আগাছা:
চাষের জমিতে কাঙ্খিত ফসলের পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ভিদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়, যা পুষ্টি উপাদান ও বাসস্থানের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফসলের সাথে প্রতিযোগিতা করে বা বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধন করে ফলে চাষি অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এমন ক্ষতিসাধনকারী উদ্ভিদই মূলত আগাছা নামে পরিচিত। আগাছা হিসেবে পরিচিত উদ্ভিদের উপকারী ও অপকারী উভয় বৈশিষ্ট্য থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় চাষের জমিতে আগাছা অপ্রয়োজনীয়, সমস্যা সৃষ্টিকারী ও ক্ষতিকর উদ্ভিদ যা বপন ছাড়াই অধিক পরিমাণে জন্মে এবং অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। একদিকে এদের বংশবিস্তারের হার দ্রুত অন্যদিকে জীবনচক্রও স্বল্পমেয়াদী।
জলজ আগাছা:
অতি দ্রুত বর্ধনশীল ও চাষের দৃষ্টিকোণ থেকে অপ্রয়োজনীয় যেসব জলজ উদ্ভিদ পুকুর, নদীনালা, বিল ইত্যাদি জলাশয়ে অধিক পরিমাণে জন্মে মাছ চাষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয় তাদেরকে জলজ আগাছা বলে। এরা চাষের জলাশয়ে অধিক পরিমাণে জন্মে ও দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে জলাশয়ের বাস্তুসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে ও চাষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়। এসব জলজ উদ্ভিদ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন শৈবাল, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, গুপ্তবীজী ইত্যাদি। এগুলি বদ্ধ, প্রবাহমান, ক্ষারীয়, অম্লীয়, স্বাদু, লবণাক্ত ইত্যাদি যেকোনো ধরণের পরিবেশের পানিতেই জন্মাতে পারে এবং অভিযোজনের ধরণ অনুযায়ী প্লাঙ্কটনিক, ভাসমান, তলজীবী, নিমজ্জিত ইত্যাদি হতে পারে। এদেশের অধিকাংশই চাষযোগ্য জলাশয়ের পাড় ও তলদেশে দেখতে পাওয়া যায়। তারমধ্যে কচুরিপানা, টোপাপানা, কলমিলতা, কচু, শাপলা ইত্যাদি অন্যতম। উদ্ভিদ হিসেবে এদের বিভিন্ন উপকারী দিকও রয়েছে। কিন্তু মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় কাঙ্খিত ফসল উৎপাদনের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে আগাছার উপকারী দিকের তুলনায় ক্ষতিকর দিক তুলনামূলক ভাবে বেশি হওয়ায় মাছ চাষের পুকুর থেকে এদের অপসারণ প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।
জলজ আগাছার প্রকারভেদ
বীজপত্রের সংখ্যা ও পাতার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আগাছা একবীজপত্রী বা দ্বিবীজপত্রী হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ঘাস, সাধারণত সরুপাতাবিশিষ্ট আগাছা একবীজপত্রীর অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে জালিকা শিরাযুক্ত প্রশস্ত পাতাবিশিষ্ট আগাছাকে দ্বিবীজপত্রীভূক্ত ধরা হয়। এছাড়াও আবাসস্থলের উপর ভিত্তি করে আগাছাকে স্থলজ, জলজ, আরোহী ও উভচর ইত্যাদি শ্রেণিভুক্ত করা হয়।
জলজ আগাছার গঠন, অবস্থান, বৃদ্ধি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এদের শ্রেণীবিভাগ নিচে দেয়া হল-
শৈবাল বা শেওলা:
নিম্ন শ্রেণির অতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ, যাদেরকে খালি চোখে শনাক্ত করা যায় না তারা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এরা শাখাযুক্ত ও দলবদ্ধ হতে পারে। এরা অধিক মাত্রায় জন্মে প্লাঙ্কটন ব্লুম (Plankton bloom) সৃষ্টি করতে পারে। যেমন – Chara, Ulothrix, Vaucheria, Diatom, Volvox, Euglena, Cladophora ইত্যাদি।
ভাসমান আগাছা:
