ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেমস (আইপিআরএস) হল পুকুরে মাছ চাষের একটি উন্নত পদ্ধতি যা একটি প্রবাহিত পানির গুণগতমানের বা পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুকুরের একটি ছোট অংশে মাছকে আবদ্ধ করে চাষ করার ব্যবস্থাপনা। আইপিআরএস সিস্টেমে “পুকুরে নদী” বা পানির প্রবাহ তৈরি করে এবং পানিকে মিশ্রিত করে নদীপথের ব্যবস্থার মতো করে চলাচল করার সুযোগ থাকে এবং এই প্রবাহিত পানি পুকুরের উৎপাদন সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) এমন একটি মাছ উৎপাদন কৌশল যা ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) দ্বারা এর কৌশলগত বিভিন্ন ধাপ উন্নত করা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে “রেসওয়েতে” লালনকৃত মাছকে কেন্দ্রীভূত করে এবং অবিচ্ছিন্ন পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে পানির সর্বোত্তম গুণমান বজায় রেখে ও উন্নত খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশগত প্রভাব হ্রাসের সাথে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল হিসাবে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অধিক ঘনত্বে মাছ চাষের জন্য অধিক খাদ্য প্রয়োগ করা হয় ফলে পুকুরে জৈব পদার্থ জমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এজন্য পানি সঞ্চালন, মিশ্রণ এবং বায়ুচলাচল আইপিআরএস এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইপিআরএস-এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, রেসওয়ে ইউনিটের নিচের দিকের প্রান্ততে মাছের ঘনীভূত বর্জ্য জমা হয় এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে এ বর্জ্য রেসওয়ের বাইরে সরিয়ে নেয়া হয় ফলে আইপিআরএসের পুকুরে কঠিন বর্জ্য জমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং পানির গুনগত মান বজায় থাকে।
এই সিস্টেমটি যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় তার মধ্যে রয়েছে কিছু প্রজাতির উচ্চ ঘনত্বের কারণে রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা এবং বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাক আপ। আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আরও কার্যকর রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পুকুর থেকে বার্ষিক উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা ব্যাপক।
আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষে কিছু প্রতিষেধকমূলক প্রতিপালন ব্যবস্থা নিম্নরূপ:
• পানির সর্বোত্তম গুনগত মান বজায় রাখার জন্য সর্বদা সচেতন থাকা।
• কঠোর স্যানিটারি এবং স্বাস্থ্যকর (গাইড লাইন)প্রণয়ন করা ও এর অনুসরণ।
• নিয়মিত মাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা।
• উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য ব্যাবহার নিশ্চিত করা।
• পরিশোধিত পানি (প্রয়োজন ক্ষেত্রে) ব্যাবহার করা। নিয়মিত পানির নমুনায়ন, পানির গুনগতমানের পরীক্ষা ও পানির গুণগতমান আদর্শ মাত্রায় বজায় রাখা।
• প্রয়োজন ক্ষেত্রে অনুমোদিত ওষুধ ব্যাবহার যেমন: প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, ভ্যাকসিন ও ইমিনিউস্টিমুলেন্টস
আইপিআরএস এর তত্ত্ব ও ইতিহাস:
ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম বা (আইপিআরএস) প্রযুক্তি ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিক থেকে বিকাশ লাভ করে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর বাণিজ্যিক লে-আউট স্থাপন বিন্যাস, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও পুণঃমূল্যায়নের মাধ্যমে নানাবিধ কর্মকাণ্ড হাতে নেয়া হয়েছে। মৎস্য খামার কার্যক্রমের অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং লাভজনকতা উন্নত করার উদ্দেশ্য ইউএসএসইসি, সয়া অ্যাকুয়াকালচার অ্যালায়েন্স, অবার্ন ইউনিভার্সিটি, আলাবামা কোঅপারেটিভ এক্সটেনশন সিস্টেম, আলাবামা কৃষি পরীক্ষা কেন্দ্র এবং পেন্টায়ার অ্যাকুয়াটিক ইকো-সিস্টেম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইপিআরএস নিয়ে গবেষণার জন্য নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক, উন্নত নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষের এ প্রযুক্তি টি শুরু হয়েছিলো এবং পরবর্তীতে মিসিসিপি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে।
