ফাইটার ফিশ (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

ভূমিকা

মাছের গুরুত্ব বাঙালির জীবনে এত বেশি যে “মাছে ভাতে বাঙালি” আজ একটি বহুল প্রচলিত সত্য কথন হিসেবে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত।  তবে বর্তমানে মাছ শুধু খাওয়ার জন্য নয় বরং পোষার জন্যও ব্যবহার করা হয়। বড় বড় শহরে অভিজাত বাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবন ছাড়িয়ে একুরিয়ামে মাছ পোষার চিত্র আজ ছোট ছোট শহরেও দেখা মেলে। এখন বাহারি মাছ দেশের  মানুষের শখের চাহিদা মিটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে আয়ের পথ হিসেবে।

পরিচিতি

একুরিয়াম বলতে আমাদের দেশে সাধারণত পানি ভর্তি  কাচের তৈরি পাত্রকে বোঝায়, যেখানে মাছ রেখে পোষা হয়। সাধারণত একুরিয়ামে যে মাছগুলো রাখা হয় তারা চাষের মাছ থেকে আলাদা। এই মাছ অন্যান্য মাছের চাইতে রঙিন,  দৃষ্টিনন্দন ও অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির হয়। এদের বলা হয় বাহারি মাছ বা Ornamental Fish।  তবে একুরিয়ামে রেখে লালন-পালন করা হয় বলে এদেরকে একুরিয়ামের মাছও (Aquarium Fish) বলা হয়ে থাকে।

এদের বন্ধুত্বসুলভ মায়াবী আচরণ ও আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন রঙ ও বাহারের কারণে এদেরকে “জীবন্ত রত্নও (Live Jewel) বলা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই বাহারি মাছ লালন-পালনের যেমন প্রচলন রয়েছে তেমই পোষা প্রাণী হিসেবেও এর চাহিদা দেখতে পাওয়া যায়। এদের লালন-পালন ও চাষ যেমন লাভজনক তেমনি আমাদের মৎস্যখাতের জন্য সম্ভাবনার নতুন এক দ্বার বলে বিবেচিত হয়েছে। 

গোল্ড ফিশ (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

প্রকারভেদ

এরা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে ডিম পাড়ার উপর ভিত্তিকরে এদের প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা-

  1. অণ্ডজ বা ডিম পাড়া মাছ: এরা ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে উপযুক্ত পরিবেশে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। উদাহরণ: গোল্ডফিশ, এঞ্জেলফিশ, অস্কার, গোরামি ইত্যাদি ।
  2. জরায়ুজ বা শাবক জন্ম-দেয়া মাছ: এরা ডিম পাড়ার পরিবর্তে শাবক প্রসব করে থাকে অর্থাৎ সরাসরি বাচ্চা দেয়। এই ধরণের মাছের ক্ষেত্রে মায়ের দেহের অভ্যন্তরে ভ্রূণের পরিস্ফুট ঘটে এবং মা শাবক জন্ম দিয়ে থাকে। উদাহরণ: গাপ্পি, মলি, প্লাটি , সোর্ডটেইল ইত্যাদি।

ইতিহাস

যতদূর জানা যায়  ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দে চায়নার সম্রাট হং-গু একটি পোরসিন কোম্পানি খোলেন, যেখানে বিশাল বড় পোরসেলিনের টিউব বানানো হতো গোল্ডফিশ পালনের জন্য। এরপর সপ্তদশ শতাব্দীতে, গোল্ডফিশ পালন ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৫০ সালের দিকে, বাহারি মাছ পালন শখ হিসেবে আমেরিকাসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে বৃদ্ধি পায়। ১৮৫৩ সালে বিশ্বের প্রথম একুরিয়াম ইংল্যান্ডের মাটিতে তৈরি হয়। তখন থেকেই মানুষ বাহারি মাছ ও একুরিয়াম রাখার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ধীরে ধীরে গাপ্পি, মলি, প্লাটি, ফাইটার, জেব্রা, এঞ্জেল ইত্যাদি বাহারি মাছ একুয়ারিয়ামের মাছ হিসেবে  আবির্ভূত হতে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে গোরামি মাছ নিয়ে আসা হয় ১৯৫২ সালে। এরপর ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান থেকে গোল্ডফিশ আনা হয় । সে সময় এগুলোকে শুধু শখের বশেই পালন করা হতো।  সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য মাছের চাহিদা বাড়তে থাকে । বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাহারি মাছের আমদানি ও লালন-পালন শুরু হয় ১৯৮০ সালে । প্রথমে ঢাকার কাঁটাবনে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ বড়বড় শহরে বাহারি  মাছের ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয় । পরবর্তীতে এসব বাহারি মাছের চাষ ও পোনা উৎপাদনের কার্যক্রম প্রথমে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় এবং পরবর্তীতে তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পরে।