এসব আগাছা কেবল পানির উপরে ভেসে থেকে বায়ুর সংস্পর্শে বেঁচে থাকে। এদের শিকড় সাধারণত মাটিতে প্রবেশ করে না অর্থাৎ মাটির সাথে এদের কোনও সংযোগ থাকে না। খাদ্য গ্রহণের জন্য পানি ও বায়ুর উপর নির্ভরশীল। উদাহরণ: কচুরিপানা (Eicchornia crassipes), টোপাপানা (Pistia stratiotes), ক্ষুদে পানা (Lemna minor) ইত্যাদি।
ডুবন্ত বা জলমগ্ন আগাছা:
এ ধরণের আগাছা পানির মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায় অবস্থান করে। এদের কাণ্ড বা পাতা কোনোভাবেই পানির উপরে উঠে আসে না।
এরা আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। প্রথম ধরণে ডুবন্ত আগাছার গোঁড়া মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে কিন্তু বায়ুর সাথে কোনও সংযোগ থাকে না। যথা- পানিকলা (Ottelia alismoides), পাতাঝাঁঝি (Vallisneria spiralis), হাইড্রিলা (Hydrilla) ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় ধরণের ডুবন্ত আগাছা কেবলমাত্র পানির মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায় থাকে কিন্তু মাটির সঙ্গে এদের কোনও সংযোগ থাকে না। এরা সাধারণত পানির মধ্যে কোনও অবলম্বনের সাথে যুক্ত থাকে। যথা-ঝাঁঝি (Utricularia flexuosa)।
অর্ধনিমজ্জিত বা ভাসমান পাতাবিশিষ্ট সংযুক্ত প্লাবিত জলজ আগাছা:
এধরণের আগাছা মাটি, পানি ও বায়ুর সংস্পর্শে অবস্থান করে। একদিকে এদের শিকড় পানির তলদেশস্থ মাটির সাথে আটকে থাকে অন্যদিকে পাতা পানির উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। এদের পাতা পানির উপর সবসময় ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। জলাশয়ে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের কাণ্ডও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। যথা- শাপলা (Nymphaea nouchali), শালুক (Nymphaea lotus),পদ্ম (Nelumbo nucifera) ইত্যাদি।
প্রান্তীয় ও লতানো জলজ আগাছা:
এ আগাছা মাটি ও পানিতে উভয়ের সংস্পর্শে থেকে বেঁচে থাকে ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এদের শিকড় জলাশয়ের পাড়ে থাকে এবং কাণ্ড, লতা ও পাতা জলাশয়ের পানির উপরে প্রায় ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে থাকে। এরা অতিদ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে জলাশয়ের উপরিভাগ ঢেকে ফেলে। যথা- কলমিলতা (Ipomoea aquatica), কেশরদাম (Jussiaea repens), হেলেঞ্চা (Enhydra fluctuans) ইত্যাদি।
উভচর জলজ আগাছা:
এরা মূলত শুকনো মাটিতে জন্মাতে ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে পারে তবে এদের শিকড়, কাণ্ডের নিম্নাংশ এমন কি কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিচের দিকের পাতাও পানির নিচে অবস্থান করে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে থাকে। যথা- ধইঞ্চা (Sesbania bispinosa), ভাতশোলা (Aeschynomene aspera) , কচু (Colocasia)ইত্যাদি।
সিক্তভূমি জলজ আগাছা:
এ জাতীয় আগাছা আর্দ্র সম্পৃক্ত মাটির সাথে সংযুক্ত থেকে বেঁচে থাকে। এরা শুকনো জমিতে যেমন বেঁচে থাকতে পারেনা তেমনই জলমগ্ন জমিতেও বাঁচে না। যথা- বিষকাটালি (Polygonum hydropiper), কানাইবাঁশি (Commelina benghalensis ) ইত্যাদি।
গুরুত্ব:
চাষের ক্ষেত্রে জলজ আগাছাকে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এসব উদ্ভিদ ঔষধ তৈরিতে, শাকসবজি, পশুখাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে এবং জমির জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এসব ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় জলজ উদ্ভিদেরও রয়েছে নানার উপকারী দিক ।
উপকারী দিক:
- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি পুঁটি, গ্রাসকার্প ইত্যাদি মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে Microcystis সিলভারকার্প মাছের, Chara ও Najas তেলাপিয়া মাছের, Wolffia ও কচুরিপানা গ্রাসকার্প মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- এসব উদ্ভিদ দিনের বেলায় সূর্যালোক ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরি করে ফলে জলাশয়ের পানিস্থ অক্সিজেনের মাত্রা উপযোগী রাখায় ভূমিকা রাখে।
- Azolla pinnata নামের নীল সবুজ শৈবাল বাতাস থেকে নাইট্রোজেন বন্ধনে সামর্থ্য রাখে। ফলে এদের উপস্থিতি মাটি ও পানির উর্বরতা বাড়ায়।
- অনেক জলজ উদ্ভিদের গায়ে Periphyton জন্মায় ও বৃদ্ধি পায় যা মাছ খাবার হিসেবে ব্যবহার করে।
- জলজ বাস্তুসংস্থানের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতে এরা ভূমিকা রাখে।
- এরা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য আশ্রয় তৈরি করে থাকে।
- গরমের সময় পানির তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।
- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি অত্যন্ত দূষিত পানি থেকে Mn, Fe, Ca, Zn, Al, Ti,Cu,Co ইত্যাদি গুরুধাতু শুষে নেয়।
- কচুরিপানা, Azolla, Pistia ইত্যাদি জৈব সার হিসেবে কৃষি জমি ও মাছচাষের পুকুরে ব্যবহার করা যায়।
- কচুরিপানাকে বেড হিসেবে ব্যবহার করে ভাসমান সবজি চাষ করা যায় ।
- বায়োগ্যাস তৈরিতে কচুরিপানা, Azolla ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এরা প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে।
- কচুরিপানাকে রাস্তার গর্ত ভরাট করা, পিচ ঢালাইয়ের নতুন রাস্তায় পানি দেয়ার ও পিচ মজবুত করা ও পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- তাছাড়া কচুরিপানা থেকে কাগজ উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে যা সফল হলে এটি একটি অর্থনৈতিক উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত পাবে।
- বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ যেমন শাপলা ও পদ্ম সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে বিভিন্ন বিনোদন উদ্যানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী যেমন হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে অনেক জলজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়।
অপকারী বা ক্ষতিকর দিক:
উপকারী দিকের পাশাপাশি জলজ আগাছার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এরা মাছ চাষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানাধরনের ক্ষতি করে থাকে। উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর দিক হল-
- জলজ আগাছা মাটি ও পানির পুষ্টিকর মূল উপাদান যেমন –নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, কার্বন ও বিভিন্ন খনিজ উপাদানগুলো গ্রহণ করে ফলে পুকুরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয় যার প্রেক্ষিতে মাছে অপুষ্টিজনিত নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়।
- পানির নিচে আগাছা পচে নানা ধরনের বিষাক্ত গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া, মিথেন ইত্যাদি সৃষ্টি করে ও পানির গুণাগুণ নষ্ট করে ও অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- আগাছা পুকুরে সূর্যালোক প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে পানির বিভিন্ন উদ্ভিদকণা (ফাইটোপ্লাঙ্কটন) খাদ্য তৈরি করতে পারে না, অক্সিজেন কমে যায়, কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যায়।
- নানা রকম ক্ষতিকর পোকা মাকড়, রাক্ষুসে মাছ, বিভিন্ন রোগজীবাণুর আশ্রয়স্থল হিসেবে অনেক আগাছা কাজ করে।
- আগাছা মাছের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। চলার সময় আগাছার সাথে ঘষা খেয়ে মাছের আঁইশ উঠে গেলে বিভিন্ন ক্ষত রোগের সৃষ্টি হয়। বৃদ্ধি কমে যায়।