আইপিআরএস এর প্রথম দিকের মডেলটি শুধুমাত্র গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো কিন্তু আজকের এ উন্নত ও বাণিজ্যিক মডেলটি এর হাত ধরেই সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
ডাঃ ডেভিড ব্রুন(২০০৪)ক্লেমসন ইউনিভার্সিটিতে “পার্টিশনড অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম” বা PAS নামে একটি মডেল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ এ মডেলটিতে পানির পরিমাণ কমিয়ে এবং পুকুরের চারপাশে পানি মেশানো ও প্রবাহ করার জন্য একটি ধীর গতিতে চলমান প্যাডেল-হুইল ব্যবহার করেছিল। অন্যদিকে অবার্ন ইউনিভার্সিটির মাইক ম্যাসার এবং অ্যান্ডি লাজুর (২০০৪) পুকুরে একটি ছোট ভাসমান রেসওয়ের মডেল তৈরি করা হয়েছিল এবং তারা ছোট এয়ারলিফ্ট টিউব ব্যবহার করে পুকুর হতে রেসওয়ের সেলগুলোর ভেতর পানির প্রবাহ তৈরি করেছিলো।
১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে, ড. ক্রেগ টুকার ও ড. ডেভিড ব্রুন সম্মিলিতভাবে মিসিসিপির স্টোনভিলে থাড কোচরান অ্যাকুয়াকালচার সেন্টার ক্লেমসন-এ শুরু করা পার্টিশনড অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেমের উপর কাজ শুরু করেন এবং এ সিস্টেমের উন্নতি সাধন করেন।
২০০৩-২০০৪ এর শুরুতে, অবার্ন ইউনিভার্সিটি আইপিআরএস প্রযুক্তির মাধ্যমে পুকুরে উন্নত মাছ চাষ একটি নতুন পর্ব শুরু করে। মূলত: এর মূল লক্ষ্য ছিলো পুকুরে রেসওয়ে ব্যবহার করে পুকুরে উন্নত মাছ চাষের একটি বাণিজ্যিক, শিল্পগতভাবে কার্যকর একটি রেসওয়ে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করে মাছ চাষিদের জন্য লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ACES এবং ACPA-এর সহায়তায়, আট বছর ধরে আইপিআরএস-এর গবেষণা ও প্রদর্শন পরিচালিত হয়েছিল।
২০০৬ সালে, অবার্ন ইউনিভার্সিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম এ্যালাবামার একটি ক্যাটফিশ খামারে আইপিআরএস এর একটি বাণিজ্যিক ইউনিটের মূল্যায়ন শুরু করে।সাত বছর পর, এই উৎপাদন প্রযুক্তি চালু হয় এবং চীনে (২০১৩-২০১৪), ভিয়েতনামে (২০১৬)এবং অতি সম্প্রতি মেক্সিকোতে একটি বাণিজ্যিক তেলাপিয়া খামারে ২০১৭ সালের মূলায়নের ফলাফলের উপর ভিত্তিকরে আইপিআরএস এর মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন প্রকল্প শুরু করে। ইউনাইটেড স্টেটস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ২০১৩ সালে চীনে আইপিআরএস চালু করার পর থেকে, ১৮টি দেশে প্রায় ৯০০০ টি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।
আইপিআরএস প্রযুক্তি ব্যাবহারে মাছের প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ও মৎস্য উৎপাদনে ঝুঁকি কমায় বিধায় মাছের উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়। এটির মাধ্যমে প্রথাগতভাবে পরিচালিত পুকুরের চেয়ে বেশি উৎপাদন ও লাভের (ফলন দ্বিগুণ বা এমনকি তিনগুণ করার) সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আইপিআরএস হল একটি অধিকতর পরিচালনাযোগ্য, নিয়ন্ত্রণযোগ্য মাছ উৎপাদন পদ্ধতি যা উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি এবং পুকুরে পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
আইপিআরএস এর মূল উপাদান সমূহ:
হোয়াইট ওয়াটার ইউনিট (WWU):রেসওয়ে হেড হল বৈদ্যুতিক চালিত, উচ্চ দক্ষতার এয়ারলিফ্ট ওয়াটার মুভার্স যাপানিতে বাতাস সঞ্চালিত করে,মিশ্রিত করে রেসওয়ের সেল ও পুকুরের চারপাশে পানির ঘূর্ণন তৈরি করে প্রবাহ সৃষ্টি করে। আইপিআরএস এ সফলভাবে মাছ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এবং স্থির হতে হবে। এর জন্য সার্বক্ষণিক অটো-স্টার্ট ব্যাক-আপ বৈদ্যুতিক জেনারেটরের প্রয়োজন পড়ে।
রেসওয়ে সেল: দীর্ঘআয়তাকার এ রেসওয়েগুলি পুকুরের দীর্ঘতম পাশ বরাবর সমান্তরালভাবে স্থাপন করা হয়।প্রতি একর/১০০ শতাংশ আয়তনের ২.৫ মিটার গভীরতার জলাশয়/পুকুরের জন্য একটি সেল বা চৌবাচ্চা তৈরি করা হয় যার আয়তন ২২ মিটার লম্বা, ৫ মিটার প্রস্থ ও ২-৩ মিটার গভীর।মূলতঃ এ সেলগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বানিজ্যিক উৎপাদনের জন্য ব্যাবহার করা হয়। এ সেল গুলোর মাঝে মাছের মজুদ, খাদ্য সরবরাহ, নমুনায়ন ও আহোরন করা হয়ে থাকে এবং মাছেরচাষ ব্যাবস্থাপনা অত্যন্ত সহজ হয়।
