ফিশারীজ কোন মৌলিক বিজ্ঞান নয় বরং এটি জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের একটি সমন্বিত বিজ্ঞান যা মাছ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশিষ্ট জলজ প্রাণীদের জীবতত্ত্ব, চাষ, আবাসস্থল ব্যবস্থাপনা, আহরণ, প্রক্রিয়াজনকরণ ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে। তাই ফিশারীজকে বুঝতে হলে অবশ্যই জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সে উদ্দেশ্য পূরণকল্পে শুরু হল বিডিফিশ বাংলার পূর্বপাঠ অধ্যায়। এলেখার বিষয় প্রাণী শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি। এখানে পর্ব-৩ উপস্থাপন করা হয়েছে। পর্ব-২পর্ব-১সাথে রইল কুইজে অংশ নেয়ার সুযোগ

 

যে সকল সুনির্দিষ্ট ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করা হয় তাকে প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস বিষয়ক বৈশিষ্ট্য (Taxonomic characteristics) বলে। আর শ্রেণী বিন্যাস বিষয়ক বৈশিষ্ট্যগুলো যেসব বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত সেসব বিষয়াবলীকে শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে প্রচলিত প্রাণী শ্রেণীবিন্যাস যেসব বিষয়াবলীর উপর ভিত্তিকরে তৈরি করা হয়েছে সেগুলো মধ্যে কোষের সংখ্যা, কোষের সংগঠন, ভ্রূণস্তর ও সিলোম এর বিবরণ পর্ব-১ এ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিস্যাম্যতা, প্রান্তিকতা ও সেফালাইজেশন, খণ্ডায়ন বা খণ্ডকায়ন এবং ভ্রূণের রূপান্তর রয়েছে পর্ব-২ এ। এবারের পর্বে থাকল- পরিস্ফুটন ধাপ ও জীবনচক্র (Developmental stage and Life cycle), সম্ভেদ বা ক্লিভেজ (Cleavage), অঞ্চলায়ন (Tagmatization), বহুরূপী গঠন (Polymorphic form), লিঙ্গ (Sex) এবং উপাঙ্গ (Appendices)।

পরিস্ফুটন ধাপ ও জীবনচক্র (Developmental stage and Life cycle)
প্রাণীর পরিস্ফুটনের পর্যায়কে বৃহৎ পরিসরে দুটি দশায় ভাগ করা যায়। যেমন-

  • প্রাকভ্রূণীয় দশা (Pre-embryonic stage):
    জাইগোট থেকে শুরু করে মরুলা (Morula) , ব্লাস্টুলা (Blastula), গ্যাস্ট্রুলা (Gastrula) ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক ধাপ অতিক্রম করে প্রাণী ভ্রূণে পরিণত হয়।
  • ভ্রূণ পরবর্তী দশা (Post-embryonic stage):
    লার্ভা (larva), পোষ্ট-লার্ভা (post larva), অপত্য (baby), তরুণ/যুব (juvenile), পরিণত বা প্রাপ্তবয়স্ক (mature or adult) ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক দশা দেখতে পাওয়া যায়।
    তবে সব প্রাণীতে সব দশা একই ভাবে একই সময় নিয়ে আসে না আবার অনেকে প্রাণীতে অনেক দশা অনুপস্থিত থাকে। যেমন মানুষে লার্ভা ও পোষ্ট-লার্ভা দশা অনুপস্থিত। অন্যদিকে মাছের ডিম পোনা (Sac fry) লার্ভা দশা হিসেবে বিবেচিত হয়।
    আবার অনেকে প্রাণীতে উল্লেখিত দশা ছাড়াও বিশেষায়িত দশা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- পতঙ্গের নিমফ (nymph) নামক একটি বিশেষ দশা উপস্থিত।

 

সম্ভেদ বা ক্লিভেজ (Cleavage):

  • যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট (zygote) ক্রমাগত মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় তাকে সম্ভেদ বা ক্লিভেজ (cleavage) বলে।
  • এ পদ্ধতিতে এককোষী জাইগোট প্রথমে বারবার বিভাজিত হয়ে বহুকোষী বলের মত গোলক মরুলাতে (Morula) পরিণত হয়। মরুলার কোষগুলো ব্লাস্টোমিয়ার (Blastomere) নামে পরিচিত। পরবর্তীতে মরুলার কোষগুলো পরিধির দিকে সজ্জিত হয়ে ব্লাস্টুলায় (Blastula) পরিণত হয়। এ অবস্থায় ব্লাস্টুলার অভ্যন্তরের তরলে পূর্ণ গহ্বর ব্লাস্টোসিল (Blastocoel) নামে পরিচিত। ব্লাস্টুলার কোষগুলো পরবর্তীতে ভিতরের দিকে ভাঁজ খেয়ে দুই বা তিন স্তরে সজ্জিত হয়ে গ্যাস্ট্রুলায় (Gastrula) পরিণত হয়।

প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ারের পরিণতির উপর ভিত্তি করে ক্লিভেজ দুই প্রকার:

  • পূর্ব নির্ধারিত ক্লিভেজ (Determinate cleavage):
    প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ার ভ্রূণের কোন অংশ গঠন করবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত থাকে। যেমন- Ascaris, Tunicates ইত্যাদি প্রাণীর ক্লিভেজ।
  • পূর্ব অনির্ধারিত ক্লিভেজ (Indeterminate cleavage):
    প্রাথমিক ব্লাস্টোমিয়ার ভ্রূণের কোন অংশ গঠন করবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত থাকে না এমন ব্লাস্টোমিয়ারগুলো কোন কারণে আলাদা হয়ে গেলেও প্রতিটি ব্লাস্টোমিয়ার একটি ভ্রূণে পরিণত হতে সক্ষম। যেমন- সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীতে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।

ক্লিভেজের সমতার উপর ভিত্তি করে এটি দুই প্রকার:

  • সর্পিল ক্লিভেজ (Spiral cleavage):
    জাইগোটের দ্বিতীয় বিভাজনের পর তৃতীয় বিভাজনের সময় থেকেই অ্যানিম্যাল পোল (Animal pole) এর ব্লাস্টোমিয়ারগুলো ভেজিটাল পোলের (Vegetal) ব্লাস্টোমিয়ারের সাথে চক্রাকারে সামান্য স্থান পরিবর্তন করে। যেমন- নেরিসের (Nereis) ক্লিভেজ।
  • অরীয় ক্লিভেজ (Radial):
    জাইগোটের পুনঃ পুনঃ বিভাজনের সময় অ্যানিম্যাল পোল (Animal pole) এর ব্লাস্টোমিয়ারগুলো ভেজিটাল পোলের (Vegetal) ব্লাস্টোমিয়ারের সাথে চক্রাকারে সামান্য স্থান পরিবর্তন না করে উভয় পোলের কোষগুলো লম্বভাবে একই স্থানে অবস্থান করে। যেমন- আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।

জাইগোটে উপস্থিত কুসুমের পরিমাণের উপর নির্ভরকরে ক্লিভেজ সম্পূর্ণ হতে পারে আবার অসম্পূর্ণ হতে পারে। যেমন-

  • সম্পূর্ণ ক্লিভেজ (Holoblastic cleavage):
    এটি আবার দু’ধরনের যথা- সমান ও অসমান।
    সমান ধরনের ক্লিভেজে জাইগোট বিভাজিত হয়ে সমান আকৃতির ব্লাস্টোমিয়ার উৎপন্ন করে। ইউরোকর্ডেট, মারসুপিয়াল ও অমরাবাহী স্তন্যপায়ীদের এজাতীয় ক্লিভেজ হয়ে থাকে।
    অন্যদিকে অসমান ধরনের ক্লিভেজে জাইগোট বিভাজিত হয়ে অসমান আকৃতির ব্লাস্টোমিয়ার উৎপন্ন করে। ব্যাঙে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।
  • অসম্পূর্ণ ক্লিভেজ (Meroblastic cleavage):
    এ ধরনের ক্লিভেজের মাধ্যমে জাইগোটটি সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত না হয়ে শুধুমাত্র ব্লাস্টোডিস্ক অংশটি বিভক্ত হয়। এর ফলে সমান আকৃতির কিন্তু অসম্পূর্ণ ব্লাস্টোমেয়ার সৃষ্টি হয়। এলাসমোব্রাঙ্ক, অস্থিময় মাছ, সরীসৃপ ও পাখিতে এজাতীয় ক্লিভেজ দেখতে পাওয়া যায়।

 

অঞ্চলায়ন (Tagmatization):

  • প্রাণীদেহ দুই বা ততোধিক বৃহৎ অংশে তথা অঞ্চলে বিভক্ত হওয়ার বিষয়টিই হচ্ছে অঞ্চলায়ন (Tagmatization)। আর্থ্রোপোডাসহ অনেক পর্বে এরকম বিভাজন সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি অংশকে আলাদাভাবে একবচনে টাগমাটা (Tagmata) এবং একত্রে বহুবচনে টাগমা (Tagma) বলে।
  • চিংড়িকে দুটি বৃহৎ অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়, যথা- টাগমাটা-১ বা শিরবক্ষ (Cephalothorax) এবং টাগমাটা-২ বা উদর (Abdomen)। একইভাবে মাকড়সাকেও দুটি অঞ্চলে আলাদা করা যায়। যথা- টাগমাটা-১ শিরোবক্ষ (Prosoma) এবং টাগমাটা-২ উদর (Opisthosoma or Abdomen)।
  • মাছকে মস্তক (Head), ধর (Trunk) ও লেজ (Tail) অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। মানুষকে মস্তক (Head), ঘাড় (Neck) ও ধর (Trunk) অঞ্চলে ভাগ করা যায়। বাঘ বা বিড়ালকে মস্তক (Head), ঘাড় (Neck), ধর (Trunk) ও লেজে (Tail) বিভক্ত করা যায়।

 

বহুরূপী গঠন (Polymorphic form):