- আগাছা থাকলে মাছ ধরতেও অসুবিধা হয়, পুকুরে জাল টানা , মাছের পরিচর্যা ঠিকভাবে সম্পন্ন করা না। মাছের উৎপাদন কমে যায়,অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
জলজ উদ্ভিদের অনেক উপকারী দিক থাকলেও চাষের পুকুরে অতিরিক্ত উদ্ভিদ আগাছা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে যা চাষের মাছের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাই প্রয়োজন হয় অপসারণের। নিচে জলজ আগাছা অপসারণের কৌশল বর্ণনা করা হল।
অপসারণ কৌশল:
পুকুরের আগাছা অপসারণ কৌশলকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১.দৈহিক পদ্ধতি ২.যান্ত্রিক পদ্ধতি ৩.রাসায়নিক পদ্ধতি ৪.জৈবিক পদ্ধতি
১.দৈহিক পদ্ধতি:
শারীরিক শক্তি ব্যবহার করে আগাছা দমন হল দৈহিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোন যন্ত্র, রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় না। অগভীর জায়গা থেকে ও পুকুরের আকার ছোট হলে হাত দিয়ে টেনে আগাছা তুলে ফেলা যায়। টোপাপানা, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা,ঝাঁঝি ইত্যাদি কায়িক-শ্রমে তুলে ফেলা যায়।
২.যান্ত্রিক পদ্ধতি:
একটুকরো কাঠের মধ্যে চিরুনির মতো করে করে লোহার কাঁটা লাগিয়ে একটি যন্ত্র তৈরি করা যায় যা পুকুরের পানির নিচে নিমজ্জিত আগাছা তুলতে ব্যবহৃত হয়। পদ্ম, শালুক, পানিফল প্রভৃতি আগাছাকে কাস্তে বা গাছ কাটার বড় কাঁচির সাহায্যে মূল বরাবর কেটে দিলে শুকিয়ে মরে যায়। লম্বা খড়ের দড়ি তৈরি করে বা বড় বাঁশ দিয়েও পানির উপরিতল বরাবর পানা জাতীয় জলজ আগাছা অপসারণ করা যায়। জাল দিয়ে টেনেও অনেক আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৩.রাসায়নিক পদ্ধতি:
পুকুরে মাছ মজুত না থাকলে রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে আগাছা দমন করা যায়। তবে, যে ওষুধই দেওয়া হোক না কেন সেটি যেন কম মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, তা যেন পানিসহ আশেপাশের পরিবেশ দূষিত না করতে পারে সেদিকটি বিবেচনা রাখা প্রয়োজন।
- ভাসমান আগাছা দমন- ২-৪ ডি (ডাই ক্লোরো ফেনোক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড) নামক রাসায়নিক ওষুধ ২-১২ কেজি প্রতি হেক্টর মাত্রায় প্রয়োগ করলে ভাসমান আগাছা অতি সহজেই ধ্বংস হয়।
- পিস্টিয়া ও অন্যান্য ভাসমান আগাছা নষ্টে হেক্টর প্রতি ১-২ কেজি হরমোন জাতীয় ওষুধ (গ্যামাক্সিন ৪০, প্যারাকোয়েট ইত্যাদি) প্রয়োগে ভাল ফল পাওয়া যায় ।
- টোপাপানা দমনে হেক্টর প্রতি ৫০-৭০ কেজি অ্যামোনিয়া দ্রবণ প্রয়োগ করা যায়। আগাছা দমন- হেক্টর প্রতি ২২৪ কেজি অ্যামোনিয়া ও হেক্টর প্রতি ১০-১৫ কেজি ডাই ক্লোরোনিল প্রয়োগে জলমগ্ন আগাছা নষ্ট হয়।
- সিমাজিন, ডাইরোন ইত্যাদি লিটার প্রতি পানিতে ০.৫-১ গ্রাম হিসেবে প্রয়োগ করলে আগাছা দমন করা সম্ভব।
- হেক্টর প্রতি ৩৫ কেজি কপার সালফেট প্রয়োগ করা যায়।
- সোডিয়াম আরসেনাইড লিটার প্রতি পানিতে ৪-৫ গ্রাম মিশিয়ে সুফল পাওয়া যায়।
- অর্ধনিমজ্জিত আগাছা যেমন পদ্ম , শালুক, পানিফল ইত্যাদি দমনে ২-৪ ডি প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু গাছের গোঁড়া অক্ষত থাকে। তবে ওষুধের সঙ্গে সার্ফ জাতীয় সাবান প্রয়োগে ভালো ফল মেলে।
- প্রান্তীয় আগাছা দমনে হেক্টর প্রতি ৬-৮ কেজি ডি প্রয়োগ করা যায়।
৪.জৈবিক পদ্ধতি:
এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব এবং সুবিধাজনক। এইটা অনেক সস্তা, অতিরিক্ত পরিশ্রম হয় না, পরিবেশ ও সমাজ এর ক্ষতি হয় না। এই পদ্ধতিতে আগাছাকে মাছের বা কো প্রাণীর খাবারে পরিণত হয়। যেমন-
- বিভিন্ন মাছ যেমন -গ্রাসকার্প, তেলাপিয়া, থাই পুঁটির মতো উদ্ভিদভোজী মাছের সাহায্যে আগাছা দমন করা সম্ভব।