রেসওয়ের প্রতিটি প্রান্তে “কনফিনমেন্ট গেট” নামক জাল দিয়ে আবৃত কিছু প্যানেল থাকে যা রেসওয়েতে মাছ ধরে রাখতে সহায়তা করে এবংপানির প্রবাহকে সহজ করে।মূলতঃ এ জালটি স্টেইনলেস স্টিলের তৈরী, ফলে এটিটেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ছোট মেস সাইজ হওয়ার দরুন সবচেয়ে ছোট মাছটিকে সেলের ভেতর ধরে রাখতে পারে, তবে রেসওয়ে দিয়ে পানির অবাধ প্রবাহে কোন বাধা দেয় না।
ওয়াস্ট কালেকশান জোন: এটি মূলত রেসওয়ের শেষের প্রান্তের একটি শান্ত অঞ্চল (Quiescent Zone QZ) যেখানে সেলের মধ্যে মাছের মল পানির স্রোতে ভেসে এসে জমা হয় এবং একটি ভ্যাকুয়াম পাম্প ব্যবহার করে দৈনিক ৪-৫ বার জমাকৃত বর্জ্য একটি ওয়েষ্ট কালেকশান ট্যাংকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ট্যাংকে কঠিন বর্জ্যগুলো জমা হয়ে থাকে এবং বাকি পানি আরো দুটো ট্যাংকে ফিল্টার হয়ে আবার পুকুরে চলে যায়। কঠিন বর্জ্যগুলো পরবর্তিতে কৃষি জমি বা সবজি বাগানে উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসাবে ব্যাবহার করা যায়।
বাফেল ওয়াল: এটি মূলত পুকুরের মাঝখান দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে তৈরী করা একটি কনক্রিট ওয়াল যা পানিকে সম্পূর্ণরূপে পুকুরের চারপাশে সঞ্চালন করতে এবং পুনরায় রেসওয়েতে ফিরে আসতে সহায়তা করে।এ ছাড়া এ ওয়ালটি পুকুরে অক্সিজেন সম্মৃদ্ধ পানি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি পুকুরে প্রাকৃতিকভাবে জৈব বর্জ্যের (সেলের ভেতর মাছকে খাওয়ানোর ফলে পানিতে মিশে থাকা মাইক্রো ও ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট) আত্তীকরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।
হোয়াইট ওয়াটার ইউনিট (WWU):আইপিইরএস এর পুকুরের বিশাল একটি অংশ উন্মুক্তপুকুরহিসেবে থাকলেও এটিকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই বরংসফলভাবে আইপিআরএসপারিচালনার জন্যএটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।সমস্ত জৈবিক পুষ্টির আত্তীকরণ এবং জৈব পদার্থের ভাঙ্গন এ খোলা পুকুরে ঘটে থাকে।এছাড়া পুকুরের উন্মুক্ত অংশে সিলভারকার্প বা বিগহেডকার্প জাতীয় মাছ মজুদ করা হয় যাতে পুকুরে উৎপাদিত ফাইটোপ্লাংটন এর সর্বোচ্চ ব্যাবহার হয়, এতে ফাইটোপ্লাংটন সহ অনান্য প্রাকৃতিক খাদ্যের আধিক্যের জন্য পানির গুনগতমানের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তা প্রশমিত করার পাশাপাশি পুকুরে মাছের বাড়তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
অটো-স্টার্ট ব্যাক-আপ জেনারেটর: যথাযতভাবে একটি আইপিআরএস পরিচালনার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।আইপিআরএস এর জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জাতীয়ভাবে সরবরাহ বিদ্যুতের যে কোন সময় বিঘ্ন হতে পারে, তাই সার্বক্ষনিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বা যে কোন বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় উপযুক্ত আকারের বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরীএবং জেনারেটরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করার স্বক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত এর রক্ষনাবেক্ষন করে হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
আইপিআরএস এর উপাদানগুলি যদি একসাথে কাজ করে তবে মাছ উৎপাদনে অন্যান্য প্রথাগত চাষের থেকে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে যদি কেউ প্রযুক্তি ব্যাবহার করতে চান তবে আইপিআরএস স্থাপন করার সিদ্ধান্তটি হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়, কারন এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিন বিনিয়োগ ও মাছ চাষের প্রথাগত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং উদ্যোগক্তাদের অবশ্যই নতুন ব্যাবস্থাপনায় মাছ চাষে অভ্যস্থ হওয়ার মানষিকতা থাকতে হবে এবং এর মৌলিক চাষ পদ্ধতি অনুসরন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