কিসিং গোরামি ফিশ (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

বর্তমান অবস্থা

বাহারি মাছ পালন প্রথমে শখ হিসেবে শুরু হলেও বর্তমানে এসে তা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। খুব সহজেই এখান থেকে টাকা আয় করা যায়। বাহারি মাছের চাহিদা আমাদের বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর,  যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য ছোটবড় শহরে বাহারি মাছের ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে আমাদের দেশের বাহারি মাছের সবচেয়ে বড় বাজার হল ঢাকার কাঁটাবন, যেখানে প্রায় শতাধিক প্রজাতির বাহারি মাছ এবং মাছ লালন-পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন একুয়ারিয়াম, মাছের খাবার, এরিয়েটর ইত্যাদি পাওয়া যায়।   

আমাদের দেশের অনেক মাছচাষি চাষের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।  এরই মধ্যে তারা বাহারি মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।  বর্তমানে দেশেই বাহারি মাছের পোনার উৎপাদন শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে এবং অনেকাংশেই সাশ্রয় হচ্ছে দেশীয় মূদ্রা।

আমাদের দেশে ৫ টি পর্বের, ১৮ টি গোত্রের, ৪১ টি গণের,  ৪৫ টি প্রজাতির (২ টি সংকর) অন্তর্ভুক্ত ৭৮ ভ্যারাইটির মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রজাতির মাছ থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসা। আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে বাহারি মাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেলেও ৬৫ শতাংশের বেশি বাহারি মাছ আমাদের দেশে আমদানি করা হয় এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে।

ব্লাক গোষ্ট নাইফ ফিশ (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহুল প্রচলিত বাহারি মাছের দামসহ একটি তালিকা নিচে দেয়া হল-

সাধারণ নাম (বাংলা)বৈজ্ঞানিক নামদাম (টাকা/জোড়া)
গোল্ড ফিশCarassius auratus৬০-৮০
কমেট Carassius auratus১০০-১২০
গাপ্পীPoePoecilia reticulata১০-৩০
জেব্রা  Danio rerio১০০-১৫০
লায়ন হেড Carassius auratus২,০০০
সোর্ডটেইল/তলোয়ার মাছ Xiphophorus hellerii৩০০-৩৫০
এঞ্জেল ফিশ Pterophyllum scalare১০০-১৫০
নিওন টেট্রাParacheirodon innesi১৫০-২০০
কই কার্প Cyprinus carpio২০০-২৫০
অস্কার ফিশ Astronotus ocellatus২০-৩০
পার্ল গোরামি Trichogaster leeri১০০
ফাইটার ফিশ Betta splendens৪০-৬০
টাইগার বার্বPuntius tetrazona৫০-১০০
প্লাটি ফিশ Xiphophorus maculatus৩০-৫০
সোনালী গোরামি Trichogaster trichopterus ১০০
নীল গোরামি Trichogaster trichopterus১০০
সিলভার এরোওনাOsteoglossum bicirrhosum৫০,০০০-৮০,০০০
মলি Poecilia sphenops৬০-৭০
ব্ল্যাক মলি Poecilia sphenops৫০
ডিসকাস Symphysodon discus১০০
ক্লাউন ফিশ/ জোকার মাছ Chromobotia macracanthus৩,০০০
সিলভার শার্কBalantiocheilos melanopterus৫০-১০০
বাটার ফিশPeprilus triacanthus৫০-৬০
প্যারোট ফিশ (সংকর)Cichlasoma citrinellum x Cichlasoma synspilum৩০-৪০
রংধনু শার্কEpalzeorhynchos frenatum৫০-১০০

