের স্তরে বসবাসকারী এ মাছটি ভেসাল জাল, ঠেলা জাল, ধর্ম জাল, খেপলা জাল ইত্যাদি দিয়ে ধরা হয়।
লেখকের [মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সি.ডব্লিউ.বি.এম প্রকল্পের মৎস্য জীব বৈচিত্র্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী] মতে ফসলের জমিতে অতি মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার এবং নদী-নালা, খাল-বিলের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় এ মাছটি আজ আমরা হারাতে বসেছি। তবে হাওর অঞ্চলে এখনো এদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাউস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, চীন এবং ফিলিপাইনে এ মাছ পাওয়া যায়।
প্রজাতিটি রক্ষায় জলজ পরিবেশ সংরক্ষণের কোন বিকল্প নেই।
পুনশ্চ:
- মাছের ছবিটি হাকালুকি হাওরের ঘাটের বাজার (মৌলভীবাজারের কুলাউড়া) এলাকা থেকে তোলা।
- লেখাটি পূর্বে দৈনিক যুগান্তর (২৫ আগষ্ট ২০১০) এবং দৈনিক সবুজ সিলেট এ প্রকাশিত হয়েছে।
Visited 1,100 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?