- ৭০-৭৫ টি গ্রাসকার্প দিনে প্রায় এক কেজি আগাছা খেয়ে ফেলতে পারে। আগাছা দমনে এরা প্রকৃত উদাহরণ। এরা পানিতে নিমজ্জিত আগাছা, পাতাঝাঁঝি, পানিফল, হেলেঞ্চা খেয়ে থাকে।
- তেলাপিয়া সর্বভুক মাছ হলেও এরা অর্ধনিমজ্জিত উদ্ভিদ ও নানা ধরনের শেওলা খেয়ে থাকে। তেলাপিয়ার বিভিন্ন প্রজাতি যেমন- Tilapia mossambica, Tilapia nilotica, Tilapia zillii প্রভৃতি জলাশয়ের ভাসমান আগাছা, শেওলা, প্লাঙ্কটন খেয়ে জলাশয় কে আগাছা মুক্ত করে।
- কমনকার্প মূলযুক্ত আগাছা খেয়ে থাকে। কাদায় খাবারের সন্ধানে এরা অনেক মূল যুক্ত আগাছার গোঁড়া উপরে ফেলতে পারে। পানিতে শিকড়যুক্ত আগাছা দমনে এদের ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সিলভারকার্প বিভিন্ন শৈবাল খেয়ে algal bloom নিয়ন্ত্রণ করে। পানির গুনাগুণ ঠিক রাখে।
- পাতিহাঁস বা খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুকুরে ক্ষুদিপানা খেয়ে থাকে।
- অনেক উদ্ভিদ খেকো পোকা যেমন-গুবরে পোকা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, যারা আগাছা খেয়ে থাকে। গুবরেপোকা পুকুরের কচুরিপানা খেয়ে ফেলে, Symayba conspesun নামক মথ পদ্মপাতা খেয়ে থাকে।
উপসংহার:
মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জলজ আগাছা অপসারণ একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিকভাবে আগাছা দমন করা সম্ভব হলে পরবর্তীতে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যথাযথ বৃদ্ধি পায় ফলে উৎপাদন বাড়ে। তবে জলজ আগাছার সমূলে এমনভাবে ধ্বংস করা উচিত নয় যাতে করে জলাশয়ের বাস্তুসংস্থানের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই এদের একেবারে ধ্বংস না করে জলজ আগাছার বিভিন্ন উপকারী দিককে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখে মাছচাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
তথ্যসূত্র:
বাংলায়:
- আহমেদ ইমরান হালিমি (২০২০) বাংলাদেশের সুপরিচিত কিছু আগাছা। দ্বিতীয় পর্ব। https://greeniculture.com/weeds/some-common-weeds-2nd-part/ প্রকাশ: ১৭ জুলাই, ২০২০। সংগ্রহ: ২৯ আগস্ট, ২০২১।
- বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (২০২১) ফসলের রোগ ও আগাছা । স্কুল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৪৫-১৬২। http://www.ebookbou.edu.bd/Books/Text/SARD/BAged/bae_5201/Unit-06.pdf। সংগ্রহ: ২৯ আগস্ট, ২০২১।
- বেনজির আহমেদ সিদ্দিকী (২০২১) আগাছা নয়, কচুরি পানায় আছে নানা উপকারিতা। জাগোনিউজ২৪ডটকম। https://www.jagonews24.com/feature/article/676324 । প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১। সংগ্রহ: ২৯ আগস্ট ২০২১।
- বিশ্বজিৎ গোস্বামী (২০১৫) আগাছা সরিয়ে ফেলুন পুকুরের। আনন্দবাজার পত্রিকা। https://www.anandabazar.com/west-bengal/আগ-ছ-সর-য়-ফ-ল-ন-প-ক-র-র -1.229721। প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০১৫। সংগ্রহ: ২৯ আগস্ট, ২০২১।
- বিষ্ণু দাশ (১৯৯৭) মাৎস্য ও মাৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা। ১ম খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। পৃষ্ঠাঃ২৪২-২৬১।
- মোস্তফা কামাল পাশা, এ.কে.এম নূরুল ইসলাম, জেড. এন তাহমিনা বেগম এবং জিয়া উদ্দিন আহমেদ (২০১৪) আগাছা। বাংলাপিডিয়া। https://bn.banglapedia.org/index.php/আগাছা/ । প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০১৪। সংগ্রহ: ২৯ আগস্ট, ২০২১।
In English:
- Kumar D (1992) Fish culture in undrainable ponds. A manual for extension. FAO Fisheries Technical Paper No. 325. Rome, FAO, 1992. 239 pp.
Visited 8,220 times, 2 visits today | Have any fisheries relevant question?