উল্লেখিত বিদেশি মাছ ছাড়াও আমাদের বেশ কিছু দেশীয় মাছ একুরিয়ামে রেখে লালন-পালন করা প্রচলন শুরু হয়েছে এদের আকর্ষণীয় বর্ণ ও সহজলভ্যতার কারণে। এর মধ্যে রানি মাছ (Bengal loach), চাঁন্দা মাছ (Indian Glassy fish), গুতুম মাছ (Bengal loach), লাল চাঁন্দা মাছ (Highfin flassy perchlet), খলিশা মাছ (Gourami fish)  ইত্যাদি অন্যতম।  বর্তমানে আমাদের দেশীয় এই মাছগুলো বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে অনেক মৎস্যচাষী। আমাদের দেশীয় এই বাহারি মাছগুলোর চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে।

সিলভার এরোওনা ফিশ (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

আত্মকর্মসংস্থান

বাহারি মাছ চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন এরকম অনেক মৎস্যচাষী আমাদের চারপাশেই আছেন । তাদের মধ্যে অনেকেই আজ সফল বাহারি মাছ ব্যবসায়ী। পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকজন সফল বাহারি মাছচাষীর উদাহরণ নিচে দেয়া হল-

২০১৭ সালে আবু রাসেল রনি শখ করে বাহারি  মাছ পালন শুরু করেন । বর্তমানে মিরপুর-১০ এ  তার নিজস্ব একটি বাহারি মাছের হ্যাচারি আছে। তার হ্যাচারিতে গাপ্পিসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হয় । বর্তমানে তিনি অন্যান্য বিদেশি মাছের কৃত্রিম প্রজননের এর উপর কাজ করছেন। তিনি  একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

শামিম হোসেন তেজগাঁ কলেজের একজন ছাত্র। প্রায় ছয় বছর ধরে বাহারি  মাছের চাষ করছেন । বর্তমানে তার কাছে ২০ প্রজাতিরও বেশি বাহারি  মাছ আছে। এগুলোর  একেকটি মাছের দাম জোড়া প্রতি ৫০০ থেকে শুরু করে প্রায় ৪,০০০ টাকা।  তার নিজস্ব হ্যাচারি থেকে মাসে প্রায় ৩,০০,০০০ টাকা আয় হয় ।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা ওয়াসেক ফয়সাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থাতেই ২০১৮ সাল থেকে বাহারি মাছের ব্যবসা শুরু করেন সামান্য ১,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে । বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় ১,০০,০০০ লাখ টাকা । তিনি বাহারি মাছের পাশাপাশি মাছের খাবার, বিভিন্ন খাদ্য প্ল্যান্টসহ বাহারি মাছ লালন-পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিক্রি করে থাকেন। আজ তিনি স্বাবলম্বী জীবন যাপন করছেন।

বাংলাদেশে বাহারি মাছের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । আজ উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও একুয়ারিয়ামে মাছ লালন-পালন করছে শখের বশে বা রোজগারের জন্য । হোটেল ,রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ইত্যাদি স্থানে এখন একুয়ারিয়ামের বাহারি মাছের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বাহারি মাছ লালন-পালনকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগে বাহারি মাছের অধিকাংশই সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান, ভিয়েতনাম  ইত্যাদি দেশ থেকে আমদানি করতে হতো । কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশ বাহারি মাছই আমাদের দেশের ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালী ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে এবং এই মাছগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে আমাদের দেশীয় বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে ।

