শ্রিম্প টয়লেট:
বাগদা বা ভেনামি চিংড়ি চাষে চিংড়ির মল, বর্জ্য ও আবর্জনা প্রভৃতি দূরীকরণের লক্ষে ব্যবহৃত একধরণের কাঠামোগত পদ্ধতিই হচ্ছে শ্রিম্প টয়লেট।
প্রয়োজনীয়তা:
চিংড়ি চাষে জলাশয়ের তলদেশে চিংড়ির মল, বর্জ্য, নানাবিধ আবর্জনা, অতিরিক্ত খাদ্য ইত্যাদি জমা হয়ে এমোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি করে যা চাষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে। এর ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে ও রোগ সংক্রমণের কারণ হয়ে দেখা দেয়। চিংড়ি টয়লেট বা চিংড়ি পিট স্থাপনের মাধ্যমে সহজেই এই পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
অবকাঠামো:
কেন্দ্রে ঢাল রেখে ১৬ মিটার ব্যাসের গোলাকৃতির কাঠামো যা চিংড়ি জলাশয়ের তলদেশে প্রায় মাঝ বরাবর তৈরি করা হয়। ফানেল আকৃতির এই কাঠামোর ঢালের কেন্দ্রে অর্থাৎ ফানেলের নিচের প্রান্তে প্রায় ২-৩ ফুট গভীর একটি গর্ত বা কুয়া স্থাপন করা হয়। ফানেলের মতো দেখতে কাঠামোটির মূল অংশ ইট, বালি, সিমেন্টের সাহায্যে নির্মাণ করা হয়। আর কেন্দ্রের গর্ত বা কুয়াটি ৬০ সেমি চওড়া ও ৬০ সেমি গভীর পিভিসি পাইপ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। বর্তমান বাজারদর অনুসারে ৩০-৩৫ হাজার রুপিতে (ভারতীয় টাকা) একটি অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। তবে কাঁচামাল ও শ্রমিকের মজুরির উপর নির্ভর করে এর নির্মাণ খরচ কম-বেশী হতে পারে।
ব্যবহারের ক্ষেত্র ও কার্যপদ্ধতি:
ঘেরে উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ বা ভেনামি চিংড়ির চাষ। অর্থাৎ, ঈষৎ লোনাজলের বাগদা ও ভেনামি চিংড়ির মনোকালচার বা পলিকালচারে এটি ব্যাবহার করা যায়। আধা-নিবিড় ও নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে এর বহুল ব্যবহার সম্ভব। ছোট/বড় ( ১০০০-৫০০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট) যে কোনো আয়তনের ঘেরে শ্রিম্প টয়লেট তৈরি করা যায়।
৪০০০ বর্গ মিটার আয়তনের বাগদা চিংড়ি ঘেরে ১৫মিটার ব্যাসের গোল আকারের একটি শ্রিম্প-টয়লেট তৈরি করা হয়। কেন্দ্রে ঢাল রেখে শঙ্কু আকৃতির সিমেন্টের এই গোল আকৃতির পিট চিংড়ি ফার্মের জলাশয়ের তলদেশে মাঝ বরাবর তৈরি করা হয় । ঘেরের মোট আয়তনের ৫-৭% জায়গা জুড়ে শ্রিম্প-টয়লেট তৈরি করা হয়। আর এই ঢালের মাঝখানে প্রায় ২-৩ ফুট গভীর একটি গর্ত করা হয়। অনেকটা ঠিক ফানেলের মতো দেখতে হয়। কেন্দ্রে ৬০ সেমি চওড়া ও ৬০ সেমি গভীর পাইপ বসানো হয়। চাষের সময় এরেটর বা বায়ুসঞ্চালক যন্ত্রের চালনার মাধ্যমে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ ঢাল বেয়ে মাঝের গর্ত দিয়ে নির্গত হয়। এই বর্জ্য প্রতি সপ্তাহে একটি সাইফনিং মোটর ব্যবহার করে অপসারণ করা হয়।
উপকারিতা:
- প্রত্যক্ষ উপকারিতা-
- চিংড়ি উৎপাদনের জন্য পুকুরের জল ও মাটি স্বাস্থ্যকর রাখে
- রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করে
- চিংড়ি স্ট্রেস মুক্ত হয়
- অ্যামোনিয়া গঠন খুব কম হয়
- নিয়ন্ত্রিত এফসিআর (FCR) পাওয়া যায়
- দূষণ মুক্ত হয়
- সুস্থ স্বাভাবিক ভেনামি বা বাগদা চিংড়ির উৎপাদন করা যায়
- পরোক্ষ উপকারিতা-
- অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি
- চিংড়ি উৎপাদন খরচ কম হয়
Visited 3,457 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?