আইপিআরএস মাছ চাষের একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি যা গুনগতমানের মাছ উৎপাদনে প্রচুর সম্ভাবনা তৈরী করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশে এটি সফলভাবে পারিচালিত হচ্ছে।
আইপিআরএস প্রযুক্তি স্থাপনে খামারে যে সব উপাদানগুলো বিবেচনা করা উচিত:
যে সকল উদ্যোক্তা আইপিআরএস প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চান তাদের কে এ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সফলতা জন্য নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলো বিবেচনা করতে হবে:
১.উদ্যোক্তাগন যে পুকুরে আইপিআরএস প্রযুক্তি স্থাপনের পরিকল্পনা করবেন সে পুকুরে পর্যাপ্ত পানির পরিমাণ থাকতে হবে। ন্যূনতম দুটি, কিন্তু সর্বোত্তমভাবে তিনটি, রেসওয়ে নির্মাণ করতে পারলে ভালো হয়। এতে দুটি সেল মাছ চাষের জন্য আর একটি পোনা উৎপাদনে ব্যাবহার করা যায়। এ ছাড়া কারো যদি পোনা উৎপাদনের জন্য আলাদা পুকুর থাকে তাহলে ৩ টি সেলেই মাছ চাষ করতে পারে। ৩ টি রেসওয়ের জন্য পুকুরে সর্বনিম্ন ৩০০০০ ঘন মিটার পানি হতে হবে আর ২ মিটার গভীরতা হতে হবে। এ ছাড়া আইপিআরএস এর সেল সংখ্যায় বেশি বা কম হবে তা এ পানির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি একর পুকুরের জন্য একটি আইপিআরএস সেল স্থাপন করলে ভালো হয়।
২. একটি শক্তিশালী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য পিডিবি বা পল্লিবিদ্যুৎ বা অন্যান্য সরকারী বিদ্যুৎ লাইনের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী একটি অটো-স্টার্ট জেনারেটর এ প্রযুক্তির জন্য একটি অপরিহার্য যাতে সংকটকালীন সময়ে এর প্রাথমিক ও অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চালু রাখা যায়। এ ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
৩. খামারের গুণগতমানের মাছের পোনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিশেষকরে খামারে নিজস্ব নার্সারি ও মজুদ পুকুর থাকলে অনেক বেশী সুবিধা পাওয়া যায়। যেহেতু আইপিআরএসে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও তাড়াতাড়ি বিক্রির উপযোগী হয়ে যায় তাই হাতের কাছে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে গুণগতমানের, নির্দিষ্ট আকারের নির্দিষ্ট প্রজাতির পোনা মজুদ থাকলে কোন চিন্তা থাকে না ফলে সেলগুলোতে নিয়মিত মাছের সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি মাছ উৎপাদনের একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ ছাড়া যাদের এ সুযোগ নেই তারা আইপিআরএস ব্যবস্থাপনা শুরু করার পাশাপাশি ভালো নার্সারারদের সাথে যোগাযোগ করে চাষের পরিকল্পনা করতে পারেন। প্রকল্প এলাকায় চাষি ও নার্সারারদের মিথস্ক্রিয়ায় একটি আধুনিক চাষের ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
৪. আইপিআরএস প্রযুক্তি ব্যাবহার করে মাছ উৎপাদন করতে চায় এমন উদ্যোক্তাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান ও উৎস থাকতে হবে। এখানে দুইটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, (এক) আইপিআরএস মূল কাঠামো নির্মাণ ব্যয় ও (দুই) সিস্টেমটি স্থাপনের পর এর মাছ কেনা, পর্যাপ্ত মাছের খাবার এর ব্যবস্থা, পানির গুণগতমান নিশ্চিত করা, যোগ্যতা সম্পন্ন টেকনিশিয়ান ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত মূলধনের যোগান নিশ্চিত করা।
৫. আইপিআরএস সিস্টেমের নিতিমালা অনুসরণ: এটা অত্যন্ত জরুরী, যে কোন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহারের একটি সাধারণ নিতিমালা বা পরিচালন গাইডলাইন থাকে। এসব নিতিমালা অনুসরণ করা অতীব জরুরী। তাই উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে। আইপিআরএস নিতিমালা ও সঠিক মানগুলি অনুসরণ করে চাষ করলে উৎপাদন সাফল্যের হার অনেক বৃদ্ধি পায়। অন্যথায় ব্যবসায়িক ব্যর্থতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
পরের পর্বে থাকবে-
আইপিআরএস অপারেশন নকশা, নির্মাণ এবং এর মান ও মৌলিক নীতি
আইপিআরএস এ মাছ চাষ ব্যাবস্থাপনা
আইপিআরএস প্রযুক্তির রক্ষণাবেক্ষন সিস্টেম
Visited 744 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?