সাধারণ পরিচর্যা

পরিষ্কার পানি, ভালো মানের খাবার, উন্নত পরিবেশ বজায় রাখতে পারলেই বাহারি মাছ দীর্ঘদিন একুয়ারিয়ামে বেঁচে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে একুয়ারিয়ামের আকার একটু বড় হলে তা মাছের বৃদ্ধির জন্য সুবিধাজনক হবে।  পানির গুনাগুণ ভালো রাখার জন্য ফিল্টার ও এরেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। মাছের পাশাপাশি অন্যান্য জলজ প্রাণী যেমন- কচ্ছপ, শামুক ইত্যাদি একুয়ারিয়ামের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলে। শীতের দিনে বাহারি মাছ বেশি মারা যায়, এ সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য হিটার ব্যবহার করে পানির তাপমাত্রা প্রয়োজনমত রাখতে হয়। পানিতে এমোনিয়া জমে গেলে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে । সেক্ষেত্র মাসে একবার বা দুইমাসে একবার পানি পরিবর্তন করা মাছের জন্য জরুরি। পানি ঘোলা হয়ে গেলে প্রতি লিটার পানির জন্য মিথিলিন ব্লু (Methylene Blue) ২/৩ ফোটা  ব্যবহার করা যেতে পারে।

খাবার

দিনে এক থেকে দুবার খাবার দিলেই তা মাছের জন্য যথেষ্ট। খাবার এমনভাবে দিতে হবে যেন মাছ খাওয়ার পর তা জমে না থাকে। বাজারে মাছের জন্য দানাদার প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া যায় । খাবারের পরিমাণ কতটুকু হবে তা একুয়ারিয়ামে মাছের সংখ্যা ও মাছের আকারের উপর নির্ভর করে। জীবন্ত খাবার হিসেবে টিউবিফেক্স, ড্যাফনিয়া, ব্রাইন শ্রিম্প, ইনফোসুরিয়া, ব্লাড ওয়ার্ম ইত্যাদি খাওয়ালে বাহারি মাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে কারণ এই খাবার গুলো উচ্চমাত্রার প্রোটিন সম্পন্ন।

বিভিন্ন রোগ ও করণীয়

সীমিত জায়গা, অধিক খাবার, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ইত্যাদির ফলে পানির গুনাগুণ নষ্ট হলে বিভিন্ন ধরণের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে  বাহারি মাছের বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে পাখনা পঁচা, লেজ পঁচা, কষা রোগ, হজমের সমস্যা, ফ্যাকাসে রঙ, এংকর, সাদা বা ধূসর স্পট , শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা, ভারসাম্যহীন চলাফেরা ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা যায় ।

 এই ধরণের সমস্যা হলে করনীয় কাজ:

  • অসুস্থ মাছকে আলাদা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ হাত দিয়ে না ধরে ছোট জাল ব্যবহার করতে হবে।
  • পানি পরিবর্তন করে পরিষ্কার পানি দিতে হবে (প্রতি মাসে একবার বা প্রতি দুই মাসে একবার)। তবে সম্পূর্ণ পানি একেবারে পরিবর্তন না করাই ভাল।
  • অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবেনা বা যদি দেয়া হয়ে যায় তবে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
  • কখনোই ট্যাংকে সাবান বা ডিটার্জেন্ট ব্যাবহার করা যাবে না।
  • প্রয়োজনে চিকিৎসা হিসেবে লবণ পানি, রক সল্ট, একুরিয়াম সল্ট  দিয়ে মাছের শরীর পরিষ্কার করা যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।
করি ক্যাট (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

বাহারি  মাছ পালনের গুরুত্ব

বাহারি মাছ পালনের উপকারিতা:

  • পোষা প্রাণী হিসেবে বাহারি মাছ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই পছন্দ করে। এটি সময় কাটানোর জন্য একটি চমৎকার পদ্ধতি হতে পারে।
  • এটি মন প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • পালনকারীর কোন শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
  • খরচ তুলনামূলক কম, সহজে পালন করা যায়, প্রতিদিন পরিষ্কারের ঝামেলা নেই।
  • এটি শিক্ষার্থী, বেকার যুব-সমাজ এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের একটি সহজ উপায় হতে পারে। বর্তমান সময়ের লাভজনক ব্যবসাসমূহের মধ্যে এটি একটি ।
  • জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

