সহজ কথায় প্রবায়টিক্স হচ্ছে একপ্রকার উপকারি ব্যাক্টেরিয়া। এরা প্রতিটি প্রাণীব শরীরে থাকে কমবেশী। তবে বৈজ্ঞানিক ভাবে বলতে গেলে এরা হলো এমন ধরনের অনুজীব যারা কোনো প্রাণীর শরীরে বাস করে সেই প্রাণীর উপকার করে থাকে। মনে হতে পারে এ ঘটনার সাথে সিমবায়োসিস এর মিল আছে, অনেকটা তাই। তবে এরা হোস্ট এর থেকে কি কোনো উপকার পায় কি না তা স্পষ্ট নয়।

বিষয়টি আরও ভালভাবে বুঝতে এবার কতগুলো সংজ্ঞা দেখা যাক। ফুলার (১৯৮৭) সালে বলেন, প্রবায়টিক্স হলো মাইক্রোবিয়াল ফিড সাপ্লিমেন্ট যারা হোস্ট এর উপকার সাধন করে। প্রবায়টিক্স টার্মটি এসেছে একটি গ্রিক শব্দ থেকে যার মানে হলো, জীবনের জন্য। FAO এর সংজ্ঞা থেকে আরও ভালো বোঝা যাবে বিষয়টি, “জীবন্ত মাইক্রো-অরগানিজম যা কোন জীবের দেহে প্রয়োগ করা হলে সে ক্ষেত্রে হোস্ট এর উন্নতি সাধিত হয় (FAO, 2001)। অনেকে একে শুধু ল্যাকটিক এসিড ব্যাক্টেরিয়া বললেও আসলে সকল উপকারি মাইক্রোবস যেমন ভাইরাস ও এর দলভুক্ত।

বলা হয়ে থাকে এই অরগানিজম গুলো যদি মাছে প্রয়োগ করা যায় তবে হোস্ট হিসেবে মাছের ও উন্নতি সাধিত হতে পারে। প্রবায়োটিক্স এর বিষয়টি বিশ্ব একেবারে নতুন নয়, তবে ফিশারীজ সেক্টরে এটি নতুনই বলা চলে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এ নিয়ে গবেষনা বেশ এগিয়ে গেছে যার মধ্যে জাপান, চীন, বেলজিয়াম, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি ইউ-কে, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ফিশারীজে এই উপকারী অনুজীবটা নিয়ে যা গবেষনা হয়েছে তার অগ্রে আছে চিংড়ি শিল্পের উন্নয়ন। ইতিমধ্যে আমাদের দেশেও চিংড়ি চাষীরা প্রোবায়োটিক ফিড এর সুফল পেতে শুরু করেছে।

তবুও সংশয়বাদীদের প্রশ্ন থেকেই যায়- প্রবায়োটিক্স দ্বারা মাছ চাষে কি উন্নতি ঘটানো সম্ভব? সাম্প্রতিক গবেষনায় যা পাওয়া গেছে তা সত্যিই খুব আশার আলো দেখায়। ইতিমধ্যে চিনা একদল বিজ্ঞানী মিঠাপানির মাছে এমনকি কার্প জাতীয় মাছে এই প্রোবায়টিক ফিড প্রয়োগ করে মাছের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ফলাফল অর্জন করেছেন। শুধু দ্রুত বৃদ্ধিই নয় এই উপকারী ব্যাক্টেরিয়া মাছের ইমুনিটি তথা রোগ প্রতিবোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে রোগ প্রতিরোধী করে তোলে। তাছাড়া এই মাইক্রোব গুলো চাষ পরিবেশের ও উন্নতি সাধন করে থাকে। তবে দুঃখের বিষয় হলো পাশের দেশ ভারতে এর উপর গবেষনা চললেও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কোন উল্লেখযোগ্য সুচনা হয়নি।

দেশের মৎস্যখাতের উন্নয়নে এই যাদুকরী উপকারী মাইক্রোবস (ব্যাকটেরিয়া) তথা প্রবায়োটিক্স এর প্রয়োগের উপর গবেষনায় আমাদের এখনই মনোনিবেশ করা সময়ের দাবী।

তথ্যসূত্রঃ
ফিশারীজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইট।

পুনশ্চঃ
লেখাটি ৩০ শে জুন, ২০১০ রাত ৮টা ০৬ মিনিটে বিডিফিশ ব্লগে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। সম্পাদনার পর আজ বিডিফিশ বাংলায় পুনঃপ্রকাশ করা হল। – সমন্বয়কারী, বিডিফিশ টিম।


Visited 3,142 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
মাছ চাষে নতুন দিগন্ত – জাদুকরি প্রবায়োটিক্সের ব্যাবহার: আমরা কোথায়?

Visitors' Opinion

মো: এমদাদুল হক

প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী-৬২০৫, বাংলাদেশ। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.