  • একই প্রজাতির সকল সদস্যদের মাঝে যেমন সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তেমনই কিছু বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়। সাধারণত একই প্রজাতির পরিণত পুরুষ ও স্ত্রী সদস্যদের মাঝে বেশ কিছৃ পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় বিশেষত প্রজনন ঋতুতে। এ বিষয়টিই প্রাণীবিজ্ঞানে যৌন দ্বিরূপীতা (Sexual dimorphism) হিসেবে পরিচিত।
  • কেঁচোর ক্ষেত্রে একই প্রাণীদেহে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাকে। অনেক প্রাণীতে উভয় বৈশিষ্ট্য একই সময়ে প্রকাশিত হতে পারে আবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হতে পারে।
  • নেরিসে (Nereis) একই দেহে সুস্পষ্টভাবে দুটি অংশের একটি অযৌন (Atoke) এবং অন্যটি যৌন (Apitoke) বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
  • মৌমাছির একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের মাঝে তিন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন গঠন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট প্রজননক্ষম পুরুষ মৌমাছি যারা Drone নামে পরিচিত, হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট সুগঠিত প্রজনন অঙ্গ বিশিষ্ট প্রজননক্ষম স্ত্রী মৌমাছি যারা রাণী বা Queen নামে পরিচিত এবং ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট ক্ষয়িষ্ণু প্রজনন অঙ্গ বিশিষ্ট প্রজননে অক্ষম স্ত্রী মৌমাছি যারা শ্রমিক বা Worker নামে পরিচিত।

 

লিঙ্গ (Sex):
পৃথিবীতে অনেক প্রাণী রয়েছে যাদের মাঝে লিঙ্গ সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত আবার অনেক প্রাণীর একই দেহে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত প্রাণীদের পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীতে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও কিছু প্রাণীতে পুরুষ বা স্ত্রী লিঙ্গ উপস্থিত কিন্তু তা কার্যকর নয়। সবকিছু মিলিয়ে লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  • লিঙ্গহীন (Sexless) প্রাণী:
    এরা অযৌন জনন প্রদর্শন করে। অ্যামিবাসহ অধিকাংশ প্রোটোজোয়ানরা লিঙ্গহীন হয়ে থাকে।
  • উভলিঙ্গ (Monoecious or Hermaphrodite) প্রাণী:
    এদের একই প্রাণীদেহে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাকে। উভয় বৈশিষ্ট্য একই সময়ে প্রকাশিত হতে পারে আবার ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হতে পারে। কেঁচোসহ অনেক অ্যানিলিডস উভলিঙ্গ হয়ে থাকে। প্লাটিহেলমিনথিস পর্বের অনেক প্রাণীতে উভয় লিঙ্গের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।
  • একলিঙ্গ (Dioecious) প্রাণী:
    এদের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীদেহে পুরুষ ও স্ত্রী বৈশিষ্ট্য আলাদাভাবে উপস্থিত থাকে। অর্থাৎ এদের একটি প্রাণীদেহে হয় পুরুষ বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে নয়তো স্ত্রী বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে। অর্থাৎ এদের পুরুষ ও স্ত্রী একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন সদস্য।
  • নপুংসক () প্রাণী:
    এরা অকার্যকর প্রজনন অঙ্গ বিশিষ্ট পুরুষ হতে পারে আবার নারীরও হতে পারে। কখনও কখনও একই দেহে কিছু বৈশিষ্ট্য পুরুষের এবং কিছু বৈশিষ্ট্য নারীর দেখতে পাওয়া যায়। তবে পুরুষ বা নারী যে বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাক না কেন এদের প্রজনন অঙ্গ ক্ষয়িষ্ণু তথা অক্ষম বা অকার্যকর।

 

উপাঙ্গ (Appendage):
প্রাণীদেহের যে সকল বর্ধিত অংশ (projected part) সাধারণত চলন ও খাদ্য গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট তাকে উপাঙ্গ বলা হয়। বিভিন্ন দলের প্রাণীদের বিভিন্ন ধরনের উপাঙ্গ দেখতে পাওয়া যায় যা প্রাণী শ্রেণীবিন্যাস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যথা-

পর্ব উপাঙ্গ
প্রোটোজোয়া (Protozoa) ক্ষণপদ (Pseudopodia), ফ্লাজেলা (Flagella), সিলিয়া (Cilia)
নিডোরিয়া (Cnidaria) কর্ষিকা (Tentacle)
এনিলিডা (Annelida) সিটি (Setae), প্যারাপোডিয়া (Parapodia)
আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ (Jointed appendages)
মোলাস্কা (Mollusca) মাংসল নরম পদ (Muscular soft foot) ও কর্ষিকা (Tentacle)
একইনোডার্মাটা (Echinodermata) নালীপদ (Tube feet)
কর্ডাটা (Chordata) অগ্র পদ (Fore limb) ও পশ্চাদ পদ (Hind limb)

 

কুইজে অংশ নিতে লিঙ্কটি অনুসরণ করুন

 


Visited 5,418 times, 1 visits today | Have any fisheries relevant question?
প্রাণী শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি (পর্ব-৩)

Visitors' Opinion

রাহাত পারভীন রীপা

প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিস্তারিত

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.