কোন কিছুই নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত নয়। তেমনি বাহারি মাছ পালনেরও কিছু অসুবিধা আছে। যেমন:

  • বাহারি মাছ পালনের জন্য একুরিয়াম স্থাপন করতে হয়। এছাড়া প্রয়োজনে নানান উপকরণ যেমন ফিল্টার, হিটার, কন্ডিশনার ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয় যা কিছুটা ব্যয়বহুল।
  • এখানে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন আছে। মাছকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তাদের গতিবিধির দিকে খেয়াল রাখতে হয়৷ নাহলে মাছের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
  • সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন হয়। নতুন পালনকারীর ক্ষেত্রে অনেক সময় মাছ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এটাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের জন্য বাহারি মাছ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই আমরা বাহারি মাছ পালনের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারি। বাহারি  মাছ হতে পারে আমাদের আয়, সন্তুষ্টি ও জাতীয় উন্নতির অন্যতম একটি মাধ্যম।  সঠিক সরকারী সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ, বাহারি মাছ লালন-পালন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ইত্যাদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে একসময় আমাদের দেশ বাহারি মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত ।

একটি সুসজ্জিত এ্যাকুয়ারিয়াম (ছবি: শামস মুহাম্মদ গালিব)

তথ্যসূত্র

In English:

  • Galib S (2010) Aquarium Fisheries in Dhaka City, Bangladesh. BdFISH Feature. Retrieved on 03 August 2021. https://en.bdfish.org/2010/10/aquarium-fisheries-dhaka-bangladesh/
  • Kangkon RH (2003), Past and Present status, and prospects of Ornamental Fishes in Bangladesh. BdFISH Feature. Retrieved on 03 August 2021. https://en.bdfish.org/2013/01/past-present-status-prospects-ornamental-fishes-bangladesh/
  • Ornamental Fish Traders (2021) Facebook Page of Ornamental Fish Traders. Jatrabari, Dhaka. Retrieved on 03 August 2021. https://www.facebook.com/aquariumfishshopbd/
  • Rabbi AH (2020) Ornamental fish farming brimming with prospect, The Business Standard.  Retrieved on 03 August 2021. https://www.tbsnews.net/feature/ornamental-fish-farming-brimming-prospect-104392

বাংলায়:

  • এগ্রোবাংলা (২০২১) একুরিয়ামে মাছ পালনের পদ্ধতি। সংগ্রহ: ০৩ আগষ্ট ২০২১। https://agrobangla.com/fisheries-cultivation/fisheries-management-of-fish-farming/একুরিয়ামে-মাছ-পালনের-পদ/
  • গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন (২০২০) বাহারী মাছ চাষে সফল ফয়সাল। আলোকিত বাংলাদেশ (২৩ নভেম্বর ২০২০)।  সংগ্রহ: ০৩ আগষ্ট ২০২১। https://www.alokitobangladesh.com/print-edition/last-page/24281/রঙিন-মাছ-চাষে-সফল-ফয়সাল/
  • নাহিদ বিন রফিক (২০১৭) অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছ। কৃষিকথা, চৈত্র ১৪২৪ সংখ্যা। কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) বাংলাদেশ। সংগ্রহ: ০৩ আগষ্ট ২০২১। www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/১৪২৪/চৈত্র/অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছ/
  • শামস মুহাম্মদ গালিব (2010) একুয়ারিয়ামের সহজ ব্যবস্থাপনা। বিডিফিশ বাংলা। সংগ্রহ: ০৩ আগষ্ট ২০২১। https://bn.bdfish.org/2010/11/একুয়ারিয়াম-ব্যবস্থাপনা/ 

Visited 1,505 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
বাহারি মাছে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ: অগ্রগতি, কর্মসংস্থান ও চাহিদা

Visitors' Opinion

তাহসিন ফারজানা

স্নাতক শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.